ইমিউনোলজি
ইমিউনোলজি
ইমিউনোলজি হলো বিজ্ঞান যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং তার উপাদানগুলির গঠন, কাজ এবং রোগ প্রতিরোধে এর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করে। এটি জীববিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা, যা সংক্রামক রোগ, অটোইমিউন রোগ এবং ক্যান্সার সহ বিভিন্ন রোগের কারণ এবং প্রতিকার খুঁজে বের করতে সহায়ক।
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রকারভেদ
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রধানত দুই প্রকার:
- সহজাত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (Innate Immune System): এটি জন্মগতভাবে বিদ্যমান এবং রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর বিরুদ্ধে দ্রুত প্রতিক্রিয়া প্রদান করে। এর মধ্যে রয়েছে শারীরিক বাধা যেমন ত্বক এবং শ্লেষ্মা ঝিল্লি, সেইসাথে ফ্যাগোসাইটোসিস (Phagocytosis) এবং প্রাকৃতিক ঘাতক কোষ (Natural Killer Cells)।
- অর্জিত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (Adaptive Immune System): এটি নির্দিষ্ট রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর সংস্পর্শে আসার পরে ধীরে ধীরে বিকশিত হয় এবং দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা প্রদান করে। এটি লিম্ফোসাইট (Lymphocyte) নামক কোষগুলির মাধ্যমে কাজ করে, যা বি কোষ (B cell) এবং টি কোষ (T cell) এর অন্তর্ভুক্ত।
সহজাত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উপাদানসমূহ
| উপাদান | কাজ | ||||||||||
| ত্বক | রোগজীবাণুর প্রবেশে বাধা দেয় | শ্লেষ্মা ঝিল্লি | শ্বাসযন্ত্র ও পাচনতন্ত্রে রোগজীবাণু আটকাতে সাহায্য করে | ফ্যাগোসাইট | রোগজীবাণু ও মৃত কোষকে ভক্ষণ করে | প্রাকৃতিক ঘাতক কোষ | ভাইরাস সংক্রামিত কোষ ও ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করে | প্রদাহ | সংক্রমণ বা আঘাতের স্থানে রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধি করে এবং রোগ প্রতিরোধ কোষগুলোকে আকর্ষণ করে | комплемент система | রোগজীবাণুকে ধ্বংস করতে এবং প্রদাহ সৃষ্টি করতে সাহায্য করে |
অর্জিত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উপাদানসমূহ
অর্জিত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত:
- হিউমারাল ইমিউনিটি (Humoral Immunity): এটি অ্যান্টিবডি (Antibody) দ্বারা মধ্যস্থতা করা হয়, যা বি কোষ দ্বারা উৎপাদিত হয়। অ্যান্টিবডি রোগজীবাণুকে neutralise করে, ফ্যাগোসাইটোসিসকে বাড়িয়ে তোলে এবং комплемент систему সক্রিয় করে।
- সেলুলার ইমিউনিটি (Cellular Immunity): এটি টি কোষ দ্বারা মধ্যস্থতা করা হয়। টি কোষ সরাসরি সংক্রামিত কোষকে ধ্বংস করে বা অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ কোষকে সক্রিয় করে।
| উপাদান | কাজ | ||||||||
| বি কোষ | অ্যান্টিবডি তৈরি করে | টি কোষ | সংক্রামিত কোষ ধ্বংস করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে | সহায়ক টি কোষ | বি কোষ এবং অন্যান্য টি কোষকে সক্রিয় করে | সাইটোটক্সিক টি কোষ | সংক্রামিত কোষ এবং ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করে | মেমরি কোষ | ভবিষ্যতে একই রোগজীবাণুর সম্মুখীন হলে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম |
অ্যান্টিজেন এবং অ্যান্টিবডি
অ্যান্টিজেন (Antigen) হলো এমন কোনো পদার্থ যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করতে পারে এবং অ্যান্টিবডি উৎপাদনে উদ্দীপনা যোগাতে পারে। অ্যান্টিজেন সাধারণত রোগজীবাণু, যেমন - ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস এবং পরজীবী থেকে উদ্ভূত হয়।
অ্যান্টিবডি (Antibody) হলো বিশেষ প্রোটিন যা অ্যান্টিজেনের সাথে আবদ্ধ হয় এবং এটিকে neutralise করে বা ধ্বংস করে। প্রতিটি অ্যান্টিবডি একটি নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেনের সাথে আবদ্ধ হতে সক্ষম।
ইমিউনোলজিক্যাল মেমরি
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো ইমিউনোলজিক্যাল মেমরি। যখন কোনো রোগজীবাণু প্রথমবার শরীরে প্রবেশ করে, তখন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা একটি প্রতিক্রিয়া তৈরি করে এবং মেমরি কোষ তৈরি করে। পরবর্তীতে, যদি একই রোগজীবাণু আবার শরীরে প্রবেশ করে, তবে মেমরি কোষগুলো দ্রুত সক্রিয় হয়ে যায় এবং শক্তিশালী প্রতিরোধ প্রদান করে। এই কারণে টিকা (Vaccine) গ্রহণ করার পর দীর্ঘমেয়াদী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়।
অটোইমিউন রোগ
অটোইমিউন রোগ (Autoimmune disease) হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শরীরের নিজস্ব কোষকে আক্রমণ করে। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিছু সাধারণ অটোইমিউন রোগের মধ্যে রয়েছে - ρευματοειδής αρθρίτιδα (Rheumatoid arthritis), লুপাস (Lupus), এবং টাইপ ১ ডায়াবেটিস (Type 1 diabetes)।
ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি রোগ
ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি রোগ (Immunodeficiency disease) হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যায় এবং সংক্রমণ ও রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে অক্ষম হয়। এটি জন্মগত হতে পারে (যেমন - গুরুতর সম্মিলিত ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি (Severe combined immunodeficiency - SCID)) অথবা অর্জিত হতে পারে (যেমন - এইচআইভি/এইডস (HIV/AIDS))।
ক্যান্সার এবং ইমিউনোলজি
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ক্যান্সার কোষকে সনাক্ত এবং ধ্বংস করতে পারে। তবে, ক্যান্সার কোষগুলো প্রায়শই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার নজরদারি এড়াতে সক্ষম হয়। ইমিউনোথেরাপি (Immunotherapy) হলো ক্যান্সারের চিকিৎসায় রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ব্যবহার করার একটি পদ্ধতি।
ট্রান্সপ্লান্টেশন এবং ইমিউনোলজি
অঙ্গ প্রতিস্থাপন (Organ transplantation) এর ক্ষেত্রে, শরীর নতুন অঙ্গটিকে বিদেশী হিসেবে গণ্য করে এবং এটিকে প্রত্যাখ্যান করার চেষ্টা করে। এই প্রত্যাখ্যান রোধ করার জন্য ইমিউনোসাপ্রেসিভ ড্রাগ (Immunosuppressive drug) ব্যবহার করা হয়, যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।
ইমিউনোলজির আধুনিক গবেষণা
ইমিউনোলজি একটি দ্রুত বিকাশমান ক্ষেত্র। বর্তমানে, বিজ্ঞানীরা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার জটিলতা এবং বিভিন্ন রোগের সাথে এর সম্পর্ক নিয়ে আরও বেশি জানতে চেষ্টা করছেন। ইমিউনোলজির আধুনিক গবেষণার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হলো:
- ক্যান্সার ইমিউনোথেরাপি
- অটোইমিউন রোগের নতুন চিকিৎসা
- টিকা উন্নয়ন
- ইমিউনোলজিক্যাল মেমরি এবং বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
- অণুজীবম এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার মধ্যে সম্পর্ক
ক্লিনিক্যাল ইমিউনোলজি
ক্লিনিক্যাল ইমিউনোলজি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ত্রুটি বা রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার সাথে জড়িত। এর মধ্যে রয়েছে অটোইমিউন রোগ, ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি এবং অ্যালার্জি রোগ।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং কৌশল
ইমিউনোলজিতে ব্যবহৃত কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হলো:
- ফ্লো সাইটোমেট্রি (Flow cytometry): কোষের সংখ্যা এবং বৈশিষ্ট্য নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- ইমিউনোফ্লুরোসেন্স (Immunofluorescence): অ্যান্টিবডি ব্যবহার করে কোষের মধ্যে অ্যান্টিজেন সনাক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
- এনজাইম-লিঙ্কড ইমিউনোসরবেন্ট অ্যাসে (ELISA): অ্যান্টিবডি বা অ্যান্টিজেনের পরিমাণ পরিমাপ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
- পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (PCR): ডিএনএ (DNA) বা আরএনএ (RNA) এর পরিমাণ বৃদ্ধি করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
- ওয়েস্টার্ন ব্লটিং (Western blotting): প্রোটিনের উপস্থিতি সনাক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
ভলিউম বিশ্লেষণ
ইমিউনোলজিক্যাল ডেটার ভলিউম বিশ্লেষণ রোগ প্রতিরোধের প্রবণতা এবং কার্যকারিতা বুঝতে সহায়ক। এই ক্ষেত্রে, বৃহৎ ডেটাসেট থেকে মূল্যবান তথ্য আহরণের জন্য বায়োইনফরমেটিক্স (Bioinformatics) এবং ডাটা মাইনিং (Data mining) কৌশল ব্যবহার করা হয়।
আরও দেখুন
- ভাইরোলজি (Virology)
- ব্যাকটেরিয়োলজি (Bacteriology)
- প্যারাসিটোলজি (Parasitology)
- মাইক্রোবায়োলজি (Microbiology)
- প্যাথলজি (Pathology)
- ফার্মাকোলজি (Pharmacology)
- জেনেটিক্স (Genetics)
- সেল বায়োলজি (Cell biology)
- বায়োকেমিস্ট্রি (Biochemistry)
- ইমিউনোথেরাপি (Immunotherapy)
- টিকা (Vaccine)
- অ্যান্টিবায়োটিক (Antibiotic)
- অ্যান্টিভাইরাল (Antiviral)
- অ্যালার্জি (Allergy)
- সংক্রমণ (Infection)
- প্রদাহ (Inflammation)
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (Immunity)
- স্বাস্থ্য (Health)
- চিকিৎসা বিজ্ঞান (Medical science)
- বায়োটেকনোলজি (Biotechnology)
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
