অ্যানিমেশন ইতিহাস

অ্যানিমেশনের ইতিহাস

সূচনা
অ্যানিমেশন শিল্পকলার একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। এটি স্থির চিত্রকে দ্রুত succession-এ প্রদর্শন করে গতি ও বিভ্রম তৈরি করে। অ্যানিমেশনের ইতিহাস বেশ দীর্ঘ এবং জটিল, যা বিভিন্ন সংস্কৃতি ও প্রযুক্তির হাত ধরে বিকশিত হয়েছে। এই নিবন্ধে অ্যানিমেশনের প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে আধুনিক যুগ পর্যন্ত এর বিবর্তন আলোচনা করা হলো।
প্রাচীন যুগ
অ্যানিমেশনের ধারণা প্রাচীনকালে শুরু হয়েছিল। প্রায় ৩১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মিশরে দেয়াল চিত্র এবং অন্যান্য শিল্পকর্মে জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তকে ধারাবাহিক চিত্রে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হতো। মনে করা হয়, এটিই ছিল অ্যানিমেশনের প্রথম রূপ। এছাড়াও, প্রাচীন চীন এবং জাপান-এ বিভিন্ন ধরনের খেলনা ও শিল্পকর্মে অ্যানিমেশনের প্রাথমিক উপাদান দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, চীনের শ্যাডো প্লে (shadow play) এবং জাপানের কামিশিবাঈ (kamishibai) উল্লেখযোগ্য।
ফেناكিস্টোস্কোপ ও জুওট্রোপ
১৯ শতকের প্রথম দিকে অ্যানিমেশন প্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়। ১৮৩২ সালে বেলজিয়াম-এর জোসেফ প্লাটো (Joseph Plateau) ফেناكিস্টোস্কোপ (phenakistoscope) আবিষ্কার করেন। এটি একটি ডিস্কের মাধ্যমে ধারাবাহিক চিত্র দেখিয়ে গতি তৈরি করত। একই সময়ে, ইংল্যান্ড-এর উইলিয়াম জর্জ হর্নার জুওট্রোপ (zoetrope) তৈরি করেন, যা একটি সিলিন্ডারের মধ্যে চিত্রের ক্রম প্রদর্শন করে। এই ডিভাইসগুলো অ্যানিমেশনের জগতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
ফটোগ্রাফিক অ্যানিমেশন
১৮৭০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র-এর ইডউইয়ার্ড Muybridge ঘোড়ার দৌড়ের ছবি তুলে অ্যানিমেশনের অগ্রগতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেন। তিনি ধারাবাহিক ফটোগ্রাফের মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে ঘোড়া দৌড়ানোর সময় চার পা মাটি থেকে কিছুক্ষণের জন্য ওঠে। এই পরীক্ষাটি গতিবিদ্যা (kinematics) এবং অ্যানিমেশনের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এরপর, ১৮৯২ সালে ফরাসি উদ্ভাবক এমিল রেনোদ (Émile Reynaud) প্রজেক্টিং থিয়েট্রোগ্রাফ (Théâtre Optique) আবিষ্কার করেন, যা অ্যানিমেটেড ছবি প্রদর্শনের জন্য ব্যবহার করা হতো।
সিনেমার সূত্রপাত ও অ্যানিমেশনের প্রথম চলচ্চিত্র
১৮৯৫ সালে ফ্রান্স-এর লুমিয়ের ভ্রাতৃদ্বয় (Lumière brothers) সিনামাটোграф (cinematograph) আবিষ্কারের মাধ্যমে চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরু হয়। এরপর অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র তৈরি শুরু হয়। ১৯০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র-এর জেমস স্টুয়ার্ট ব্ল্যাকটন (J. Stuart Blackton) "হুমোরস ফেয়ারি টেল" (Humorous Fairy Tale) তৈরি করেন, যা অ্যানিমেশনের প্রথম দিকের চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি chalk-board অ্যানিমেশন টেকনিক ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছিল।
ওয়াল্ট ডিজনি ও অ্যানিমেশনের স্বর্ণযুগ
১৯২০-এর দশকে ওয়াল্ট ডিজনি (Walt Disney) অ্যানিমেশন জগতে বিপ্লব নিয়ে আসেন। তিনি "স্টিমবোট উইলি" (Steamboat Willie) (১৯২৮) তৈরি করেন, যেখানে মিকি মাউস (Mickey Mouse) চরিত্রটি প্রথম আত্মপ্রকাশ করে। এটি ছিল প্রথম সাউন্ড অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে একটি। ডিজনি "ফ্লোরিড প্রিন্সেস" (Snow White and the Seven Dwarfs) (১৯৩৭) তৈরি করে অ্যানিমেশনকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান, যা প্রথম ফিচার-লেন্থ সেল অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র। এরপর "পিনোকিও" (Pinocchio) (১৯৪০), "ফ্যান্টাসিয়া" (Fantasia) (১৯৪০), "ডাম্বো" (Dumbo) (১৯৪১) এবং "বাম্বি" (Bambi) (১৯৪২)-এর মতো ক্লাসিক চলচ্চিত্রগুলো ডিজনি তৈরি করেন। এই সময়কালটি অ্যানিমেশনের স্বর্ণযুগ হিসেবে পরিচিত।
হ্যানা-বারবারা ও টেলিভিশন অ্যানিমেশন
১৯৫০-এর দশকে হ্যানা-বারবারা প্রোডাকশনস (Hanna-Barbera Productions) টেলিভিশন অ্যানিমেশন জগতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উইলিয়াম হ্যানা এবং জোসেফ বারবারা "দ্য ফ্লিন্টস্টোনস" (The Flintstones) (১৯৬০) এবং "দ্য জেটসনস" (The Jetsons) (১৯৬২)-এর মতো জনপ্রিয় কার্টুন তৈরি করেন। তারা অ্যানিমেশন উৎপাদনে খরচ কমাতে সীমিত অ্যানিমেশন (limited animation) কৌশল ব্যবহার করেন, যা টেলিভিশনের জন্য উপযোগী ছিল।
কম্পিউটার অ্যানিমেশন
১৯৬০-এর দশকে কম্পিউটার অ্যানিমেশনের যাত্রা শুরু হয়। এডউইন কাটমুল (Edwin Catmull) এবং ফ্রেড পার্ক (Fred Park) ১৯৭২ সালে প্রথম কম্পিউটার-অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র "এ কম্পিউটার এনিমেশন অব এ ওয়াকিং ম্যান" (A Computer Animation of a Walking Man) তৈরি করেন। ১৯৮২ সালে জন লাসেটার (John Lasseter) "লুক অ্যাট মি" (Luxo Jr.) তৈরি করেন, যা প্রথম কম্পিউটার-অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র হিসেবে অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল। ১৯৯৫ সালে পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিওস (Pixar Animation Studios) "টয় স্টোরি" (Toy Story) মুক্তি দেয়, যা প্রথম ফিচার-লেন্থ কম্পিউটার-অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র।
আধুনিক অ্যানিমেশন
আধুনিক অ্যানিমেশন প্রযুক্তি অনেক উন্নত হয়েছে। কম্পিউটার-জেনারেটেড ইমেজারি (CGI), মোশন ক্যাপচার (motion capture) এবং থ্রিডি অ্যানিমেশন (3D animation) এখন বহুল ব্যবহৃত। ড্রিমওয়ার্কস (DreamWorks) এবং ব্লু স্কাই স্টুডিওস (Blue Sky Studios)-এর মতো স্টুডিওগুলো উচ্চমানের কম্পিউটার-অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র তৈরি করছে। জাপানি অ্যানিমেশন বা অ্যানিমে (Anime) বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, যেমন "স্পিরিটেড অ্যাওয়ে" (Spirited Away) (২০০১) এবং "ইউর নেম" (Your Name) (২০১৬)।
স্টপ মোশন অ্যানিমেশন
স্টপ মোশন অ্যানিমেশন একটি ঐতিহ্যবাহী কৌশল, যেখানে বস্তুগুলোকে সামান্য সরিয়ে প্রতিটি ফ্রেমের ছবি তোলা হয়। "ওয়ালace & Gromit" এবং "Coraline"-এর মতো চলচ্চিত্রগুলো স্টপ মোশন অ্যানিমেশনের উদাহরণ। এই কৌশলটি সময়সাপেক্ষ হলেও এর একটি বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে।
ভবিষ্যৎ
অ্যানিমেশনের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR), অগমেন্টেড রিয়েলিটি (AR) এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) অ্যানিমেশন শিল্পে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে। ভবিষ্যতে আমরা আরও বাস্তবসম্মত এবং আকর্ষণীয় অ্যানিমেটেড অভিজ্ঞতা পাবো বলে আশা করা যায়।

অ্যানিমেশন কৌশল অ্যানিমেশন সফটওয়্যার অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানি পিক্সার ড্রিমওয়ার্কস অ্যানিমেশন কম্পিউটার গ্রাফিক্স ত্রিমাত্রিক অ্যানিমেশন স্টপ মোশন অ্যানিমেশন অ্যানিমে ফেناكিস্টোস্কোপ জুওট্রোপ সিনেমার ইতিহাস ইডউইয়ার্ড Muybridge এমিল রেনোদ হ্যানা-বারবারা কম্পিউটার-জেনারেটেড ইমেজারি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অগমেন্টেড রিয়েলিটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স গতিবিদ্যা টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ভলিউম বিশ্লেষণ ফিনান্সিয়াল মডেলিং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিনিয়োগ কৌশল

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ