প্লবতা
প্লবতা
প্লবতা (Buoyancy) হল একটি তরল পদার্থ দ্বারা কোনো বস্তুর উপর প্রযুক্ত ঊর্ধ্বমুখী বল। এই বল বস্তুর দ্বারা অপসারিত তরলের ওজনের সমান। এই কারণে কোনো বস্তু তরলে আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে ভাসতে পারে। প্লবতা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদার্থবিদ্যা-র ধারণা এবং এর বিভিন্ন ব্যবহারিক প্রয়োগ রয়েছে। এই নিবন্ধে প্লবতার মূলনীতি, কারণ, প্রকারভেদ, এবং আর্কিমিডিসের নীতি সহ বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হলো।
প্লবতার মূলনীতি
প্লবতার মূল ভিত্তি হলো আর্কিমিডিসের নীতি। এই নীতি অনুসারে, কোনো বস্তু যখন কোনো তরলে নিমজ্জিত করা হয়, তখন তরল বস্তুটির উপর একটি ঊর্ধ্বমুখী বল প্রয়োগ করে, যা বস্তুটি কর্তৃক অপসারিত তরলের ওজনের সমান। এই ঊর্ধ্বমুখী বলই হলো প্লবতা।
গাণিতিকভাবে, প্লবতা বল (Fb) প্রকাশ করা হয় এভাবে:
Fb = ρ * V * g
এখানে,
- ρ (রো) হলো তরলের ঘনত্ব (Density)।
- V হলো বস্তুর দ্বারা অপসারিত তরলের আয়তন (Volume)।
- g হলো অভিকর্ষজ ত্বরণ (Acceleration due to gravity)।
এই সূত্র থেকে বোঝা যায় যে, প্লবতা বল তরলের ঘনত্ব, অপসারিত তরলের আয়তন এবং অভিকর্ষজ ত্বরণের উপর নির্ভরশীল।
প্লবতার কারণ
প্লবতার কারণ ব্যাখ্যা করার জন্য তরলের চাপ (Pressure) সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি। তরলের অভ্যন্তরে কোনো বিন্দুতে চাপ হলো ঐ বিন্দুতে তরলের ওজন এবং তার উপরে থাকা তরলের কারণে সৃষ্ট চাপ। গভীরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে চাপও বৃদ্ধি পায়।
যখন কোনো বস্তু তরলে নিমজ্জিত করা হয়, তখন বস্তুর উপর বিভিন্ন দিকে চাপ প্রয়োগ করা হয়। বস্তুর নিমজ্জিত অংশের উপরের পৃষ্ঠে যে চাপ থাকে, তার চেয়ে নিচের পৃষ্ঠে বেশি চাপ থাকে। এই চাপের পার্থক্যের কারণে একটি ঊর্ধ্বমুখী বল তৈরি হয়, যা প্লবতা নামে পরিচিত।
প্লবতার প্রকারভেদ
প্লবতাকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়:
১. ধনাত্মক প্লবতা (Positive Buoyancy): যখন কোনো বস্তুর ওজন তার দ্বারা অপসারিত তরলের ওজনের চেয়ে কম হয়, তখন বস্তু তরলে ভাসে। এই ক্ষেত্রে প্লবতা বল বস্তুর ওজনের চেয়ে বেশি থাকে। উদাহরণস্বরূপ, একটি কাঠের টুকরা জলে ভাসতে পারে।
২. ঋণাত্মক প্লবতা (Negative Buoyancy): যখন কোনো বস্তুর ওজন তার দ্বারা অপসারিত তরলের ওজনের চেয়ে বেশি হয়, তখন বস্তু তরলে ডুবে যায়। এই ক্ষেত্রে প্লবতা বল বস্তুর ওজনের চেয়ে কম থাকে। উদাহরণস্বরূপ, একটি পাথরের টুকরা জলে ডুবে যায়।
প্লবতা এবং ঘনত্ব
কোনো বস্তুর প্লবতা তার ঘনত্ব (Density)-এর উপর নির্ভর করে। ঘনত্ব হলো প্রতি একক আয়তনে বস্তুর ভর। যদি কোনো বস্তুর ঘনত্ব তরলের ঘনত্বের চেয়ে কম হয়, তবে বস্তু ভাসবে। অন্যথায়, বস্তু ডুবে যাবে।
যদি বস্তুর ঘনত্ব তরলের ঘনত্বের সমান হয়, তবে বস্তু তরলে ভাসবে কিন্তু উপরে বা নিচে যাবে না, বরং তরলের মধ্যে স্থির থাকবে।
| তরলের ঘনত্ব | ফলাফল | | ||
| বেশি | ভাসে | | কম | ডুবে যায় | | সমান | স্থির থাকে | |
ঘনত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌত রাশি যা প্লবতা নির্ধারণে সহায়ক।
প্লবতার ব্যবহারিক প্রয়োগ
প্লবতার ব্যবহারিক প্রয়োগ অসংখ্য। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ দেওয়া হলো:
১. জাহাজ নির্মাণ: জাহাজ তৈরি করার সময় প্লবতার নীতি অনুসরণ করা হয়। জাহাজের এমনভাবে নকশা করা হয় যাতে এটি প্রচুর পরিমাণে জল অপসারিত করতে পারে এবং প্লবতা বলের মাধ্যমে ভেসে থাকতে পারে। জাহাজ নির্মাণ শিল্প-এ প্লবতার হিসাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২. বেলুন ও উড়োজাহাজ: বেলুন এবং উড়োজাহাজগুলি প্লবতার নীতির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। বেলুনে হালকা গ্যাস (যেমন হিলিয়াম) ব্যবহার করা হয়, যা বাতাসের চেয়ে হালকা হওয়ায় প্লবতা বলের মাধ্যমে উপরে ওঠে।
৩. সাবমেরিন: সাবমেরিন জলের নিচে ডুবতে এবং উপরে উঠতে প্লবতা নিয়ন্ত্রণ করে। সাবমেরিনের ভেতরে জলের ভর পরিবর্তন করে এর ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণ করা হয়, যা প্লবতা বলকে প্রভাবিত করে।
৪. হাইড্রোমিটার: হাইড্রোমিটার হলো একটি যন্ত্র যা তরলের ঘনত্ব নির্ণয় করতে ব্যবহৃত হয়। এটি প্লবতার নীতির উপর ভিত্তি করে কাজ করে।
৫. লাইফ জ্যাকেট: লাইফ জ্যাকেট প্লবতা বৃদ্ধি করে মানুষকে জলে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।
প্লবতা এবং তরল গতিবিদ্যা
প্লবতা তরল গতিবিদ্যা (Fluid Dynamics)-এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তরল গতিবিদ্যা হলো তরলের আচরণ এবং বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা। প্লবতা তরলের চাপ, ঘনত্ব এবং প্রবাহের সাথে সম্পর্কিত। এই কারণে, তরল গতিবিদ্যা অধ্যয়ন করার সময় প্লবতার ধারণাটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
প্লবতা এবং ভাসমানতা
ভাসমানতা (Flotation) হলো প্লবতার একটি বিশেষ রূপ, যেখানে কোনো বস্তু তরলের উপর ভেসে থাকে। ভাসমানতা নির্ভর করে বস্তুর ওজন, তরলের ঘনত্ব এবং প্লবতা বলের মধ্যে সম্পর্কের উপর।
প্লবতা এবং স্থিতিশীলতা
কোনো বস্তুর স্থিতিশীলতা (Stability) তার প্লবতার উপর নির্ভরশীল। স্থিতিশীলতা বলতে বোঝায় কোনো বস্তু তার অবস্থানে কতটুকু স্থির থাকতে পারে। বস্তুর ভরকেন্দ্র (Center of Mass) এবং প্লবতা কেন্দ্রের (Center of Buoyancy) অবস্থানের উপর স্থিতিশীলতা নির্ভর করে।
প্লবতা এবং আর্কিমিডিসের নীতি-র গাণিতিক ব্যাখ্যা
আর্কিমিডিসের নীতি অনুসারে, কোনো বস্তু তরলে নিমজ্জিত করলে যে প্লবতা বল (Fb) অনুভব করে, তা নিমজ্জিত অংশের আয়তন (V) এবং তরলের ঘনত্বের (ρ) গুণফলের সমান, যেখানে g হলো অভিকর্ষজ ত্বরণ।
Fb = ρVg
এই সূত্রটি ব্যবহার করে, কোনো বস্তুর প্লবতা বল নির্ণয় করা যায় এবং এটি ভাসবে নাকি ডুববে তা নির্ধারণ করা যায়।
প্লবতা সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
- প্লবতা বল সর্বদা ঊর্ধ্বমুখী হয়।
- প্লবতা বল বস্তুর ওজনের উপর নির্ভরশীল নয়, বরং অপসারিত তরলের ওজনের উপর নির্ভরশীল।
- একই তরলে নিমজ্জিত দুটি বস্তুর প্লবতা বল তাদের আকারের উপর নির্ভর করে।
- প্লবতা বলের কারণে বস্তুর আপাত ওজন (Apparent Weight) হ্রাস পায়।
প্লবতা এবং বিকর্ষণ বল
প্লবতা এবং বিকর্ষণ বল (Drag Force) উভয়ই তরলের মধ্যে চলমান বস্তুর উপর কাজ করে। প্লবতা একটি ঊর্ধ্বমুখী বল, যা বস্তুকে উপরে ঠেলে তোলে, অন্যদিকে বিকর্ষণ বল গতির বিপরীত দিকে কাজ করে এবং বস্তুর গতিকে বাধা দেয়।
প্লবতা এবং পৃষ্ঠটান
পৃষ্ঠটান (Surface Tension) তরলের পৃষ্ঠের বৈশিষ্ট্য, যা তরলের অণুগুলির মধ্যে আকর্ষণ বলের কারণে সৃষ্টি হয়। প্লবতা তরলের ঘনত্বের উপর নির্ভরশীল, যেখানে পৃষ্ঠটান তরলের পৃষ্ঠের উপর নির্ভরশীল। এই দুটি ভিন্ন ধারণা হলেও, উভয়ই তরলের আচরণকে প্রভাবিত করে।
প্লবতা নিয়ে কিছু জটিল সমস্যা ও সমাধান
১. বিভিন্ন আকারের বস্তুর প্লবতা নির্ণয়: বিভিন্ন আকারের বস্তুর প্লবতা নির্ণয় করার জন্য প্রথমে বস্তুর দ্বারা অপসারিত তরলের আয়তন নির্ণয় করতে হয়। এরপর আর্কিমিডিসের সূত্র ব্যবহার করে প্লবতা বল গণনা করা যায়।
২. মিশ্র তরলে প্লবতা: যখন কোনো বস্তু দুটি ভিন্ন তরলের মিশ্রণে নিমজ্জিত করা হয়, তখন প্লবতা বল নির্ণয় করার জন্য প্রতিটি তরলের ঘনত্ব এবং বস্তুর নিমজ্জিত অংশের আয়তন বিবেচনা করতে হয়।
৩. আংশিক নিমজ্জিত বস্তুর প্লবতা: যদি কোনো বস্তু আংশিকভাবে তরলে নিমজ্জিত থাকে, তবে প্লবতা বল শুধুমাত্র নিমজ্জিত অংশের ওজনের সমান হবে।
প্লবতা: কৌশল, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ
প্লবতা মূলত একটি ভৌত ধারণা, তাই এখানে কৌশল, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ বা ভলিউম বিশ্লেষণ সরাসরি প্রযোজ্য নয়। তবে, এই ধারণাগুলি অন্য ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ:
- ফিনান্সিয়াল মার্কেট-এ "ফ্লোট" বা "ফ্লোটিং স্টক" এর ধারণা প্লবতার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে, যেখানে শেয়ারের সরবরাহ এবং চাহিদা বাজারের গতিবিধিকে প্রভাবিত করে।
- চার্ট প্যাটার্ন এবং ট্রেন্ড লাইন ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।
- মুভিং এভারেজ এবং আরএসআই (Relative Strength Index) এর মতো সূচকগুলি ব্যবহার করে বাজারের প্রবণতা নির্ণয় করা যায়।
- ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (VWAP) এবং অন ব্যালেন্স ভলিউম (OBV) এর মতো ভলিউম বিশ্লেষণ কৌশল ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি বোঝা যেতে পারে।
- ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট এবং এলিয়ট ওয়েভ থিওরি ব্যবহার করে সম্ভাব্য সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল সনাক্ত করা যেতে পারে।
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন যেমন "ডজি" এবং "হ্যামার" বাজারের সম্ভাব্য পরিবর্তনগুলি নির্দেশ করতে পারে।
- MACD (Moving Average Convergence Divergence) এবং স্টোকাস্টিক অসিলেটর ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি এবং সম্ভাব্য ট্রেডিং সুযোগ সনাক্ত করা যায়।
- বোলিঙ্গার ব্যান্ডস ব্যবহার করে বাজারের অস্থিরতা পরিমাপ করা যায়।
- প্যারাবলিক সার (Parabolic SAR) ব্যবহার করে সম্ভাব্য ট্রেডিং সংকেত পাওয়া যায়।
- ইচিঙ্কৌ ক্লাউড (Ichimoku Cloud) ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি এবং প্রবণতা বিশ্লেষণ করা যায়।
- ডনচিয়ান চ্যানেল (Donchian Channel) ব্যবহার করে বাজারের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন মূল্য ট্র্যাক করা যায়।
- পয়েন্ট অ্যান্ড ফিগার চার্ট (Point and Figure Chart) ব্যবহার করে বাজারের প্রবণতা সহজে বোঝা যায়।
- রেনকো চার্ট (Renko Chart) ব্যবহার করে নয়েজ ফিল্টার করে বাজারের মূল প্রবণতা দেখা যায়।
প্লবতা একটি মৌলিক বৈজ্ঞানিক ধারণা, যা আমাদের চারপাশের অনেক প্রাকৃতিক ঘটনা বুঝতে সাহায্য করে। এর সঠিক জ্ঞান জাহাজ নির্মাণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রকৌশল এবং বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরও দেখুন
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
