পর্তুগিজ স্থাপত্য
পর্তুগিজ স্থাপত্য
পর্তুগিজ স্থাপত্য সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও শৈলীর সংমিশ্রণে বিকশিত হয়েছে। এর মধ্যে রোমান স্থাপত্য, গোথিক স্থাপত্য, মানুয়েলিন, বারোক, এবং আধুনিক স্থাপত্যের প্রভাব লক্ষণীয়। পর্তুগালের সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং ভৌগোলিক অবস্থান এর স্থাপত্যকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে।
প্রাথমিক পর্যায়
পর্তুগালের স্থাপত্যের প্রাথমিক পর্যায়টি মূলত রোমান সাম্রাজ্য দ্বারা প্রভাবিত ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ২১৯ অব্দ থেকে ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রোমানরা পর্তুগাল শাসন করে এবং এই সময়ে এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য নির্মিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এভোরা শহরের রোমান মন্দির (Temple of Diana), যা এখনও বিদ্যমান। এছাড়াও, বিভিন্ন রোমান সেতু, রোমান রাস্তা, এবং জলপ্রণালী এর ধ্বংসাবশেষ আজও পর্তুগালে দেখা যায়। এই স্থাপত্যগুলো রোমান প্রকৌশলবিদ্যার সাক্ষ্য বহন করে।
মধ্যযুগীয় স্থাপত্য
পর্তুগালের মধ্যযুগীয় স্থাপত্য মূলত গোথিক স্থাপত্য দ্বারা প্রভাবিত। ১২শ শতাব্দীতে পর্তুগাল একটি স্বাধীন রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, গোথিক শৈলী এখানে জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই সময়ে নির্মিত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যগুলোর মধ্যে কোয়েম্ব্রা ক্যাথিড্রাল (Coimbra Cathedral) অন্যতম। এটি পর্তুগালের প্রাচীনতম এবং গুরুত্বপূর্ণ গোথিক স্থাপত্যগুলির মধ্যে একটি। এছাড়াও, আলকোবাসা মঠ (Alcobaça Monastery) এবং বাজার মঠ (Batalha Monastery) গোথিক স্থাপত্যের চমৎকার উদাহরণ। এই মঠগুলো ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসেবে স্বীকৃত।
মানুয়েলিন শৈলী
পর্তুগিজ স্থাপত্যের সবচেয়ে স্বতন্ত্র এবং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শৈলী হলো মানুয়েলিন (Manueline)। এটি ১৫শ এবং ১৬শ শতাব্দীতে পর্তুগালে বিকাশ লাভ করে। এই শৈলীটি রাজা প্রথম ম্যানুয়েল এর শাসনামলে (১৪৯৫-১৫২১) বিশেষভাবে জনপ্রিয়তা পায়। মানুয়েলিন শৈলী গথিক স্থাপত্য, পুনর্জাগরণ, এবং মোরিশ স্থাপত্য-এর একটি মিশ্রণ। এই শৈলীর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো জটিল এবং অলঙ্কৃত নকশা, যা সমুদ্র, প্রকৃতি, এবং পর্তুগিজ সাম্রাজ্যের প্রতীক দ্বারা গঠিত।
মানুয়েলিন শৈলীর কিছু উল্লেখযোগ্য উদাহরণ:
- জেরোনিমোস মঠ (Jerónimos Monastery), লিসবন: এটি পর্তুগালের সবচেয়ে বিখ্যাত মানুয়েলিন স্থাপত্যগুলির মধ্যে অন্যতম।
- বেলেম টাওয়ার (Belém Tower), লিসবন: এটি তেজো নদীর তীরে অবস্থিত একটি দুর্গ, যা মানুয়েলিন শৈলীর একটি সুন্দর উদাহরণ।
- সান্তা ক্রুজ চার্চ (Santa Cruz Church), কোয়েম্ব্রা: এই চার্চটিতে মানুয়েলিন শৈলীর বিভিন্ন উপাদান বিদ্যমান।
- কনভেন্ট অফ ক্রিস্ট (Convent of Christ), টমার: এটি টেম্পলার এবং নাইটস হসপিটালার কর্তৃক নির্মিত একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা, যেখানে মানুয়েলিন শৈলীর প্রভাব দেখা যায়।
বারোক স্থাপত্য
১৭শ এবং ১৮শ শতাব্দীতে পর্তুগালে বারোক স্থাপত্য জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই শৈলীটি নাটকীয়তা, বিশালতা, এবং অলঙ্করণের উপর জোর দেয়। বারোক স্থাপত্যের প্রভাব পর্তুগালের গির্জা, মহল, এবং সাধারণ স্থাপত্য-এ দেখা যায়।
বারোক স্থাপত্যের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ:
- সান্তা এংরাজা চার্চ (Santa Engrácia Church), লিসবন: এটি পর্তুগালের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বারোক গির্জা।
- ডিউক অফ ব্রাগান্সার প্রাসাদ (Palace of the Dukes of Braganza), ব্রাগা: এটি বারোক স্থাপত্যের একটি সুন্দর উদাহরণ, যা ব্রাগা শহরের অন্যতম আকর্ষণ।
- বোম জেসুস ডো মন্ট সিন্টুয়ারি (Bom Jesus do Monte Sanctuary), ব্রাগা: এই সিন্টুয়ারিটি বারোক স্থাপত্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব মিশ্রণ।
আধুনিক স্থাপত্য
বিংশ শতাব্দীতে পর্তুগালে আধুনিক স্থাপত্যের বিকাশ ঘটে। এই সময়ে কার্যকারিতা, সরলতা, এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া হয়। পর্তুগিজ আধুনিক স্থাপত্যের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের মধ্যে আলভারো সিজা ভিয়েরা (Álvaro Siza Vieira) এবং এদুয়ার্ডো সোরোতো (Eduardo Souto de Moura) উল্লেখযোগ্য।
আধুনিক স্থাপত্যের কিছু উদাহরণ:
- পর্তুগাল প্যাভিলিয়ন (Portugal Pavilion), সেভিল ওয়ার্ল্ড এক্সপো '৯২: আলভারো সিজা ভিয়েরা কর্তৃক ডিজাইন করা এই প্যাভিলিয়নটি আধুনিক স্থাপত্যের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।
- কাসা মুজিকা (Casa da Música), পোর্তো: রেম কুলহাস (Rem Koolhaas) কর্তৃক ডিজাইন করা এই কনসার্ট হলটি আধুনিক স্থাপত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।
- ইউনিভার্সিটি অফ এভোরা ক্যাম্পাস (University of Évora Campus): আলভারো সিজা ভিয়েরা কর্তৃক ডিজাইন করা এই ক্যাম্পাসটি আধুনিক স্থাপত্যের একটি সুন্দর উদাহরণ।
স্থাপত্যের উপাদান ও কৌশল
পর্তুগিজ স্থাপত্যে ব্যবহৃত কিছু সাধারণ উপাদান এবং কৌশল নিচে উল্লেখ করা হলো:
- পাথর: পর্তুগালে পাথর একটি বহুল ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রী। স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত গ্রানাইট, চুনাপাথর, এবং মার্বেল বিভিন্ন স্থাপত্য নির্মাণে ব্যবহৃত হয়।
- কাঠ: কাঠামোগত উপাদান এবং অলঙ্করণের জন্য কাঠ ব্যবহৃত হয়।
- আজুলেজো: এটি পর্তুগিজ টাইলস, যা স্থাপত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আজুলেজো সাধারণত দেয়াল এবং মেঝেতে ব্যবহৃত হয় এবং এটি বিভিন্ন নকশা ও রঙে পাওয়া যায়।
- খিলান ও গম্বুজ: গোথিক এবং বারোক স্থাপত্যে খিলান ও গম্বুজের ব্যবহার দেখা যায়।
- অলঙ্করণ: পর্তুগিজ স্থাপত্যে জটিল এবং বিস্তারিত অলঙ্করণ একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। মানুয়েলিন শৈলীতে এটি বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
শৈলী | সময়কাল | বৈশিষ্ট্য |
রোমান | খ্রিস্টপূর্ব ২১৯ - ৪৭৬ | সরল নকশা, ব্যবহারিক গঠন, স্থায়িত্ব |
গোথিক | ১২শ - ১৫শ শতাব্দী | খিলান, উল্লম্বতা, বিশালতা, রঙিন কাঁচের জানালা |
মানুয়েলিন | ১৫শ - ১৬শ শতাব্দী | জটিল অলঙ্করণ, সমুদ্র ও প্রকৃতির প্রতীক, পর্তুগিজ সাম্রাজ্যের প্রভাব |
বারোক | ১৭শ - ১৮শ শতাব্দী | নাটকীয়তা, বিশালতা, অলঙ্করণ, জমকালো শৈলী |
আধুনিক | বিংশ শতাব্দী - বর্তমান | কার্যকারিতা, সরলতা, নতুন প্রযুক্তি, ন্যূনতম নকশা |
স্থাপত্যের উপর প্রভাব বিস্তারকারী বিষয়সমূহ
পর্তুগিজ স্থাপত্যের উপর বিভিন্ন ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক, এবং সাংস্কৃতিক প্রভাব রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- ভূগোল: পর্তুগালের উপকূলীয় অবস্থান এবং ভূমিকম্প প্রবণতা স্থাপত্য নকশাকে প্রভাবিত করেছে।
- ইতিহাস: রোমান, মুর, এবং অন্যান্য সংস্কৃতির প্রভাব পর্তুগিজ স্থাপত্যে দেখা যায়।
- ধর্ম: খ্রিস্টান ধর্মের প্রভাব পর্তুগালের গির্জা এবং মঠের স্থাপত্যে স্পষ্ট।
- সাম্রাজ্যবাদ: পর্তুগিজ সাম্রাজ্যের বিস্তার স্থাপত্যে নতুন উপাদান এবং শৈলী নিয়ে আসে।
উপসংহার
পর্তুগিজ স্থাপত্য একটি সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্য। সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও শৈলীর সংমিশ্রণে এটি বিকশিত হয়েছে। রোমান স্থাপত্যের সরলতা থেকে শুরু করে মানুয়েলিন শৈলীর জটিলতা এবং আধুনিক স্থাপত্যের কার্যকারিতা – পর্তুগিজ স্থাপত্য সর্বদা উদ্ভাবনী এবং আকর্ষণীয়। এটি পর্তুগালের ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
পর্তুগালের ইতিহাস লিসবনের স্থাপত্য পোর্তোর স্থাপত্য এভোরার স্থাপত্য মানুয়েলিন স্থাপত্য গোথিক স্থাপত্য বারোক স্থাপত্য রোমান সাম্রাজ্য ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান আলভারো সিজা ভিয়েরা এদুয়ার্ডো সোরোতো আজুলেজো টেম্পলার নাইটস হসপিটালার তেজো নদী ব্রাগা কোয়েম্ব্রা পোর্তো এভোরা লিসবন
কৌশল, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণের জন্য:
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
- মুভিং এভারেজ
- আরএসআই (রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইন্ডেক্স)
- এমএসিডি (মুভিং এভারেজ কনভারজেন্স ডাইভারজেন্স)
- ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট
- বোলিঙ্গার ব্যান্ডস
- ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (ভিডব্লিউএপি)
- অন ব্যালেন্স ভলিউম (ওবিভি)
- চাইকিন মানি ফ্লো
- ডাইভারজেন্স
- সাপোর্ট এবং রেজিস্টেন্স লেভেল
- ট্রেন্ড লাইন
- চার্ট প্যাটার্ন
- গ্যাপ অ্যানালাইসিস
- মার্কেট সেন্টিমেন্ট
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ