Retained earnings বিবরণী
রিটেইনড আর্নিং বিবরণী: একটি বিস্তারিত আলোচনা
রিটেইনড আর্নিং (Retained Earnings) বিবরণী একটি আর্থিক বিবরণী যা একটি নির্দিষ্ট সময়কালে একটি কোম্পানির অর্জিত মোট মুনাফা এবং বিতরিত লভ্যাংশ দেখায়। এটি উপার্জন এবং লভ্যাংশের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিবরণী কোম্পানির আর্থিক স্বাস্থ্য এবং লভ্যাংশ প্রদানের ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা দেয়। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের প্রেক্ষাপটে, একটি কোম্পানির রিটেইনড আর্নিংয়ের বিশ্লেষণ ভবিষ্যতের আর্থিক কর্মক্ষমতা এবং স্থিতিশীলতা মূল্যায়নে সহায়ক হতে পারে।
রিটেইনড আর্নিংয়ের সংজ্ঞা ও তাৎপর্য
রিটেইনড আর্নিং হলো সেই মুনাফা যা কোনো কোম্পানি তার শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণের পরিবর্তে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে পুনরায় বিনিয়োগ করে। এটি কোম্পানির মালিকানা স্বত্বের একটি অংশ, যা উদ্বৃত্ত sheet-এ প্রদর্শিত হয়। রিটেইনড আর্নিং বৃদ্ধি পাওয়া মানে কোম্পানি লাভজনক এবং ভবিষ্যতের উন্নয়নের জন্য তহবিল তৈরি করতে সক্ষম।
রিটেইনড আর্নিং বিবরণীর মূল উপাদান
একটি রিটেইনড আর্নিং বিবরণীর প্রধান উপাদানগুলো হলো:
- শুরুর রিটেইনড আর্নিং: এটি পূর্ববর্তী সময়ের শেষ রিটেইনড আর্নিংয়ের পরিমাণ।
- নীট আয়: এটি একটি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য কোম্পানির মোট মুনাফা। আয় বিবরণী থেকে এই তথ্য পাওয়া যায়।
- লভ্যাংশ: এটি শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ করা মুনাফার অংশ।
- শেষ রিটেইনড আর্নিং: এটি সময়কালের শেষে অবশিষ্ট রিটেইনড আর্নিংয়ের পরিমাণ, যা শুরু রিটেইনড আর্নিং, নীট আয় এবং লভ্যাংশের সমন্বয়ে গঠিত।
রিটেইনড আর্নিং বিবরণীর উদাহরণ
একটি সাধারণ রিটেইনড আর্নিং বিবরণীর উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো:
| বিবরণ | পরিমাণ (টাকা) |
|---|---|
| শুরুর রিটেইনড আর্নিং (জানুয়ারি ১, ২০২৪) | ১৫০,০০০ |
| নীট আয় (২০২৪ সালের জন্য) | ৭০,০০০ |
| লভ্যাংশ (শেয়ার প্রতি ৫ টাকা) | ২০,০০০ |
| শেষ রিটেইনড আর্নিং (ডিসেম্বর ৩১, ২০২৪) | ২00,০০০ |
রিটেইনড আর্নিংয়ের হিসাব
রিটেইনড আর্নিংয়ের হিসাব নিম্নলিখিত সূত্রের মাধ্যমে করা হয়:
শেষ রিটেইনড আর্নিং = শুরুর রিটেইনড আর্নিং + নীট আয় - লভ্যাংশ
এই সূত্রটি রিটেইনড আর্নিং বিবরণীর মূল ভিত্তি এবং এটি কোম্পানির আর্থিক কর্মক্ষমতা বুঝতে সহায়ক।
রিটেইনড আর্নিংয়ের ব্যবহার
রিটেইনড আর্নিং কোম্পানির জন্য বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে:
- ব্যবসায়িক সম্প্রসারণ: নতুন বাজার বা পণ্যে বিনিয়োগের জন্য।
- ঋণ পরিশোধ: কোম্পানির ঋণ কমাতে।
- গবেষণা ও উন্নয়ন: নতুন প্রযুক্তি এবং পণ্য উদ্ভাবনের জন্য।
- কাজের মূলধন বৃদ্ধি: দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য।
- লভ্যাংশ প্রদান: শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ বিতরণের জন্য।
বিনিয়োগকারীদের জন্য রিটেইনড আর্নিংয়ের গুরুত্ব
বিনিয়োগকারীরা রিটেইনড আর্নিংয়ের বিবরণী ব্যবহার করে কোম্পানির আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা মূল্যায়ন করতে পারেন। উচ্চ রিটেইনড আর্নিং সাধারণত একটি ইতিবাচক সংকেত, যা নির্দেশ করে যে কোম্পানি লাভজনক এবং প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম।
রিটেইনড আর্নিং এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং
বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে, রিটেইনড আর্নিং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি কোম্পানির শক্তিশালী রিটেইনড আর্নিংয়ের ইতিহাস থাকলে, সেই কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। এর ফলে বাইনারি অপশন ট্রেডাররা কল অপশন (Call Option) এর মাধ্যমে লাভবান হতে পারে।
অন্যদিকে, যদি কোম্পানির রিটেইনড আর্নিং কম থাকে বা ঋণাত্মক হয়, তাহলে শেয়ারের দাম কমে যেতে পারে, এবং সেক্ষেত্রে পুট অপশন (Put Option) লাভজনক হতে পারে।
রিটেইনড আর্নিং বিশ্লেষণের কৌশল
রিটেইনড আর্নিং বিশ্লেষণের সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত:
- রিটেইনড আর্নিংয়ের প্রবণতা: সময়ের সাথে সাথে রিটেইনড আর্নিং বাড়ছে কিনা তা দেখা উচিত।
- লভ্যাংশ প্রদানের অনুপাত: কোম্পানি তার মুনাফার কত অংশ লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করছে, তা মূল্যায়ন করা উচিত।
- মোট রিটার্ন অন ইক্যুইটি (ROE): রিটেইনড আর্নিং ব্যবহার করে কোম্পানি কতটা লাভজনক, তা ROE-এর মাধ্যমে জানা যায়।
- ঋণ-ইক্যুইটি অনুপাত: কোম্পানির ঋণ এবং ইক্যুইটির মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা উচিত।
গুরুত্বপূর্ণ অনুপাত এবং মেট্রিক্স
রিটেইনড আর্নিং বিশ্লেষণের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ অনুপাত এবং মেট্রিক্স নিচে উল্লেখ করা হলো:
- রিটেইনড আর্নিং অনুপাত: রিটেইনড আর্নিংকে মোট ইক্যুইটি দিয়ে ভাগ করা হয়।
- লভ্যাংশ পেআউট অনুপাত: মোট লভ্যাংশকে নীট আয় দিয়ে ভাগ করা হয়।
- রিটেইনড আর্নিংয়ের বৃদ্ধির হার: বর্তমান বছরের রিটেইনড আর্নিংয়ের বৃদ্ধিকে পূর্ববর্তী বছরের রিটেইনড আর্নিং দিয়ে ভাগ করা হয়।
ঝুঁকি এবং সীমাবদ্ধতা
রিটেইনড আর্নিং বিশ্লেষণের কিছু ঝুঁকি এবং সীমাবদ্ধতা রয়েছে:
- হিসাবরক্ষণের নীতি: বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন হিসাবরক্ষণের নীতি অনুসরণ করতে পারে, যা তুলনামূলক বিশ্লেষণকে কঠিন করে তোলে।
- বাজারের প্রভাব: বাজারের পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক কারণগুলো রিটেইনড আর্নিংয়ের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
- ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা: অতীতের কর্মক্ষমতা ভবিষ্যতের সাফল্যের নিশ্চয়তা দেয় না।
অন্যান্য আর্থিক বিবরণীর সাথে সম্পর্ক
রিটেইনড আর্নিং বিবরণী অন্যান্য আর্থিক বিবরণীর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।
- আয় বিবরণী: নীট আয় রিটেইনড আর্নিং বিবরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
- উদ্বৃত্ত sheet: রিটেইনড আর্নিং উদ্বৃত্ত sheet-এর মালিকানা স্বত্বের অংশ।
- নগদ প্রবাহ বিবরণী: রিটেইনড আর্নিংয়ের পরিবর্তন নগদ প্রবাহ বিবরণীতে প্রতিফলিত হয়।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ
বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে, রিটেইনড আর্নিংয়ের পাশাপাশি টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ (Technical Analysis) এবং ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume Analysis) গুরুত্বপূর্ণ।
- টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ: শেয়ারের দামের ঐতিহাসিক ডেটা বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের প্রবণতা নির্ণয় করা হয়। চার্ট প্যাটার্ন এবং ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
- ভলিউম বিশ্লেষণ: শেয়ারের ভলিউম বিশ্লেষণ করে বাজারের চাহিদা এবং যোগান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ভলিউম ইন্ডিকেটর যেমন অন ব্যালেন্স ভলিউম (OBV) এবং মানি ফ্লো ইনডেক্স (MFI) ব্যবহার করা যেতে পারে।
কৌশল এবং টিপস
বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য কিছু কৌশল এবং টিপস নিচে দেওয়া হলো:
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: প্রতিটি ট্রেডে ঝুঁকির পরিমাণ সীমিত রাখুন।
- বাজার গবেষণা: ট্রেড করার আগে ভালোভাবে বাজার গবেষণা করুন।
- ডেমো অ্যাকাউন্ট: প্রথমে ডেমো অ্যাকাউন্টে অনুশীলন করুন, তারপর আসল অর্থ বিনিয়োগ করুন।
- সময় ব্যবস্থাপনা: সঠিক সময়ে ট্রেড করুন, যখন বাজারের পরিস্থিতি অনুকূল থাকে।
- মানসিক শৃঙ্খলা: আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিন।
উপসংহার
রিটেইনড আর্নিং বিবরণী একটি কোম্পানির আর্থিক স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। বিনিয়োগকারীরা এবং বাইনারি অপশন ট্রেডাররা এই বিবরণী ব্যবহার করে কোম্পানির ভবিষ্যৎ কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন করতে পারেন। তবে, শুধুমাত্র রিটেইনড আর্নিংয়ের উপর নির্ভর করে ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়, বরং অন্যান্য আর্থিক বিবরণী, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণের সমন্বয়ে একটি সামগ্রিক মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
আরও জানতে:
- আর্থিক মডেলিং
- মূল্যায়ন
- বিনিয়োগ
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা
- শেয়ার বাজার
- লভ্যাংশ নীতি
- কর্পোরেট ফিনান্স
- হিসাববিজ্ঞান
- নিরীক্ষা
- বাজেট
- আর্থিক পরিকল্পনা
- মূলধন বাজেট
- ক্যাশ ফ্লো ম্যানেজমেন্ট
- ঋণ ব্যবস্থাপনা
- ট্যাক্স পরিকল্পনা
- আইনগত কাঠামো
- বাজার বিশ্লেষণ
- প্রতিযোগিতামূলক বিশ্লেষণ
- SWOT বিশ্লেষণ
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
