ডিজিটাল বিভাজন
ডিজিটাল বিভাজন
ডিজিটাল বিভাজন হলো প্রযুক্তি এবং তথ্যের সহজলভ্যতার ক্ষেত্রে বিদ্যমান বৈষম্য। এটি সমাজকে দুটি অংশে বিভক্ত করে – যাদের ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ আছে এবং যাদের নেই। এই বিভাজন অর্থনৈতিক, সামাজিক, ভৌগোলিক এবং জনসংখ্যার ভিত্তিতে তৈরি হতে পারে। ডিজিটাল বিভাজন ডিজিটাল বৈষম্য এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
সূচনা
বিংশ শতাব্দীর শেষভাগ এবং একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (Information and Communication Technology - ICT) দ্রুত বিস্তার ঘটে। ইন্টারনেট, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস মানুষের জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। এই প্রযুক্তিগুলি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, এবং সামাজিক যোগাযোগের সুযোগ তৈরি করেছে। তবে, এই সুযোগগুলি সমাজের সকল স্তরের মানুষের কাছে সমানভাবে পৌঁছায়নি। ডিজিটাল বিভাজন এই অসমতার প্রধান কারণ।
ডিজিটাল বিভাজনের কারণসমূহ
ডিজিটাল বিভাজনের পেছনে একাধিক কারণ বিদ্যমান। এদের কয়েকটি হলো:
- অর্থনৈতিক কারণ: ডিজিটাল ডিভাইস এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ অনেক মানুষের জন্য বহন করা কঠিন। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই সমস্যা প্রকট। দরিদ্র এবং নিম্ন আয়ের মানুষজন স্মার্টফোন বা কম্পিউটার কেনার সামর্থ্য রাখে না, ফলে তারা ডিজিটাল জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে।
- অবকাঠামোগত দুর্বলতা: প্রত্যন্ত এবং গ্রামীণ অঞ্চলে প্রায়শই ইন্টারনেট অবকাঠামো দুর্বল থাকে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা কম হওয়ায় সেখানকার মানুষজন ডিজিটাল সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। যোগাযোগ প্রযুক্তির অভাব ডিজিটাল বিভাজনকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
- শিক্ষার অভাব: ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং জ্ঞানের অভাব একটি বড় বাধা। বয়স্ক মানুষ এবং কম শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রায়শই নতুন প্রযুক্তি শিখতে সমস্যা অনুভব করেন। কম্পিউটার সাক্ষরতার অভাব ডিজিটাল বিভাজনকে আরও গভীর করে।
- ভাষাগত বাধা: ইন্টারনেটের অধিকাংশ কনটেন্ট ইংরেজি ভাষায় তৈরি। অন্যান্য ভাষার ব্যবহারকারীদের জন্য এটি একটি বড় বাধা। স্থানীয় ভাষায় কনটেন্টের অভাব ডিজিটাল বিভাজনকে উৎসাহিত করে।
- ভূগোলিক অবস্থান: দুর্গম এলাকা, পাহাড়ী অঞ্চল অথবা প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করা কঠিন। ফলে, সেখানকার বাসিন্দারা ডিজিটাল সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন।
- সামাজিক কারণ: লিঙ্গ, জাতি, বর্ণ এবং সামাজিক অবস্থানের কারণেও ডিজিটাল বিভাজন সৃষ্টি হতে পারে। কিছু বিশেষ গোষ্ঠী ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ থেকে পিছিয়ে থাকে।
ডিজিটাল বিভাজনের প্রকারভেদ
ডিজিটাল বিভাজন বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। প্রধান কয়েকটি হলো:
১. অ্যাক্সেস বিভাজন (Access Divide): এটি ডিজিটাল বিভাজনের সবচেয়ে প্রাথমিক রূপ। এর মানে হলো কিছু মানুষের কাছে ডিজিটাল প্রযুক্তি (যেমন কম্পিউটার, ইন্টারনেট) ব্যবহারের সুযোগ আছে, আর কিছু মানুষের কাছে নেই।
২. দক্ষতা বিভাজন (Skills Divide): যাদের কাছে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ আছে, তাদের মধ্যে অনেকে সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে জানে না। এই দক্ষতার অভাবের কারণে তারা ডিজিটাল সুযোগের সম্পূর্ণ সুবিধা নিতে পারে না। তথ্য প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
৩. ব্যবহার বিভাজন (Usage Divide): যাদের কাছে প্রযুক্তি আছে এবং তারা তা ব্যবহার করতে জানে, তাদের মধ্যে অনেকে শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য এটি ব্যবহার করে। তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বা কর্মসংস্থানের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে এটি ব্যবহার করে না।
৪. গুণগত বিভাজন (Quality Divide): ইন্টারনেট সংযোগের গতি এবং গুণগত মানের ক্ষেত্রেও বিভাজন দেখা যায়। দ্রুতগতির ইন্টারনেট একদিকে যেমন শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করে, তেমনি ধীরগতির ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য অনলাইন শিক্ষা গ্রহণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
ডিজিটাল বিভাজনের প্রভাব
ডিজিটাল বিভাজনের ফলে সমাজে বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হলো:
- শিক্ষার সুযোগ হ্রাস: ডিজিটাল বিভাজনের কারণে অনেক শিক্ষার্থী অনলাইন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে, তাদের শিক্ষাগত অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়। ই-লার্নিং এবং অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের সুবিধা তারা নিতে পারে না।
- কর্মসংস্থানের অভাব: বর্তমানে অনেক চাকরির জন্য ডিজিটাল দক্ষতা প্রয়োজন। ডিজিটাল বিভাজনের কারণে অনেকে এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় এবং বেকারত্বের শিকার হয়।
- অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি: ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ না পাওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষেরা আরও পিছিয়ে যায়। ডিজিটাল অর্থনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ তারা পায় না।
- সামাজিক বিচ্ছিন্নতা: ডিজিটাল বিভাজনের কারণে কিছু মানুষ সামাজিক যোগাযোগ এবং তথ্যের আদান-প্রদানে পিছিয়ে থাকে, যা তাদের সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বাড়ায়।
- স্বাস্থ্যসেবার অভাব: ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা (যেমন টেলিমেডিসিন) থেকে বঞ্চিত হয় অনেক মানুষ, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষজন।
ডিজিটাল বিভাজন দূর করার উপায়
ডিজিটাল বিভাজন দূর করার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট: সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোকে একত্রিত হয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এর বিস্তার ঘটাতে হবে।
২. অবকাঠামো উন্নয়ন: প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। অপটিক্যাল ফাইবার এবং ওয়্যারলেস প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
৩. ডিজিটাল সাক্ষরতা কর্মসূচি: সমাজের সকল স্তরের মানুষের জন্য ডিজিটাল সাক্ষরতা কর্মসূচি চালু করতে হবে। বয়স্ক এবং কম শিক্ষিতদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের ব্যবস্থা করতে হবে। ডিজিটাল দক্ষতা উন্নয়ন এর ওপর জোর দিতে হবে।
৪. স্থানীয় ভাষায় কনটেন্ট তৈরি: স্থানীয় ভাষায় ইন্টারনেটের কনটেন্ট তৈরি করতে উৎসাহিত করতে হবে। এতে স্থানীয় ব্যবহারকারীরা সহজে তথ্য খুঁজে পাবে।
৫. সরকারি সহায়তা: সরকার ডিজিটাল ডিভাইস কেনার জন্য দরিদ্র শিক্ষার্থীদের এবং পরিবারগুলোকে ভর্তুকি প্রদান করতে পারে।
৬. পাবলিক অ্যাক্সেস পয়েন্ট: লাইব্রেরি, কমিউনিটি সেন্টার এবং অন্যান্য পাবলিক স্থানে বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করতে হবে।
৭. সচেতনতা বৃদ্ধি: ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধা এবং ব্যবহারের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং ডিজিটাল বিভাজন
বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি অনলাইন বিনিয়োগ পদ্ধতি। এখানে, বিনিয়োগকারীরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো সম্পদের (যেমন স্টক, মুদ্রা, কমোডিটি) দাম বাড়বে নাকি কমবে, তা অনুমান করে ট্রেড করে। ডিজিটাল বিভাজন এই ট্রেডিংয়ের সুযোগকে প্রভাবিত করতে পারে। যাদের ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের সুযোগ নেই, তারা এই প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণ করতে পারে না। ফলে, তারা আর্থিক লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।
বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের কিছু কৌশল:
- ট্রেন্ড অনুসরণ (Trend Following): বাজারের বর্তমান প্রবণতা অনুসরণ করে ট্রেড করা।
- সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স (Support and Resistance): নির্দিষ্ট মূল্যস্তরে চাহিদা এবং যোগানের ভিত্তিতে ট্রেড করা।
- মোমেন্টাম ট্রেডিং (Momentum Trading): দ্রুত পরিবর্তনশীল বাজারে ট্রেড করা।
- ব্রেকআউট ট্রেডিং (Breakout Trading): কোনো নির্দিষ্ট মূল্যস্তর অতিক্রম করলে ট্রেড করা।
- ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume Analysis): ট্রেডিং ভলিউমের ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যৎ দামের গতিবিধি অনুমান করা।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ (Technical Analysis) এবং ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume Analysis) বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করে বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় এবং সঠিক ট্রেড নির্বাচন করা যায়।
| অঞ্চল | ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা (মোট জনসংখ্যা %) | কম্পিউটার ব্যবহারের হার (%) | |
| বিশ্ব | ৬৭% | ৪৫% | |
| উত্তর আমেরিকা | ৯০% | ৮৫% | |
| ইউরোপ | ৮২% | ৭৫% | |
| এশিয়া | ৫০% | ৪০% | |
| আফ্রিকা | ৪০% | ২০% |
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
ডিজিটাল বিভাজন একটি জটিল সমস্যা, তবে এটি সমাধান করা সম্ভব। সরকার, বেসরকারি সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে একসাথে কাজ করতে হবে। ডিজিটাল প্রযুক্তিকে সকলের জন্য সহজলভ্য এবং ব্যবহারযোগ্য করে তোলার মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন করা সম্ভব। ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি (Blockchain Technology) ডিজিটাল বিভাজন কমাতে সহায়ক হতে পারে।
আরও জানতে:
- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়
- বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন
- ডিজিটাল বাংলাদেশ
- ইন্টারনেট সোসাইটি
- জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ
- ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব কনসোর্টিয়াম
- কম্পিউটার নেটওয়ার্ক
- মোবাইল ব্যাংকিং
- ই-কমার্স
- সোশ্যাল মিডিয়া
- ডাটা বিশ্লেষণ
- সাইবার নিরাপত্তা
- ক্লাউড কম্পিউটিং
- বিগ ডেটা
- মেশিন লার্নিং
- ডেটা মাইনিং
- অপটিক্যাল ফাইবার
- ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন
- স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন
- ব্রডব্যান্ড প্রযুক্তি
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
