দারিদ্র্য হার
দারিদ্র্য হার : একটি বিস্তারিত আলোচনা
ভূমিকা
দারিদ্র্য একটি জটিল সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা। এটি শুধু অভাব বা সম্পদের স্বল্পতা নয়, বরং সুযোগের অভাব, দুর্বল স্বাস্থ্য, শিক্ষার অভাব এবং সামাজিক বৈষম্যের মতো একাধিক বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে। দারিদ্র্য একটি দেশের অর্থনীতি ও সমাজের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই নিবন্ধে দারিদ্র্য হারের সংজ্ঞা, পরিমাপ, কারণ, প্রভাব এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
দারিদ্র্য হারের সংজ্ঞা
দারিদ্র্য হার হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো দেশ বা অঞ্চলের জনসংখ্যার কত শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে, তার শতকরা হার। দারিদ্র্যসীমা নির্ধারণ করা হয় মানুষের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম আয় বা ভোগের ওপর ভিত্তি করে। এই সীমা বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের জন্য ভিন্ন হতে পারে।
দারিদ্র্য হারের পরিমাপ
দারিদ্র্য হার পরিমাপের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। নিচে কয়েকটি প্রধান পদ্ধতি আলোচনা করা হলো:
- মাথাপিছু আয় পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মাথাপিছু গড় আয় হিসাব করা হয়। এরপর একটি নির্দিষ্ট আয়সীমাকে দারিদ্র্যসীমা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। যাদের আয় এই সীমার নিচে, তাদের দরিদ্র হিসেবে গণ্য করা হয়। মাথাপিছু আয়
- দারিদ্র্য রেখা পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে, একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালোরি গ্রহণের সক্ষমতাকে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। খাদ্য ও খাদ্যবিহীন চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম আয়কে দারিদ্র্যসীমা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দারিদ্র্য রেখা
- বহু-মাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (MPI): এই সূচকটি স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং জীবনযাত্রার মানের মতো বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে দারিদ্র্য পরিমাপ করে। এটি শুধু আয়ের ওপর নির্ভর করে না। বহু-মাত্রিক দারিদ্র্য সূচক
- ভোগব্যয় পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে, মানুষের ভোগের পরিমাণ বিবেচনা করা হয়। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ভোগের নিচে বসবাসকারী মানুষকে দরিদ্র হিসেবে ধরা হয়। ভোগব্যয়
দারিদ্র্যের কারণ
দারিদ্র্যের পেছনে বহুবিধ কারণ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কিছু প্রধান কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:
- অর্থনৈতিক কারণ:
* বেকারত্ব: কর্মসংস্থানের সুযোগের অভাব দারিদ্র্যের অন্যতম প্রধান কারণ। বেকারত্ব * নিম্ন মজুরি: অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকদের মজুরি এতটাই কম থাকে যে তা দিয়ে ভালোভাবে জীবনযাপন করা যায় না। মজুরি * অর্থনৈতিক বৈষম্য: সমাজে সম্পদ ও আয়ের অসম বণ্টন দারিদ্র্য বাড়ায়। বৈষম্য * মুদ্রাস্ফীতি: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তোলে। মুদ্রাস্ফীতি
- সামাজিক কারণ:
* শিক্ষার অভাব: শিক্ষার অভাব মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ কমিয়ে দেয় এবং দারিদ্র্যের কারণ হয়। শিক্ষা * স্বাস্থ্যসেবার অভাব: দুর্বল স্বাস্থ্যসেবা মানুষের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং দরিদ্র করে তোলে। স্বাস্থ্যসেবা * সামাজিক বৈষম্য: জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ বা অন্য কোনো কারণে বৈষম্যমূলক আচরণ দারিদ্র্য তৈরি করতে পারে। সামাজিক বৈষম্য * রাজনৈতিক অস্থিরতা: রাজনৈতিক অস্থিরতা অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাধা দেয় এবং দারিদ্র্য বাড়ায়। রাজনৈতিক অস্থিরতা
- প্রাকৃতিক কারণ:
* প্রাকৃতিক দুর্যোগ: বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের জীবন ও সম্পদ ধ্বংস করে এবং দারিদ্র্য সৃষ্টি করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ * জলবায়ু পরিবর্তন: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষিকাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অনেক মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়ে। জলবায়ু পরিবর্তন
- জনসংখ্যাগত কারণ:
* অতিরিক্ত জনসংখ্যা: অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে সম্পদের ওপর চাপ বাড়ে এবং দারিদ্র্য দেখা দেয়। জনসংখ্যা
দারিদ্র্যের প্রভাব
দারিদ্র্যের প্রভাব ব্যক্তি, সমাজ ও অর্থনীতির ওপর সুদূরপ্রসারী। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রভাব উল্লেখ করা হলো:
- ব্যক্তিগত প্রভাব:
* অপুষ্টি: দারিদ্র্যের কারণে মানুষ পর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না এবং অপুষ্টিতে ভোগে। অপুষ্টি * স্বাস্থ্য সমস্যা: দরিদ্র মানুষেরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয় এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। স্বাস্থ্য সমস্যা * শিক্ষার অভাব: দরিদ্র পরিবারের শিশুরা প্রায়শই স্কুলে যেতে পারে না এবং শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। শিক্ষার অভাব * কম জীবন প্রত্যাশা: দরিদ্র মানুষের গড় আয়ু কম হয়। জীবন প্রত্যাশা
- সামাজিক প্রভাব:
* অপরাধ বৃদ্ধি: দারিদ্র্যের কারণে সমাজে অপরাধ প্রবণতা বাড়ে। অপরাধ * সামাজিক অস্থিরতা: দারিদ্র্য সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। সামাজিক অস্থিরতা * দুর্বল সামাজিক পুঁজি: দারিদ্র্য মানুষের মধ্যে আস্থার অভাব তৈরি করে এবং সামাজিক বন্ধন দুর্বল করে দেয়। সামাজিক পুঁজি
- অর্থনৈতিক প্রভাব:
* উৎপাদনশীলতা হ্রাস: দরিদ্র মানুষের কর্মক্ষমতা কম থাকে, যা উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয়। উৎপাদনশীলতা * অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস: দারিদ্র্য একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাধা দেয়। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি * বাজারের আকার হ্রাস: দরিদ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কম থাকায় বাজারের আকার সংকুচিত হয়। বাজার
দারিদ্র্য দূরীকরণের উপায়
দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় আলোচনা করা হলো:
- অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি:
* কর্মসংস্থান সৃষ্টি: নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে। কর্মসংস্থান * শিল্পায়ন: শিল্প খাতের উন্নয়ন ঘটাতে হবে, যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াবে। শিল্পায়ন * ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ: ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলোকে উৎসাহিত করতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প * বিনিয়োগ বৃদ্ধি: দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে। বিনিয়োগ
- সামাজিক উন্নয়ন:
* শিক্ষা: সবার জন্য শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা * স্বাস্থ্যসেবা: দরিদ্র মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা * সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি: বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা ইত্যাদি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু রাখতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি * নারীর ক্ষমতায়ন: নারীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। নারীর ক্ষমতায়ন
- সুশাসন ও দুর্নীতি দমন:
* সুশাসন: সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে, যাতে সরকারি সেবাগুলো সবার কাছে সহজে পৌঁছায়। সুশাসন * দুর্নীতি দমন: দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যাতে উন্নয়নমূলক কাজে অপচয় রোধ করা যায়। দুর্নীতি দমন
- প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা:
* দুর্যোগ প্রস্তুতি: প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস ও মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। দুর্যোগ প্রস্তুতি * দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা: দুর্যোগের সময় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য দ্রুত ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
- ভূমি সংস্কার:
* ভূমিহীনদের ভূমি বিতরণ: ভূমিহীন ও প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে খাস জমি বিতরণ করতে হবে। ভূমি সংস্কার * ভূমি মালিকানা নিশ্চিতকরণ: দরিদ্র কৃষকদের ভূমি মালিকানা নিশ্চিত করতে হবে। ভূমি মালিকানা
দারিদ্র্য হারের বৈশ্বিক চিত্র
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে। বিশ্বব্যাংক সাব-সাহারান আফ্রিকা দারিদ্র্যের হটস্পট হিসেবে পরিচিত। এশিয়ার অনেক দেশ দারিদ্র্য reduction-এ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, তবে এখনও অনেক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। এশিয়া
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ দারিদ্র্য হারের পূর্বাভাস দিতে সহায়ক হতে পারে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সূচক এবং বাজারের গতিবিধি বিশ্লেষণ করে। ভলিউম বিশ্লেষণ ও গুরুত্বপূর্ণ, যা অর্থনৈতিক কার্যকলাপের মাত্রা বুঝতে সাহায্য করে।
উপসংহার
দারিদ্র্য একটি জটিল সমস্যা, যার সমাধান দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সম্ভব। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক উন্নয়ন, সুশাসন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করা যেতে পারে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং সরকারের সঠিক নীতি গ্রহণের মাধ্যমে একটি দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।
| দেশ | দারিদ্র্য হার (%) | |
|---|---|---|
| বাংলাদেশ | ২০.৫ | |
| ভারত | ২১.৯ | |
| কেনিয়া | ৩৫.৪ | |
| ব্রাজিল | ৮.৫ | |
| চীন | ১.৭ |
আরও জানতে:
- অর্থনৈতিক উন্নয়ন
- সামাজিক ন্যায়বিচার
- টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর
- ফিনান্সিয়াল মডেলিং
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন
- ট্রেডিং স্ট্র্যাটেজি
- মার্কেট সেন্টিমেন্ট
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
- মুভিং এভারেজ
- আরএসআই (Relative Strength Index)
- এমএসিডি (Moving Average Convergence Divergence)
- ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট
- বুলিশ ট্রেন্ড
- বেয়ারিশ ট্রেন্ড
- সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স
- ভলিউম ট্রেডিং
- ডে ট্রেডিং
- সুইং ট্রেডিং
- পজিশন ট্রেডিং
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
