বিশ্ব ব্যাংক
বিশ্ব ব্যাংক
thumb|right|300px|বিশ্ব ব্যাংকের সদর দপ্তর, ওয়াশিংটন, ডি.সি.
বিশ্ব ব্যাংক (World Bank) একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এটি সদস্য দেশগুলোকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করার জন্য গঠিত। ১৯৪৪ সালে ব্রেটন্স উডস সম্মেলনে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদর দপ্তর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন, ডি.সি. তে অবস্থিত। বিশ্ব ব্যাংক মূলত পাঁচটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত, যা একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: আন্তর্জাতিক পুনর্গঠন ও উন্নয়ন ব্যাংক (IBRD), আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (IDA), আন্তর্জাতিক বেসরকারি বিনিয়োগ সংস্থা (IFC), বহুমুখী বিনিয়োগ গ্যারান্টি সংস্থা (MIGA) এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি কেন্দ্র (ICSID)।
ইতিহাস
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অর্থনীতি পুনর্গঠনের লক্ষ্যে ১৯৪৪ সালে ৪৪টি দেশ ব্রেটন্স উডস সম্মেলনে মিলিত হয়। এই সম্মেলনের ফলস্বরূপ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) এবং বিশ্ব ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রাথমিকভাবে, বিশ্ব ব্যাংক ইউরোপের পুনর্গঠনে মনোযোগ দেয়। ১৯৫০-এর দশকে, এটি উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়নে সহায়তা করতে শুরু করে। সময়ের সাথে সাথে, বিশ্ব ব্যাংকের কার্যক্রমের পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এটি বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক প্রকল্পে অর্থায়ন করছে।
কাঠামো এবং পরিচালনা
বিশ্ব ব্যাংকের কাঠামো বেশ জটিল। এর সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা হলো নির্বাহী পরিচালকদের বোর্ড (Board of Executive Directors)। এই বোর্ডে সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা থাকেন। ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট নির্বাহী পরিচালকদের বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেন। বর্তমানে অজয় বাঙ্গা বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট। সদস্য দেশগুলোর ভোটের অধিকার তাদের মূলধনের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার হওয়ায় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
| প্রতিষ্ঠান | সংক্ষিপ্ত বিবরণ | উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ঋণ প্রদান করে। | দরিদ্র দেশগুলোকে অনুদান ও স্বল্প সুদের ঋণ প্রদান করে। | বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করে। | বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি কমায়। | বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করে। |
|---|
কার্যক্রম
বিশ্ব ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক প্রকল্পে অর্থায়ন করে। এর মধ্যে রয়েছে:
- অবকাঠামো উন্নয়ন: সড়ক, সেতু, বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন।
- শিক্ষা: শিক্ষা খাতের উন্নতি এবং শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি।
- স্বাস্থ্য: স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ।
- কৃষি: কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
- পরিবেশ: পরিবেশ রক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা।
- দারিদ্র্য বিমোচন: দারিদ্র্য হ্রাস এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।
- সুশাসন: সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি দমন।
বিশ্ব ব্যাংক ঋণ, অনুদান, এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করে। এটি বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক নীতি এবং উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নেও সহায়তা করে।
ঋণদান প্রক্রিয়া
বিশ্ব ব্যাংকের ঋণদান প্রক্রিয়া বেশ কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। প্রথমত, সদস্য দেশগুলো তাদের উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাবনা ব্যাংকের কাছে জমা দেয়। এরপর ব্যাংক প্রস্তাবনাগুলো মূল্যায়ন করে এবং প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করে। প্রকল্পটি উপযুক্ত বিবেচিত হলে, ব্যাংক ঋণ প্রদানের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। ঋণ সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী হয় এবং এর সুদের হার তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
সমালোচনা
বিশ্ব ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে সমালোচিত হয়েছে। কিছু সমালোচনার মধ্যে রয়েছে:
- শর্তযুক্ত ঋণ: বিশ্ব ব্যাংক প্রায়শই ঋণগ্রহীতা দেশগুলোর উপর কঠোর অর্থনৈতিক শর্ত আরোপ করে, যা তাদের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
- পরিবেশগত প্রভাব: বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মিত কিছু প্রকল্পের কারণে পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
- দুর্নীতি: বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে দুর্নীতি হওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
- নীতিনির্ধারণে পশ্চিমা প্রভাব: বিশ্ব ব্যাংকের নীতিনির্ধারণে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রভাব বেশি বলে অনেকে মনে করেন।
এই সমালোচনা সত্ত্বেও, বিশ্ব ব্যাংক উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিশ্ব ব্যাংক এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং
যদিও বিশ্ব ব্যাংক সরাসরি বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর সাথে জড়িত নয়, তবে এর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং উন্নয়নমূলক নীতিগুলো বৈশ্বিক আর্থিক বাজারকে প্রভাবিত করে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উৎসাহিত করার মাধ্যমে, বিশ্ব ব্যাংক বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করে, যা ট্রেডিং এবং অন্যান্য আর্থিক কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত করতে পারে।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা বিশ্ব ব্যাংকের নীতি ও প্রকল্পগুলোর প্রভাব মূল্যায়ন করে ঝুঁকি কমাতে পারে।
এখানে কিছু প্রাসঙ্গিক লিঙ্ক দেওয়া হলো:
- অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
- দারিদ্র্য বিমোচন
- উন্নয়নশীল দেশ
- আন্তর্জাতিক বাণিজ্য
- বৈশ্বিক অর্থনীতি
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- বিনিয়োগ কৌশল
- ফিনান্সিয়াল মার্কেট
- ব্রেটন্স উডস সিস্টেম
- আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)
- সুদের হার
- মুদ্রাস্ফীতি
- বৈদেশিক বিনিয়োগ
- অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা
- টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
- মুভিং এভারেজ
- আরএসআই (RSI)
- এফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট
- ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP)
সাম্প্রতিক উন্নয়ন
বিশ্ব ব্যাংক বর্তমানে কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমনে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। ব্যাংক টিকা বিতরণে সহায়তা করছে এবং সবুজ অর্থনীতি উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। এছাড়া, ব্যাংক ডিজিটাল অর্থনীতির প্রসারে এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (SME) খাতকে শক্তিশালী করতে কাজ করছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বিশ্ব ব্যাংক ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করার লক্ষ্য নিয়েছে। এই লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য, ব্যাংক তার কার্যক্রমকে আরও কার্যকর এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক করার পরিকল্পনা করছে। ব্যাংক নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর প্রভাব মূল্যায়ন এবং উন্নত করার চেষ্টা করছে।
উপসংহার
বিশ্ব ব্যাংক একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এটি উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যদিও ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে সমালোচিত হয়েছে, তবে এর অবদান অনস্বীকার্য। ভবিষ্যতে, ব্যাংককে আরও কার্যকর এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে, যাতে এটি তার লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে পারে।
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
