বিংশ শতাব্দীর

বিংশ শতাব্দী

বিংশ শতাব্দী মানব ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ এবং পরিবর্তনশীল সময়কাল। ১৯০১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এই সময়কালে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সংস্কৃতি—সব ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব পরিবর্তন ঘটেছে। দুটি বিশ্বযুদ্ধ, ঠান্ডা যুদ্ধ, উপনিবেশবাদের অবসান এবং বিশ্বায়নের সূচনা এই শতাব্দীর প্রধান ঘটনা।

শতাব্দীর সূচনা এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধ

বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ইউরোপ ছিল বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী শক্তি। সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার এবং উপনিবেশগুলো নিয়ে প্রতিযোগিতা দেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বাড়ায়। এই পরিস্থিতিতে ১৯১৪ সালে শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের যুবরাজ আর্চডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দের হত্যাকাণ্ড যুদ্ধের প্রাথমিক কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। জার্মানি, অস্ট্রো-হাঙ্গেরি এবং ইতালীয় সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় শক্তির বিরুদ্ধে ফ্রান্স, রাশিয়া এবং যুক্তরাজ্যের মিত্র শক্তি যুদ্ধ করে।

এই যুদ্ধ নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে আসে, যেমন মেশিনগান, ট্যাঙ্ক, বিমান এবং বিষাক্ত গ্যাস। দীর্ঘ চার বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারায় এবং ইউরোপের রাজনৈতিক মানচিত্রে পরিবর্তন আসে। ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে জার্মানির উপর কঠোর শর্ত আরোপ করা হয়, যা পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ বপন করে।

যুদ্ধ-পরবর্তী সময় এবং মহামন্দা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘ গঠিত হলেও তা বিশ্ব শান্তি রক্ষায় সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়। ১৯২৯ সালে ওয়াল স্ট্রিট ক্র্যাশের মাধ্যমে মহামন্দা শুরু হয়, যা বিশ্ব অর্থনীতিকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যুক্তরাষ্ট্রে ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের নিউ ডিল কর্মসূচির মাধ্যমে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা হয়।

এই সময়কালে ফ্যাসিবাদ এবং নাৎসিবাদের মতো উগ্র জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের উত্থান ঘটে। ইতালিতে বেনিতো মুসোলিনি এবং জার্মানিতে অ্যাডলফ হিটলার ক্ষমতায় আসেন এবং আগ্রাসী নীতি অনুসরণ করতে শুরু করেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং ঠান্ডা যুদ্ধ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ১৯৩৯ সালে শুরু হয়, যখন জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করে। এই যুদ্ধে অক্ষশক্তি (জার্মানি, ইতালি, জাপান) এবং মিত্রশক্তি (যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন) পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। পার্ল হারবারে জাপানের আক্রমণের পর যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে যোগ দেয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। হলোকাস্টের মতো ঘটনায় প্রায় ৬০ লক্ষ ইহুদি নিধন করা হয়। হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা নিক্ষেপের মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। এই যুদ্ধে প্রায় ৭ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারায়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন দুটি প্রধান শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং শুরু হয় ঠান্ডা যুদ্ধ। এই সময়কালে দুই পরাশক্তির মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ না হলেও, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে তীব্র প্রতিযোগিতা চলে। বার্লিন প্রাচীর ছিল ঠান্ডা যুদ্ধের প্রতীক। কোরীয় যুদ্ধ এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধ ছিল এই সময়কালের গুরুত্বপূর্ণ সংঘাত।

উপনিবেশবাদের অবসান এবং বিশ্বায়ন

বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে উপনিবেশবাদের অবসান হয়। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ স্বাধীনতা লাভ করে। এই দেশগুলো নিজেদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো পুনর্গঠন করতে শুরু করে।

ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানের পর বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন, পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ এবং বাণিজ্যের প্রসারের ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে শুরু করে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন

বিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি সাধিত হয়। অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব পদার্থবিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। অเล็กজান্ডার ফ্লেমিংের পেনিসিলিন আবিষ্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিপ্লব আনে।

কম্পিউটারের উদ্ভাবন এবং ইন্টারনেটের বিস্তার তথ্যপ্রযুক্তি খাতে পরিবর্তন নিয়ে আসে। মহাকাশ বিজ্ঞানে স্পুটনিক উৎক্ষেপণ এবং চাঁদে অবতরণ মানবজাতির জন্য নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োটেকনোলজির উন্নয়ন জীবন বিজ্ঞানে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করে।

বিংশ শতাব্দীর গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা

বছর	ঘটনা
১৯১৪-১৯১৮	প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
১৯২৯	মহামন্দা শুরু
১৯৩৯-১৯৪৫	দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
১৯৪৫	জাতিসংঘ গঠন
১৯৪৯	চীনের কমিউনিস্ট বিপ্লব
১৯৫০-১৯৫৩	কোরীয় যুদ্ধ
১৯৫৭	স্পুটনিক উৎক্ষেপণ
১৯৬১	বার্লিন প্রাচীর নির্মাণ
১৯৬৯	চাঁদে মানুষের পদার্পণ
১৯৭১	বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ
১৯৯১	সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন

সংস্কৃতি এবং শিল্পকলা

বিংশ শতাব্দীতে সংস্কৃতি ও শিল্পকলার ক্ষেত্রেও নানা পরিবর্তন আসে। আধুনিকতাবাদ এবং উত্তর আধুনিকতাবাদের প্রভাবে সাহিত্য, সংগীত, চিত্রকলা এবং চলচ্চিত্রে নতুন ধারা সৃষ্টি হয়। পাবলো পিকাসো, সালভাদর দালি, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে এবং ফ্রাঞ্জ কাফকা ছিলেন এই শতাব্দীর প্রভাবশালী শিল্পী ও সাহিত্যিক।

জ্যাজ, রক অ্যান্ড রোল, হিপহপ এবং পপ সঙ্গীত বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় সংগীতের ধারা। চলচ্চিত্র একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং বিশ্বব্যাপী বিনোদনের অন্যতম উৎস হয়ে ওঠে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা

বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে আর্থিক বাজারের আধুনিকীকরণ হয় এবং বিভিন্ন নতুন বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে বাইনারি অপশন ট্রেডিং অন্যতম। বাইনারি অপশন হলো একটি আর্থিক চুক্তি, যেখানে বিনিয়োগকারী কোনো সম্পদের (যেমন: স্টক, মুদ্রা, কমোডিটি) দাম একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাড়বে নাকি কমবে, তা অনুমান করেন। যদি অনুমান সঠিক হয়, তবে বিনিয়োগকারী একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভ পান, অন্যথায় তিনি বিনিয়োগ করা অর্থ হারান।

বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে সাফল্যের জন্য টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ, ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি। চার্ট প্যাটার্ন (যেমন: হেড অ্যান্ড শোল্ডারস, ডাবল টপ, ডাবল বটম), মুভিং এভারেজ, আরএসআই (Relative Strength Index) এবং MACD (Moving Average Convergence Divergence) এর মতো টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে ভবিষ্যতের মূল্য নির্ধারণের চেষ্টা করা হয়।

ভলিউম বিশ্লেষণও বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভলিউম এবং প্রাইসের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে বাজারের গতিবিধি বোঝা যায়। এছাড়াও, ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন (যেমন: ডজি, বুলিশ এনগালফিং, বিয়ারিশ এনগালফিং) ট্রেডারদের সংকেত প্রদান করে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তাই স্টপ লস এবং টেক প্রফিট অর্ডার ব্যবহার করে ঝুঁকি কমানো উচিত।

উপসংহার

বিংশ শতাব্দী ছিল মানব ইতিহাসের এক যুগান্তকারী সময়। এই শতাব্দীতে ঘটা ঘটনাগুলো বর্তমান বিশ্বকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এই শতাব্দীর অবদান অনস্বীকার্য।

ইতিহাস || ভূগোল || অর্থনীতি || রাজনীতি || বিজ্ঞান || প্রযুক্তি || সংস্কৃতি || বাইনারি অপশন || টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ || ভলিউম বিশ্লেষণ || ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা || প্রথম বিশ্বযুদ্ধ || দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ || ঠান্ডা যুদ্ধ || বিশ্বায়ন || উপনিবেশবাদ || জাতিসংঘ || মহামন্দা || আধুনিকতাবাদ || উত্তর আধুনিকতাবাদ

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ