চলচ্চিত্রের ইতিহাস
চলচ্চিত্রের ইতিহাস
thumb|right|১৮৯৬ সালের প্যারিসের গ্র্যান্ড ক্যাফে-তে চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী
চলচ্চিত্রের ইতিহাস উনিশ শতকের শেষভাগে শুরু হয়। এরপর থেকে এটি প্রযুক্তির অগ্রগতি, শৈল্পিক উদ্ভাবন এবং সাংস্কৃতিক প্রভাবের এক দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে। চলচ্চিত্র কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি সমাজ, রাজনীতি ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি।
চলচ্চিত্রের প্রাথমিক পর্যায় (১৮৯০-১৯২০)
চলচ্চিত্রের শুরুটা ছিল নিতান্তই নিরীক্ষার ফল। ১৮৯০ এর দশকে থমাস আলভা এডিসন এবং লুই লুমিয়ের-এর মতো বিজ্ঞানীরা ছবিকে গতিশীল করার চেষ্টা করেন। লুমিয়ের ভ্রাতৃদ্বয় ১৮৯৫ সালে ‘সিনেম্যাটোগ্রাফ’ আবিষ্কার করেন এবং প্যারিসে প্রথম চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী করেন। তাঁদের তৈরি করা স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রগুলো ছিল দৈনন্দিন জীবনের দৃশ্য—যেমন, শ্রমিকদের কারখানা থেকে বেরোনো, ট্রেনের আগমন ইত্যাদি। এই সময়ের চলচ্চিত্রগুলো ছিল মূলত ডকুমেন্টারি ঘরানার।
এই সময়ে চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু এবং নির্মাণশৈলীতে নতুনত্ব আসে। জর্জ মেলিয়েস নামক ফরাসি চলচ্চিত্রকার কল্পবিজ্ঞান এবং জাদুবিদ্যার উপাদান যুক্ত করে চলচ্চিত্রকে নতুন মাত্রা দেন। তাঁর ‘এ ট্রিপ টু দ্য মুন’ (১৯০২) চলচ্চিত্রটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
১৯১০-এর দশকে ডি. ডব্লিউ. গ্রিফিথ-এর মতো নির্মাতারা চলচ্চিত্রের গল্প বলার কৌশলকে উন্নত করেন। গ্রিফিথ তাঁর ‘দ্য বার্থ অফ এ নেশন’ (১৯১৫) চলচ্চিত্রে জটিল সম্পাদনা এবং ক্যামেরা অ্যাঙ্গেলের ব্যবহার করেন, যা চলচ্চিত্র নির্মাণে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। তবে এই ছবিটি বর্ণবাদের অভিযোগে সমালোচিত হয়েছিল।
নির্বাক চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগ (১৯২০-১৯৩০)
১৯২০-এর দশক ছিল নির্বাক চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগ। এই সময়ে চার্লি চ্যাপলিন, বাস্টার কিটন এবং হারল্ড লয়েড-এর মতো কমেডি অভিনেতা জনপ্রিয়তা লাভ করেন। চার্লি চ্যাপলিনের ‘দ্য কিড’ (১৯২১) এবং ‘দ্য গোল্ড রাশ’ (১৯২৫) আজও দর্শকপ্রিয়। নির্বাক চলচ্চিত্রগুলোতে সংলাপ না থাকলেও অভিনেতাদের শারীরিক ভাষা, অঙ্গভঙ্গি এবং সঙ্গীতের মাধ্যমে গল্প বলা হতো।
এই সময়ে ফ্রিৎস ল্যাং-এর ‘মেট্রোপলিস’ (১৯২৭) চলচ্চিত্রটি বিজ্ঞান কল্পকাহিনী এবং সামাজিক নাটকের এক অসাধারণ উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়াও, সের্গেই আইজেনস্টাইন-এর ‘ব্যাটলশিপ পটেমকিন’ (১৯২৫) চলচ্চিত্রটি সম্পাদনার নতুন কৌশল ব্যবহারের জন্য বিখ্যাত।
শব্দ চলচ্চিত্রের আগমন ও সোনালী যুগ (১৯৩০-১৯৫০)
১৯২৭ সালে ‘দ্য জ্যাজার সিঙ্গার’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে শব্দ চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরু হয়। এর ফলে চলচ্চিত্র নির্মাণে এক নতুন বিপ্লব আসে। অভিনেতাদের সংলাপ বলার সুযোগ তৈরি হয় এবং গল্প বলার ধরণে পরিবর্তন আসে।
১৯৩০-এর দশকে হলিউড-এর সোনালী যুগ শুরু হয়। এই সময়ে ওয়ার্নার ব্রাদার্স, প্যারামাউন্ট পিকচার্স, আরকেও পিকচার্স এবং টোয়েন্টিথ সেঞ্চুরি ফক্স-এর মতো বড় বড় স্টুডিও তৈরি হয়। এই স্টুডিওগুলো প্রচুর চলচ্চিত্র তৈরি করত এবং তারকা অভিনেতাদের জনপ্রিয় করে তোলে। ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপরা, জন ফোর্ড এবং হাওয়ার্ড হকস-এর মতো পরিচালকরা এই সময়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চলচ্চিত্র বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যুদ্ধের পর নব্য বাস্তববাদ (Italian Neorealism) নামক একটি নতুন চলচ্চিত্র ধারার জন্ম হয়, যা ইতালির দরিদ্র ও সাধারণ মানুষের জীবন তুলে ধরেছিল।
চলচ্চিত্রের আধুনিকীকরণ (১৯৫০-১৯৮০)
১৯৫০-এর দশকে টেলিভিশন-এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় চলচ্চিত্র শিল্পের ওপর কিছুটা প্রভাব পড়ে। চলচ্চিত্র নির্মাতারা দর্শকদের আকৃষ্ট করার জন্য নতুন কৌশল অবলম্বন করতে শুরু করেন। এই সময়ে কালার ফিল্ম-এর ব্যবহার বাড়ে এবং সিনেমাস্কোপ-এর মতো ওয়াইডস্ক্রিন ফরম্যাট চালু হয়।
আলফ্রেড হিচকক, স্ট্যানলি কুবরিক এবং ফেদেরিকো ফেলিনি-এর মতো পরিচালকরা এই সময়ে তাঁদের প্রভাবশালী কাজগুলো তৈরি করেন। হিচককের ‘সাইকো’ (১৯৬০), কুবরিকের ‘২০০১: এ স্পেস ওডিসি’ (১৯৬৮) এবং ফেলিনির ‘৮½’ (১৯৬৩) চলচ্চিত্রগুলো চলচ্চিত্র শিল্পের ইতিহাসে মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।
১৯৬0 ও ১৯৭০-এর দশকে ফরাসি নব তরঙ্গ (French New Wave) এবং নিউ হলিউড (New Hollywood) আন্দোলন চলচ্চিত্র নির্মাণে নতুনত্ব নিয়ে আসে। এই সময়ের চলচ্চিত্র নির্মাতারা প্রচলিত নিয়ম ভেঙে নতুন শৈলী এবং বিষয়বস্তু নিয়ে কাজ করেন।
আধুনিক চলচ্চিত্র (১৯৮০-বর্তমান)
১৯৮০-এর দশক থেকে চলচ্চিত্র শিল্পে প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বাড়তে থাকে। স্পেশাল এফেক্টস এবং কম্পিউটার গ্রাফিক্স ব্যবহারের মাধ্যমে চলচ্চিত্র নির্মাতারা দর্শকদের জন্য আরও আকর্ষণীয় দৃশ্য তৈরি করতে সক্ষম হন।
স্টিভেন স্পিলবার্গ, জর্জ লুকাস, মার্টিন স্কোরসেজি এবং ক Quentin Tarantino-এর মতো পরিচালকরা এই সময়ে তাঁদের প্রভাবশালী কাজগুলো তৈরি করেন। স্পিলবার্গের ‘ই.টি. দ্য এক্সট্রা-টেরেস্ট্রিয়াল’ (১৯৮২), লুকাসের ‘স্টার ওয়ার্স’ (১৯৭৭), স্কোরসেজির ‘গুডফেলাস’ (১৯৯০) এবং টারান্টিনোর ‘পাল্প ফিকশন’ (১৯৯৪) চলচ্চিত্রগুলো আধুনিক চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ।
বর্তমানে মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হল এবং স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ বাড়িয়েছে। চলচ্চিত্র শিল্প এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি বৈচিত্র্যময় এবং বিশ্বব্যাপী দর্শকদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।
চলচ্চিত্রের প্রকারভেদ
চলচ্চিত্রকে বিভিন্ন ধারায় ভাগ করা যায়, যেমন:
চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রক্রিয়া
চলচ্চিত্র নির্মাণ একটি জটিল প্রক্রিয়া। এর মধ্যে রয়েছে:
1. চিত্রনাট্য লেখা 2. প্রযোজনা 3. নির্দেশনা 4. অভিনয় 5. চিত্রগ্রহণ 6. সম্পাদনা 7. শব্দ সংযোজন 8. ভিজ্যুয়াল এফেক্টস
চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎ
প্রযুক্তিগত উন্নতির সাথে সাথে চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) এবং অগমেন্টেড রিয়ালিটি (AR)-এর মতো নতুন প্রযুক্তি চলচ্চিত্র দেখার অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করবে। এছাড়াও, স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোর কারণে চলচ্চিত্র এখন আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং চলচ্চিত্রের মধ্যে সম্পর্ক
যদিও চলচ্চিত্র এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং দুটি ভিন্ন ক্ষেত্র, তবে এদের মধ্যে কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই ঝুঁকি এবং সুযোগ বিদ্যমান। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে যেমন বাজারের গতিবিধি বিশ্লেষণ করে সঠিক সময়ে বিনিয়োগ করতে হয়, তেমনি চলচ্চিত্র নির্মাণেও বাজারের চাহিদা এবং দর্শকদের রুচি বিবেচনা করে চলচ্চিত্র তৈরি করতে হয়।
এই কৌশলগুলো বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের মতো চলচ্চিত্র শিল্পেও গুরুত্বপূর্ণ।
| বছর | ঘটনা |
| ১৮৯৫ | লুমিয়ের ভ্রাতৃদ্বয়ের সিনেম্যাটোগ্রাফ আবিষ্কার ও প্রথম চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী |
| ১৯২৭ | ‘দ্য জ্যাজার সিঙ্গার’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে শব্দ চলচ্চিত্রের আগমন |
| ১৯৫০ | কালার ফিল্ম এবং সিনেমাস্কোপের ব্যবহার শুরু |
| ১৯৭৭ | ‘স্টার ওয়ার্স’ মুক্তি ও স্পেশাল এফেক্টসের ব্যবহার বৃদ্ধি |
| ১৯৯০s | ডিজিটাল চলচ্চিত্র নির্মাণের শুরু |
| বর্তমান | স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি |
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
