বেকারত্বের হার

বেকারত্বের হার

ভূমিকা

বেকারত্বের হার একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূচক। এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ে কর্মক্ষম জনসংখ্যার মধ্যে কত শতাংশ মানুষ কাজ খুঁজছেন কিন্তু কাজ পাচ্ছেন না, তার শতকরা হার নির্দেশ করে। বেকারত্বের হার শুধুমাত্র অর্থনৈতিক পরিস্থিতিই নয়, বরং সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং মানুষের জীবনযাত্রার মানের উপরও গভীর প্রভাব ফেলে। এই নিবন্ধে, বেকারত্বের হারের সংজ্ঞা, এটি পরিমাপের পদ্ধতি, কারণ, প্রভাব এবং মোকাবিলার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

বেকারত্বের সংজ্ঞা

বেকারত্ব বলতে সাধারণত সেই অবস্থাকে বোঝায় যেখানে একজন ব্যক্তি কর্মক্ষম এবং কাজ করতে ইচ্ছুক, কিন্তু কোনো কাজের সুযোগ খুঁজে পাচ্ছেন না। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বেকারত্বের একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সংজ্ঞা দিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে বেকার সেই ব্যক্তি যিনি বর্তমানে কোনো কাজ করছেন না, গত চার সপ্তাহে কাজ খুঁজেছেন এবং কাজ শুরু করার জন্য প্রস্তুত আছেন।

বেকারত্বের হার পরিমাপের পদ্ধতি

বেকারত্বের হার পরিমাপ করার জন্য সাধারণত যে পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করা হয়, সেগুলো হলো:

• শ্রমশক্তি জরিপ: এটি একটি বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি। এই জরিপে, একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের কর্মক্ষম জনসংখ্যার (সাধারণত ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী) একটি নমুনা নিয়ে তাদের কর্মসংস্থান এবং বেকারত্বের অবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
• বেকারত্ব দাবি (Unemployment Claims): অনেক দেশে, বেকারত্বের জন্য সরকারি সহায়তা পাওয়ার জন্য বেকার ব্যক্তিরা নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। এই আবেদনের সংখ্যা থেকে বেকারত্বের একটি ধারণা পাওয়া যায়।
• প্রতিষ্ঠানের জরিপ: এই পদ্ধতিতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তাদের কর্মীর সংখ্যা এবং নতুন নিয়োগের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

বেকারত্বের হার হিসাব করার সূত্র হলো: বেকারত্বের হার = (বেকার ব্যক্তির সংখ্যা / শ্রমশক্তি) * ১০০ এখানে, শ্রমশক্তি = employed (কর্মরত) + unemployed (বেকার)।

বেকারত্বের প্রকারভেদ

বেকারত্ব বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যার প্রত্যেকটির নিজস্ব কারণ এবং প্রভাব রয়েছে। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রকার উল্লেখ করা হলো:

• চক্রীয় বেকারত্ব (Cyclical Unemployment): এটি অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ঘটে। যখন সামগ্রিক চাহিদা কমে যায়, তখন উৎপাদন হ্রাস পায় এবং কর্মসংস্থান কমে যায়।
• কাঠামোগত বেকারত্ব (Structural Unemployment): এটি অর্থনীতির কাঠামোগত পরিবর্তনের কারণে ঘটে। নতুন প্রযুক্তি, শিল্পের পরিবর্তন বা বিশ্বায়নের ফলে কিছু কাজের চাহিদা কমে যায় এবং শ্রমিকরা নতুন কাজের জন্য উপযুক্ত দক্ষতা অর্জন করতে সময় নেয়।
• ঘর্ষণমূলক বেকারত্ব (Frictional Unemployment): এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ। যখন কর্মীরা একটি চাকরি ছেড়ে অন্য চাকরি খুঁজতে শুরু করেন, তখন এই ধরনের বেকারত্ব দেখা যায়।
• মৌসুমী বেকারত্ব (Seasonal Unemployment): এটি বছরের নির্দিষ্ট সময়ে ঘটে, যেমন কৃষিকাজে বা পর্যটন শিল্পে।

বেকারত্বের কারণসমূহ

বেকারত্বের পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। কিছু প্রধান কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:

• অর্থনৈতিক মন্দা: অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে গেলে বা মন্দা দেখা দিলে, চাহিদা হ্রাস পায় এবং কর্মসংস্থান কমে যায়।
• প্রযুক্তিগত পরিবর্তন: নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার অনেক ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ কমিয়ে দেয়, বিশেষ করে যাদের পুরনো দক্ষতা রয়েছে।
• শিক্ষার অভাব: প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের অভাবে অনেক মানুষ ভাল চাকরি পেতে ব্যর্থ হয়।
• জনসংখ্যার বৃদ্ধি: দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতামূলক চাপ সৃষ্টি করে।
• বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা: বিশ্বায়নের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় শিল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যার ফলে কর্মসংস্থান কমে যায়।
• সরকারের নীতি: ভুল সরকারি নীতি, যেমন অতিরিক্ত কর বা কঠোর শ্রম আইন, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাধা দিতে পারে।

বেকারত্বের প্রভাব

বেকারত্বের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।

• ব্যক্তিগত প্রভাব: বেকারত্ব মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, হতাশা, উদ্বেগ এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব সৃষ্টি করে। এটি ব্যক্তিগত আয় কমিয়ে দেয় এবং জীবনযাত্রার মান হ্রাস করে।
• সামাজিক প্রভাব: উচ্চ বেকারত্বের হার অপরাধ প্রবণতা বাড়াতে পারে এবং সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
• অর্থনৈতিক প্রভাব: বেকারত্ব সামগ্রিক অর্থনৈতিক উৎপাদন কমিয়ে দেয় এবং সরকারের উপর আর্থিক চাপ বাড়ায়, কারণ সরকারকে বেকার ভাতা এবং অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি পরিচালনা করতে হয়।

বেকারত্ব হ্রাস করার উপায়

বেকারত্ব একটি জটিল সমস্যা, যার সমাধানে সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ আলোচনা করা হলো:

• অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থান সৃষ্টির মূল উপায়। বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শিল্প উন্নয়ন এবং ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ তৈরি করার মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা যায়।
• শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ: আধুনিক বাজারের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা উচিত। কারিগরি শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রস্তুত করা যেতে পারে।
• কর্মসংস্থান সৃষ্টি: সরকার বিভিন্ন কর্মসংস্থানমূলক প্রকল্প গ্রহণ করতে পারে, যেমন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) উন্নয়ন, গ্রামীণ কর্মসংস্থান কর্মসূচি এবং অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প।
• শ্রমবাজারের সংস্কার: শ্রম আইন এবং নীতিমালায় সংস্কার করে ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ তৈরি করা উচিত, যাতে বিনিয়োগকারীরা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে উৎসাহিত হন।
• সামাজিক নিরাপত্তা: বেকারত্বের সময় শ্রমিকদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা উচিত, যেমন বেকার ভাতা, স্বাস্থ্য বীমা এবং পুনর্বাসন কর্মসূচি।
• প্রযুক্তি গ্রহণ: নতুন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে।
• বৈদেশিক বিনিয়োগ: বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার মাধ্যমে নতুন শিল্প এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে।

বিভিন্ন দেশের বেকারত্বের হার (২০২৩)

বিভিন্ন দেশের বেকারত্বের হার (২০২৩)

Unemployment Rate (%) |
3.7 |	2.6 |	3.1 |	4.2 |	7.2 |	7.8 |	5.2 |	8.6 |	33.3 |	32.9 |

(উৎস: বিভিন্ন দেশের সরকারি পরিসংখ্যান এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল)

বেকারত্ব এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং

বেকারত্বের কারণে অনেকে বিকল্প আয়ের উৎস খুঁজতে বাধ্য হন। এই প্রেক্ষাপটে, কিছু মানুষ বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর দিকে ঝুঁকতে পারেন। বাইনারি অপশন হলো একটি আর্থিক বিনিয়োগ, যেখানে একজন বিনিয়োগকারী একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো সম্পদের (যেমন স্টক, মুদ্রা, কমোডিটি) দাম বাড়বে নাকি কমবে, তা অনুমান করেন। যদি অনুমান সঠিক হয়, তবে বিনিয়োগকারী লাভ পান, অন্যথায় তিনি বিনিয়োগ করা অর্থ হারান।

তবে, বাইনারি অপশন ট্রেডিং অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে সাফল্যের জন্য টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ, ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ, ভলিউম বিশ্লেষণ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। নতুনদের জন্য এই ধরনের ট্রেডিং শুরু করার আগে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ নেওয়া এবং অভিজ্ঞ ট্রেডারদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

• স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করুন: আপনার সম্ভাব্য ক্ষতি সীমিত করতে স্টপ-লস অর্ডার ব্যবহার করুন।
• ছোট বিনিয়োগ করুন: প্রথমে ছোট বিনিয়োগ দিয়ে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ান।
• বৈচিত্র্য আনুন: আপনার বিনিয়োগ পোর্টফোলিওতে বৈচিত্র্য আনুন, যাতে কোনো একটি ট্রেডে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আপনার সামগ্রিক ক্ষতি কম হয়।
• মানসিক শৃঙ্খলা: আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে ট্রেড করুন এবং তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না।

উপসংহার

বেকারত্ব একটি গুরুতর সমস্যা, যা ব্যক্তি ও সমাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই সমস্যা সমাধানে সরকার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে বেকারত্বের হার কমিয়ে আনা সম্ভব। তবে, বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর মতো ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত এবং যথাযথ জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করা আবশ্যক।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শ্রমবাজার কর্মসংস্থান দারিদ্র্য সামাজিক নিরাপত্তা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা চক্রীয় বেকারত্ব কাঠামোগত বেকারত্ব ঘর্ষণমূলক বেকারত্ব মৌসুমী বেকারত্ব গ্রামীণ কর্মসংস্থান বৈদেশিক বিনিয়োগ টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ ভলিউম বিশ্লেষণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বাইনারি অপশন ট্রেডিং অপরাধ প্রবণতা কারিগরি শিক্ষা শিক্ষার অভাব

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ