অন ভলিউম

ভূমিকা

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ, অন ভলিউম একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট অ্যাসেটের (যেমন স্টক, মুদ্রা, কমোডিটি) ট্রেড হওয়া চুক্তির সংখ্যা নির্দেশ করে। ভলিউম ট্রেডারদের বাজারের গতিবিধি এবং সম্ভাব্য মূল্য পরিবর্তনের পূর্বাভাস দিতে সহায়ক হতে পারে। এই নিবন্ধে, আমরা অন ভলিউম কী, এটি কীভাবে কাজ করে, কীভাবে এটি বিশ্লেষণ করতে হয় এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ কীভাবে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

অন ভলিউম কী?

অন ভলিউম হলো একটি নির্দিষ্ট সময়কালে কোনো অ্যাসেটের কতগুলি চুক্তি কেনাবেচা হয়েছে তার সংখ্যা। এই সময়কাল কয়েক মিনিট, ঘন্টা, দিন বা সপ্তাহ হতে পারে। ভলিউম যত বেশি, বাজারের আগ্রহ এবং কার্যকলাপ তত বেশি। সাধারণত, উচ্চ ভলিউম একটি শক্তিশালী প্রবণতা নির্দেশ করে, যেখানে নিম্ন ভলিউম দুর্বলতা বা একত্রীকরণ নির্দেশ করে।

ভলিউম কিভাবে কাজ করে?

ভলিউম ডেটা সাধারণত এক্সচেঞ্জ থেকে সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি ট্রেড সম্পন্ন হওয়ার সময়, এটি ভলিউম হিসেবে গণনা করা হয়। এই ডেটা তারপর চার্ট এবং অন্যান্য ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়, যা ট্রেডারদের বাজারের গতিবিধি বুঝতে সাহায্য করে।

ভলিউম বিশ্লেষণের গুরুত্ব

ভলিউম বিশ্লেষণ টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ-এর একটি অপরিহার্য অংশ। এটি কেবল মূল্য ডেটার উপর নির্ভর না করে ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। ভলিউম নিশ্চিত করে যে একটি মূল্য পরিবর্তন কতটা শক্তিশালী। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি স্টকের মূল্য বৃদ্ধি পায় কিন্তু ভলিউম কম থাকে, তবে এটি একটি দুর্বল সংকেত হতে পারে। এর মানে হল যে দামের বৃদ্ধি সম্ভবত টেকসই নয়। অন্যদিকে, যদি মূল্য বৃদ্ধি পায় এবং একই সময়ে ভলিউম বৃদ্ধি পায়, তবে এটি একটি শক্তিশালী সংকেত, যা আরও বেশি মূল্য বৃদ্ধি নির্দেশ করে।

ভলিউম বিশ্লেষণের প্রকারভেদ

বিভিন্ন ধরনের ভলিউম বিশ্লেষণ রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. অন ব্যালেন্স ভলিউম (OBV): অন ব্যালেন্স ভলিউম একটি জনপ্রিয় সূচক যা মূল্য এবং ভলিউমের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করে। এটি ক্রমবর্ধমান এবং নিম্নমুখী ভলিউমের মধ্যে পার্থক্য পরিমাপ করে বাজারের প্রবণতা নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।

২. ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP): ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস একটি নির্দিষ্ট সময়কালে ট্রেড করা ভলিউমের ভিত্তিতে গড় মূল্য নির্ণয় করে। এটি ট্রেডারদের ভাল ট্রেড খুঁজে বের করতে এবং বাজারের গড় মূল্য বুঝতে সাহায্য করে।

৩. মানি ফ্লো ইনডেক্স (MFI): মানি ফ্লো ইনডেক্স মূল্য এবং ভলিউমের ডেটা ব্যবহার করে বাজারের অতিরিক্ত ক্রয় বা অতিরিক্ত বিক্রয়ের অবস্থা সনাক্ত করে।

৪. চেইকিন মানি ফ্লো (CMF): চেইকিন মানি ফ্লো একটি সূচক যা একটি নির্দিষ্ট সময়কালে কেনা এবং বিক্রির চাপ পরিমাপ করে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ অন ভলিউম ব্যবহার

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ অন ভলিউম বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে:

১. প্রবণতা নিশ্চিতকরণ: উচ্চ ভলিউমের সাথে মূল্য বৃদ্ধি একটি শক্তিশালী আপট্রেন্ড নিশ্চিত করে। ২. ব্রেকআউট সনাক্তকরণ: যখন মূল্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধের স্তর ভেদ করে এবং ভলিউম বৃদ্ধি পায়, তখন এটি একটি ব্রেকআউট নির্দেশ করে। ৩. রিভার্সাল সনাক্তকরণ: যদি ভলিউম কমে যায় এবং মূল্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন বা প্রতিরোধের স্তরে পৌঁছে, তবে এটি একটি সম্ভাব্য রিভার্সাল নির্দেশ করতে পারে। ৪. ডাইভারজেন্স চিহ্নিতকরণ: মূল্য এবং ভলিউমের মধ্যে ডাইভারজেন্স একটি দুর্বল প্রবণতা বা আসন্ন রিভার্সাল নির্দেশ করতে পারে।

ভলিউম এবং মূল্য সম্পর্ক

ভলিউম এবং মূল্যের মধ্যে সম্পর্ক বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কিছু সাধারণ সম্পর্ক উল্লেখ করা হলো:

আপট্রেন্ডে ভলিউম বৃদ্ধি: এটি একটি শক্তিশালী আপট্রেন্ডের ইঙ্গিত।
ডাউনট্রেন্ডে ভলিউম বৃদ্ধি: এটি একটি শক্তিশালী ডাউনট্রেন্ডের ইঙ্গিত।
আপট্রেন্ডে ভলিউম হ্রাস: এটি আপট্রেন্ড দুর্বল হওয়ার ইঙ্গিত।
ডাউনট্রেন্ডে ভলিউম হ্রাস: এটি ডাউনট্রেন্ড দুর্বল হওয়ার ইঙ্গিত।

ভলিউম বিশ্লেষণের সীমাবদ্ধতা

ভলিউম বিশ্লেষণ একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হলেও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে:

ভলিউম ডেটা ম্যানিপুলেট করা হতে পারে।
ভলিউম একা ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়; অন্যান্য সূচকগুলির সাথে এটি ব্যবহার করা উচিত।
বিভিন্ন বাজারে ভলিউমের ব্যাখ্যা ভিন্ন হতে পারে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভলিউম ভিত্তিক কৌশল

১. ব্রেকআউট ট্রেডিং: যখন কোনো স্টক বা অ্যাসেটের মূল্য একটি নির্দিষ্ট পরিসীমা থেকে উপরে বা নিচে ভেঙে যায়, তখন তাকে ব্রেকআউট বলা হয়। এই সময়ে ভলিউম বৃদ্ধি পেলে, এটি একটি শক্তিশালী সংকেত হিসেবে বিবেচিত হয়। ব্রেকআউট ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে, ট্রেডাররা সাধারণত ব্রেকআউটের দিকে ট্রেড করে।

২. পুলব্যাক ট্রেডিং: পুলব্যাক ট্রেডিং হলো একটি কৌশল যেখানে একটি আপট্রেন্ড বা ডাউনট্রেন্ডের সময় সাময়িক মূল্য হ্রাসের সুযোগ নেওয়া হয়। ভলিউম বিশ্লেষণ পুলব্যাক ট্রেডিং-এ সহায়ক হতে পারে, কারণ এটি নিশ্চিত করে যে পুলব্যাকটি সাময়িক কিনা।

৩. রিভার্সাল ট্রেডিং: রিভার্সাল ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে, ট্রেডাররা বাজারের দিক পরিবর্তনের পূর্বাভাস দেওয়ার চেষ্টা করে। ভলিউম এবং মূল্যের মধ্যে ডাইভারজেন্স রিভার্সাল ট্রেডিং-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংকেত দিতে পারে।

৪. ভলিউম স্প্রেড: ভলিউম স্প্রেড হলো একটি কৌশল যেখানে নির্দিষ্ট সময়কালে ভলিউমের পরিবর্তন বিশ্লেষণ করা হয়। এটি বাজারের গতিবিধি এবং সম্ভাব্য প্রবণতা পরিবর্তনে সাহায্য করে।

উপসংহার

অন ভলিউম বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি ট্রেডারদের বাজারের গতিবিধি বুঝতে, প্রবণতা নিশ্চিত করতে এবং সম্ভাব্য ট্রেডিং সুযোগ সনাক্ত করতে সাহায্য করে। ভলিউম বিশ্লেষণ অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর-এর সাথে ব্যবহার করে আরও নির্ভরযোগ্য ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। তবে, ভলিউম বিশ্লেষণের সীমাবদ্ধতাগুলি সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার নিয়ম অনুসরণ করা জরুরি।

আরও জানতে:

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ

অন ভলিউম

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

Navigation menu