পুলব্যাক ট্রেডিং

পুলব্যাক ট্রেডিং

পুলব্যাক ট্রেডিং একটি বহুল ব্যবহৃত টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ভিত্তিক ট্রেডিং কৌশল। এই কৌশলটি মূলত আপট্রেন্ড বা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যে স্বল্পমেয়াদী মূল্য হ্রাস বা ‘পুলব্যাক’-এর সুযোগ কাজে লাগিয়ে লাভ করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। পুলব্যাক ট্রেডিংয়ের মূল ধারণা হলো, কোনো শেয়ার বা অ্যাসেটের দাম যখন সামগ্রিকভাবে বাড়ছে, তখন সাময়িকভাবে ছোটখাটোCorrections বা পতন হতে পারে। এই পতনগুলোকে পুলব্যাক বলা হয়। অভিজ্ঞ ট্রেডাররা এই পুলব্যাকগুলোকে নতুন করে কেনার সুযোগ হিসেবে দেখেন, কারণ তারা আশা করেন যে মূল আপট্রেন্ডটি আবার শুরু হবে।

পুলব্যাক ট্রেডিংয়ের ধারণা

একটি আপট্রেন্ডে, দাম সাধারণত হাইয়ার হাইস এবং লোয়ার লোস তৈরি করে। এর মানে হলো প্রতিটি নতুন শিখর আগের শিখরের চেয়ে বেশি এবং প্রতিটি নতুন খাদ আগের খাদ থেকে উপরে থাকে। কিন্তু এই আপট্রেন্ড সবসময় সরলরেখায় চলে না। মাঝে মাঝে, দাম পূর্বের সাপোর্ট লেভেল বা গুরুত্বপূর্ণ মুভিং এভারেজের দিকে ফিরে আসে। এই স্বল্পমেয়াদী পতনই হলো পুলব্যাক।

পুলব্যাক ট্রেডিংয়ের সুবিধা

• উচ্চ সাফল্যের সম্ভাবনা: আপট্রেন্ডের মধ্যে পুলব্যাক ট্রেড করার সময়, ট্রেডাররা সামগ্রিক প্রবণতার সাথে ট্রেড করে, যা সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।
• ঝুঁকি কম: পুলব্যাক সাধারণত স্বল্পস্থায়ী হয়, তাই স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ।
• ভালো ঝুঁকি-পুরস্কার অনুপাত: পুলব্যাক ট্রেডে সাধারণত ভালো ঝুঁকি-পুরস্কার অনুপাত পাওয়া যায়, কারণ সম্ভাব্য লাভ ক্ষতির চেয়ে বেশি হতে পারে।
• সহজ সনাক্তকরণ: পুলব্যাকগুলো চার্টে সহজেই সনাক্ত করা যায়, বিশেষ করে যখন মুভিং এভারেজ এবং সাপোর্ট লেভেল ব্যবহার করা হয়।

পুলব্যাক ট্রেডিংয়ের অসুবিধা

• ভুল সংকেত: অনেক সময় পুলব্যাক দেখতে আসল আপট্রেন্ডের মতো মনে হতে পারে, যার ফলে ভুল সংকেত তৈরি হতে পারে।
• তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের প্রয়োজন: পুলব্যাকগুলো সাধারণত দ্রুত ঘটে, তাই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
• মানসিক চাপ: পুলback এর সময় দামের ওঠানামা মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে নতুন ট্রেডারদের জন্য।

পুলব্যাক ট্রেডিংয়ের নিয়মাবলী

১. আপট্রেন্ড সনাক্তকরণ:

প্রথমত, আপনাকে একটি স্পষ্ট আপট্রেন্ড সনাক্ত করতে হবে। এর জন্য আপনি ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন, ট্রেন্ড লাইন এবং মুভিং এভারেজ ব্যবহার করতে পারেন। নিশ্চিত করুন যে দাম ধারাবাহিকভাবে নতুন উচ্চতা এবং উচ্চতর খাদ তৈরি করছে।

২. পুলব্যাক চিহ্নিত করা:

আপট্রেন্ড সনাক্ত করার পরে, দামের পতন বা পুলব্যাকের জন্য অপেক্ষা করুন। পুলব্যাক সাধারণত একটি নির্দিষ্ট শতাংশে (যেমন, 3% থেকে 5%) বা গুরুত্বপূর্ণ সাপোর্ট লেভেল বা মুভিং এভারেজের কাছাকাছি ঘটে।

৩. সাপোর্ট লেভেল নির্ধারণ:

পুলব্যাকের সময়, দাম সাধারণত একটি সাপোর্ট লেভেলে এসে থামে। এই সাপোর্ট লেভেলগুলো হলো সেই মূল্যস্তর যেখানে কেনার চাপ বেশি এবং দাম নিচে নামতে বাধা পায়। উল্লেখযোগ্য সাপোর্ট লেভেলগুলো সনাক্ত করতে ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট, পিভট পয়েন্ট এবং পূর্বের খাদগুলো ব্যবহার করুন।

৪. এন্ট্রি পয়েন্ট নির্বাচন:

সাপোর্ট লেভেলে পৌঁছানোর পরে, একটি এন্ট্রি পয়েন্ট নির্বাচন করুন। আপনি পুলব্যাকের শুরুতে বা সাপোর্ট লেভেলের কাছাকাছি এন্ট্রি নিতে পারেন। তবে, নিশ্চিত করুন যে আপনার এন্ট্রি পয়েন্টটি একটি সুস্পষ্ট কারণের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে।

৫. স্টপ-লস অর্ডার স্থাপন:

ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের জন্য, এন্ট্রি পয়েন্টের নিচে একটি স্টপ-লস অর্ডার স্থাপন করুন। স্টপ-লস অর্ডারটি এমনভাবে সেট করুন যাতে পুলব্যাক আরও খারাপ হলে আপনার মূলধন রক্ষা করা যায়। সাধারণত, সাপোর্ট লেভেলের সামান্য নিচে স্টপ-লস অর্ডার স্থাপন করা হয়।

৬. টেক প্রফিট লেভেল নির্ধারণ:

আপনার লাভের লক্ষ্য নির্ধারণ করার জন্য, টেক প্রফিট লেভেল স্থাপন করুন। আপনি পূর্বের উচ্চতা বা একটি নির্দিষ্ট ঝুঁকি-পুরস্কার অনুপাত (যেমন, 1:2 বা 1:3) ব্যবহার করে টেক প্রফিট লেভেল নির্ধারণ করতে পারেন।

৭. ভলিউম বিশ্লেষণ:

ভলিউম পুলব্যাক ট্রেডিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। পুলব্যাকের সময় ভলিউম কম থাকলে, এটি একটি দুর্বল পুলব্যাক হতে পারে এবং আপট্রেন্ড পুনরায় শুরু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অন্যদিকে, যদি পুলব্যাকের সময় ভলিউম বেশি থাকে, তবে এটি একটি শক্তিশালী পতন হতে পারে এবং আপট্রেন্ডে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা থাকে।

পুলব্যাক ট্রেডিংয়ের জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জাম

• মুভিং এভারেজ (Moving Averages): মুভিং এভারেজ ব্যবহার করে ট্রেন্ডের দিক এবং গতিবিধি বোঝা যায়। পুলব্যাকের সময়, দাম যখন মুভিং এভারেজের কাছাকাছি আসে, তখন এটি কেনার একটি সংকেত হতে পারে।
• ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট লেভেলগুলো সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল সনাক্ত করতে সাহায্য করে।
• আরএসআই (Relative Strength Index): আরএসআই একটি মোমেন্টাম নির্দেশক যা অতিরিক্ত কেনা বা অতিরিক্ত বিক্রির অবস্থা নির্দেশ করে।
• এমএসিডি (Moving Average Convergence Divergence): এমএসিডি দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক দেখায় এবং সম্ভাব্য ট্রেডিং সংকেত প্রদান করে।
• বলিঙ্গার ব্যান্ডস (Bollinger Bands): বলিঙ্গার ব্যান্ডস দামের অস্থিরতা পরিমাপ করে এবং সম্ভাব্য পুলব্যাক বা ব্রেকআউট সনাক্ত করতে সাহায্য করে।
• ভলিউম ইন্ডিকেটর (Volume Indicators): ভলিউম ইন্ডিকেটরগুলো ট্রেডিং ভলিউম বিশ্লেষণ করতে এবং পুলব্যাকের শক্তি নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।

উদাহরণ

ধরুন, একটি স্টকের দাম ক্রমাগত বাড়ছে এবং বর্তমানে এটি ৫০ ডলারে স্থিতিশীল। আপনি লক্ষ্য করলেন যে দামটি ৪৭ ডলারে এসে সামান্য স্থিতিশীল হয়েছে, যা একটি পুলব্যাক। এই ক্ষেত্রে, আপনি ৪৭ ডলারে স্টকটি কিনতে পারেন, একটি স্টপ-লস অর্ডার ৪৮ ডলারে স্থাপন করতে পারেন এবং টেক প্রফিট লেভেল ৫০.৫ ডলারে নির্ধারণ করতে পারেন।

বিভিন্ন মার্কেটে পুলব্যাক ট্রেডিং

• স্টক মার্কেট: স্টক মার্কেটে পুলব্যাক ট্রেডিং খুবই জনপ্রিয়, বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের জন্য।
• ফরেক্স মার্কেট: ফরেক্স মার্কেটে, পুলব্যাক ট্রেডিং বিভিন্ন কারেন্সি পেয়ারের সাথে করা যেতে পারে।
• ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট: ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে পুলব্যাক ট্রেডিং অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, কারণ এই মার্কেটে দামের ওঠানামা খুব বেশি।
• কমোডিটি মার্কেট: কমোডিটি মার্কেটে পুলব্যাক ট্রেডিংয়ের জন্য আপনাকে বাজারের মৌলিক বিষয়গুলো ভালোভাবে জানতে হবে।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

পুলব্যাক ট্রেডিংয়ে ঝুঁকি কমানোর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস নিচে দেওয়া হলো:

• স্টপ-লস ব্যবহার করুন: প্রতিটি ট্রেডে স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করা উচিত, যাতে অপ্রত্যাশিত পতনের ক্ষেত্রে আপনার মূলধন রক্ষা করা যায়।
• ছোট পজিশন সাইজ: আপনার ট্রেডিং অ্যাকাউন্টের আকারের তুলনায় ছোট পজিশন সাইজ ব্যবহার করুন, যাতে একটি খারাপ ট্রেড আপনার অ্যাকাউন্টকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে।
• বৈচিত্র্যকরণ: আপনার পোর্টফোলিওতে বিভিন্ন অ্যাসেট অন্তর্ভুক্ত করুন, যাতে কোনো একটি অ্যাসেটের খারাপ পারফরম্যান্স আপনার সামগ্রিক বিনিয়োগকে প্রভাবিত করতে না পারে।
• মানসিক শৃঙ্খলা: আবেগপ্রবণ হয়ে ট্রেড করা থেকে বিরত থাকুন এবং আপনার ট্রেডিং পরিকল্পনা অনুসরণ করুন।

আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

• চার্ট প্যাটার্ন : পুলব্যাক ট্রেডিংয়ের সময় চার্ট প্যাটার্নগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন।
• বাজারেরSentiment : বাজারের সামগ্রিক মনোভাব বিবেচনা করুন।
• অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডার : গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ডেটা প্রকাশের সময় ট্রেড করা এড়িয়ে চলুন।
• ডায়ভারজেন্স : টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটরগুলোতে ডায়ভারজেন্স দেখা গেলে সতর্ক থাকুন।
• ব্যাকটেস্টিং : যেকোনো ট্রেডিং কৌশল ব্যবহারের আগে ব্যাকটেস্টিং করে নেওয়া উচিত।

উপসংহার

পুলব্যাক ট্রেডিং একটি কার্যকর কৌশল হতে পারে, যদি আপনি এটি সঠিকভাবে বুঝতে পারেন এবং নিয়মগুলো মেনে চলেন। তবে, মনে রাখবেন যে ট্রেডিংয়ে সবসময় ঝুঁকি থাকে, তাই ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার নিয়মগুলো অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ