ইডউইয়ার্ড Muybridge

ইডউইয়ার্ড জঁ-মারি কোলোন Muybridge (Eadweard J.M. Muybridge), যিনি প্রায়শই ইডউইয়ার্ড Muybridge নামেই পরিচিত, ছিলেন একজন ব্রিটিশ-আমেরিকান ফটোগ্রাফার। তিনি ১৮৩০ সালের ৯ এপ্রিল ইংল্যান্ডের কিংস্টনে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯০৪ সালের ৬ মে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় মারা যান। Muybridge মূলত তাঁর ঘোড়ার দৌড়ের ধারাবাহিক ফটোগ্রাফের জন্য বিখ্যাত, যা প্রমাণ করে যে দৌড়ানোর সময় কোনো ঘোড়া এক মুহূর্তের জন্য চারটি পা মাটি থেকে উপরে তোলে। এই কাজটি ফটোগ্রাফি এবং গতিশীল চিত্রের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

প্রাথমিক জীবন এবং কর্মজীবন

ইডউইয়ার্ড Muybridge-এর আসল নাম ছিল ইডউইয়ার্ড জঁ-মারি কোলোন। তিনি যথেষ্ট অল্প বয়সে ছবি আঁকা শুরু করেন এবং ল্যান্ডস্কেপ পেইন্টিংয়ে দক্ষতা অর্জন করেন। ১৮৫০ সালে তিনি সান ফ্রান্সিসকোতে চলে যান এবং সেখানে একজন ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ শুরু করেন। খুব দ্রুতই তিনি পোর্ট্রেট এবং ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফির জন্য পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর কাজের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ফটোগ্রাফির ব্যবহার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

Muybridge প্রথমে ক্যালিফোর্নিয়া এবং ইউটা অঞ্চলে ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফির মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি সিয়েরা নেভাডা পর্বতমালা এবং ইয়োসেমাইট ভ্যালি-র চমৎকার ছবি তোলেন, যা পশ্চিমা আমেরিকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরে। এই ছবিগুলি পর্যটন এবং ভূ-প্রকৃতি সম্পর্কে মানুষের ধারণা পরিবর্তনে সহায়ক ছিল।

ঘোড়ার দৌড়ের ফটোগ্রাফি

Muybridge-এর সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ হলো ঘোড়ার দৌড়ের ধারাবাহিক ফটোগ্রাফ। ১৮৭২ সালে, তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়-এর লেইল্যান্ড স্ট্যানফোর্ড-এর অনুরোধে এই পরীক্ষাটি চালান। স্ট্যানফোর্ড ঘোড়ার দৌড়ের সময় তার পায়ের অবস্থান সম্পর্কে একটি বিতর্ক মীমাংসা করতে চেয়েছিলেন। প্রচলিত ধারণা ছিল যে দৌড়ানোর সময় ঘোড়া কোনো না কোনো মুহূর্তের জন্য চারটি পা মাটি থেকে উপরে তোলে, কিন্তু কেউ তা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করতে পারেনি।

Muybridge একটি বিশেষভাবে তৈরি করা ফটোগ্রাফিক সেটআপ ব্যবহার করেন। তিনি ১২টি ক্যামেরা একটি লাইনে স্থাপন করেন, যা একটি তারের মাধ্যমে সংযুক্ত ছিল। ঘোড়া যখন ক্যামেরার সামনে দিয়ে দৌড়াত, তখন তারের সাথে ধাক্কা লেগে ক্যামেরার শাটার খুলে যেত। এর ফলে ঘোড়ার দৌড়ের প্রতিটি মুহূর্তের ছবি তোলা সম্ভব হয়।

এই পরীক্ষাটি প্রমাণ করে যে দৌড়ানোর সময় ঘোড়া সত্যিই এক মুহূর্তের জন্য চারটি পা মাটি থেকে উপরে তোলে। এই আবিষ্কার বিজ্ঞান এবং ক্রীড়া জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে। Muybridge-এর এই কাজ গতিশীল বিশ্লেষণ-এর পথ খুলে দেয় এবং পরবর্তীতে চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

জুওলজিক্যাল ফটোগ্রাফি এবং অন্যান্য কাজ

ঘোড়ার দৌড়ের ফটোগ্রাফির সাফল্যের পর, Muybridge অন্যান্য প্রাণীর গতিবিধি নিয়েও গবেষণা করেন। তিনি পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়-এর প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সাথে இணைந்து বিভিন্ন পশু-পাখির প্রায় ২০,০০০ ছবি তোলেন। এই ছবিগুলি "অ্যানিমেল মোশন" (Animal Motion) নামক একটি বইয়ে প্রকাশিত হয়, যা জুওলজি এবং শারীরিক বিজ্ঞান-এর গবেষণায় ব্যবহৃত হয়।

Muybridge শুধু পশুদের নিয়েই কাজ করেননি, তিনি মানুষের গতিবিধি নিয়েও গবেষণা করেন। তিনি নগ্ন মানব শরীরকে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় চিত্রিত করেন, যা তৎকালীন সমাজে বেশ বিতর্ক সৃষ্টি করে। এই কাজগুলি মানুষের শারীরিক গঠন এবং নড়াচড়া বুঝতে সহায়ক ছিল।

প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন

ইডউইয়ার্ড Muybridge ফটোগ্রাফিতে বেশ কিছু নতুন প্রযুক্তি এবং কৌশল প্রবর্তন করেন। তাঁর উদ্ভাবিত "জুওলজিক্যাল ফটোগ্রাফি" পদ্ধতিটি প্রাণীদের গতিবিধি অধ্যয়নের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। তিনি মাল্টিপল-ক্যামেরা সেটআপ ব্যবহার করে ধারাবাহিক ছবি তোলার কৌশল তৈরি করেন, যা পরবর্তীতে ভিডিওগ্রাফি এবং সিনেমাটোগ্রাফি-র ভিত্তি স্থাপন করে।

Muybridge-এর কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল "জোয়েটস্কোপ" (Zoetrope) নামক একটি যন্ত্রের উদ্ভাবন। এটি একটি সিলিন্ডারের মধ্যে ধারাবাহিক ছবি স্থাপন করে দ্রুত ঘোরানোর মাধ্যমে একটি চলমান চিত্রের অনুভূতি তৈরি করত। জোয়েটস্কোপ ছিল অ্যানিমেশন-এর প্রাথমিক রূপ এবং এটি জনপ্রিয় বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হত।

বিতর্ক এবং ব্যক্তিগত জীবন

ইডউইয়ার্ড Muybridge-এর জীবন বিতর্কিত ছিল। ১৮৭৪ সালে, তিনি তাঁর স্ত্রীর প্রেমিককে হত্যা করার অভিযোগে অভিযুক্ত হন। যদিও তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে সক্ষম হন, এই ঘটনা তাঁর জীবনে একটি গভীর প্রভাব ফেলে।

Muybridge দুইবার বিয়ে করেন। তাঁর প্রথম স্ত্রী ছিলেন ফ্লোরা শ্যাল, এবং দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন জোনাথন ডব্লিউ-এর বিধবা, হেলেনা পিকচার। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নানা জটিলতায় পূর্ণ ছিল, যা তাঁর কাজের পাশাপাশি আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে।

উত্তরাধিকার

ইডউইয়ার্ড Muybridge-এর কাজ আধুনিক ফটোগ্রাফি এবং চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি স্থাপন করেছে। তাঁর ঘোড়ার দৌড়ের ফটোগ্রাফ শুধুমাত্র একটি বৈজ্ঞানিক বিতর্ক মীমাংসা করেনি, বরং মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এবং সময় সম্পর্কে ধারণাকেও পরিবর্তন করেছে।

Muybridge-এর কাজ চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং ফটোগ্রাফারদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। তাঁর উদ্ভাবিত প্রযুক্তি এবং কৌশলগুলি পরবর্তীকালে ডিজিটাল অ্যানিমেশন এবং ভিজ্যুয়াল এফেক্টস-এর বিকাশে সহায়ক হয়েছে।

ইডউইয়ার্ড Muybridge-এর উল্লেখযোগ্য কাজ
কাজ	বিবরণ	বছর
ইয়োসেমাইট ভ্যালি ফটোগ্রাফি	ক্যালিফোর্নিয়ার ইয়োসেমাইট ভ্যালির প্রাকৃতিক দৃশ্য	১৮৬০-এর দশক
ঘোড়ার দৌড়ের ফটোগ্রাফি	দৌড়ানোর সময় ঘোড়ার পায়ের অবস্থান নির্ণয়	১৮৭২
অ্যানিমেল মোশন	বিভিন্ন প্রাণীর গতিবিধি নিয়ে গবেষণা ও ছবি সংকলন	১৮৮৭
জোয়েটস্কোপ	অ্যানিমেশনের প্রাথমিক রূপ, চলমান চিত্রের যন্ত্র	১৮৬৬
নগ্ন মানবদেহের ফটোগ্রাফি	মানুষের শারীরিক গঠন ও নড়াচড়া নিয়ে গবেষণা	১৮৮০-এর দশক

আরও দেখুন

ইডউইয়ার্ড Muybridge নিঃসন্দেহে একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন শিল্পী এবং বিজ্ঞানী ছিলেন। তাঁর কাজ শুধুমাত্র ফটোগ্রাফির সীমানা ছাড়িয়ে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং শিল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলেছে।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ