Fluid mechanics
ফ্লুইড মেকানিক্স
ফ্লুইড মেকানিক্স (Fluid mechanics) পদার্থবিজ্ঞানের একটি শাখা যেখানে তরল (Liquid) এবং গ্যাস (Gas) এর আচরণ এবং বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হয়। এটি প্রকৌশলবিদ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং (Civil Engineering), মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (Mechanical Engineering), কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (Chemical Engineering) এবং অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং (Aerospace Engineering) সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। ফ্লুইড মেকানিক্স শুধু তাত্ত্বিক বিষয় নয়, এর ব্যবহারিক প্রয়োগও ব্যাপক।
ফ্লুইডের সংজ্ঞা
ফ্লুইড হলো সেই সকল পদার্থ যা নিয়মিতভাবে প্রবাহিত (Flow) হতে পারে। কঠিন পদার্থ নির্দিষ্ট আকার বজায় রাখে, কিন্তু ফ্লুইড পদার্থের নিজস্ব আকার নেই। তারা যে পাত্রে রাখা হয়, তার আকার ধারণ করে। ফ্লুইড দুই ধরনের হতে পারে: তরল এবং গ্যাস। তরলের নির্দিষ্ট আয়তন আছে, কিন্তু গ্যাসের আয়তন পরিবর্তনশীল।
ফ্লুইড মেকানিক্সের প্রকারভেদ
ফ্লুইড মেকানিক্সকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়:
- ফ্লুইড স্ট্যাটিক্স (Fluid statics): এটি স্থির ফ্লুইডের আচরণ নিয়ে আলোচনা করে। যেমন - কোনো তরলের মধ্যে নিমজ্জিত বস্তুর উপর প্লবতা (Buoyancy) এবং চাপ (Pressure) ইত্যাদি।
- ফ্লুইড কাইনেটিক্স (Fluid kinetics): এটি চলমান ফ্লুইডের আচরণ নিয়ে আলোচনা করে। এর মধ্যে ফ্লুইডের বেগ, ত্বরণ এবং প্রবাহের ধরণ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
- ফ্লুইড ডায়নামিক্স (Fluid dynamics): এটি ফ্লুইডের গতি এবং এর সাথে জড়িত শক্তি নিয়ে আলোচনা করে। এটি ফ্লুইড কাইনেটিক্সের একটি অংশ।
ফ্লুইডের মৌলিক বৈশিষ্ট্য
ফ্লুইডের কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এর আচরণ বুঝতে সহায়ক:
- ঘনত্ব (Density): প্রতি একক আয়তনে ফ্লুইডের ভরকে ঘনত্ব বলে। এটিকে সাধারণত ρ (রো) দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
- চাপ (Pressure): ফ্লুইডের উপর লম্বভাবে প্রযুক্ত বলকে চাপ বলে। এটিকে P দ্বারা প্রকাশ করা হয়। প্যাসকেল (Pascal) চাপের একক।
- সান্দ্রতা (Viscosity): ফ্লুইডের অভ্যন্তরীণ ঘর্ষণ ধর্মকে সান্দ্রতা বলে। এটি ফ্লুইডের প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। এটিকে μ (মিউ) দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
- পৃষ্ঠটান (Surface tension): ফ্লুইডের পৃষ্ঠের অণুগুলোর মধ্যে আকর্ষণ বলের কারণে সৃষ্ট একটি ঘটনা হলো পৃষ্ঠটান।
- কম্প্রেসিবিলিটি (Compressibility): চাপ প্রয়োগ করে ফ্লুইডের আয়তন কমানোর ক্ষমতাকে কম্প্রেসিবিলিটি বলে।
গুরুত্বপূর্ণ সূত্রাবলী
ফ্লুইড মেকানিক্সে ব্যবহৃত কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্রাবলী নিচে উল্লেখ করা হলো:
- বার্নোলির নীতি (Bernoulli's principle): কোনো ফ্লুইডের বেগ বৃদ্ধি পেলে চাপ কমে যায়। এই নীতিটি এয়ারফয়েল (Airfoil) এবং ভেন্টুরি মিটার (Venturi meter) এর কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করে।
P + ½ρv² + ρgh = ধ্রুবক এখানে, P = চাপ, ρ = ঘনত্ব, v = বেগ, g = অভিকর্ষজ ত্বরণ, h = উচ্চতা।
- অ continuité সমীকরণ (Continuity equation): কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে ফ্লুইডের ভর Conservation law মেনে চলে।
A₁v₁ = A₂v₂ এখানে, A = ক্ষেত্রফল, v = বেগ।
- পয়জুয়েই প্রবাহ (Poiseuille's flow): কোনো নলের মধ্যে সান্দ্র ফ্লুইডের প্রবাহের হার নলের ব্যাসার্ধের উপর নির্ভর করে।
Q = (πr⁴ΔP) / (8ηL) এখানে, Q = প্রবাহের হার, r = ব্যাসার্ধ, ΔP = চাপের পার্থক্য, η = সান্দ্রতা, L = নলের দৈর্ঘ্য।
- স্টোকসের সূত্র (Stokes' law): কোনো গোলকের মধ্যে দিয়ে সান্দ্র ফ্লুইডের প্রবাহের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত বল।
F = 6πμrv এখানে, F = বল, μ = সান্দ্রতা, r = গোলকের ব্যাসার্ধ, v = বেগ।
ফ্লুইড প্রবাহের প্রকারভেদ
ফ্লুইড প্রবাহকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়:
- স্থির প্রবাহ (Steady flow): সময়ের সাথে সাথে কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুতে ফ্লুইডের বেগ এবং চাপ একই থাকে।
- অস্থির প্রবাহ (Unsteady flow): সময়ের সাথে সাথে কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুতে ফ্লুইডের বেগ এবং চাপ পরিবর্তিত হয়।
- ল্যামিনার প্রবাহ (Laminar flow): ফ্লুইডের কণাগুলো মসৃণভাবে এবং স্তর আকারে প্রবাহিত হয়।
- টার্বুলেন্ট প্রবাহ (Turbulent flow): ফ্লুইডের কণাগুলো এলোমেলোভাবে এবং মিশ্রিতভাবে প্রবাহিত হয়।
- সংকুচিত প্রবাহ (Compressible flow): ফ্লুইডের ঘনত্ব পরিবর্তিত হয়। শব্দ (Sound) এর গতি এই প্রবাহের একটি উদাহরণ।
- অসংকুচিত প্রবাহ (Incompressible flow): ফ্লুইডের ঘনত্ব স্থির থাকে। জল (Water) এর প্রবাহ এর একটি উদাহরণ।
ব্যবহারিক প্রয়োগ
ফ্লুইড মেকানিক্সের ব্যবহারিক প্রয়োগ অসংখ্য। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ দেওয়া হলো:
- নৌকা ও জাহাজ নির্মাণ (Shipbuilding): নৌকার কাঠামো এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে এটি জলের উপর ভেসে থাকতে পারে এবং সহজে চলতে পারে। এখানে প্লবতা (Buoyancy) এবং ড্র্যাগ (Drag) এর ধারণা ব্যবহার করা হয়।
- পাওয়ার প্ল্যান্ট (Power plant): পাওয়ার প্ল্যান্টে বাষ্প এবং জলের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে ফ্লুইড মেকানিক্স ব্যবহার করা হয়।
- পাম্প ও টারবাইন (Pumps and turbines): পাম্প এবং টারবাইনের নকশা এবং কার্যকারিতা ফ্লুইড মেকানিক্সের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়।
- এয়ারকন্ডিশনিং ও রেফ্রিজারেশন (Air conditioning and refrigeration): এই সিস্টেমগুলোতে রেফ্রিজারেন্ট গ্যাসের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে ফ্লুইড মেকানিক্স ব্যবহার করা হয়।
- চিকিৎসা বিজ্ঞান (Medical science): রক্ত প্রবাহ এবং শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া বুঝতে ফ্লুইড মেকানিক্স ব্যবহৃত হয়।
- জল সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন (Water supply and sewerage): জল সরবরাহ এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় জলের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে ফ্লুইড মেকানিক্স ব্যবহার করা হয়।
- বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞান (Atmospheric science): বায়ুপ্রবাহ (Wind flow) এবং বৃষ্টিপাত (Rainfall) এর পূর্বাভাস দিতে ফ্লুইড মেকানিক্স ব্যবহৃত হয়।
ফ্লুইড মেকানিক্সের আধুনিক প্রবণতা
ফ্লুইড মেকানিক্সের ক্ষেত্রে বর্তমানে কিছু আধুনিক প্রবণতা দেখা যায়:
- কম্পিউটেশনাল ফ্লুইড ডায়নামিক্স (Computational Fluid Dynamics - CFD): কম্পিউটার মডেলিং এবং সিমুলেশনের মাধ্যমে ফ্লুইডের আচরণ বিশ্লেষণ করা হয়। এটি জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার।
- মাইক্রোফ্লুইডিক্স (Microfluidics): ছোট আকারের ফ্লুইডিক সিস্টেম নিয়ে গবেষণা, যা বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং (Biomedical engineering) এবং রাসায়নিক বিশ্লেষণ (Chemical analysis) এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- মাল্টিফেজ ফ্লো (Multiphase flow): একাধিক ফ্লুইডের মিশ্রণ (যেমন জল এবং তেল) নিয়ে গবেষণা।
- নন-নিউটনিয়ান ফ্লুইড (Non-Newtonian fluid): যে ফ্লুইডগুলো নিউটনের সান্দ্রতা সূত্র মেনে চলে না, তাদের আচরণ নিয়ে গবেষণা। যেমন - রক্ত (Blood), পেইন্ট (Paint) ইত্যাদি।
ফ্লুইড মেকানিক্স একটি জটিল এবং বহুমাত্রিক ক্ষেত্র। এর সঠিক জ্ঞান প্রকৌশল এবং বিজ্ঞান উভয় ক্ষেত্রেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সংজ্ঞা | একক | প্রতীক |
ঘনত্ব | কেজি/মিটার³ | ρ |
চাপ | প্যাসকেল (Pa) | P |
সান্দ্রতা | প্যাসকেল-সেকেন্ড (Pa·s) | μ |
বেগ | মিটার/সেকেন্ড (m/s) | v |
অভিকর্ষজ ত্বরণ | মিটার/সেকেন্ড² (m/s²) | g |
আরও জানতে:
- তরঙ্গ (Wave)
- শব্দতত্ত্ব (Acoustics)
- তাপগতিবিদ্যা (Thermodynamics)
- পরিবহন ঘটনা (Transport phenomena)
- নলের প্রবাহ (Pipe flow)
- টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস: মুভিং এভারেজ (Moving Average), আরএসআই (RSI), এমএসিডি (MACD)
- ভলিউম অ্যানালাইসিস: অন ব্যালেন্স ভলিউম (On Balance Volume), ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP)
- ট্রেডিং স্ট্র্যাটেজি: ব্রেকআউট ট্রেডিং (Breakout Trading), স্কেল্পিং (Scalping), সুইং ট্রেডিং (Swing Trading)
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: স্টপ লস (Stop Loss), টেক প্রফিট (Take Profit), পজিশন সাইজিং (Position Sizing)
- মার্কেট সাইকোলজি: ফিয়ার অফ মিসিং আউট (FOMO), গ্রিড অ্যান্ড ফিয়ার (Greed and Fear)
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ