পাবলো পিকাসো

পাবলো পিকাসো ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী শিল্পী। তিনি স্পেনে জন্মগ্রহণ করেন এবং ফ্রান্সের প্যারিসে জীবনের বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত করেন। পিকাসো ছিলেন একাধারে চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, সিরামিক শিল্পী, মঞ্চ পরিকল্পনাকারী, এবং কবি। তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করেছেন এবং শিল্পকলার ইতিহাসে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। তাঁর কাজের মধ্যে কিউবিজম নামক শিল্প আন্দোলনের জন্ম হয়, যা আধুনিক শিল্পের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

জীবনী

পাবলো রুইজ পিকাসো ১৮৮১ সালের ২৫ অক্টোবর স্পেনের মালাগা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হোসে রুইজ ই ব্লাসকো এবং মায়ের নাম মারিয়া পিকেলোর। ছিলেন একজন চিত্রশিক্ষক। পাবলোর শৈশব থেকেই ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহ ছিল। তাঁর বাবা তাঁকে শিল্পের প্রাথমিক শিক্ষা দেন। পিকাসো বার্সেলোনা এবং মাদ্রিদের আর্ট স্কুলগুলিতে পড়াশোনা করেন, কিন্তু প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল কম।

১৯০৪ সালে প্যারিসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং বোhemiয়েন জীবনযাপন করেন। এই সময় তিনি বিভিন্ন শিল্পী ও সাহিত্যিকের সাথে পরিচিত হন। তাঁর প্রথম দিকের কাজগুলিতে পোস্ট-ইম্প্রেশনিজম-এর প্রভাব দেখা যায়। ১৯০১ থেকে ১৯০৪ সালের মধ্যে তাঁর ‘নীল যুগ’ (Blue Period) এবং ১৯০৪ থেকে ১৯০৬ সালের মধ্যে ‘গোলাপী যুগ’ (Rose Period) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘নীল যুগে’ তিনি বিষণ্ণতা, দারিদ্র্য এবং নিঃসঙ্গতা ফুটিয়ে তুলেছিলেন। ‘গোলাপী যুগে’ তাঁর ছবিতে হালকা এবং আশাবাদী সুর দেখা যায়।

শিল্পকর্ম

পিকাসোর শিল্পকর্মকে বিভিন্ন পর্যায়ে ভাগ করা যায়:

প্রথম পর্যায় (১৮৯৩-১৯০৬): এই সময়ে তিনি একাডেমিক রীতিতে ছবি আঁকতেন। ‘বিজ্ঞান ও charity’ (Science and Charity) তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজগুলির মধ্যে একটি।

নীল যুগ (১৯০১-১৯০৪): এই সময়ে তিনি দরিদ্র এবং নিঃসঙ্গ মানুষের ছবি আঁকেন। ‘বৃদ্ধ গিটারবাদক’ (The Old Guitarist) এই সময়ের অন্যতম বিখ্যাত কাজ।

গোলাপী যুগ (১৯০৪-১৯০৬): এই সময়ে তাঁর ছবিতে গোলাপী রঙের প্রাধান্য দেখা যায় এবং বিষয়বস্তু হয় হালকা ও আনন্দময়। ‘আক্রোব্যাটস’ (Acrobats) এই সময়ের একটি উল্লেখযোগ্য কাজ।

আফ্রিকান প্রভাব (১৯০৭-১৯০৯): এই সময়ে তিনি আফ্রিকান শিল্পকলা দ্বারা প্রভাবিত হন এবং তাঁর ছবিতে জ্যামিতিক আকার ও সরলতা দেখা যায়। ‘আভিগননের তরুণী’ (Les Demoiselles d'Avignon) এই সময়ের একটি যুগান্তকারী কাজ।

কিউবিজম (১৯০৯-১৯১৯): পিকাসো এবং জর্জ ব্র্যাক একত্রে কিউবিজম নামক নতুন শিল্প আন্দোলনের সূচনা করেন। কিউবিজমে বস্তুকে বিভিন্ন জ্যামিতিক আকারে ভেঙে একাধিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখানোর চেষ্টা করা হয়। ‘গিটারে, সংবাদপত্র, গ্লাস এবং বোতল’ (Guitar, Newspaper, Glass and Bottle) এই সময়ের একটি উদাহরণ। কিউবিজমকে দুটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়: অ্যানালিটিক কিউবিজম (Analytical Cubism) এবং সিনথেটিক কিউবিজম (Synthetic Cubism)।

   *   অ্যানালিটিক কিউবিজম: এই পর্যায়ে বস্তুকে বিশ্লেষণ করে জ্যামিতিক আকারে ভেঙে দেওয়া হয় এবং মোনোক্রোম বা সীমিত রঙের ব্যবহার করা হয়।
   *   সিনথেটিক কিউবিজম: এই পর্যায়ে বিভিন্ন টেক্সচার ও প্যাটার্ন ব্যবহার করে কোলাজ তৈরি করা হয় এবং রঙের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়।

নব্য-ধ্রুপদীত্ব এবং সুরিয়ালিজম (১৯২০-১৯৩০): এই সময়ে পিকাসো নব্য-ধ্রুপদীত্ব এবং সুরিয়ালিজম দ্বারা প্রভাবিত হন। ‘তিনজন সঙ্গীতজ্ঞ’ (Three Musicians) এবং ‘তারকা’ (Star) তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজ।

যুদ্ধ-পরবর্তী কাজ (১৯৪০-১৯৭৩): দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পিকাসোর কাজে রাজনৈতিক ও সামাজিক বার্তা প্রকাশ পায়। ‘গের্নিকা’ (Guernica) তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত কাজগুলির মধ্যে একটি, যা স্পেনের গৃহযুদ্ধের ভয়াবহতা তুলে ধরে।

গের্নিকা

১৯৩৭ সালে স্পেনের গৃহযুদ্ধের সময় জার্মানির বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত গেर्नিকা শহরের প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে এই ছবিটি আঁকা হয়েছিল। এটি পিকাসোর সবচেয়ে বিখ্যাত কাজগুলির মধ্যে অন্যতম। এই বিশাল ক্যানভাসে কালো, সাদা ও ধূসর রঙের ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে যুদ্ধের ধ্বংসলীলা, মানুষের sufrimiento এবং পশুদের অসহায়তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। "গের্নিকা" যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছে।

পাবলো পিকাসোর উল্লেখযোগ্য চিত্রকর্ম
চিত্রকর্মের নাম	বছর	শৈলী
বিজ্ঞান ও charity	১৮৯৭	একাডেমিক
বৃদ্ধ গিটারবাদক	১৯০১	নীল যুগ
আক্রোব্যাটস	১৯০৫	গোলাপী যুগ
আভিগননের তরুণী	১৯০৭	আফ্রিকান প্রভাব
গিটারে, সংবাদপত্র, গ্লাস এবং বোতল	১৯১২	কিউবিজম
তিন সঙ্গীতজ্ঞ	১৯২১	নব্য-ধ্রুপদীত্ব
তারকা	১৯২৯	সুরিয়ালিজম
গের্নিকা	১৯৩৭	যুদ্ধ-পরবর্তী

পিকাসোর প্রভাব

পিকাসো বিংশ শতাব্দীর শিল্পকলার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিলেন। তাঁর কিউবিজম আন্দোলন আধুনিক শিল্পের ধারা পরিবর্তন করে দিয়েছে। তিনি শুধু একজন শিল্পী ছিলেন না, ছিলেন একজন উদ্ভাবক এবং পরীক্ষক। তাঁর কাজের মাধ্যমে শিল্পকলা নতুন পথে চালিত হয়েছে।

পিকাসোর প্রভাব অন্যান্য শিল্পীর কাজেও দেখা যায়। সালভাদর দালি, হোয়ান মিরো, এবং মার্ক রথকো-এর মতো শিল্পীরা পিকাসো দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবন

পিকাসোর ব্যক্তিগত জীবন ছিল জটিল। তিনি একাধিকবার বিবাহ করেন এবং তাঁর অনেক সন্তান ছিল। তাঁর প্রথম স্ত্রী ছিল ওলগা খোখলোভা, তাঁদের একটি সন্তান ছিল। পরে তিনি মারি-থেরেস ওয়াল্টার এবং ডোর‍া Maar-এর সাথে সম্পর্কে জড়ান। ফ্রাঁসোয়াজ গিলোট ছিলেন তাঁর শেষ স্ত্রী।

পিকাসো ৮ এপ্রিল, ১৯৭৩ সালে ফ্রান্সের Mougins-এ মারা যান।

পিকাসোর কৌশল ও টেকনিক

পিকাসো বিভিন্ন ধরনের কৌশল ও টেকনিক ব্যবহার করেছেন, যা তাঁর কাজকে অনন্য করে তুলেছে:

দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন: পিকাসো একটি বস্তুকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখিয়েছেন, যা কিউবিজমের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
জ্যামিতিক আকার: তিনি বস্তুকে জ্যামিতিক আকারে ভেঙে দিয়েছেন, যা তাঁর ছবিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
কোলাজ: সিনথেটিক কিউবিজমে তিনি কোলাজের ব্যবহার করেছেন, যেখানে বিভিন্ন টেক্সচার ও প্যাটার্ন যুক্ত করা হয়েছে।
রঙের ব্যবহার: পিকাসো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রঙের ব্যবহার করেছেন। ‘নীল যুগে’ তিনি নীলের বিভিন্ন শেড ব্যবহার করেছেন, ‘গোলাপী যুগে’ গোলাপী এবং ‘গের্নিকা’তে কালো, সাদা ও ধূসর রঙের ব্যবহার করেছেন।
আলো ও ছায়া: তিনি আলো ও ছায়ার ব্যবহার করে ছবিতে গভীরতা তৈরি করেছেন।

ফর্ম, রং, এবং গঠন -এর উপর তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষা আধুনিক শিল্পের ভিত্তি স্থাপন করেছিল।

পিকাসো এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর মধ্যে সম্পর্ক (রূপক)

যদিও পাবলো পিকাসো এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর মধ্যে সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই, তবে উভয়ের ক্ষেত্রেই ঝুঁকি এবং কৌশলগত সিদ্ধান্তের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

পিকাসো যেমন প্রচলিত শিল্পকলার ধারা ভেঙে নতুন কিছু সৃষ্টি করতে গিয়ে ঝুঁকি নিয়েছিলেন, তেমনি বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এও সফল হতে হলে প্রচলিত ধারণার বাইরে গিয়ে নতুন কৌশল অবলম্বন করতে হয়।

পিকাসোর কাজে বিভিন্ন আকার এবং দৃষ্টিকোণ থেকে একটি বস্তুকে দেখার যে ক্ষমতা, তা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস-এর সাথে তুলনীয়। একজন সফল ট্রেডার বিভিন্ন চার্ট প্যাটার্ন এবং ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে মার্কেটের গতিবিধি বোঝার চেষ্টা করেন, অনেকটা পিকাসোর মতো।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ভলিউম অ্যানালাইসিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা মার্কেটের গতিবিধি এবং সম্ভাব্য প্রবণতা সম্পর্কে ধারণা দেয়। এটি পিকাসোর ছবির বিভিন্ন উপাদান এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণের মতো।

উভয় ক্ষেত্রেই, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য গভীর গবেষণা, বিশ্লেষণ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য।

পিকাসো যেমন তাঁর কাজের মাধ্যমে নিজেকে ক্রমাগত নতুন করে আবিষ্কার করেছেন, তেমনি একজন বাইনারি অপশন ট্রেডারকেও নিজেকে প্রতিনিয়ত আপডেট করতে হয় এবং নতুন কৌশল শিখতে হয়।

পিকাসোর সৃষ্টিশীলতা এবং উদ্ভাবনী চিন্তা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর জগতে নতুন কৌশল উদ্ভাবনে উৎসাহিত করতে পারে।

আরও দেখুন

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ