গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন

গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন : একটি বিস্তারিত আলোচনা

গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন পিএলসি (GlaxoSmithKline plc), সংক্ষেপে জিএসকে (GSK), একটি ব্রিটিশ বহুজাতিক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি। এটি বিশ্বের বৃহত্তম ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলির মধ্যে অন্যতম। এই কোম্পানি গবেষণা, উন্নয়ন, উৎপাদন এবং বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, ভ্যাকসিন এবং স্বাস্থ্যসেবা পণ্য বিক্রি করে। গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের সদর দপ্তর যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থিত।

ইতিহাস

গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের ইতিহাস বেশ পুরনো এবং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানির মার্জারের মাধ্যমে এটি আজকের রূপে এসেছে। এর যাত্রা শুরু হয় তিনটি পৃথক কোম্পানি থেকে: গ্ল্যাক্সো, স্মিথক্লাইন এবং Beecham।

গ্ল্যাক্সো: ১৮৭৩ সালে জোসেফ ন্যাপিয়ার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়, মূলত খাদ্য এবং পুষ্টি পণ্য তৈরির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে এটি ওষুধ শিল্পে প্রবেশ করে।
স্মিথক্লাইন: ১৮৮৬ সালে টমাস বেচডেল এবং জর্জ বার্নার্ড, কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। এটিও ওষুধ এবং স্বাস্থ্যসেবা পণ্য উৎপাদন করত।
বিচাম: ১৮৮৬ সালে জোসেফ বিচাম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত, এটি মূলত খাদ্য এবং এরপর ওষুধ শিল্পে নিজেদের স্থান করে নেয়।

২০০১ সালে গ্ল্যাক্সো ওয়েলকাম এবং স্মিথক্লাইন বিচাম একত্রিত হয়ে গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন গঠন করে। এটি ছিল সেই সময়ের বৃহত্তম মার্জারগুলির মধ্যে একটি। এই মার্জারের ফলে কোম্পানিটি ওষুধ শিল্পে একটি শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে যায়।

ব্যবসায়িক ক্ষেত্র

গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন প্রধানত তিনটি ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে কাজ করে:

গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের ব্যবসায়িক ক্ষেত্র
ক্ষেত্র	বিবরণ
ফার্মাসিউটিক্যালস	শ্বাসকষ্ট, এইচআইভি, ক্যান্সার এবং অন্যান্য রোগের জন্য ওষুধ তৈরি ও বিক্রি করে। (ফার্মাকোলজি)\|	ভ্যাকসিনস	বিভিন্ন সংক্রামক রোগের জন্য ভ্যাকসিন তৈরি ও সরবরাহ করে, যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা, মেনিনজাইটিস এবং shingles। (ইমিউনোলজি)\|	কনজিউমার হেলথকেয়ার	ওভার-দ্য-কাউন্টার (OTC) ওষুধ, ভিটামিন, ডেন্টাল পণ্য এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা পণ্য বিক্রি করে। (স্বাস্থ্যবিধি)\|

প্রধান পণ্য এবং ভ্যাকসিন

গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের কিছু উল্লেখযোগ্য পণ্য এবং ভ্যাকসিন হলো:

ওষুধ: অ্যাডভার্স, সেরেক্স, ট্রায়োটার, ফ্লাক্সোভা।
ভ্যাকসিন: ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন (যেমন ফ্লু vaccine), মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিন (যেমন মেনভেক্স), Shingles ভ্যাকসিন (যেমন Shingrix)।
কনজিউমার হেলথকেয়ার: সেনোডিন, প্যানাডল, ভল্টারিন, ফ্লুগেল।

গবেষণা এবং উন্নয়ন

গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন গবেষণা এবং উন্নয়নে (R&D) প্রচুর বিনিয়োগ করে। নতুন ওষুধ এবং ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য কোম্পানিটি বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করেছে। তাদের R&D কার্যক্রম মূলত নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে:

ইমিউনোলজি
অনকোলজি
নিউরোসায়েন্স
রেসপিরেটরি

কোম্পানিটি বায়োটেকনোলজি এবং জিন থেরাপির মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবনের চেষ্টা করছে।

আর্থিক কর্মক্ষমতা

গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের আর্থিক কর্মক্ষমতা বিশ্ব অর্থনীতির উপর নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কোম্পানিটি উল্লেখযোগ্য রাজস্ব অর্জন করেছে, তবে কোভিড-১৯ মহামারী এবং অন্যান্য কারণে কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে।

গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের আর্থিক কর্মক্ষমতা (USD বিলিয়নে)
বছর	রাজস্ব	নিট লাভ
২০১৮	£৩২.২	£২.৫		২০১৯	£৩৫.১	£৩.১		২০২০	£৪২.১	£৬.০		২০২১	£৩৩.৯	£৫.৮		২০২২	£৩১.১	£৬.২

(লক্ষ্য করুন: এই পরিসংখ্যানগুলি আনুমানিক এবং পরিবর্তনশীল হতে পারে।)

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন

বাইনারি অপশন ট্রেডিং হলো একটি আর্থিক বিনিয়োগ পদ্ধতি যেখানে বিনিয়োগকারীরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো সম্পদের (যেমন স্টক, মুদ্রা, কমোডিটি) দাম বাড়বে নাকি কমবে তা অনুমান করে। গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের শেয়ারের দামের উপর ভিত্তি করে বাইনারি অপশন ট্রেড করা যেতে পারে।

কিভাবে কাজ করে: একজন বিনিয়োগকারী গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের শেয়ারের দাম একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাড়বে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করলে "কল অপশন" (Call Option) কিনতে পারে। বিপরীতভাবে, দাম কমবে বলে মনে করলে "পুট অপশন" (Put Option) কিনতে পারে। যদি বিনিয়োগকারীর ভবিষ্যদ্বাণী সঠিক হয়, তবে সে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভ পায়। অন্যথায়, বিনিয়োগের পরিমাণ হারাতে হয়।
ঝুঁকি: বাইনারি অপশন ট্রেডিং অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। দ্রুত লাভ করার সম্ভাবনা থাকলেও, বিনিয়োগের সম্পূর্ণ পরিমাণ হারানোর ঝুঁকি থাকে।
কৌশল: গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের শেয়ারের দামের গতিবিধি বোঝার জন্য টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ (Technical Analysis) এবং ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ (Fundamental Analysis) ব্যবহার করা যেতে পারে।
ভলিউম বিশ্লেষণ: ভলিউম (Volume) এবং ওপেন ইন্টারেস্ট (Open Interest) এর মতো সূচকগুলি ব্যবহার করে বাজারের প্রবণতা বোঝা যায়। মুভিং এভারেজ (Moving Average), আরএসআই (RSI), এবং এমএসিডি (MACD) এর মতো টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটরগুলি ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে।

গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন বর্তমানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এবং নতুনত্বের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। কোম্পানিটি তাদের পোর্টফোলিও (Portfolio) শক্তিশালী করতে এবং নতুন ওষুধ ও ভ্যাকসিন বাজারে আনতে কাজ করছে।

বিশেষত্ব: গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন তাদের ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ভ্যাকসিন ব্যবসার উপর বেশি মনোযোগ দিচ্ছে।
ডিজিটাল স্বাস্থ্য: কোম্পানিটি ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা (Digital Healthcare) এবং ডেটা অ্যানালিটিক্স (Data Analytics) এর ব্যবহার বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
টেকসই উন্নয়ন: গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন পরিবেশ সুরক্ষার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজ করছে।

সমালোচনা এবং বিতর্ক

গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন বিভিন্ন সময়ে কিছু সমালোচনা ও বিতর্কের সম্মুখীন হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো:

ওষুধের দাম: কোম্পানিটির ওষুধের দাম নিয়ে প্রায়শই প্রশ্ন ওঠে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে।
বিপণন কৌশল: কিছু ক্ষেত্রে তাদের বিপণন কৌশল নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল: ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল এবং ডেটা স্বচ্ছতা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে।

আরও দেখুন

গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন একটি প্রভাবশালী ওষুধ কোম্পানি যা বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবার উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে, কোম্পানিটিকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয় এবং ক্রমাগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে হয়।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ