প্যাকেট সুইচিং

প্যাকেট সুইচিং হল একটি ডেটা ট্রান্সমিশন পদ্ধতি যা টেলিকমিউনিকেশন এবং কম্পিউটার নেটওয়ার্ক-এ ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতিতে, ডেটাকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করা হয়, যেগুলোকে প্যাকেট বলা হয়। প্রতিটি প্যাকেটে সোর্স (source) এবং ডেস্টিনেশন (destination) অ্যাড্রেস (address) সহ কন্ট্রোল (control) তথ্য থাকে। এই প্যাকেটগুলো নেটওয়ার্কের মাধ্যমে স্বতন্ত্রভাবে ভ্রমণ করে এবং গন্তব্যে পৌঁছানোর পর পুনরায় একত্রিত (reassemble) করা হয়।

প্যাকেট সুইচিং এর মূল ধারণা

প্যাকেট সুইচিং এর ধারণাটি সার্কিট সুইচিং থেকে ভিন্ন। সার্কিট সুইচিং-এ, ডেটা পাঠানোর আগে একটি ডেডিকেটেড পাথ (dedicated path) স্থাপন করা হয় এবং ডেটা সেই পাথেই প্রবাহিত হয়। অন্যদিকে, প্যাকেট সুইচিং-এ, প্রতিটি প্যাকেট তার গন্তব্যের দিকে যাওয়ার জন্য নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সবচেয়ে উপযুক্ত পথ খুঁজে নেয়।

প্যাকেট সুইচিং এর প্রধান সুবিধা হল এটি নেটওয়ার্কের ব্যান্ডউইথ (bandwidth) আরও দক্ষতার সাথে ব্যবহার করতে পারে। সার্কিট সুইচিং-এ, ডেডিকেটেড পাথটি ডেটা ট্রান্সমিশন (data transmission) না হলেও অব্যবহৃত থাকে। কিন্তু প্যাকেট সুইচিং-এ, নেটওয়ার্কের রিসোর্স (resource) শুধুমাত্র তখনই ব্যবহৃত হয় যখন ডেটা পাঠানো হয়।

প্যাকেট সুইচিং এর প্রকারভেদ

প্যাকেট সুইচিং প্রধানত দুই ধরনের:

ডাটাগ্রাম প্যাকেট সুইচিং (Datagram Packet Switching): এই পদ্ধতিতে, প্রতিটি প্যাকেটকে স্বতন্ত্রভাবে বিবেচনা করা হয় এবং প্রতিটি প্যাকেটের জন্য আলাদা রুটিং (routing) সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রতিটি প্যাকেট ভিন্ন পথে ভ্রমণ করতে পারে এবং গন্তব্যে বিভিন্ন ক্রমে পৌঁছাতে পারে। ইন্টারনেট প্রোটোকল (IP) এই ধরনের প্যাকেট সুইচিং এর একটি উদাহরণ।

ভার্চুয়াল সার্কিট প্যাকেট সুইচিং (Virtual Circuit Packet Switching): এই পদ্ধতিতে, ডেটা ট্রান্সমিশনের আগে সোর্স এবং ডেস্টিনেশনের মধ্যে একটি ভার্চুয়াল সার্কিট (virtual circuit) স্থাপন করা হয়। সমস্ত প্যাকেট সেই ভার্চুয়াল সার্কিটেই ভ্রমণ করে। এটি সার্কিট সুইচিং-এর মতো, কিন্তু এখানে পাথটি ডেডিকেটেড (dedicated) নয়, বরং ভার্চুয়াল (virtual)। ফ্রেম রিলে এবং অ্যাসিনক্রোনাস ট্রান্সফার মোড (ATM) এই ধরনের প্যাকেট সুইচিং এর উদাহরণ।

প্যাকেট সুইচিং এর প্রক্রিয়া

প্যাকেট সুইচিং এর প্রক্রিয়া কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়:

1. প্যাকেট তৈরি (Packet Creation): প্রথমে, ডেটাকে ছোট ছোট প্যাকেটে ভাগ করা হয়। প্রতিটি প্যাকেটে সোর্স এবং ডেস্টিনেশন অ্যাড্রেস, সিকোয়েন্স নম্বর (sequence number) এবং অন্যান্য কন্ট্রোল তথ্য যোগ করা হয়।

2. রুটিং (Routing): প্রতিটি প্যাকেট রাউটার (router) বা সুইচের (switch) মাধ্যমে তার গন্তব্যের দিকে পাঠানো হয়। রাউটার প্যাকেটের ডেস্টিনেশন অ্যাড্রেস অনুযায়ী সবচেয়ে উপযুক্ত পথ নির্বাচন করে।

3. ট্রান্সমিশন (Transmission): প্যাকেট নির্বাচিত পথে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভ্রমণ করে।

4. পুনরায় একত্রীকরণ (Reassembly): গন্তব্যে প্যাকেটগুলো পৌঁছানোর পর, সেগুলোকে তাদের সিকোয়েন্স নম্বর অনুযায়ী পুনরায় একত্রিত করে আসল ডেটা পুনরুদ্ধার করা হয়।

প্যাকেট সুইচিং এর সুবিধা

দক্ষ ব্যান্ডউইথ ব্যবহার (Efficient Bandwidth Usage): প্যাকেট সুইচিং নেটওয়ার্কের ব্যান্ডউইথ আরও দক্ষতার সাথে ব্যবহার করতে পারে, কারণ রিসোর্স শুধুমাত্র তখনই ব্যবহৃত হয় যখন ডেটা পাঠানো হয়।

নমনীয়তা (Flexibility): প্যাকেট সুইচিং নেটওয়ার্ক পরিবর্তনশীল ট্র্যাফিক (traffic) পরিস্থিতিতে সহজেই মানিয়ে নিতে পারে।

খরচ সাশ্রয় (Cost Savings): ডেডিকেটেড পাথ স্থাপনের প্রয়োজন না হওয়ায়, প্যাকেট সুইচিং সার্কিট সুইচিং-এর চেয়ে বেশি সাশ্রয়ী হতে পারে।

নির্ভরযোগ্যতা (Reliability): যদি কোনো একটি পথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে প্যাকেটগুলো বিকল্প পথে ভ্রমণ করতে পারে, যা নেটওয়ার্কের নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধি করে।

প্যাকেট সুইচিং এর অসুবিধা

বিলম্ব (Delay): প্রতিটি প্যাকেটকে রুটিং করার জন্য সময় লাগে, যা ডেটা ট্রান্সমিশনে বিলম্ব ঘটাতে পারে।

জ্যাম (Congestion): নেটওয়ার্কে অতিরিক্ত ট্র্যাফিক থাকলে প্যাকেট জ্যাম হতে পারে, যার ফলে ডেটা ট্রান্সমিশন ধীর হয়ে যায়।

ওভারহেড (Overhead): প্রতিটি প্যাকেটে কন্ট্রোল তথ্য যোগ করার কারণে কিছু অতিরিক্ত ব্যান্ডউইথ খরচ হয়।

সিকোয়েন্সিং (Sequencing): প্যাকেটগুলো বিভিন্ন ক্রমে পৌঁছাতে পারে, তাই সেগুলোকে পুনরায় একত্রিত করার জন্য জটিল প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয়।

প্যাকেট সুইচিং এর ব্যবহার

প্যাকেট সুইচিং বর্তমানে বিভিন্ন নেটওয়ার্কিং প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত হয়, যেমন:

ইন্টারনেট (Internet): ইন্টারনেট প্যাকেট সুইচিং-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি। TCP/IP প্রোটোকল স্যুট (protocol suite) ইন্টারনেট এ ডেটা ট্রান্সমিশনের জন্য ব্যবহৃত হয়।

লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (LAN): ইথারনেট (Ethernet) এর মতো ল্যান প্রযুক্তিগুলো প্যাকেট সুইচিং ব্যবহার করে।

ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (WAN): ফ্রেম রিলে এবং ATM এর মতো ওয়্যান প্রযুক্তিগুলো প্যাকেট সুইচিং ব্যবহার করে।

ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল (VoIP): VoIP প্যাকেট সুইচিং ব্যবহার করে ভয়েস ডেটা ট্রান্সমিট করে।

ভিডিও কনফারেন্সিং (Video Conferencing): ভিডিও কনফারেন্সিং-এর জন্য প্যাকেট সুইচিং ব্যবহার করা হয়।

প্যাকেট সুইচিং এবং অন্যান্য সুইচিং পদ্ধতির মধ্যে তুলনা

| বৈশিষ্ট্য | সার্কিট সুইচিং | প্যাকেট সুইচিং | |---|---|---| | পাথ স্থাপন | ডেডিকেটেড পাথ স্থাপন করা হয় | প্রতিটি প্যাকেটের জন্য রুটিং করা হয় | | ব্যান্ডউইথ ব্যবহার | কম দক্ষ | বেশি দক্ষ | | বিলম্ব | কম | বেশি | | জ্যাম | কম | বেশি | | নমনীয়তা | কম | বেশি | | খরচ | বেশি | কম | | উদাহরণ | টেলিফোন নেটওয়ার্ক | ইন্টারনেট |

ভবিষ্যৎ প্রবণতা

প্যাকেট সুইচিং টেকনোলজি (technology) ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে। ভবিষ্যতের প্যাকেট সুইচিং নেটওয়ার্কগুলো আরও দ্রুত, নির্ভরযোগ্য এবং নিরাপদ হবে বলে আশা করা যায়। সফটওয়্যার-ডিফাইন্ড নেটওয়ার্কিং (SDN) এবং নেটওয়ার্ক ফাংশন ভার্চুয়ালাইজেশন (NFV) এর মতো নতুন প্রযুক্তিগুলো প্যাকেট সুইচিং নেটওয়ার্কের কর্মক্ষমতা এবং নমনীয়তা আরও বাড়াতে সাহায্য করবে।

প্যাকেট সুইচিং-এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়

আরও জানতে

আইইইই 802.3 (ইথারনেট স্ট্যান্ডার্ড)
আইপিভি4 এবং আইপিভি6 (ইন্টারনেট প্রোটোকল)
টিসিপি এবং ইউডিপি (ট্রান্সপোর্ট লেয়ার প্রোটোকল)
সিসিএনএ (সিস্টেমস সার্টিফাইড নেটওয়ার্ক অ্যাসোসিয়েট)
সিসিএনপি (সিস্টেমস সার্টিফাইড নেটওয়ার্ক প্রফেশনাল)

এই নিবন্ধটি প্যাকেট সুইচিং সম্পর্কে একটি বিস্তারিত ধারণা প্রদান করে। এটি নেটওয়ার্কিং এবং টেলিকমিউনিকেশন (telecommunication) শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ