DFID

DFID : একটি বিস্তারিত আলোচনা

DFID (Department for International Development) যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক প্রাক্তন সরকারি বিভাগ। এটি ১৯৯৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। এরপর এর কাজগুলো Foreign & Commonwealth Office (FCO)-এর সাথে একত্রিত করা হয় এবং Department for International Development এর নাম পরিবর্তন করে Foreign, Commonwealth & Development Office (FCDO) রাখা হয়। DFID-এর মূল লক্ষ্য ছিল বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য হ্রাস করা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জীবনযাত্রার মান উন্নত করা। এই নিবন্ধে DFID-এর গঠন, কার্যক্রম, নীতি, এবং এর সাফল্যের ও ব্যর্থতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

DFID-এর গঠন ও ইতিহাস

DFID ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এর আগে আন্তর্জাতিক উন্নয়নের কাজগুলো Foreign Office এবং Overseas Development Administration (ODA) দ্বারা পরিচালিত হতো। DFID প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল উন্নয়ন কার্যক্রমকে আরও বেশি সুসংহত এবং কার্যকর করা। DFID-এর অধীনে বিভিন্ন বিভাগ ছিল, যেমন - আফ্রিকা বিভাগ, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর বিভাগ, ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান বিভাগ, এবং মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিভাগ। প্রতিটি বিভাগ নির্দিষ্ট অঞ্চলের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করত।

DFID-এর কার্যক্রম

DFID বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করত। এর মধ্যে কয়েকটি প্রধান কার্যক্রম নিচে উল্লেখ করা হলো:

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য: DFID উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে সহায়তা প্রদান করত। এর মধ্যে স্কুল নির্মাণ, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন, এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত ছিল। শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন: DFID অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিত, যেমন - ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে ঋণ প্রদান, অবকাঠামো উন্নয়ন, এবং বাণিজ্য সুবিধা তৈরি করা। ক্ষুদ্রঋণ এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সুশাসন ও মানবাধিকার: DFID সুশাসন এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সহায়তা করত। এর মধ্যে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ, বিচার বিভাগের সংস্কার, এবং মানবাধিকার কর্মীদের সহায়তা প্রদান অন্তর্ভুক্ত ছিল। সুশাসনের গুরুত্ব অপরিসীম।

humanitarian সহায়তা: DFID প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদান করত। এর মধ্যে খাদ্য, জল, আশ্রয়, এবং চিকিৎসা পরিষেবা সরবরাহ করা হতো। মানবিক সহায়তা কার্যক্রম জীবন রক্ষাকারী হতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তন: DFID জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করত। এর মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্পের উন্নয়ন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, এবং খরা মোকাবিলা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বর্তমানে একটি উদ্বেগের বিষয়।

DFID-এর নীতি

DFID-এর নীতিগুলো মূলত চারটি স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে গঠিত ছিল:

দারিদ্র্য হ্রাস: DFID-এর প্রধান লক্ষ্য ছিল দারিদ্র্য হ্রাস করা। এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হতো। দারিদ্র্য বিমোচন কৌশল এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

টেকসই উন্নয়ন: DFID টেকসই উন্নয়নে বিশ্বাস করত, যার অর্থ হলো এমন উন্নয়ন যা পরিবেশের ক্ষতি না করে দীর্ঘমেয়াদে চলতে পারে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা।

সুশাসন: DFID সুশাসনের উপর জোর দিত, কারণ এটি মনে করা হতো যে সুশাসন ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। সুশাসনের উপাদানগুলি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

দায়িত্বশীলতা: DFID তার কার্যক্রমের জন্য দায়বদ্ধ ছিল এবং নিয়মিতভাবে তার কাজের মূল্যায়ন করত। দায়িত্বশীলতা এবং স্বচ্ছতা উন্নয়নশীল কাজের জন্য জরুরি।

DFID-এর সাফল্য

DFID বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য হলো:

শিক্ষার প্রসার: DFID-এর সহায়তায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শিক্ষার প্রসার ঘটেছে। অনেক শিশু স্কুলে যেতে সক্ষম হয়েছে, যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য সুযোগ তৈরি করেছে। শিক্ষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি: DFID-এর সহায়তায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত হয়েছে। অনেক মানুষ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা পেয়েছে, যা তাদের জীবন বাঁচিয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: DFID-এর সহায়তায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। অনেক মানুষ দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কৌশল এক্ষেত্রে সহায়ক।

মানবাধিকার রক্ষা: DFID মানবাধিকার রক্ষার জন্য কাজ করেছে এবং অনেক দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে সহায়তা করেছে। মানবাধিকারের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।

DFID-এর ব্যর্থতা

DFID কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থতাও স্বীকার করতে হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি হলো:

দুর্নীতি: DFID-এর সহায়তার কিছু অংশ দুর্নীতির কারণে অপচয় হয়েছে। দুর্নীতি দমন একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা: কিছু উন্নয়নশীল দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে DFID-এর কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার গুরুত্ব এক্ষেত্রে বোঝা যায়।

সীমাবদ্ধ প্রভাব: কিছু ক্ষেত্রে DFID-এর কার্যক্রমের প্রভাব সীমিত ছিল, কারণ এটি স্থানীয় পরিস্থিতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। স্থানীয় চাহিদা মূল্যায়ন এক্ষেত্রে জরুরি।

সমন্বয়ের অভাব: বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের কারণে DFID-এর কার্যক্রমের কার্যকারিতা কমে গেছে। সমন্বয় এবং সহযোগিতা প্রয়োজনীয়।

DFID-এর বিলুপ্তি এবং FCDO-এর প্রতিষ্ঠা

২০২০ সালে DFID বিলুপ্ত করা হয় এবং এর কাজগুলো Foreign & Commonwealth Office (FCO)-এর সাথে একত্রিত করে Foreign, Commonwealth & Development Office (FCDO) প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই পরিবর্তনের ফলে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এবং বৈদেশিক নীতি একটি একক বিভাগের অধীনে আসে। FCDO-এর লক্ষ্য হলো যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা এবং বিশ্বের উন্নয়নে অবদান রাখা। FCDO-এর ভূমিকা বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ।

DFID-এর উত্তরাধিকার

DFID বিলুপ্ত হলেও এর উত্তরাধিকার FCDO-এর মাধ্যমে এখনো বিদ্যমান। FCDO DFID-এর অনেক নীতি ও কার্যক্রম অনুসরণ করছে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সহায়তা প্রদান অব্যাহত রেখেছে। DFID-এর কাজের অভিজ্ঞতা FCDO-কে আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে সাহায্য করছে। উত্তরাধিকার এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

DFID সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক

এই নিবন্ধটি DFID সম্পর্কে একটি বিস্তারিত ধারণা প্রদান করে। DFID-এর গঠন, কার্যক্রম, নীতি, সাফল্য, ব্যর্থতা এবং এর বিলুপ্তি সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি, এই নিবন্ধটি DFID সম্পর্কে জানতে আগ্রহী পাঠকদের জন্য সহায়ক হবে।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন জমা $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন জমা $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগদান করুন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন @strategybin এই সুবিধাগুলি পেতে: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশল বিশ্লেষণ ✓ বাজারের ট্রেন্ড সতর্কবার্তা ✓ নবাগতদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ