Trend Following Strategies
ট্রেন্ড ফলোয়িং কৌশল
ট্রেন্ড ফলোয়িং হলো একটি বিনিয়োগ কৌশল যা বাজারের বিদ্যমান প্রবণতা বা ট্রেন্ডকে চিহ্নিত করে সেদিকেই বাজি ধরা হয়। এই ধারণার মূল ভিত্তি হলো, একবার কোনো শেয়ার বা অ্যাসেটের দাম কোনো নির্দিষ্ট দিকে (উপর বা নিচে) যেতে শুরু করলে, সেটি সেই দিকেই চলতে থাকবে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ এই কৌশল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি স্বল্প সময়ের মধ্যে লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করে।
ট্রেন্ড ফলোয়িং কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ট্রেন্ড ফলোয়িং কৌশলটি বেশ কয়েকটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ:
- সহজবোধ্যতা: এই কৌশলটি বোঝা এবং প্রয়োগ করা তুলনামূলকভাবে সহজ।
- লাভজনকতা: শক্তিশালী ট্রেন্ডের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত লাভজনক হতে পারে।
- ঝুঁকি হ্রাস: সঠিক ট্রেন্ড চিহ্নিত করতে পারলে ক্ষতির সম্ভাবনা কমে যায়।
- দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা: দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য এটি একটি নির্ভরযোগ্য কৌশল হতে পারে। বিনিয়োগ এর ক্ষেত্রে এই কৌশল বিশেষভাবে উপযোগী।
ট্রেন্ড কিভাবে চিহ্নিত করতে হয়?
ট্রেন্ড চিহ্নিত করার জন্য কিছু সাধারণ পদ্ধতি নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. মুভিং এভারেজ (Moving Average): মুভিং এভারেজ হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অ্যাসেটের গড় মূল্য। এটি ট্রেন্ডের দিক নির্ধারণে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, ৫০ দিনের মুভিং এভারেজ যদি ২০০ দিনের মুভিং এভারেজের উপরে যায়, তবে এটিকে বুলিশ ট্রেন্ড ( upward trend) হিসেবে ধরা হয়। মুভিং এভারেজ একটি গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ সরঞ্জাম।
২. ট্রেন্ড লাইন (Trend Line): ট্রেন্ড লাইন হলো চার্টে আঁকা একটি সরলরেখা যা অ্যাসেটের দামের গতিবিধি নির্দেশ করে। আপট্রেন্ডের ক্ষেত্রে, ট্রেন্ড লাইন সাধারণত দামের নিম্ন দিক থেকে সংযোগ স্থাপন করে, যেখানে ডাউনট্রেন্ডের ক্ষেত্রে এটি দামের ঊর্ধ্ব দিক থেকে সংযোগ স্থাপন করে। চার্ট প্যাটার্ন বোঝা এক্ষেত্রে জরুরি।
৩. রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইন্ডেক্স (RSI): RSI হলো একটি মোমেন্টাম নির্দেশক যা অ্যাসেটের অতিরিক্ত ক্রয় বা অতিরিক্ত বিক্রির অবস্থা নির্দেশ করে। RSI-এর মান ৭০-এর উপরে গেলে ওভারবট (overbought) এবং ৩০-এর নিচে গেলে ওভারসোল্ড (oversold) হিসেবে ধরা হয়। আরএসআই ব্যবহার করে সম্ভাব্য ট্রেন্ড পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
৪. ম্যাকডি (MACD): MACD হলো দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করার একটি পদ্ধতি। এটি ট্রেন্ডের দিক এবং শক্তি নির্ধারণে সহায়ক। ম্যাকডি সিগন্যাল লাইন ক্রসওভারের মাধ্যমে ট্রেডিংয়ের সুযোগ তৈরি করে।
৫. ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume Analysis): ভলিউম হলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে কেনা-বেচার পরিমাণ। যদি দাম বাড়তে থাকে এবং ভলিউমও বৃদ্ধি পায়, তবে এটি একটি শক্তিশালী আপট্রেন্ডের ইঙ্গিত দেয়। ভলিউম দামের পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
ট্রেন্ড ফলোয়িং কৌশলসমূহ
বিভিন্ন ধরনের ট্রেন্ড ফলোয়িং কৌশল রয়েছে, তাদের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য কৌশল নিচে আলোচনা করা হলো:
১. ব্রেকআউট কৌশল (Breakout Strategy): এই কৌশলে, যখন অ্যাসেটের দাম একটি নির্দিষ্ট প্রতিরোধ স্তর (resistance level) বা সমর্থন স্তর (support level) ভেদ করে, তখন ট্রেড করা হয়। এটি সাধারণত নতুন ট্রেন্ডের শুরু নির্দেশ করে। সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে।
২. পুলব্যাক কৌশল (Pullback Strategy): এই কৌশলে, আপট্রেন্ডের সময় দাম সাময়িকভাবে কমতে থাকলে (pullback), সেখানে কেনার সুযোগ নেওয়া হয়। ধারণা করা হয় যে ট্রেন্ডটি পুনরায় শুরু হবে। পুলব্যাক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ মুহূর্ত।
৩. ক্রসওভার কৌশল (Crossover Strategy): এই কৌশলে, দুটি মুভিং এভারেজের মধ্যে ক্রসওভারের উপর ভিত্তি করে ট্রেড করা হয়। যখন স্বল্পমেয়াদী মুভিং এভারেজ দীর্ঘমেয়াদী মুভিং এভারেজকে অতিক্রম করে, তখন কেনার সংকেত পাওয়া যায়, এবং যখন এটি নিচে নেমে যায়, তখন বিক্রির সংকেত পাওয়া যায়। ক্রসওভার ট্রেডিংয়ের একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি।
৪. প্যারালাল চ্যানেল কৌশল (Parallel Channel Strategy): এই কৌশলে, দুটি প্যারালাল লাইন ব্যবহার করে দামের গতিবিধি চিহ্নিত করা হয়। এই লাইনগুলো সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স স্তর হিসেবে কাজ করে। চ্যানেল এর মধ্যে ট্রেড করা নিরাপদ।
৫. ডাবল বটম/টপ কৌশল (Double Bottom/Top Strategy): এই কৌশলে, চার্টে ডাবল বটম বা ডাবল টপ প্যাটার্ন তৈরি হলে ট্রেড করা হয়। ডাবল বটম হলো একটি বুলিশ প্যাটার্ন, যেখানে দাম দুটি নিম্নতায় নেমে আসে এবং তারপর বাড়ে। ডাবল টপ হলো একটি বিয়ারিশ প্যাটার্ন, যেখানে দাম দুটি উচ্চতায় গিয়ে ফিরে আসে। ডাবল বটম এবং ডাবল টপ প্যাটার্নগুলি ট্রেন্ড পরিবর্তনের পূর্বাভাস দেয়।
বাইনারি অপশনে ট্রেন্ড ফলোয়িং
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ট্রেন্ড ফলোয়িং কৌশল প্রয়োগ করার জন্য, আপনাকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করতে হবে:
- সময়সীমা (Expiry Time): বাইনারি অপশনের সময়সীমা নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ট্রেন্ডের সময়সীমার সাথে সঙ্গতি রেখে অপশনের সময়সীমা নির্বাচন করতে হবে। স্বল্পমেয়াদী ট্রেন্ডের জন্য কম সময়সীমা এবং দীর্ঘমেয়াদী ট্রেন্ডের জন্য বেশি সময়সীমা উপযুক্ত।
- ট্রেডিংয়ের দিক (Direction): ট্রেন্ডের দিক সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে। আপট্রেন্ডের ক্ষেত্রে কল অপশন (call option) এবং ডাউনট্রেন্ডের ক্ষেত্রে পুট অপশন (put option) নির্বাচন করতে হবে। কল এবং পুট অপশন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk Management): বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই, প্রতিটি ট্রেডে আপনার বিনিয়োগের পরিমাণ সীমিত রাখতে হবে। আপনার মোট মূলধনের ৫-১০% এর বেশি কোনো ট্রেডে বিনিয়োগ করা উচিত নয়। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়।
- সঠিক ব্রোকার নির্বাচন: একটি নির্ভরযোগ্য এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্রোকার নির্বাচন করা খুবই জরুরি। ব্রোকারের প্ল্যাটফর্ম এবং ট্রেডিংয়ের শর্তাবলী ভালোভাবে যাচাই করে নিতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ:
ধরুন, আপনি একটি অ্যাসেটের চার্টে দেখছেন যে দাম ক্রমাগত বাড়ছে এবং ৫০ দিনের মুভিং এভারেজ ২০০ দিনের মুভিং এভারেজকে অতিক্রম করেছে। আপনি একটি আপট্রেন্ড চিহ্নিত করেছেন।
এই ক্ষেত্রে, আপনি নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নিতে পারেন:
১. সময়সীমা নির্বাচন: আপনি ১৫ মিনিটের মেয়াদযুক্ত একটি কল অপশন কিনতে পারেন। ২. ট্রেডিংয়ের দিক: যেহেতু এটি একটি আপট্রেন্ড, তাই আপনি কল অপশন কিনবেন। ৩. ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: আপনার মোট মূলধনের ৫% বিনিয়োগ করুন। ৪. পর্যবেক্ষণ: অপশনটি কেনার পরে, আপনি দামের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করবেন এবং যদি দাম বাড়তে থাকে তবে আপনি লাভবান হবেন।
কিছু অতিরিক্ত টিপস
- সবসময় একাধিক টাইমফ্রেম বিশ্লেষণ করুন।
- অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটরগুলির সাথে ট্রেন্ড ফলোয়িং কৌশল ব্যবহার করুন।
- আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুন এবং যুক্তিযুক্তভাবে ট্রেড করুন।
- নিয়মিতভাবে আপনার ট্রেডিং কৌশল পর্যালোচনা করুন এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন করুন।
- ডেমো অ্যাকাউন্টে অনুশীলন করুন এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করুন। ডেমো অ্যাকাউন্ট নতুনদের জন্য খুবই উপযোগী।
উপসংহার
ট্রেন্ড ফলোয়িং একটি শক্তিশালী বিনিয়োগ কৌশল যা লাভজনক ট্রেডিং-এর সুযোগ তৈরি করতে পারে। তবে, এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে কোনো কৌশলই সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকিমুক্ত নয়। সঠিক জ্ঞান, অনুশীলন এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে, আপনি বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ এই কৌশলটি সফলভাবে প্রয়োগ করতে পারেন।
আরও জানতে:
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
- ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট
- Elliott Wave Theory
- ডাউনট্রেন্ড
- আপট্রেন্ড
- সাইডওয়েজ মার্কেট
- টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর
- ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ
- মার্কেট সেন্টিমেন্ট
- পজিশন সাইজিং
- স্টপ লস
- টেক প্রফিট
- ট্রেডিং সাইকোলজি
- অর্থ ব্যবস্থাপনা
- ঝুঁকি এবং রিটার্ন
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
