বিশ্বব্যাংক
বিশ্বব্যাংক
বিশ্বব্যাংক একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এর মূল উদ্দেশ্য সদস্য দেশগুলোকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচন করা। এটি ১৯৪৪ সালে ব্রেটটন উডস সম্মেলন-এ ৪০টি দেশের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তর ওয়াশিংটন, ডি.সি.-তে অবস্থিত।
ইতিহাস
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব অর্থনীতি পুনর্গঠনের লক্ষ্যে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তার জন্য বিশ্বব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে এর নাম ছিল আন্তর্জাতিক পুনর্গঠন ও উন্নয়ন ব্যাংক (International Bank for Reconstruction and Development - IBRD)। পরবর্তীতে এটি বিশ্বব্যাংক গ্রুপ নামে পরিচিতি লাভ করে, যার অধীনে আরও কয়েকটি সংস্থা যুক্ত হয়।
- ১৯৪৪: ব্রেটটন উডস সম্মেলনে বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবনা গ্রহণ করা হয়।
- ১৯৪৬: আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু হয়।
- ১৯৪৯: আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (IDA) প্রতিষ্ঠিত হয়, যা স্বল্প আয়ের দেশগুলোকে সহায়তা প্রদান করে।
- ১৯৫৬: আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (IMF) এর সাথে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা হয়।
- ১৯৬৬: আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ নিশ্চয়তা সংস্থা (MIGA) প্রতিষ্ঠিত হয়।
- ১৯৮৮: বহু-দেশ বিনিয়োগ গ্যারান্টি সংস্থা (MIG) গঠিত হয়।
- ২০০০: বিশ্বব্যাংক গ্রুপ কর্পোরেট গভর্নেন্স কাঠামো সংস্কার করা হয়।
বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সদস্যসমূহ
বিশ্বব্যাংক গ্রুপে পাঁচটি প্রধান সংস্থা রয়েছে:
| সংস্থা | ভূমিকা | আন্তর্জাতিক পুনর্গঠন ও উন্নয়ন ব্যাংক (IBRD) | উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ঋণ ও সহায়তা প্রদান করে। | আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (IDA) | স্বল্প আয়ের দেশগুলোকে অনুদান ও স্বল্প সুদের ঋণ প্রদান করে। | আন্তর্জাতিক অর্থ কর্পোরেশন (IFC) | বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে উৎসাহিত করে। | বহু-দেশ বিনিয়োগ গ্যারান্টি সংস্থা (MIGA) | বিনিয়োগকারীদের রাজনৈতিক ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে। | বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি কেন্দ্র (ICSID) | সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করে। |
বর্তমানে, বিশ্বব্যাংকের সদস্য সংখ্যা ১৮৯টি। প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের ভোটের অধিকার তার অর্থনৈতিক আকারের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার হওয়ার সুবাদে ব্যাংকের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিশ্বব্যাংকের কার্যাবলী
বিশ্বব্যাংক বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
- ঋণ প্রদান: অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে ঋণ প্রদান করা হয়।
- অনুদান প্রদান: দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের দেশগুলোকে বিনামূল্যে অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়।
- কারিগরি সহায়তা: নীতি নির্ধারণ, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় সহায়তা প্রদান করা হয়।
- গবেষণা ও জ্ঞান বিতরণ: উন্নয়ন সংক্রান্ত গবেষণা পরিচালনা করা এবং জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিতরণ করা হয়।
- বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি: বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে সহায়তা করা হয়।
বিশ্বব্যাংক দারিদ্র্য বিমোচন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে উন্নয়ন, এবং অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়।
ঋণ এবং সহায়তার প্রকারভেদ
বিশ্বব্যাংক বিভিন্ন ধরনের ঋণ ও সহায়তা প্রদান করে, যা সদস্য দেশগুলোর প্রয়োজন অনুযায়ী নির্ধারিত হয়:
- ফিক্সড রেট লোন: সুদের হার নির্দিষ্ট থাকে।
- ভেরিয়েবল রেট লোন: সুদের হার বাজারের পরিস্থিতির সাথে পরিবর্তিত হয়।
- কারেন্সি ডিনমিনেটেড লোন: মার্কিন ডলার বা অন্য কোনো বহুল ব্যবহৃত মুদ্রায় ঋণ প্রদান করা হয়।
- লোকাল কারেন্সি লোন: সদস্য দেশের স্থানীয় মুদ্রায় ঋণ প্রদান করা হয়।
- অনুদান: কোনো সুদ বা পরিশোধের প্রয়োজন হয় না।
- ক্রেডিট: স্বল্প সুদের হারে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ।
এই ঋণ এবং সহায়তার শর্তাবলী প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং প্রকল্পের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে।
বিশ্বব্যাংকের সমালোচনা
বিশ্বব্যাংকের কিছু নীতি এবং কার্যক্রমের বিষয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
- শর্তযুক্ত ঋণ: ঋণ পাওয়ার জন্য আরোপিত কঠোর শর্তগুলো প্রায়শই উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- পরিবেশগত প্রভাব: কিছু প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
- সিদ্ধান্ত গ্রহণে বৈষম্য: উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় ধনী দেশগুলোর বেশি প্রভাব রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
- স্বচ্ছতার অভাব: ব্যাংকের কিছু কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
- স্থানীয় সংস্কৃতির উপেক্ষা: উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয় না বলে সমালোচনা রয়েছে।
এই সমালোচনা সত্ত্বেও, বিশ্বব্যাংক উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
বিশ্বব্যাংকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বিশ্বব্যাংক বর্তমানে তাদের কৌশলগত কাঠামোতে পরিবর্তন এনেছে এবং নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো:
- টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) অর্জন: ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করা।
- জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা: উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করা।
- দারিদ্র্য বিমোচন: চরম দারিদ্র্য দূর করতে নতুন কৌশল গ্রহণ করা।
- মানবিক সংকট মোকাবেলা: যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মহামারীর মতো মানবিক সংকট মোকাবেলায় সহায়তা করা।
- প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা: উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ব্যবহার বাড়াতে সহায়তা করা।
বিশ্বব্যাংক বিশ্বাস করে যে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং উদ্ভাবনী সমাধানগুলোর মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরও উন্নত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
অভ্যন্তরীণ লিঙ্ক
- অর্থনৈতিক উন্নয়ন
- দারিদ্র্য
- জলবায়ু পরিবর্তন
- শিক্ষা
- স্বাস্থ্য
- অবকাঠামো
- যুক্তরাষ্ট্র
- আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল
- ব্রেটটন উডস সম্মেলন
- টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা
- ওয়াশিংটন, ডি.সি.
- বিনিয়োগ
- ঋণ
- অনুদান
- আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
- বৈশ্বিক অর্থনীতি
- উন্নয়নশীল দেশ
- সুশাসন
- জাতিসংঘ
- অর্থনীতি
কৌশল, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ
(যেহেতু বিশ্বব্যাংক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, তাই এর কার্যক্রমের সাথে সম্পর্কিত কিছু কৌশল, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণের ধারণা আলোচনা করা হলো)
- পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন: বিশ্বব্যাংক বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করে ঝুঁকি কমিয়ে আনে। (পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা)
- ঝুঁকি মূল্যায়ন: বিনিয়োগের আগে প্রকল্পের ঝুঁকি মূল্যায়ন করা হয়। (ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা)
- খরচ-সুবিধা বিশ্লেষণ: প্রকল্পের খরচ ও সুবিধা তুলনা করে অর্থনৈতিক কার্যকারিতা যাচাই করা হয়। (খরচ-সুবিধা বিশ্লেষণ)
- ডিসকাউন্টেড ক্যাশ ফ্লো (DCF): ভবিষ্যতের নগদ প্রবাহের বর্তমান মূল্য হিসাব করা হয়। (ডিসকাউন্টেড ক্যাশ ফ্লো)
- স sensitivity analysis: প্রকল্পের ফলাফলের উপর বিভিন্ন কারণের প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়। (সংবেদনশীলতা বিশ্লেষণ)
- ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP): একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ট্রেডিং ভলিউমের উপর ভিত্তি করে গড় মূল্য নির্ধারণ করা হয়। (ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস)
- মুভিং এভারেজ: নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গড় মূল্য ট্র্যাক করে প্রবণতা নির্ণয় করা হয়। (মুভিং এভারেজ)
- রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইনডেক্স (RSI): একটি শেয়ারের অতিরিক্ত ক্রয় বা অতিরিক্ত বিক্রির পরিস্থিতি নির্ণয় করা হয়। (রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইনডেক্স)
- MACD (Moving Average Convergence Divergence): দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে ট্রেডিং সংকেত তৈরি করা হয়। (MACD)
- Fibonacci Retracement: সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল চিহ্নিত করা হয়। (Fibonacci Retracement)
- Elliott Wave Theory: বাজারের প্রবণতা বোঝার জন্য ওয়েভ প্যাটার্ন ব্যবহার করা হয়। (এলিয়ট ওয়েভ থিওরি)
- Candlestick Pattern: ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি বিশ্লেষণ করা হয়। (ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন)
- Technical Indicators: প্রযুক্তিগত সূচক ব্যবহার করে বাজারের ভবিষ্যৎ গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। (টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর)
- Fundamental Analysis: অর্থনৈতিক ডেটা এবং কোম্পানির আর্থিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। (ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস)
- Market Sentiment Analysis: বাজারের সামগ্রিক মনোভাব এবং বিনিয়োগকারীদের মানসিকতা বিশ্লেষণ করা হয়। (মার্কেট সেন্টিমেন্ট অ্যানালাইসিস)
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
