অ্যাকশন

অ্যাকশন চলচ্চিত্র এবং ভিডিও গেম

অ্যাকশন একটি চলচ্চিত্র এবং ভিডিও গেমের ধারা যা উত্তেজনাপূর্ণ এবং দ্রুত গতির ঘটনা, শারীরিক দক্ষতা এবং প্রায়শই সহিংসতা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এই ধারার মূল উপাদান হলো নায়কের সাহসিকতা, বিপদ মোকাবেলা এবং প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার। অ্যাকশন চলচ্চিত্র এবং গেমগুলি সাধারণত দর্শকদের বা খেলোয়াড়দের মধ্যে একটি তীব্র উত্তেজনা এবং রোমাঞ্চ সৃষ্টি করে।

ইতিহাস

অ্যাকশন ঘরানার চলচ্চিত্র এবং গেমের ইতিহাস বেশ দীর্ঘ এবং জটিল। এর উৎস প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সাম্রাজ্যের বীরত্বপূর্ণ গল্প এবং লোককথায় খুঁজে পাওয়া যায়। তবে, আধুনিক অ্যাকশন ঘরানার শুরু বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে।

প্রাথমিক বছর (১৯২০-১৯৫০): এই সময়ে, অ্যাকশন মূলত পশ্চিমা চলচ্চিত্র এবং দুঃসাহসিক কাহিনীগুলোতে দেখা যেত। কাউবয় এবং শেরিফদের গল্পগুলো দর্শকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করে।
স্বর্ণযুগ (১৯৬০-১৯৮০): এই সময়ে, অ্যাকশন ঘরানা বিশেষভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করে। জেমস বন্ড সিরিজের চলচ্চিত্রগুলো অ্যাকশন ঘরানার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। ব্রুস লি-র মতো মার্শাল আর্ট শিল্পীরাও এই ধারায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
আধুনিক অ্যাকশন (১৯৯০-বর্তমান): এই সময়ে, অ্যাকশন চলচ্চিত্র এবং গেমগুলোতে নতুন প্রযুক্তি এবং বিশেষ প্রভাবের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। অ্যাড্রেনালিন, ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস, এবং মিশন: ইম্পসিবল-এর মতো সিরিজগুলো বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা লাভ করে। ভিডিও গেমের ক্ষেত্রে, কল অফ ডিউটি, অ্যাসাসিন'স ক্রিড, এবং গ্র্যান্ড থেফট অটো-এর মতো গেমগুলো অ্যাকশন ঘরানার প্রধান উদাহরণ।

অ্যাকশন চলচ্চিত্রের উপাদান

অ্যাকশন চলচ্চিত্রের কিছু সাধারণ উপাদান নিচে উল্লেখ করা হলো:

বিপদজনক পরিস্থিতি: অ্যাকশন চলচ্চিত্রে প্রায়শই নায়ককে জীবন-হুমকি সৃষ্টিকারী পরিস্থিতিতে পড়তে দেখা যায়।
শারীরিক দক্ষতা: নায়কের শারীরিক সক্ষমতা, যেমন মার্শাল আর্ট, বন্দুক চালানো, এবং ড্রাইভিং, অ্যাকশন চলচ্চিত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
সহিংসতা: অ্যাকশন চলচ্চিত্রে প্রায়শই যুদ্ধ, মারামারি, এবং বিস্ফোরণ-এর মতো সহিংস দৃশ্য দেখা যায়।
দ্রুত গতি: অ্যাকশন চলচ্চিত্রের দৃশ্যগুলো সাধারণত খুব দ্রুত গতিতে সম্পাদনা করা হয়, যা দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
বিশেষ প্রভাব: আধুনিক অ্যাকশন চলচ্চিত্রে ভিজ্যুয়াল এফেক্টস এবং সাউন্ড ডিজাইন-এর ব্যবহার বিশেষভাবে লক্ষণীয়।

অ্যাকশন চলচ্চিত্রের সাধারণ উপাদান
উপাদান	বিবরণ
বিপদজনক পরিস্থিতি	নায়ককে জীবন-হুমকি সৃষ্টিকারী পরিস্থিতিতে ফেলা হয়।
শারীরিক দক্ষতা	নায়কের শারীরিক সক্ষমতা প্রদর্শিত হয়।
সহিংসতা	যুদ্ধ, মারামারি, এবং বিস্ফোরণের দৃশ্য থাকে।
দ্রুত গতি	দ্রুত সম্পাদনার মাধ্যমে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হয়।
বিশেষ প্রভাব	ভিজ্যুয়াল এফেক্টস ও সাউন্ড ডিজাইন ব্যবহার করা হয়।

অ্যাকশন ভিডিও গেমের উপাদান

অ্যাকশন ভিডিও গেমের কিছু সাধারণ উপাদান নিচে উল্লেখ করা হলো:

যুদ্ধ: অ্যাকশন গেমের মূল উপাদান হলো বিভিন্ন ধরনের শত্রুর সাথে যুদ্ধ করা।
অনুসন্ধান: গেমের কাহিনী অনুসরণ করে বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান চালানো।
ধাঁধা সমাধান: কিছু অ্যাকশন গেমে ধাঁধা সমাধান করার প্রয়োজন হয়।
প্ল্যাটফর্মিং: গেমের চরিত্রকে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের উপর দিয়ে লাফানো এবং চলাচল করানো।
মাল্টিপ্লেয়ার: অনেক অ্যাকশন গেমে একাধিক খেলোয়াড় একসাথে খেলার সুযোগ থাকে।

অ্যাকশন ভিডিও গেমের সাধারণ উপাদান
উপাদান	বিবরণ
যুদ্ধ	শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করা।
অনুসন্ধান	গেমের কাহিনী অনুসরণ করে বিভিন্ন স্থানে ঘোরা।
ধাঁধা সমাধান	জটিল সমস্যা সমাধান করা।
প্ল্যাটফর্মিং	প্ল্যাটফর্মের উপর দিয়ে লাফানো ও চলাচল করা।
মাল্টিপ্লেয়ার	একাধিক খেলোয়াড় একসাথে খেলা।

অ্যাকশন ঘরানার উপধারা

অ্যাকশন ঘরানার মধ্যে বিভিন্ন উপধারা রয়েছে, যা নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য দ্বারা চিহ্নিত করা হয়:

সাইন্স ফিকশন অ্যাকশন: এই উপধারায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপাদান ব্যবহার করা হয়, যেমন স্পেস অপেরা এবং ডিস্টোপিয়ান ভবিষ্যৎ। উদাহরণ: স্টার ওয়ার্স, ব্ল্যাড রানার।
স্পাই অ্যাকশন: এই উপধারায় গুপ্তচরবৃত্তি, ষড়যন্ত্র এবং আন্তর্জাতিক গোয়েন্দাগিরি দেখানো হয়। উদাহরণ: জেমস বন্ড, বর্ন সিরিজ।
মার্শাল আর্ট অ্যাকশন: এই উপধারায় মার্শাল আর্টের বিভিন্ন কৌশল এবং দর্শন দেখানো হয়। উদাহরণ: এন্টার দ্য ড্রাগন, ক্রাশড ফিস্ট।
সুপারহিরো অ্যাকশন: এই উপধারায় কমিক বইয়ের সুপারহিরোদের গল্প দেখানো হয়। উদাহরণ: আয়রন ম্যান, ব্যাটম্যান।
মিলিটারি অ্যাকশন: এই উপধারায় সামরিক অভিযান, যুদ্ধ এবং সৈন্যদের জীবন দেখানো হয়। উদাহরণ: ব্ল্যাক হক ডাউন, সেভিং প্রাইভেট রায়ান।

অ্যাকশন চলচ্চিত্রের নির্মাণ কৌশল

অ্যাকশন চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ কৌশল অবলম্বন করা হয়:

স্টান্ট: বিপজ্জনক এবং উত্তেজনাপূর্ণ দৃশ্যগুলো স্টান্ট শিল্পীদের মাধ্যমে করানো হয়।
ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল: দ্রুত গতির দৃশ্যগুলো ধারণ করার জন্য বিশেষ ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল এবং মুভমেন্ট ব্যবহার করা হয়।
সম্পাদনা: দ্রুত সম্পাদনার মাধ্যমে দৃশ্যগুলোর মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হয়।
সাউন্ড ডিজাইন: শক্তিশালী সাউন্ড এফেক্টস এবং আবহ সঙ্গীত ব্যবহার করে দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ানো হয়।
ভিজ্যুয়াল এফেক্টস: আধুনিক অ্যাকশন চলচ্চিত্রে কম্পিউটার-জেনারেটেড ইমেজারি (CGI) ব্যবহার করে অসাধারণ দৃশ্য তৈরি করা হয়।

অ্যাকশন ভিডিও গেমের ডিজাইন কৌশল

অ্যাকশন ভিডিও গেম ডিজাইন করার ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা হয়:

গেমপ্লে: গেমপ্লে মসৃণ এবং আকর্ষণীয় হওয়া উচিত, যাতে খেলোয়াড়রা দীর্ঘ সময় ধরে খেলতে উৎসাহিত হয়।
নিয়ন্ত্রণ: গেমের নিয়ন্ত্রণ সহজ এবং স্বজ্ঞাত হওয়া উচিত, যাতে খেলোয়াড়রা সহজে চরিত্র নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
লেভেল ডিজাইন: গেমের লেভেলগুলো আকর্ষণীয় এবং চ্যালেঞ্জিং হওয়া উচিত, যাতে খেলোয়াড়রা নতুন অভিজ্ঞতা পায়।
এআই: গেমের শত্রুদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) উন্নত হওয়া উচিত, যাতে তারা খেলোয়াড়দের জন্য কঠিন প্রতিপক্ষ হতে পারে।
গ্রাফিক্স: গেমের গ্রাফিক্স সুন্দর এবং বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত, যা খেলোয়াড়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

অ্যাকশন ঘরানার ভবিষ্যৎ

অ্যাকশন ঘরানার ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল। নতুন প্রযুক্তি এবং সৃজনশীল ধারণা এই ধারাকে আরও উন্নত করবে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) এবং অগমেন্টেড রিয়ালিটি (AR)-এর মতো প্রযুক্তিগুলো অ্যাকশন চলচ্চিত্র এবং গেমের অভিজ্ঞতাকে আরও বাস্তবসম্মত করে তুলবে। এছাড়াও, গল্প বলার নতুন পদ্ধতি এবং চরিত্র বিকাশের মাধ্যমে অ্যাকশন ঘরানার চলচ্চিত্র এবং গেমগুলো দর্শকদের এবং খেলোয়াড়দের আরও বেশি আকৃষ্ট করবে।

আরও দেখুন

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ