আমেরিকান অপশন

আমেরিকান অপশন হলো এক ধরনের অপশন চুক্তি যা বিনিয়োগকারীকে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে যেকোনো সময় অপশনটি প্রয়োগ করার অধিকার দেয়। এটি ইউরোপীয় অপশন থেকে ভিন্ন, যেখানে অপশনটি শুধুমাত্র মেয়াদপূর্তির তারিখে প্রয়োগ করা যেতে পারে। আমেরিকান অপশনগুলি সাধারণত স্টক, ইন্ডেক্স এবং ফিউচার এর উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। এই অপশনগুলি বিনিয়োগকারীদের বেশি নমনীয়তা প্রদান করে, কিন্তু এর জন্য অতিরিক্ত প্রিমিয়াম দিতে হয়।

আমেরিকান অপশনের মূল বৈশিষ্ট্য

সময়সীমা: আমেরিকান অপশন মেয়াদপূর্তির আগে যেকোনো সময় প্রয়োগ করা যায়।
প্রিমিয়াম: সাধারণত ইউরোপীয় অপশনের চেয়ে আমেরিকান অপশনের প্রিমিয়াম বেশি হয়, কারণ এর নমনীয়তার কারণে।
প্রয়োগের অধিকার: অপশন ধারককে মেয়াদপূর্তির আগে অপশন প্রয়োগ করার অধিকার দেয়, কিন্তু বাধ্য করে না।
ঝুঁকি ও রিটার্ন: অপশন বাজারের ঝুঁকি এবং রিটার্ন অন্যান্য ডেরিভেটিভ যেমন ফিউচার বা ফরওয়ার্ড চুক্তির মতোই।

আমেরিকান অপশন এবং ইউরোপীয় অপশনের মধ্যে পার্থক্য

আমেরিকান অপশন বনাম ইউরোপীয় অপশন
বৈশিষ্ট্য	আমেরিকান অপশন	ইউরোপীয় অপশন
প্রয়োগের সময়	মেয়াদপূর্তির আগে যেকোনো সময়	শুধুমাত্র মেয়াদপূর্তির তারিখে
প্রিমিয়াম	সাধারণত বেশি	সাধারণত কম
নমনীয়তা	বেশি	কম
জটিলতা	বেশি	কম

আমেরিকান অপশনের প্রকারভেদ

আমেরিকান অপশন দুই ধরনের হতে পারে:

কল অপশন: এই অপশন ধারককে একটি নির্দিষ্ট মূল্যে (স্ট্রাইক প্রাইস) একটি সম্পদ কেনার অধিকার দেয়। বিনিয়োগকারী মনে করেন যে সম্পদের দাম বাড়বে। কল অপশন কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
পুট অপশন: এই অপশন ধারককে একটি নির্দিষ্ট মূল্যে একটি সম্পদ বিক্রির অধিকার দেয়। বিনিয়োগকারী মনে করেন যে সম্পদের দাম কমবে। পুট অপশন কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

আমেরিকান অপশনের মূল্য নির্ধারণ

আমেরিকান অপশনের মূল্য নির্ধারণ করা ইউরোপীয় অপশনের চেয়ে জটিল। এর কারণ হলো মেয়াদপূর্তির আগে অপশন প্রয়োগের সুযোগ। ব্ল্যাক-স্কোলস মডেল (Black-Scholes Model) এর মতো মডেলগুলি ব্যবহার করা হয়, তবে এগুলিতে কিছু সংশোধন প্রয়োজন হয়। আমেরিকান অপশনের মূল্য নির্ধারণের জন্য সাধারণত দ্বিঘাতীয় বিনোমিয়াল ট্রি মডেল (Binomial Tree Model) ব্যবহার করা হয়।

আমেরিকান অপশন ট্রেডিং কৌশল

আমেরিকান অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য বিভিন্ন কৌশল রয়েছে। কিছু জনপ্রিয় কৌশল নিচে উল্লেখ করা হলো:

কভারড কল (Covered Call): এটি একটি রক্ষণশীল কৌশল, যেখানে বিনিয়োগকারী তার মালিকানাধীন স্টকের উপর কল অপশন বিক্রি করে।
প্রটেক্টিভ পুট (Protective Put): এটি একটি ঝুঁকি হ্রাস করার কৌশল, যেখানে বিনিয়োগকারী তার মালিকানাধীন স্টকের উপর পুট অপশন কিনে।
স্ট্র্যাডল (Straddle): এই কৌশলটি ব্যবহার করা হয় যখন বিনিয়োগকারী মনে করেন যে সম্পদের দাম বড় ধরনের পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু কোন দিকে হবে তা নিশ্চিত নন। স্ট্র্যাডল কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
স্ট্র্যাঙ্গল (Strangle): এটি স্ট্র্যাডলের মতো, তবে এখানে কল এবং পুট অপশনের স্ট্রাইক প্রাইস ভিন্ন হয়। স্ট্র্যাঙ্গল কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
বাটারফ্লাই স্প্রেড (Butterfly Spread): এই কৌশলটি কম ঝুঁকি এবং সীমিত লাভের জন্য ব্যবহৃত হয়। বাটারফ্লাই স্প্রেড কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

আমেরিকান অপশনে বিনিয়োগের সুবিধা

নমনীয়তা: মেয়াদপূর্তির আগে অপশন প্রয়োগের সুযোগ থাকায় বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী কৌশল পরিবর্তন করতে পারে।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: অপশন ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীরা তাদের পোর্টফোলিওতে ঝুঁকি কমাতে পারে।
উচ্চ লাভের সম্ভাবনা: সঠিকভাবে ট্রেড করতে পারলে আমেরিকান অপশন থেকে উচ্চ মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।

আমেরিকান অপশনে বিনিয়োগের অসুবিধা

জটিলতা: আমেরিকান অপশনের মূল্য নির্ধারণ এবং ট্রেডিং কৌশল বোঝা কঠিন হতে পারে।
প্রিমিয়াম খরচ: ইউরোপীয় অপশনের তুলনায় আমেরিকান অপশনের প্রিমিয়াম বেশি হওয়ায় বিনিয়োগের প্রাথমিক খরচ বেশি হতে পারে।
সময় ক্ষয়: অপশনের মেয়াদ যত শেষ হতে থাকে, এর মূল্য তত কমতে থাকে। একে টাইম ডিক্যা বলা হয়।

আমেরিকান অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়সমূহ

বাজার বিশ্লেষণ: টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ফা fundamental বিশ্লেষণ করে বাজারের গতিবিধি বোঝা জরুরি।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: নিজের ঝুঁকির ক্ষমতা অনুযায়ী ট্রেডিং কৌশল নির্বাচন করা উচিত।
কৌশল নির্বাচন: বাজারের পরিস্থিতি এবং নিজের বিনিয়োগের লক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে সঠিক কৌশল নির্বাচন করতে হবে।
ব্রোকার নির্বাচন: একটি নির্ভরযোগ্য এবং নিয়ন্ত্রিত ব্রোকার নির্বাচন করা উচিত।
ভলিউম বিশ্লেষণ: ভলিউম বিশ্লেষণ ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি এবং প্রবণতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

আমেরিকান অপশন এবং ট্যাক্স

আমেরিকান অপশন থেকে অর্জিত মুনাফার উপর ট্যাক্স প্রযোজ্য হতে পারে। ট্যাক্স বিধিগুলি দেশ এবং অঞ্চলের উপর নির্ভর করে। তাই, বিনিয়োগকারীদের উচিত তাদের স্থানীয় ট্যাক্স কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া।

আমেরিকান অপশনের ভবিষ্যৎ

আমেরিকান অপশন ট্রেডিং দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রযুক্তিগত উন্নতির সাথে সাথে অপশন ট্রেডিং আরও সহজলভ্য এবং অ্যাক্সেসযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে, আরও নতুন এবং উদ্ভাবনী অপশন ট্রেডিং কৌশল উদ্ভাবিত হতে পারে।

উপসংহার

আমেরিকান অপশন একটি শক্তিশালী বিনিয়োগ হাতিয়ার, যা বিনিয়োগকারীদের নমনীয়তা এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সুযোগ প্রদান করে। তবে, এটি জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণও বটে। তাই, আমেরিকান অপশনে বিনিয়োগ করার আগে ভালোভাবে গবেষণা করা এবং নিজের ঝুঁকির ক্ষমতা বিবেচনা করা উচিত। অপশন ট্রেডিংয়ের ঝুঁকি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

স্টক মার্কেট ফিনান্সিয়াল ডেরিভেটিভস বিনিয়োগ পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ক্যান্ডেলস্টিক চার্ট মুভিং এভারেজ আরএসআই (RSI) এমএসিডি (MACD) বোলিঙ্গার ব্যান্ড ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP) অন-ব্যালেন্স ভলিউম (OBV) চार्ट প্যাটার্ন হেড অ্যান্ড শোল্ডারস ডাবল টপ ডাবল বটম ট্রায়াঙ্গেল প্যাটার্ন ফ্ল্যাগ এবং পেন্যান্ট ব্ল্যাক-স্কোলস মডেল দ্বিঘাতীয় বিনোমিয়াল ট্রি মডেল

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ