Digital divide
ডিজিটাল বিভাজন: একটি বিস্তারিত আলোচনা
ভূমিকা
ডিজিটাল বিভাজন (Digital divide) একটি বহুমাত্রিক ধারণা। এটি মূলত প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগের অসমতাকে নির্দেশ করে। এই অসমতা বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক, ভৌগোলিক এবং জনসংখ্যার ভিত্তিতে তৈরি হতে পারে। ডিজিটাল বিভাজন শুধু প্রযুক্তিগত প্রবেশাধিকারের অভাব নয়, বরং ডিজিটাল দক্ষতা, প্রাসঙ্গিক বিষয়বস্তুর অভাব এবং ব্যবহারের সুযোগের সীমাবদ্ধতাকেও বোঝায়। আধুনিক বিশ্বে, যেখানে তথ্য প্রযুক্তি জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে এই বিভাজন একটি বড় ধরনের বৈষম্য তৈরি করে। এই নিবন্ধে ডিজিটাল বিভাজনের বিভিন্ন দিক, কারণ, প্রভাব এবং তা নিরসনের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ডিজিটাল বিভাজনের সংজ্ঞা
ডিজিটাল বিভাজন বলতে বোঝায় সেই পার্থক্য যা প্রযুক্তি, বিশেষ করে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগের মধ্যে বিদ্যমান। এটি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুযোগের অসমতা তৈরি করে। এই বিভাজন ব্যক্তি, পরিবার, ব্যবসা এবং ভৌগোলিক অঞ্চলের মধ্যে দেখা যায়। ডিজিটাল বিভাজনকে সাধারণত তিনটি প্রধান স্তরে ভাগ করা হয়:
- প্রবেশাধিকারের বিভাজন (Access Divide): প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এবং সাশ্রয়ীতার অভাব।
- দক্ষতার বিভাজন (Skills Divide): প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং জ্ঞানের অভাব।
- ব্যবহারের বিভাজন (Usage Divide): প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ এবং উদ্দেশ্য খুঁজে বের করার অভাব।
ডিজিটাল বিভাজনের কারণসমূহ
ডিজিটাল বিভাজনের পেছনে একাধিক কারণ বিদ্যমান। নিচে কয়েকটি প্রধান কারণ আলোচনা করা হলো:
- অর্থনৈতিক বৈষম্য: ডিজিটাল ডিভাইসের দাম এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ অনেক মানুষের জন্য বহন করা কঠিন। দারিদ্র্য এবং বেকারত্ব এই বিভাজনকে আরও বাড়ায়।
- ভৌগোলিক অবস্থান: গ্রামাঞ্চল এবং दुर्गম এলাকাগুলোতে ইন্টারনেট অবকাঠামো দুর্বল বা অনুপস্থিত থাকার কারণে ডিজিটাল বিভাজন দেখা যায়। শহরাঞ্চলে সুযোগ বেশি থাকলেও গ্রামাঞ্চলে সুযোগ সীমিত।
- শিক্ষার অভাব: ডিজিটাল দক্ষতা এবং কম্পিউটার সাক্ষরতার অভাব ডিজিটাল বিভাজনের একটি বড় কারণ। শিক্ষা না থাকার কারণে অনেকে প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা সম্পর্কে অবগত নয়।
- বয়স এবং লিঙ্গ: বয়স্ক এবং নারী জনগোষ্ঠীর মধ্যে ডিজিটাল ব্যবহারের হার কম দেখা যায়। তারা প্রযুক্তি ব্যবহারে কম স্বচ্ছন্দ বোধ করেন বা সুযোগ পান না।
- ভাষা এবং সংস্কৃতি: ইন্টারনেটে অধিকাংশ বিষয়বস্তু নির্দিষ্ট কিছু ভাষায় (যেমন ইংরেজি) পাওয়া যায়। অন্যান্য ভাষার ব্যবহারকারীদের জন্য এটি একটি বাধা হতে পারে।
- অবকাঠামোগত দুর্বলতা: দুর্বল টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুতের অভাব এবং ইন্টারনেটের কম গতি ডিজিটাল বিভাজন সৃষ্টি করে।
ডিজিটাল বিভাজনের প্রভাব
ডিজিটাল বিভাজন সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব নিচে উল্লেখ করা হলো:
- শিক্ষার সুযোগে বৈষম্য: অনলাইন শিক্ষা এবং ই-লার্নিংয়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ে।
- চাকরির বাজারে অসুবিধা: ডিজিটাল দক্ষতা না থাকার কারণে চাকরির সুযোগ কমে যায়। অনেক চাকরি এখন প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর নির্ভরশীল।
- অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি: ডিজিটাল অর্থনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত হওয়ায় অর্থনৈতিক বৈষম্য আরও বাড়ে।
- সামাজিক বিচ্ছিন্নতা: যারা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে না, তারা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং তথ্য আদান প্রদানে পিছিয়ে থাকে।
- স্বাস্থ্যসেবার অভাব: টেলিমেডিসিন এবং অনলাইন স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় অনেকে, যা তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাধা দেয়।
- গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ হ্রাস: অনলাইন প্ল্যাটফর্মে রাজনৈতিক আলোচনা এবং মত প্রকাশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ কমে যায়।
ডিজিটাল বিভাজন নিরসনের উপায়
ডিজিটাল বিভাজন নিরসনের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় আলোচনা করা হলো:
- অবকাঠামো উন্নয়ন: গ্রামাঞ্চল এবং দুর্গম এলাকায় ইন্টারনেট অবকাঠামো তৈরি এবং উন্নত করা। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এবং ওয়াইফাইয়ের বিস্তার ঘটানো।
- সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট: ইন্টারনেটের দাম কমিয়ে এটিকে সকলের জন্য সহজলভ্য করা। মোবাইল ডেটার খরচ কমানো এবং বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করা।
- ডিজিটাল শিক্ষা: কম্পিউটার শিক্ষা এবং ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা। স্কুল, কলেজ এবং কমিউনিটি সেন্টারে ডিজিটাল শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
- ভাষা এবং সংস্কৃতিবান্ধব কনটেন্ট তৈরি: স্থানীয় ভাষায় ইন্টারনেটে বিষয়বস্তু তৈরি করা, যাতে বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ উপকৃত হতে পারে।
- সরকারি উদ্যোগ: সরকার কর্তৃক ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা এবং তা বাস্তবায়ন করা।
- বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতা: বেসরকারি সংস্থা (NGO) এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ডিজিটাল শিক্ষা এবং সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা।
- পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ: সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করে ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ডিজিটাল শিক্ষা কার্যক্রমকে আরও কার্যকর করা।
- বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা: প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা, যাতে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ পাওয়া যায়।
- ডিজিটাল সাক্ষরতা অভিযান: সমাজের সকল স্তরের মানুষের মধ্যে ডিজিটাল সাক্ষরতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা।
ডিজিটাল বিভাজন ও বাইনারি অপশন ট্রেডিং
ডিজিটাল বিভাজন বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য ইন্টারনেট সংযোগ, কম্পিউটার বা স্মার্টফোন এবং ডিজিটাল আর্থিক জ্ঞান থাকা আবশ্যক। ডিজিটাল বিভাজনের কারণে অনেক মানুষ এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।
- প্রবেশাধিকারের অভাব: গ্রামাঞ্চলে বা দরিদ্র এলাকায় বসবাসকারী ব্যক্তিরা দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ এবং প্রয়োজনীয় ডিভাইস (কম্পিউটার, স্মার্টফোন) কিনতে অক্ষম হতে পারে, যা তাদের বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে।
- শিক্ষার অভাব: বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য আর্থিক বাজার, প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জ্ঞান থাকা জরুরি। ডিজিটাল বিভাজনের কারণে অনেকে এই বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না।
- ডিজিটাল আর্থিক জ্ঞানের অভাব: অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম, ডিজিটাল ওয়ালেট এবং অন্যান্য আর্থিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের পথে বাধা সৃষ্টি করে।
ডিজিটাল বিভাজন কমাতে পারলে বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের সুযোগ আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
টেবিল: ডিজিটাল বিভাজনের চিত্র
| বিষয় | শহরাঞ্চল | গ্রামাঞ্চল | |
| ইন্টারনেট ব্যবহারকারী (%) | ৮০ | ৪০ | |
| কম্পিউটার সাক্ষরতা (%) | ৭০ | ৩০ | |
| ব্রডব্যান্ড সংযোগ (%) | ৯০ | ২০ | |
| স্মার্টফোন ব্যবহারকারী (%) | ৯০ | ৬০ | |
| ডিজিটাল আর্থিক জ্ঞান (%) | ৬০ | ২৫ |
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
ডিজিটাল বিভাজন একটি জটিল সমস্যা, তবে এটি সমাধান করা সম্ভব। প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং সরকারের সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে এই বিভাজন কমিয়ে আনা যায়। ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির (যেমন 5G, স্যাটেলাইট ইন্টারনেট) উন্নতির সাথে সাথে ডিজিটাল বিভাজন আরও কমতে পারে। এছাড়া, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং মেশিন লার্নিং (ML) ব্যবহার করে ডিজিটাল শিক্ষা এবং সচেতনতা কার্যক্রমকে আরও কার্যকর করা যেতে পারে।
উপসংহার
ডিজিটাল বিভাজন একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সমস্যা। এটি সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে সুযোগের অসমতা তৈরি করে। এই বিভাজন নিরসনের জন্য সরকার, বেসরকারি সংস্থা এবং সমাজের সকল স্তরের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে একটি ন্যায়সঙ্গত এবং সমৃদ্ধ সমাজ গঠন করা সম্ভব।
আরও জানতে:
- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ
- ডিজিটাল বাংলাদেশ
- ইন্টারনেট সোসাইটি
- জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG 9)
- বিশ্বব্যাংক
- আর্থিক অন্তর্ভুক্তি
- தொழில்நுட்ப বিশ্লেষণ (Technical Analysis)
- ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume Analysis)
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk Management)
- ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ (Fundamental Analysis)
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন (Candlestick Pattern)
- মুভিং এভারেজ (Moving Average)
- আরএসআই (RSI - Relative Strength Index)
- এমএসিডি (MACD - Moving Average Convergence Divergence)
- ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট (Fibonacci Retracement)
- বোলিঙ্গার ব্যান্ড (Bollinger Bands)
- অপশন ট্রেডিং (Option Trading)
- ফরেক্স ট্রেডিং (Forex Trading)
- ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency)
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
