ইন্টারনেট উদ্ভাবক

ইন্টারনেট উদ্ভাবক

ভূমিকা

ইন্টারনেট আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী উদ্ভাবনগুলির মধ্যে অন্যতম। এটি যোগাযোগ, বাণিজ্য, শিক্ষা এবং বিনোদনসহ আমাদের জীবনের প্রায় প্রতিটি দিককে পরিবর্তন করেছে। ইন্টারনেটের উদ্ভাবন কোনো একক ব্যক্তির কৃতিত্ব নয়, বরং বহুসংখ্যক বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী এবং প্রোগ্রামারের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। এই নিবন্ধে, ইন্টারনেটের প্রাথমিক উদ্ভাবক এবং এর বিকাশে তাদের অবদান নিয়ে আলোচনা করা হবে। সেই সাথে, বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর মতো আধুনিক প্রযুক্তি কিভাবে ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল, তাও তুলে ধরা হবে।

ইন্টারনেটের প্রাথমিক ধারণা

ইন্টারনেটের ধারণা ১৯৫০-এর দশকে ঠান্ডা যুদ্ধের সময়কালে প্রথম বিকশিত হতে শুরু করে। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ একটি বিকেন্দ্রীকৃত যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চেয়েছিল, যা কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে আক্রমণ হলেও কার্যকর থাকবে। এই ধারণার প্রাথমিক ভিত্তি ছিল প্যাকেট সুইচিং, যেখানে ডেটা ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পাঠানো হয়।

গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবকগণ

ভ্যাননেভার বুশ (Vannevar Bush)

ভ্যাননেভার বুশকে ইন্টারনেটের একজন অগ্রদূত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৪৫ সালে প্রকাশিত তার বিখ্যাত নিবন্ধ "As We May Think" এ তিনি মেমেক্স (Memex) নামক একটি যন্ত্রের ধারণা দেন। মেমেক্স ছিল এমন একটি ডিভাইস, যেখানে মানুষ তাদের জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করতে পারত। এই ধারণাটি পরবর্তীতে হাইপারটেক্সট এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব এর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

জে. সি. আর. লিক্লাইডার (J.C.R. Licklider)

জে. সি. আর. লিক্লাইডারকে "ইন্টারগ্যালাকটিক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক"-এর জনক বলা হয়। ১৯৬২ সালে তিনি মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের ARPA (Advanced Research Projects Agency)-এর প্রধান হিসেবে যোগদান করেন এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের একটি দলকে নেটওয়ার্কিং নিয়ে কাজ করতে উৎসাহিত করেন। লিক্লাইডারের ধারণা ছিল এমন একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করা, যেখানে সবাই একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে এবং তথ্য আদান-প্রদান করতে পারবে।

পল বারান (Paul Baran)

পল বারান ছিলেন একজন আমেরিকান প্রকৌশলী এবং র‍্যান্ড কর্পোরেশন (RAND Corporation)-এর কর্মী। ১৯৬০-এর দশকে তিনি প্যাকেট সুইচিং নেটওয়ার্কের ধারণা দেন, যা ইন্টারনেটের ভিত্তি স্থাপন করে। বারানের প্রস্তাবিত নেটওয়ার্ক কোনো কেন্দ্রীয় পয়েন্টের উপর নির্ভরশীল ছিল না, ফলে এটি অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য ছিল।

ডোনাল্ড ডেভিস (Donald Davies)

ডোনাল্ড ডেভিস ছিলেন একজন ব্রিটিশ কম্পিউটার বিজ্ঞানী। তিনি একই সময়ে পল বারানের মতো প্যাকেট সুইচিং-এর ধারণা নিয়ে কাজ করেন এবং এই শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। ডেভিসের কাজ নেটওয়ার্কিং প্রযুক্তির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

লরেন্স রবার্টস (Lawrence Roberts)

লরেন্স রবার্টসকে ARPANET-এর প্রধান স্থপতি হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি ১৯৬৯ সালে ARPA-এর অধীনে ARPANET তৈরি করেন, যা ইন্টারনেটের প্রথম কার্যকরী প্রোটোটাইপ ছিল। রবার্টসের নেতৃত্বে, ARPANET চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ডেটা আদান-প্রদান শুরু করে, যা ইন্টারনেটের যাত্রা শুরু করে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো: UCLA, SRI, UCSB, এবং University of Utah।

ভিন্ট সের্ফ (Vint Cerf) ও বব কান (Bob Kahn)

ভিন্ট সের্ফ এবং বব কানকে "ইন্টারনেটের জনক" হিসেবে অভিহিত করা হয়। ১৯৭০-এর দশকে তারা TCP/IP (Transmission Control Protocol/Internet Protocol) প্রোটোকল তৈরি করেন, যা ইন্টারনেটের ডেটা ট্রান্সমিশন স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই প্রোটোকল বিভিন্ন নেটওয়ার্ককে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম করে তোলে এবং ইন্টারনেটের বিশ্বব্যাপী প্রসারে সহায়তা করে।

ARPANET-এর বিকাশ

১৯৬৯ সালে ARPANET প্রতিষ্ঠার পর, এটি ধীরে ধীরে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হতে শুরু করে। ১৯৭০-এর দশকে, ইমেইল এবং ফাইল ট্রান্সফারের মতো নতুন অ্যাপ্লিকেশন ARPANET-এর মাধ্যমে জনপ্রিয়তা লাভ করে। ইমেইল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে দ্রুত এবং সহজ করে তোলে।

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের জন্ম

১৯৮৯ সালে টিম বার্নার্স-লি (Tim Berners-Lee) CERN-এ কাজ করার সময় ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (World Wide Web) এর ধারণা দেন। তিনি HTML (HyperText Markup Language), URL (Uniform Resource Locator), এবং HTTP (HyperText Transfer Protocol) তৈরি করেন, যা ওয়েব পেজ তৈরি এবং দেখার জন্য অপরিহার্য। বার্নার্স-লি-র উদ্ভাবন ইন্টারনেটের ব্যবহারকে আরও সহজলভ্য করে তোলে এবং সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তোলে।

ইন্টারনেটের বাণিজ্যিকীকরণ

১৯৯০-এর দশকে ইন্টারনেটের বাণিজ্যিকীকরণ শুরু হয়। NSFNET (National Science Foundation Network)-এর বাণিজ্যিক ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয় এবং নতুন নতুন ISP (Internet Service Provider) কোম্পানি গড়ে ওঠে। এই সময়ে, ই-কমার্স এবং অনলাইন ব্যবসা দ্রুত প্রসারিত হতে শুরু করে।

আধুনিক ইন্টারনেট এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং

আধুনিক ইন্টারনেট আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি শিক্ষা, বিনোদন, বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের সুযোগও তৈরি করেছে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং হলো এমন একটি বিনিয়োগ পদ্ধতি, যা সম্পূর্ণরূপে ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল। বাইনারি অপশন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মগুলো অনলাইনে পাওয়া যায় এবং যে কেউ ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে ট্রেড করতে পারে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং হলো একটি আর্থিক বিনিয়োগ, যেখানে বিনিয়োগকারীরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো সম্পদের (যেমন: স্টক, মুদ্রা, কমোডিটি) দাম বাড়বে নাকি কমবে তা অনুমান করে। যদি অনুমান সঠিক হয়, তবে বিনিয়োগকারী লাভ পান, অন্যথায় তিনি তার বিনিয়োগকৃত পরিমাণ হারান।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ, ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কৌশলগুলো ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীরা বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

• ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন (Candlestick Patterns): বাজারের প্রবণতা বোঝার জন্য ব্যবহৃত হয়।
• মুভিং এভারেজ (Moving Averages): দামের গড় গতিবিধি নির্ণয় করে।
• আরএসআই (RSI - Relative Strength Index): অতিরিক্ত কেনা বা বিক্রির অবস্থা নির্দেশ করে।
• MACD (MACD - Moving Average Convergence Divergence): দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক দেখায়।
• ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement): সম্ভাব্য সমর্থন এবং প্রতিরোধের স্তর চিহ্নিত করে।
• বোলিঙ্গার ব্যান্ডস (Bollinger Bands): দামের পরিবর্তনশীলতা পরিমাপ করে।
• স্টোকাস্টিক অসিলেটর (Stochastic Oscillator): বর্তমান দামের তুলনামূলক অবস্থান নির্ণয় করে।
• ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP): ভলিউমের উপর ভিত্তি করে গড় মূল্য নির্ধারণ করে।
• অন ব্যালেন্স ভলিউম (OBV): ভলিউম এবং দামের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে।
• অ্যাকুমুলেশন/ডিস্ট্রিবিউশন লাইন (A/D Line): ক্রয় এবং বিক্রয়ের চাপ পরিমাপ করে।
• চাইকিন মানি ফ্লো (Chaikin Money Flow): অর্থের প্রবাহের দিক নির্ণয় করে।
• পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার চার্ট (Point and Figure Chart): দামের গুরুত্বপূর্ণ স্তরগুলো চিহ্নিত করে।
• এলিয়ট ওয়েভ থিওরি (Elliott Wave Theory): বাজারের দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতা বিশ্লেষণ করে।
• গ্যান অ্যাঙ্গেলস (Gann Angles): সম্ভাব্য সমর্থন এবং প্রতিরোধের স্তর নির্ধারণ করে।
• হারমোনিক প্যাটার্ন (Harmonic Patterns): নির্দিষ্ট জ্যামিতিক প্যাটার্নের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ মূল্য অনুমান করা হয়।

ইন্টারনেটের দ্রুতগতির কারণে বাইনারি অপশন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মগুলো রিয়েল-টাইম ডেটা সরবরাহ করতে পারে, যা বিনিয়োগকারীদের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।

ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ

ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল। IoT (Internet of Things), AI (Artificial Intelligence), এবং 5G প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে ইন্টারনেট আরও দ্রুত, আরও বুদ্ধিমান এবং আরও বেশি সংযুক্ত হবে। ভবিষ্যতে, ইন্টারনেট আমাদের জীবনযাত্রাকে আরও সহজ ও উন্নত করবে।

উপসংহার

ইন্টারনেটের উদ্ভাবন মানব ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ভ্যাননেভার বুশ, জে. সি. আর. লিক্লাইডার, পল বারান, ডোনাল্ড ডেভিস, লরেন্স রবার্টস, ভিন্ট সের্ফ এবং বব কানের মতো বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আজ আমরা এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা ভোগ করতে পারছি। ইন্টারনেট শুধু একটি প্রযুক্তি নয়, এটি একটি সামাজিক এবং অর্থনৈতিক শক্তি, যা আমাদের বিশ্বকে পরিবর্তন করে চলেছে। ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ফিনটেক এর মতো ক্ষেত্রগুলো ইন্টারনেটের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং হলো এর একটি উদাহরণ।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ