ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট
ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট : বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল
ভূমিকা
ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট হল একটি বহুল ব্যবহৃত টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস কৌশল। এটি শেয়ার বাজার, ফরেক্স এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং সহ বিভিন্ন আর্থিক বাজারে ব্যবহৃত হয়। এই কৌশলটি ফিবোনাচি অনুক্রমের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে, যা প্রকৃতির মধ্যে প্রায়শই দেখা যায়। ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট ব্যবহার করে, ট্রেডাররা সম্ভাব্য সমর্থন (support) এবং প্রতিরোধের (resistance) মাত্রাগুলি চিহ্নিত করতে পারেন। এই মাত্রাগুলি ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হতে পারে।
ফিবোনাচি অনুক্রম কী?
ফিবোনাচি অনুক্রম হলো একটি সংখ্যা ধারা যেখানে প্রতিটি সংখ্যা তার আগের দুটি সংখ্যার যোগফলের সমান। এটি ০, ১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১, ৩৪, ৫৫, ৮৯, ১৪৪, ২৩৩, ৩৭৭, ৬১০, ৯৮৭, ১৫৯৭, ২৫৮৪,... এভাবে চলতে থাকে। এই অনুক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল, যেকোনো সংখ্যাকে তার আগের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে, ভাগফল প্রায় ১.৬১৮ হয়। এই সংখ্যাটিকে গোল্ডেন রেশিও (Golden Ratio) বলা হয়।
ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট কিভাবে কাজ করে?
ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট মূলত একটি প্রবণতার (trend) সংশোধন বা রিট্রেসমেন্ট পরিমাপ করে। যখন একটি শেয়ারের দাম একটি নির্দিষ্ট দিকে (যেমন ঊর্ধ্বমুখী বা নিম্নমুখী) যায়, তখন দামের এই গতি সবসময় সরলরেখায় হয় না। এটি কিছু সময় সংশোধন করে ফিরে আসে। ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট এই সংশোধনের সম্ভাব্য মাত্রাগুলি চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।
ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট মাত্রা
ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট সাধারণত কয়েকটি নির্দিষ্ট মাত্রায় প্রদর্শিত হয়, যা ফিবোনাচি অনুক্রম থেকে উদ্ভূত। এই মাত্রাগুলো হলো:
- ২৩.৬%
- 38.2%
- 50%
- 61.8% (প্রায় ০.৬১৮, যা গোল্ডেন রেশিও নামে পরিচিত)
- 78.6%
এই মাত্রাগুলোকে চার্টে উল্লম্ব রেখা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। ট্রেডাররা এই রেখাগুলোকে সম্ভাব্য সমর্থন এবং প্রতিরোধের মাত্রা হিসেবে দেখেন।
ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট অঙ্কন করার নিয়ম
ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট অঙ্কন করার জন্য, প্রথমে চার্টে একটি উল্লেখযোগ্য আপট্রেন্ড (uptrend) বা ডাউনট্রেন্ড (downtrend) চিহ্নিত করতে হবে। এরপর, আপট্রেন্ডের ক্ষেত্রে, সুইং লো (swing low) থেকে সুইং হাই (swing high) পর্যন্ত এবং ডাউনট্রেন্ডের ক্ষেত্রে, সুইং হাই থেকে সুইং লো পর্যন্ত ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট টুলটি ব্যবহার করে একটি রেখা টানতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি শেয়ারের দাম ১০০ টাকা থেকে বেড়ে ১৫০ টাকায় যায়, তবে ১০০ টাকা হবে সুইং লো এবং ১৫০ টাকা হবে সুইং হাই। এই দুটি পয়েন্টের মধ্যে ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট টুল ব্যবহার করলে, ২৩.৬%, ৩৮.২%, ৫০%, ৬১.৮% এবং ৭৮.৬% মাত্রার লাইনগুলো দেখা যাবে।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্টের ব্যবহার
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট একটি অত্যন্ত উপযোগী কৌশল হতে পারে। নিচে এর কয়েকটি ব্যবহার উল্লেখ করা হলো:
১. কল অপশন (Call Option) ট্রেডিং
যখন একটি শেয়ারের দাম আপট্রেন্ডে থাকে, তখন ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট মাত্রাগুলো সম্ভাব্য সমর্থন মাত্রা হিসেবে কাজ করে। যদি দাম কোনো রিট্রেসমেন্ট মাত্রায় (যেমন ৬১.৮%) নেমে আসে এবং সেখানে সমর্থন পায়, তবে ট্রেডাররা কল অপশন কিনতে পারেন। তাদের প্রত্যাশা থাকে যে দাম আবার বাড়বে।
২. পুট অপশন (Put Option) ট্রেডিং
যখন একটি শেয়ারের দাম ডাউনট্রেন্ডে থাকে, তখন ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট মাত্রাগুলো সম্ভাব্য প্রতিরোধের মাত্রা হিসেবে কাজ করে। যদি দাম কোনো রিট্রেসমেন্ট মাত্রায় (যেমন ৩৮.২%) উঠে আসে এবং সেখানে প্রতিরোধ পায়, তবে ট্রেডাররা পুট অপশন কিনতে পারেন। তাদের প্রত্যাশা থাকে যে দাম আবার কমবে।
৩. ব্রেকআউট ট্রেডিং (Breakout Trading)
কখনও কখনও, দাম ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট মাত্রাগুলো ভেঙে বেরিয়ে যেতে পারে। এই ব্রেকআউটগুলো শক্তিশালী ট্রেডিং সংকেত দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি দাম ৬১.৮% এর উপরে উঠে যায়, তবে এটি একটি বুলিশ (bullish) সংকেত হতে পারে এবং ট্রেডাররা কল অপশন কিনতে পারেন।
ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্টের সাথে অন্যান্য সূচক ব্যবহার
ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্টকে আরও কার্যকর করার জন্য, অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর (technical indicator)-এর সাথে ব্যবহার করা যেতে পারে। নিচে কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো:
- মুভিং এভারেজ (Moving Average): মুভিং এভারেজ ব্যবহার করে প্রবণতা নিশ্চিত করা যায়। যদি ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট মাত্রাগুলোর সাথে মুভিং এভারেজের সমর্থন থাকে, তবে ট্রেডিংয়ের সংকেত আরও শক্তিশালী হয়।
- আরএসআই (RSI - Relative Strength Index): আরএসআই ব্যবহার করে ওভারবট (overbought) এবং ওভারসোল্ড (oversold) অবস্থা চিহ্নিত করা যায়। যদি কোনো শেয়ারের দাম ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট মাত্রায় পৌঁছে আরএসআই ওভারসোল্ড অঞ্চলে থাকে, তবে এটি কেনার একটি ভাল সুযোগ হতে পারে।
- এমএসিডি (MACD - Moving Average Convergence Divergence): এমএসিডি ব্যবহার করে ট্রেন্ডের শক্তি এবং দিক নির্ণয় করা যায়। এমএসিডি-র সংকেতের সাথে ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট মাত্রাগুলো মিলে গেলে, ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়।
- ভলিউম অ্যানালাইসিস (Volume Analysis): ভলিউম অ্যানালাইসিস ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি বোঝা যায়। যদি ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট মাত্রায় ভলিউম বৃদ্ধি পায়, তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হতে পারে।
ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্টের সীমাবদ্ধতা
ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট একটি শক্তিশালী কৌশল হলেও, এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে:
- বিষয়ভিত্তিক: ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট অঙ্কন করার সময়, সুইং হাই এবং সুইং লো চিহ্নিত করা বিষয়ভিত্তিক হতে পারে, যা বিভিন্ন ট্রেডারের ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে।
- সব বাজারে কাজ করে না: ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট সব বাজারে সমানভাবে কাজ করে না। কিছু বাজারে এটি আরও কার্যকর, আবার কিছু বাজারে কম কার্যকর।
- ভুল সংকেত: কখনও কখনও, ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট ভুল সংকেত দিতে পারে, যার ফলে ট্রেডারদের ক্ষতি হতে পারে।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট ব্যবহার করার সময়, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার (risk management) প্রতি ध्यान রাখা জরুরি। নিচে কয়েকটি টিপস দেওয়া হলো:
- স্টপ-লস অর্ডার (Stop-Loss Order) ব্যবহার করুন: স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করে সম্ভাব্য ক্ষতি সীমিত করা যায়।
- ছোট আকারের ট্রেড করুন: প্রথমে ছোট আকারের ট্রেড করে দেখুন এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করুন।
- পুরো পুঁজি বিনিয়োগ করবেন না: কখনোই আপনার ট্রেডিং অ্যাকাউন্টের পুরো পুঁজি একটিমাত্র ট্রেডে বিনিয়োগ করবেন না।
- মানসিক дисциплиিন (discipline) বজায় রাখুন: আবেগপ্রবণ হয়ে ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেবেন না।
উপসংহার
ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুল ব্যবহৃত কৌশল। এটি ট্রেডারদের সম্ভাব্য সমর্থন এবং প্রতিরোধের মাত্রাগুলি চিহ্নিত করতে সাহায্য করে, যা ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হতে পারে। তবে, এই কৌশলটি ব্যবহারের সময় এর সীমাবদ্ধতাগুলি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে এবং সঠিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করতে হবে। অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর-এর সাথে ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট ব্যবহার করে ট্রেডিংয়ের কার্যকারিতা আরও বাড়ানো যেতে পারে।
আরও জানতে:
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন (Candlestick Pattern)
- চার্ট প্যাটার্ন (Chart Pattern)
- ট্রেডিং সাইকোলজি (Trading Psychology)
- মানি ম্যানেজমেন্ট (Money Management)
- বাইনারি অপশন স্ট্র্যাটেজি (Binary Option Strategy)
- টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস টুলস (Technical Analysis Tools)
- ফরেক্স ট্রেডিং (Forex Trading)
- শেয়ার বাজার (Share Market)
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk Management)
- গোল্ডেন রেশিও (Golden Ratio)
- আপট্রেন্ড (Uptrend)
- ডাউনট্রেন্ড (Downtrend)
- সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স (Support and Resistance)
- মুভিং এভারেজ (Moving Average)
- আরএসআই (RSI)
- এমএসিডি (MACD)
- ভলিউম ট্রেডিং (Volume Trading)
- ব্রেকআউট (Breakout)
- ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম (Trading Platform)
- বাইনারি অপশন ব্রোকার (Binary Option Broker)
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
