FTSE 100
এফটিএসই ১০০
ভূমিকা
এফটিএসই ১০০ (FTSE 100) হল লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ-এ তালিকাভুক্ত হওয়া যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম ১০০টি কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত একটি শেয়ার বাজার সূচক। এফটিএসই (Financial Times Stock Exchange) এই সূচকটি তৈরি করেছে। এটি যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি ও শেয়ার বাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যারোমিটার হিসেবে বিবেচিত হয়। এই সূচকটি বিনিয়োগকারীদের জন্য বাজারের গতিবিধি বোঝার এবং বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।
এফটিএসই ১০০-এর ইতিহাস
এফটিএসই ১০০ সূচকটি ১৯৯০ সালের ১০ই জানুয়ারি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এর আগের সূচকটি ছিল এফটিএসই ৩৫০। সূচকটি তৈরি করার মূল উদ্দেশ্য ছিল যুক্তরাজ্যের বৃহত্তম কোম্পানিগুলির কর্মক্ষমতা ট্র্যাক করা এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য বেঞ্চমার্ক প্রদান করা। সময়ের সাথে সাথে, এফটিএসই ১০০ সূচকটি বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং এটি এখন বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্টক মার্কেট সূচক হিসেবে স্বীকৃত।
এফটিএসই ১০০ কিভাবে কাজ করে?
এফটিএসই ১০০ একটি বাজার মূলধন-ভিত্তিক সূচক। এর মানে হল যে সূচকের মান গণনা করার সময় প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের মূল্য এবং মোট outstanding শেয়ারের সংখ্যা বিবেচনা করা হয়। উচ্চ বাজার মূলধনের কোম্পানিগুলি সূচকের উপর বেশি প্রভাব ফেলে। সূচকের মান নিম্নলিখিত সূত্র ব্যবহার করে গণনা করা হয়:
সূচক = (মোট বাজার মূলধন / ভিত্তি বছর বাজার মূলধন) × ১০০
এখানে, ভিত্তি বছর হল ১৯৯০ সাল। এফটিএসই ১০০-এর মান নিয়মিতভাবে আপডেট করা হয়, যাতে বাজারের পরিবর্তনের সাথে সাথে সূচকের মান সঠিক থাকে।
এফটিএসই ১০০-এর উপাদান
এফটিএসই ১০০ সূচকে বিভিন্ন সেক্টরের কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- আর্থিক খাত: এইচএসবিসি, বার্কলেস, লয়েডস ব্যাংকিং গ্রুপ
- শক্তি খাত: বিপি, শেল
- স্বাস্থ্য খাত: গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন, অ্যাস্ট্রাজেনেকা
- ভোক্তা পণ্য খাত: ইউনিলিভার, প্রোক্টার অ্যান্ড গ্যাম্বল
- প্রযুক্তি খাত: আর্মার্স
এই কোম্পানিগুলি ছাড়াও, এফটিএসই ১০০ সূচকে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে।
এফটিএসই ১০০-এর গুরুত্ব
এফটিএসই ১০০ সূচকটি বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ:
- অর্থনৈতিক ব্যারোমিটার: এটি যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক।
- বিনিয়োগের বেঞ্চমার্ক: বিনিয়োগকারীরা তাদের পোর্টফোলিও কর্মক্ষমতা মূল্যায়নের জন্য এটি ব্যবহার করে।
- বিশ্বব্যাপী পরিচিতি: এটি বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি পরিচিত এবং সম্মানিত সূচক।
- পণ্য এবং ডেরিভেটিভস ট্রেডিং: এফটিএসই ১০০-এর উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ডেরিভেটিভস পণ্য, যেমন ফিউচারস এবং অপশনস ট্রেড করা হয়।
এফটিএসই ১০০ এবং বাইনারি অপশন
বাইনারি অপশন হল এমন একটি আর্থিক উপকরণ যা বিনিয়োগকারীদের একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি সম্পদের মূল্য বাড়বে নাকি কমবে তা অনুমান করার সুযোগ দেয়। এফটিএসই ১০০ সূচকের উপর ভিত্তি করে বাইনারি অপশন ট্রেড করা অত্যন্ত জনপ্রিয়।
এফটিএসই ১০০ বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের সুবিধা
- উচ্চ লাভের সম্ভাবনা: বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে অল্প সময়ে বেশি লাভের সুযোগ থাকে।
- সহজ ট্রেডিং প্রক্রিয়া: বাইনারি অপশন ট্রেড করা তুলনামূলকভাবে সহজ, কারণ এখানে শুধুমাত্র দুটি সম্ভাব্য ফলাফল থাকে: কল (Call) অথবা পুট (Put)।
- স্বল্প বিনিয়োগ: অল্প পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে ট্রেডিং শুরু করা যায়।
- বিভিন্ন মেয়াদ: বিভিন্ন মেয়াদকালের অপশন পাওয়া যায়, যা বিনিয়োগকারীদের তাদের ট্রেডিং কৌশল অনুযায়ী অপশন নির্বাচন করতে সাহায্য করে।
এফটিএসই ১০০ বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ঝুঁকি
- উচ্চ ঝুঁকি: বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে ঝুঁকির পরিমাণ বেশি, কারণ এখানে বিনিয়োগের সম্পূর্ণ পরিমাণ হারানোর সম্ভাবনা থাকে।
- সময়সীমা: নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যা চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
- বাজারের অস্থিরতা: বাজারের অস্থিরতা অপশন ট্রেডিংয়ের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে।
এফটিএসই ১০০-এর উপর বাইনারি অপশন ট্রেডিং কৌশল
- ট্রেন্ড ফলোয়িং (Trend Following): বাজারের গতিবিধি অনুসরণ করে ট্রেড করা। যদি এফটিএসই ১০০ ঊর্ধ্বমুখী হয়, তবে কল অপশন কেনা উচিত, এবং যদি নিম্নমুখী হয়, তবে পুট অপশন কেনা উচিত।
- রেঞ্জ ট্রেডিং (Range Trading): একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে বাজারের ওঠানামা অনুসরণ করে ট্রেড করা।
- নিউজ ট্রেডিং (News Trading): গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খবরের উপর ভিত্তি করে ট্রেড করা। যেমন, সুদের হার, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদি।
- প্যাটার্ন ট্রেডিং (Pattern Trading): চার্টে বিভিন্ন প্যাটার্ন সনাক্ত করে ট্রেড করা। যেমন, হেড অ্যান্ড শোল্ডারস, ডাবল টপ, ডাবল বটম ইত্যাদি।
- সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স (Support and Resistance): সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স লেভেল ব্যবহার করে ট্রেড করা।
এফটিএসই ১০০ সূচককে প্রভাবিত করার কারণসমূহ
- সামষ্টিক অর্থনৈতিক কারণ: মোট দেশজ উৎপাদন (GDP), বেকারত্বের হার, মুদ্রাস্ফীতি, এবং সুদের হার-এর মতো সামষ্টিক অর্থনৈতিক কারণগুলি এফটিএসই ১০০ সূচককে প্রভাবিত করে।
- রাজনৈতিক ঘটনা: রাজনৈতিক অস্থিরতা, নির্বাচন, এবং নীতি পরিবর্তন এফটিএসই ১০০-এর উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
- বৈশ্বিক বাজার: বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা এবং অন্যান্য প্রধান স্টক মার্কেটের কর্মক্ষমতা এফটিএসই ১০০-কে প্রভাবিত করে।
- কোম্পানির কর্মক্ষমতা: এফটিএসই ১০০-এর অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক কর্মক্ষমতা সূচকের মানকে প্রভাবিত করে।
- মুদ্রার হার: পাউন্ড স্টার্লিং-এর (GBP) বিনিময় হার এফটিএসই ১০০-এর উপর প্রভাব ফেলে।
এফটিএসই ১০০ সূচক বিশ্লেষণের পদ্ধতি
- টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ: চার্ট এবং বিভিন্ন টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর (যেমন: মুভিং এভারেজ, আরএসআই, এমএসিডি) ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি বিশ্লেষণ করা।
- ফা fundamental বিশ্লেষণ: কোম্পানিগুলোর আর্থিক বিবরণী, আয়, লাভ, এবং ঋণ বিশ্লেষণ করে তাদের মূল্যায়ণ করা।
- সেন্টিমেন্ট বিশ্লেষণ: বিনিয়োগকারীদের মনোভাব এবং বাজারের সামগ্রিক অনুভূতি মূল্যায়ন করা।
- ভলিউম বিশ্লেষণ: ট্রেডিং ভলিউম বিশ্লেষণ করে বাজারের প্রবণতা এবং শক্তি নির্ধারণ করা।
এফটিএসই ১০০ ট্রেডিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রিসোর্স
- এফটিএসই-এর ওয়েবসাইট: [1](https://www.ftse.com/)
- লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইট: [2](https://www.londonstockexchange.com/)
- আর্থিক সংবাদ ওয়েবসাইট: রয়টার্স, ব্লুমবার্গ, সিএনবিসি
- ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম: বিভিন্ন অনলাইন ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম যেমন আইজি, ওান্ডা, ইটোরো।
উপসংহার
এফটিএসই ১০০ সূচকটি যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগের গন্তব্য। এই সূচকটি সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান বিনিয়োগকারীদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে, এফটিএসই ১০০-এর গতিবিধি বোঝা অত্যন্ত জরুরি।
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন জমা $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন জমা $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগদান করুন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন @strategybin এই সুবিধাগুলি পেতে: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশল বিশ্লেষণ ✓ বাজারের ট্রেন্ড সতর্কবার্তা ✓ নবাগতদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
