প্রোটেক্টিভ কল

প্রোটেক্টিভ কল একটি অপশন ট্রেডিং কৌশল যা বিনিয়োগকারীদের তাদের পোর্টফোলিওকে বাজারের পতন থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এটি একটি কল অপশন ক্রয় করে এবং একই সময়ে স্টক বা অন্য কোনো সম্পদ ধারণ করে করা হয়। এই কৌশলটি বিশেষভাবে উপযোগী যখন বিনিয়োগকারীরা মনে করেন যে তাদের সম্পদের মূল্য বাড়তে পারে, কিন্তু তারা একটি বড় পতনের ঝুঁকি কমাতে চান।

প্রোটেক্টিভ কল এর মূল ধারণা

প্রোটেক্টিভ কল কৌশলটি অনেকটা বীমা করার মতো। আপনি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ (প্রিমিয়াম) প্রদান করেন যাতে আপনার বিনিয়োগ একটি নির্দিষ্ট সীমার নিচে পড়লে ক্ষতি থেকে রক্ষা পায়। এই ক্ষেত্রে, কল অপশনটি আপনার পোর্টফোলিওকে সুরক্ষা প্রদান করে।

প্রোটেক্টিভ কল কৌশল
উপাদান	বিবরণ
সম্পদ	যে স্টক বা সম্পদ আপনি রক্ষা করতে চান।
কল অপশন	একটি কল অপশন কিনুন যার স্ট্রাইক মূল্য আপনার বর্তমান পোর্টফোলিও মূল্যের উপরে।
প্রিমিয়াম	কল অপশন কেনার জন্য প্রদত্ত মূল্য।
উদ্দেশ্য	পোর্টফোলিওকে বড় ধরনের পতন থেকে রক্ষা করা।

কিভাবে প্রোটেক্টিভ কল কাজ করে

ধরুন, আপনি একটি কোম্পানির ১০০টি শেয়ারের মালিক, যার বর্তমান বাজার মূল্য ৫০ টাকা প্রতি শেয়ার। আপনি মনে করেন যে স্টকটির দাম বাড়তে পারে, তবে আপনি একটি বড় পতন নিয়ে চিন্তিত। এই ক্ষেত্রে, আপনি একটি প্রোটেক্টিভ কল কৌশল ব্যবহার করতে পারেন।

আপনি ৫৫ টাকা স্ট্রাইক মূল্যের একটি কল অপশন কিনতে পারেন। এই অপশন কেনার জন্য আপনাকে প্রিমিয়াম দিতে হবে, ধরুন প্রতি শেয়ারের জন্য ২ টাকা।

এখন, দুটি পরিস্থিতি বিবেচনা করা যাক:

যদি স্টকের দাম বাড়ে: যদি স্টকের দাম ৫৫ টাকার উপরে বেড়ে যায়, তাহলে আপনার কল অপশনটি মূল্যবান হবে। আপনি আপনার শেয়ার বিক্রি করে লাভ করতে পারবেন এবং অপশনটি ব্যবহার করে অতিরিক্ত লাভ অর্জন করতে পারবেন।
যদি স্টকের দাম কমে যায়: যদি স্টকের দাম কমে গিয়ে ৫০ টাকার নিচে নেমে যায়, তাহলে আপনার কল অপশনটি মূল্যহীন হয়ে যাবে, কিন্তু আপনার শেয়ারের দাম কমে যাওয়ার ক্ষতি আংশিকভাবে প্রিমিয়ামের মাধ্যমে কমানো হবে।

প্রোটেক্টিভ কল ব্যবহারের সুবিধা

ঝুঁকি হ্রাস: প্রোটেক্টিভ কল কৌশল আপনার পোর্টফোলিওকে বাজারের পতন থেকে রক্ষা করে।
উচ্চ লাভের সম্ভাবনা: যদি স্টকের দাম বাড়ে, তাহলে আপনি আপনার শেয়ার এবং অপশন উভয়ই থেকে লাভ করতে পারবেন।
নমনীয়তা: আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী স্ট্রাইক মূল্য এবং মেয়াদকাল নির্বাচন করতে পারেন।

প্রোটেক্টিভ কল ব্যবহারের অসুবিধা

প্রিমিয়াম খরচ: কল অপশন কেনার জন্য আপনাকে প্রিমিয়াম দিতে হবে, যা আপনার লাভের পরিমাণ কমাতে পারে।
সীমাবদ্ধ লাভ: যদি স্টকের দাম খুব বেশি বেড়ে যায়, তাহলে আপনার লাভ অপশনটির কারণে সীমিত হতে পারে।
জটিলতা: প্রোটেক্টিভ কল কৌশলটি নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছুটা জটিল হতে পারে।

প্রোটেক্টিভ কল এর উদাহরণ

ধরা যাক, একজন বিনিয়োগকারী XYZ কোম্পানির ২০০টি শেয়ার কিনেছেন, যার প্রতিটি শেয়ারের মূল্য ১০০ টাকা। তিনি মনে করেন কোম্পানিটির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, তবে বাজারের অস্থিরতা নিয়ে তিনি চিন্তিত। তাই, তিনি ১০২ টাকা স্ট্রাইক মূল্যের একটি প্রোটেক্টিভ কল অপশন কিনলেন, যার প্রিমিয়াম হল প্রতি শেয়ারের জন্য ৩ টাকা।

যদি XYZ কোম্পানির শেয়ারের দাম ১০৫ টাকায় বেড়ে যায়, তাহলে বিনিয়োগকারী তার শেয়ার বিক্রি করে ২০০০ টাকা লাভ করতে পারবেন (২০০ x (১০৫-১০০)) এবং অপশন থেকে অতিরিক্ত ৬০০ টাকা লাভ করতে পারবেন (২০০ x ৩)।
যদি XYZ কোম্পানির শেয়ারের দাম ৯০ টাকায় নেমে যায়, তাহলে বিনিয়োগকারী তার শেয়ার বিক্রি করে ২০০০ টাকা ক্ষতি করবেন (২০০ x (৯০-১০০))। তবে, অপশন কেনার কারণে তিনি ৬০০ টাকা ফেরত পাবেন (২০০ x ৩), ফলে তার মোট ক্ষতি হবে ১৪০০ টাকা।

প্রোটেক্টিভ কল কৌশল কখন ব্যবহার করা উচিত

যখন আপনি একটি নির্দিষ্ট স্টক বা সম্পদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী, কিন্তু বাজারের ঝুঁকি কমাতে চান।
যখন আপনি মনে করেন যে বাজারের পতন হতে পারে, কিন্তু আপনি আপনার বিনিয়োগ ধরে রাখতে চান।
যখন আপনার পোর্টফোলিওতে ঝুঁকির পরিমাণ কমাতে চান।

প্রোটেক্টিভ কল এবং অন্যান্য অপশন কৌশল

প্রোটেক্টিভ কল ছাড়াও, আরও অনেক অপশন কৌশল রয়েছে যা বিনিয়োগকারীরা ব্যবহার করতে পারেন। এর মধ্যে কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো:

কভার্ড কল: এই কৌশলে, আপনি আপনার মালিকানাধীন শেয়ারের বিপরীতে কল অপশন বিক্রি করেন।
পুটেড কল: এই কৌশলে, আপনি একটি কল অপশন এবং একটি পুট অপশন একসাথে কেনেন।
স্ট্র্যাডল: এই কৌশলে, আপনি একই স্ট্রাইক মূল্য এবং মেয়াদকাল সহ একটি কল অপশন এবং একটি পুট অপশন কেনেন।
স্ট্র্যাঙ্গেল: এই কৌশলে, আপনি বিভিন্ন স্ট্রাইক মূল্য সহ একটি কল অপশন এবং একটি পুট অপশন কেনেন।

প্রোটেক্টিভ কল এর টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ

প্রোটেক্টিভ কল কৌশল ব্যবহারের আগে, স্টকের টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ করা গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে আপনি স্টকের ভবিষ্যৎ গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন। কিছু গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর হলো:

মুভিং এভারেজ: এটি স্টকের গড় মূল্য নির্দেশ করে।
আরএসআই (Relative Strength Index): এটি স্টকের অতিরিক্ত ক্রয় বা অতিরিক্ত বিক্রির মাত্রা নির্দেশ করে।
এমএসিডি (Moving Average Convergence Divergence): এটি স্টকের গতিবিধি এবং প্রবণতা নির্দেশ করে।
বলিঙ্গার ব্যান্ড: এটি স্টকের দামের ওঠানামা নির্দেশ করে।
ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট: এটি সম্ভাব্য সমর্থন এবং প্রতিরোধের স্তর চিহ্নিত করে।

প্রোটেক্টিভ কল এর ভলিউম বিশ্লেষণ

ভলিউম বিশ্লেষণ আপনাকে বাজারের গতিবিধি এবং বিনিয়োগকারীদের মনোভাব বুঝতে সাহায্য করে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভলিউম ইন্ডিকেটর হলো:

অন ব্যালেন্স ভলিউম (OBV): এটি মূল্য এবং ভলিউমের মধ্যে সম্পর্ক নির্দেশ করে।
ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP): এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ট্রেডিং ভলিউমের উপর ভিত্তি করে গড় মূল্য নির্দেশ করে।
মানি ফ্লো ইনডেক্স (MFI): এটি মূল্য এবং ভলিউমের উপর ভিত্তি করে অতিরিক্ত ক্রয় বা অতিরিক্ত বিক্রির মাত্রা নির্দেশ করে।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

প্রোটেক্টিভ কল কৌশল ব্যবহার করার সময়, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দিকে ध्यान রাখা জরুরি। কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস হলো:

আপনার পোর্টফোলিওকে ডাইভারসিফাই করুন।
স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করুন।
আপনার ঝুঁকির সহনশীলতা অনুযায়ী কৌশল নির্বাচন করুন।
নিয়মিতভাবে আপনার বিনিয়োগ পর্যবেক্ষণ করুন।

উপসংহার

প্রোটেক্টিভ কল একটি কার্যকর কৌশল যা বিনিয়োগকারীদের তাদের পোর্টফোলিওকে বাজারের পতন থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। তবে, এটি একটি জটিল কৌশল এবং ব্যবহারের আগে ভালোভাবে বুঝে নেওয়া উচিত। টেকনিক্যাল এবং ভলিউম বিশ্লেষণের মাধ্যমে আপনি এই কৌশলের কার্যকারিতা বাড়াতে পারেন।

কল অপশন পুট অপশন অপশন ট্রেডিং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পোর্টফোলিও বিনিয়োগ বীমা স্টক সম্পদ টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ভলিউম বিশ্লেষণ মুভিং এভারেজ আরএসআই এমএসিডি বলিঙ্গার ব্যান্ড ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট অন ব্যালেন্স ভলিউম ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস মানি ফ্লো ইনডেক্স কভার্ড কল পুটেড কল স্ট্র্যাডল স্ট্র্যাঙ্গেল

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ