চলচ্চিত্রের ধারা
চলচ্চিত্রের ধারা
ভূমিকা
চলচ্চিত্রের ধারা বা ফিল্ম জঁার (Film genre) হলো চলচ্চিত্রের শ্রেণীবিন্যাস, যা নির্মাণশৈলী, বিষয়বস্তু, এবং দর্শকদের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। প্রতিটি ধারার নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে যা একে অন্য ধারা থেকে আলাদা করে। এই ধারাগুলো সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে এবং নতুন নতুন ধারা যুক্ত হয়েছে। চলচ্চিত্র শিল্পে ধারা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা দর্শকদের পছন্দের চলচ্চিত্র খুঁজে পেতে এবং নির্মাতাদের জন্য একটি কাঠামো প্রদান করে।
ধারার প্রকারভেদ
চলচ্চিত্রের ধারাকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। নিচে কয়েকটি প্রধান ধারা আলোচনা করা হলো:
১. অ্যাকশন (Action): অ্যাকশন চলচ্চিত্রগুলোতে সাধারণত শারীরিক দক্ষতা, সাহসিকতা এবং বিপদজনক পরিস্থিতি দেখানো হয়। এই ধরনের চলচ্চিত্রে মারামারি, তাড়া করা, এবং বিস্ফোরণের মতো দৃশ্য বেশি থাকে। উদাহরণ: ডাই হার্ড, মিশন: ইম্পসিবল।
২. কমেডি (Comedy): কমেডি চলচ্চিত্রগুলো দর্শকদের হাসানোর উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়। এই ধরনের চলচ্চিত্রে হাস্যকর পরিস্থিতি, সংলাপ এবং চরিত্র থাকে। উদাহরণ: চার্লি Chaplin, মি. বিন।
৩. ড্রামা (Drama): ড্রামা চলচ্চিত্রগুলো সাধারণত বাস্তব জীবনের জটিলতা, সম্পর্ক এবং আবেগ নিয়ে তৈরি হয়। এই ধরনের চলচ্চিত্রে চরিত্রগুলোর মানসিক অবস্থা এবং তাদের মধ্যেকার দ্বন্দ্বের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়। উদাহরণ: দ্য শশাঙ্ক রিডেম্পশন, ফরেস্ট গাম্প।
৪. সাইন্স ফিকশন (Science Fiction): সাইন্স ফিকশন চলচ্চিত্রগুলো বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতের গল্প বলে। এই ধরনের চলচ্চিত্রে প্রায়শই মহাকাশ, এলিয়েন, এবং উন্নত প্রযুক্তি দেখানো হয়। উদাহরণ: স্টার ওয়ার্স, 2001: এ স্পেস ওডিসি।
৫. হরর (Horror): হরর চলচ্চিত্রগুলো দর্শকদের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়। এই ধরনের চলচ্চিত্রে ভুত, প্রেতাত্মা, এবং অন্যান্য ভীতিকর উপাদান ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ: দ্য এক্সরসিস্ট, হ্যালোইন।
৬. থ্রিলার (Thriller): থ্রিলার চলচ্চিত্রগুলো দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা এবং সাসপেন্স তৈরি করে। এই ধরনের চলচ্চিত্রে রহস্য, ষড়যন্ত্র, এবং অপরাধের উপাদান থাকে। উদাহরণ: সাইকো, সেভেন।
৭. রোমান্স (Romance): রোমান্স চলচ্চিত্রগুলো প্রেম এবং ভালোবাসার গল্প নিয়ে তৈরি হয়। এই ধরনের চলচ্চিত্রে দুটি মানুষের মধ্যেকার সম্পর্ক এবং তাদের আবেগ দেখানো হয়। উদাহরণ: টাইটানিক, দ্য নোটবুক।
৮. ওয়েস্টার্ন (Western): ওয়েস্টার্ন চলচ্চিত্রগুলো সাধারণত আমেরিকার পুরাতন পশ্চিমের জীবনযাত্রা এবং সংস্কৃতি নিয়ে তৈরি হয়। এই ধরনের চলচ্চিত্রে কাউবয়, বন্দুকযুদ্ধ, এবং মরুভূমির দৃশ্য বেশি থাকে। উদাহরণ: দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি, ওয়ানস আপন এ টাইম ইন দ্য ওয়েস্ট।
৯. অ্যানিমেশন (Animation): অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রগুলো কার্টুন বা কম্পিউটার গ্রাফিক্সের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। এই ধরনের চলচ্চিত্রে কল্পনাবাদী চরিত্র এবং জগৎ দেখানো হয়। উদাহরণ: টয় স্টোরি, স্পিরিটেড অ্যাওয়ে।
১০. ফ্যান্টাসি (Fantasy): ফ্যান্টাসি চলচ্চিত্রগুলো জাদু, পৌরাণিক কাহিনী, এবং কল্পনাবাদী জগৎ নিয়ে তৈরি হয়। এই ধরনের চলচ্চিত্রে ড্রাগন, পরী, এবং অন্যান্য জাদুবিদ্যা সম্পর্কিত উপাদান থাকে। উদাহরণ: দ্য লর্ড অফ দ্য রিংস, হ্যারি পটার।
১১. ঐতিহাসিক (Historical): ঐতিহাসিক চলচ্চিত্রগুলো ইতিহাসBased ঘটনা বা ব্যক্তিত্ব নিয়ে তৈরি করা হয়। এই ধরনের চলচ্চিত্রে অতীতের জীবনযাত্রা এবং সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়। উদাহরণ: গ্ল্যাডিয়েটর, ব্রেইভহার্ট।
১২. সঙ্গীতধর্মী (Musical): সঙ্গীতধর্মী চলচ্চিত্রগুলোতে গান এবং নাচ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই ধরনের চলচ্চিত্রে গল্প বলার জন্য গান এবং নাচের ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ: সিংগিন’ ইন দ্য রেইন, লা লা ল্যান্ড।
ধারা এবং উপধারা
এছাড়াও, প্রতিটি প্রধান ধারার অধীনে আরও অনেক উপধারা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাকশন ধারার মধ্যে রয়েছে:
- সামরিক অ্যাকশন (Military Action): ব্ল্যাক হক ডাউন
- পুলিশ অ্যাকশন (Police Action): ডাই হার্ড
- সুপারহিরো অ্যাকশন (Superhero Action): অ্যাভেঞ্জার্স
কমেডি ধারার মধ্যে রয়েছে:
- রোমান্টিক কমেডি (Romantic Comedy): হিউ ইট লাইক ইট ইজ
- ব্ল্যাক কমেডি (Black Comedy): ডক্টর স্ট্রেঞ্জলাভ
- স্যাটায়ার (Satire): বোর্যাট
চলচ্চিত্রের ধারার বিবর্তন
চলচ্চিত্রের ধারাগুলো সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে। পূর্বে যে ধারাগুলো জনপ্রিয় ছিল, বর্তমানে সেগুলোর আবেদন কমে যেতে পারে, আবার নতুন নতুন ধারা তৈরি হতে পারে।
- ১৯২০-১৯৩০ এর দশক: এই সময়ে কমেডি, ওয়েস্টার্ন, এবং সঙ্গীতধর্মী চলচ্চিত্রগুলো জনপ্রিয় ছিল। দ্য কিড, স্টেজকোচ এই সময়ের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র।
- ১৯৪০-১৯৫০ এর দশক: এই সময়ে ড্রামা, ফিল্ম নয়ার, এবং সাইন্স ফিকশন চলচ্চিত্রগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করে। ক্যাসাব্লাঙ্কা, দ্য ডে দ্য আর্থ স্টুড স্টিল এই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র।
- ১৯৬০-১৯৭০ এর দশক: এই সময়ে নতুন ওয়েভ (New Wave) এবং ব্ল্যাক কমেডি চলচ্চিত্রগুলো দর্শকদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে। বন্ড জেমস বন্ড, দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি এই সময়ের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র।
- ১৯৮০-১৯৯০ এর দশক: এই সময়ে অ্যাকশন, সাইন্স ফিকশন, এবং হরর চলচ্চিত্রগুলো জনপ্রিয়তা পায়। টার্মিনেটর, এlien এই সময়ের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র।
- ২০০০-বর্তমান: এই সময়ে সুপারহিরো চলচ্চিত্র, ফ্যান্টাসি চলচ্চিত্র, এবং অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রগুলো দর্শকদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। দ্য ডার্ক নাইট, অ্যাভাটার, ফ্রোজেন এই সময়ের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র।
চলচ্চিত্রের ধারা এবং দর্শক
দর্শকদের পছন্দ এবং চাহিদার ওপর ভিত্তি করে চলচ্চিত্রের ধারাগুলো তৈরি হয়। বিভিন্ন বয়সের এবং রুচির দর্শকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের চলচ্চিত্র তৈরি করা হয়। কিছু দর্শক অ্যাকশন এবং থ্রিলার পছন্দ করেন, আবার কিছু দর্শক কমেডি এবং রোমান্স পছন্দ করেন। নির্মাতারা দর্শকদের চাহিদা মাথায় রেখে চলচ্চিত্র তৈরি করেন, যাতে তাদের চলচ্চিত্র দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হয়।
ধারা এবং চলচ্চিত্র নির্মাণ
চলচ্চিত্রের ধারা চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো প্রদান করে। নির্মাতারা একটি নির্দিষ্ট ধারার বৈশিষ্ট্যগুলো অনুসরণ করে চলচ্চিত্র তৈরি করেন, যা দর্শকদের জন্য একটি পরিচিত অভিজ্ঞতা তৈরি করে।
- স্ক্রিপ্ট লেখা: চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লেখার সময় ধারার বৈশিষ্ট্যগুলো বিবেচনা করা হয়।
- কাস্টিং: চলচ্চিত্রের চরিত্র নির্বাচন করার সময় ধারার ধরনের ওপর নির্ভর করে অভিনেতা নির্বাচন করা হয়।
- পরিচালনা: চলচ্চিত্রের পরিচালনা করার সময় ধারার বৈশিষ্ট্যগুলো অনুসরণ করা হয়, যেমন অ্যাকশন চলচ্চিত্রের জন্য দ্রুত গতির সম্পাদনা এবং হরর চলচ্চিত্রের জন্য ভীতিকর আবহ তৈরি করা।
- সম্পাদনা: চলচ্চিত্রের সম্পাদনা করার সময় ধারার ওপর ভিত্তি করে দৃশ্যগুলো সাজানো হয়।
উপসংহার
চলচ্চিত্রের ধারা চলচ্চিত্র শিল্পের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি দর্শকদের পছন্দের চলচ্চিত্র খুঁজে পেতে সাহায্য করে এবং নির্মাতাদের জন্য একটি কাঠামো প্রদান করে। সময়ের সাথে সাথে ধারাগুলো পরিবর্তিত হয়েছে এবং নতুন নতুন ধারা যুক্ত হয়েছে। চলচ্চিত্র নির্মাতারা দর্শকদের চাহিদা এবং পছন্দের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধারার চলচ্চিত্র তৈরি করে থাকেন।
আরও জানতে:
- চলচ্চিত্রের ইতিহাস
- চলচ্চিত্রের প্রকারভেদ
- ফিল্ম ক্রিটিক
- চলচ্চিত্রের ভাষা
- সিনেমাটোগ্রাফি
- চলচ্চিত্রের সঙ্গীত
- অভিনয়
- চলচ্চিত্রের প্রযোজনা
- চলচ্চিত্রের বিতরণ
- ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল
- অস্কার
- কান চলচ্চিত্র উৎসব
- ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব
- বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব
- বলিউড
- হলিউড
- টলিউড
- কোরিয়ান চলচ্চিত্র
- ফরাসি নতুন তরঙ্গ (French New Wave)
- ইতালীয় নব্য বাস্তবতা (Italian Neorealism)
কৌশল, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ:
- টেকনিক্যাল এনালাইসিস
- চার্ট প্যাটার্ন
- মুভিং এভারেজ
- আরএসআই (Relative Strength Index)
- এমএসিডি (Moving Average Convergence Divergence)
- ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট
- ভলিউম ওয়েটড এভারেজ প্রাইস (VWAP)
- অন-ব্যালেন্স ভলিউম (OBV)
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
- সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল
- ব্রেকআউট এবং ব্রেকডাউন
- ট্রেন্ড লাইন
- গ্যাপ এনালাইসিস
- ডাইভারজেন্স
- পলিগনাল রিট্রেসমেন্ট
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
