Food and Agriculture Organization of the United Nations

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা

thumb|right|জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সদর দপ্তর, রোম, ইতালি

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (Food and Agriculture Organization of the United Nations), সংক্ষেপে FAO, জাতিসংঘের একটি বিশেষায়িত সংস্থা। এটি ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদর দপ্তর ইতালির রোমে অবস্থিত। FAO-র প্রধান কাজ হলো বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টির মান উন্নয়ন করা। খাদ্য উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, গ্রামীণ উন্নয়ন, বন ব্যবস্থাপনা, মৎস্য চাষ এবং খাদ্য ও কৃষিসংক্রান্ত নীতি প্রণয়নে সংস্থাটি বিভিন্ন দেশেকে সহায়তা করে।

প্রতিষ্ঠা ও পটভূমি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে খাদ্য সংকট এবং দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে FAO প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৪২ সালে জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (United Nations Food and Agriculture Organization) হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়, যা ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এর প্রতিষ্ঠালগ্নে, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্য বণ্টনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করাই ছিল প্রধান লক্ষ্য। সময়ের সাথে সাথে FAO-র কাজের পরিধি বিস্তৃত হয়েছে এবং এটি খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং টেকসই কৃষির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিয়েছে।

উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী

FAO-র প্রধান উদ্দেশ্যগুলো হলো:

বিশ্বের সকল মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
খাদ্য উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং উন্নত কৃষি পদ্ধতির প্রচলন করা।
গ্রামীণ জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা।
টেকসই প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
খাদ্য ও কৃষি সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা করা।
আন্তর্জাতিক খাদ্য বাজারে স্থিতিশীলতা আনা।

এসব উদ্দেশ্য পূরণের জন্য FAO বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:

খাদ্য উৎপাদন এবং ফসলের ফলন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা।
কৃষি গবেষণা এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সহায়তা করা।
বিভিন্ন দেশে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা।
খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টি সংক্রান্ত নীতি প্রণয়নে সহায়তা করা।
বন ও মৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য দিকনির্দেশনা প্রদান করা।
দুর্যোগকালীন সময়ে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা।
টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কাজ করা।

সাংগঠনিক কাঠামো

FAO-র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা হলো সম্মেলন (Conference), যেখানে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলন প্রতি দুই বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের মাধ্যমে সংস্থাটির বাজেট অনুমোদন করা হয় এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হয়।

সম্মেলনের পরেই গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হলো কাউন্সিল (Council)। এটি FAO-র নির্বাহী শাখা হিসেবে কাজ করে এবং সম্মেলনের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে সহায়তা করে। কাউন্সিলে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা থাকেন।

FAO-র দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করে মহাপরিচালক (Director-General)। তিনি সংস্থার প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং সকল কার্যক্রমের জন্য দায়বদ্ধ থাকেন। বর্তমানে কু ডংইউ (Qu Dongyu) FAO-র মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সংস্থাটিতে বিভিন্ন বিভাগ এবং আঞ্চলিক অফিস রয়েছে, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষায়িত সেবা প্রদান করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

কৃষি ও খাদ্য বিভাগ (Agriculture and Food Department)
বন বিভাগ (Forestry Department)
মৎস্য ও জলজ চাষ বিভাগ (Fisheries and Aquaculture Department)
অর্থনৈতিক ও সামাজিক নীতি বিভাগ (Economic and Social Policy Department)
প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশ বিভাগ (Natural Resources and Environment Department)

সদস্য রাষ্ট্রসমূহ

বর্তমানে FAO-র সদস্য সংখ্যা ১৯৫। বিশ্বের প্রায় সকল স্বাধীন রাষ্ট্র এই সংস্থার সদস্য। বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে FAO-র সদস্যপদ লাভ করে। সদস্য রাষ্ট্রগুলো নিয়মিতভাবে FAO-কে চাঁদা প্রদান করে এবং সংস্থার কার্যক্রমে সহযোগিতা করে।

গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম ও প্রকল্প

FAO বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম ও প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হলো:

সবুজ বিপ্লব (Green Revolution): FAO ১৯৬০-এর দশকে সবুজ বিপ্লবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে খাদ্য উৎপাদন dramatically বৃদ্ধি পায়।
ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব (World Food Programme): FAO বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সাথে যৌথভাবে কাজ করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।
টেকসই কৃষি উন্নয়ন (Sustainable Agricultural Development): FAO টেকসই কৃষি পদ্ধতির প্রচলন এবং পরিবেশ সুরক্ষার ওপর জোর দেয়।
বন সংরক্ষণে উদ্যোগ (Forest Conservation Initiatives): সংস্থাটি বনভূমি রক্ষা এবং বন ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে।
মৎস্য চাষের প্রসার (Fisheries and Aquaculture Development): FAO মৎস্য চাষের আধুনিকীকরণ এবং জলজ সম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দেয়।
খাদ্য সংকট মোকাবিলা (Food Crisis Response): সংস্থাটি বিভিন্ন দেশে খাদ্য সংকট মোকাবিলায় জরুরি সহায়তা প্রদান করে।

বর্তমান চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বর্তমানে FAO বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। এর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব, খাদ্য অপচয় এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা অন্যতম। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে FAO নতুন কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

জলবায়ু-সহনশীল কৃষি (Climate-Resilient Agriculture): জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করার জন্য কৃষিতে নতুন প্রযুক্তি ও পদ্ধতি ব্যবহার করা।
খাদ্য অপচয় হ্রাস (Reducing Food Loss and Waste): খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত অপচয় কমানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা (Sustainable Food Systems): পরিবেশের ওপর কম প্রভাব ফেলে এমন খাদ্য উৎপাদন এবং বিতরণের ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
ডিজিটাল কৃষি (Digital Agriculture): কৃষিতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা এবং কৃষকদের সহায়তা করা।
পুষ্টির মান উন্নয়ন (Improving Nutrition): খাদ্য ও পুষ্টির মানের ওপর জোর দেওয়া এবং অপুষ্টি দূর করার জন্য কাজ করা।

FAO এবং অন্যান্য সংস্থা

FAO অন্যান্য জাতিসংঘের সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (World Food Programme - WFP): খাদ্য সহায়তা এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে FAO-র প্রধান সহযোগী।
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (United Nations Environment Programme - UNEP): পরিবেশ সুরক্ষার জন্য যৌথভাবে কাজ করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization - WHO): খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টির মান উন্নয়নে সহযোগিতা করে।
জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (United Nations Development Programme - UNDP): দারিদ্র্য বিমোচন এবং গ্রামীণ উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করে।
বিশ্ব ব্যাংক (World Bank): কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করে।

সমালোচনা

FAO কিছু ক্ষেত্রে সমালোচিত হয়েছে। কিছু সমালোচকের মতে, সংস্থাটি উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্থানীয় চাহিদা এবং সংস্কৃতিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় না। আবার কেউ কেউ FAO-র সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাবের অভিযোগ করেন। এছাড়াও, সংস্থাটির কার্যকারিতা এবং প্রভাব নিয়েও বিভিন্ন বিতর্ক রয়েছে।

উপসংহার

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষির উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, পরিবেশ সুরক্ষা এবং গ্রামীণ জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সংস্থাটির অবদান অনস্বীকার্য। তবে, FAO-কে বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আরো বেশি উদ্ভাবনী এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

FAO official website: [1](https://www.fao.org/)
United Nations website: [2](https://www.un.org/)
World Food Programme website: [3](https://www.wfp.org/)

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ