মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি ব্যুরো

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি ব্যুরো

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি ব্যুরো (United States Census Bureau) হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ-এর একটি অংশ। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা এবং এর বৈশিষ্ট্যসমূহ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রকাশ করে। এই সংস্থাটি প্রতি দশ বছর অন্তর যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি পরিচালনা করে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান দ্বারা বাধ্যতামূলক। আদমশুমারি ব্যুরোর ডেটা পুনর্বণ্টন (redistricting) এবং ফেডারেল তহবিল বিতরণে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও, এটি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি গবেষণা এবং নীতি নির্ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করে।

ইতিহাস

আদমশুমারি ব্যুরোর যাত্রা শুরু ১৭৯০ সালে, যখন প্রথম আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখন থেকে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার পরিবর্তনগুলি নথিভুক্ত করে আসছে। শুরুতে, আদমশুমারি মূলত জনসংখ্যার গণনা করার জন্য করা হতো, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এর পরিধি বৃদ্ধি পায় এবং আরও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা শুরু হয়।

• ১৭৯০: প্রথম আদমশুমারি অনুষ্ঠিত।
• ১৮৫০: আদমশুমারিতে ক্রীতদাসদের গণনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
• ১৮৮০: আদমশুমারিতে মহিলাদের ভোটাধিকার এবং নাগরিকত্ব সম্পর্কিত প্রশ্ন যুক্ত করা হয়।
• ১৯২০: আদমশুমারিতে জাতিগত সংখ্যালঘুদের চিহ্নিত করার জন্য আরও বিস্তারিত প্রশ্ন যুক্ত করা হয়।
• বর্তমানে: আদমশুমারি ব্যুরো শুধুমাত্র জনসংখ্যার গণনা করে না, বরং বাসস্থান, আয়, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং পারিবারিক সম্পর্ক সম্পর্কিত তথ্যও সংগ্রহ করে।

কার্যাবলী

আদমশুমারি ব্যুরোর প্রধান কাজগুলো হলো:

• আদমশুমারি: প্রতি দশ বছর অন্তর আদমশুমারি পরিচালনা করা, যা যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার সঠিক সংখ্যা এবং বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে।
• জনসংখ্যার অনুমান: আদমশুমারির বছরগুলোর মাঝে জনসংখ্যার পরিবর্তন সম্পর্কে অনুমান তৈরি করা এবং প্রকাশ করা।
• অর্থনৈতিক জরিপ: শিল্প, কৃষি, বাণিজ্য এবং সেবা খাত সম্পর্কিত ডেটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা।
• সামাজিক জরিপ: দারিদ্র্য, housing , স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা।
• ভূ-স্থানিক ডেটা: ভৌগোলিক তথ্য তৈরি এবং বিতরণ করা, যা মানচিত্র তৈরি এবং স্থানিক বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়।

আদমশুমারি প্রক্রিয়া

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা বিভিন্ন পর্যায়ে সম্পন্ন হয়। নিচে এর মূল পর্যায়গুলো আলোচনা করা হলো:

১. পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি: আদমশুমারি শুরু হওয়ার কয়েক বছর আগে থেকেই পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি শুরু হয়। এই পর্যায়ে প্রশ্নপত্র তৈরি, কর্মী নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণ, এবং গণনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি ও পরিকাঠামো তৈরি করা হয়।

২. জনসংখ্যা গণনা: এই পর্যায়ে আদমশুমারি ব্যুরোর কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বা পোস্টাল মেইল এবং অনলাইন মাধ্যমের সাহায্যে জনসংখ্যার তথ্য সংগ্রহ করেন।

৩. ডেটা প্রক্রিয়াকরণ: সংগৃহীত ডেটা প্রক্রিয়াকরণ করা হয়, যেখানে ভুলত্রুটি সংশোধন এবং ডেটাগুলোকে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়।

৪. ফলাফল প্রকাশ: প্রক্রিয়াকরণের পর আদমশুমারির ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এই ফলাফল রাষ্ট্রপতি কর্তৃক পুনর্বণ্টনের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

আদমশুমারি প্রক্রিয়ার সময়রেখা

পর্যায়	সময়কাল	কার্যক্রম
পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি	আদমশুমারির ৩-৫ বছর আগে	প্রশ্নপত্র তৈরি, কর্মী নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি তৈরি
জনসংখ্যা গণনা	আদমশুমারির বছর	বাড়ি বাড়ি গিয়ে, মেইল ও অনলাইন মাধ্যমে ডেটা সংগ্রহ
ডেটা প্রক্রিয়াকরণ	আদমশুমারির পরবর্তী ৬-৯ মাস	ডেটা সংশোধন ও শ্রেণীবদ্ধকরণ
ফলাফল প্রকাশ	আদমশুমারির পরবর্তী বছর	ফলাফল প্রকাশ ও পুনর্বণ্টনের জন্য প্রেরণ

ডেটার ব্যবহার

আদমশুমারি ব্যুরোর ডেটা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে কয়েকটি প্রধান ব্যবহার নিচে উল্লেখ করা হলো:

• রাজনৈতিক পুনর্বণ্টন: আদমশুমারির ফলাফলের ভিত্তিতে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা রাজ্যগুলোর মধ্যে পুনর্বণ্টন করা হয়।
• ফেডারেল তহবিল বিতরণ: বিভিন্ন ফেডারেল প্রোগ্রামের জন্য রাজ্য এবং স্থানীয় সরকারগুলোকে তহবিল বরাদ্দ করার ক্ষেত্রে আদমশুমারির ডেটা ব্যবহার করা হয়।
• অর্থনৈতিক পরিকল্পনা: ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো বাজার গবেষণা এবং স্থান নির্বাচন করার জন্য আদমশুমারির ডেটা ব্যবহার করে।
• সামাজিক নীতি নির্ধারণ: সরকার এবং গবেষকরা সামাজিক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে এবং কার্যকর নীতি তৈরি করতে আদমশুমারির ডেটা ব্যবহার করেন।
• জনসংখ্যা গবেষণা: আদমশুমারির ডেটা জনসংখ্যা পরিবর্তন, অভিবাসন এবং জনমিতিক প্রবণতা নিয়ে গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হয়।

আদমশুমারি ব্যুরোর জরিপ

আদমশুমারি ব্যুরো বিভিন্ন ধরনের জরিপ পরিচালনা করে, যা জনসংখ্যার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জরিপের তালিকা দেওয়া হলো:

• আমেরিকান কমিউনিটি সার্ভে (ACS): এটি একটি বার্ষিক জরিপ, যা জনসংখ্যার সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং housing সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে।
• বর্তমান জনসংখ্যা জরিপ (CPS): এটি মাসিক ভিত্তিতে বেকারত্ব এবং কর্মসংস্থান সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে।
• ছোট ব্যবসা প্রশাসন (SBA): এই জরিপ ছোট ব্যবসাগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা এবং কর্মক্ষমতা সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে।
• কৃষি জরিপ: এটি কৃষিকাজ এবং কৃষকদের জীবনযাত্রার উপর তথ্য সংগ্রহ করে।

প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন

আদমশুমারি ব্যুরো ডেটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এর মধ্যে রয়েছে:

• ভূ-স্থানিক প্রযুক্তি: GIS (Geographic Information System) এবং GPS (Global Positioning System) ব্যবহার করে ভৌগোলিক ডেটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়।
• কম্পিউটার-সহায়ক ডেটা সংগ্রহ: CAPI (Computer-Assisted Personal Interviewing) এবং CATI (Computer-Assisted Telephone Interviewing) ব্যবহার করে ডেটা সংগ্রহ করা হয়।
• ডেটা মাইনিং: বিশাল ডেটা সেট থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য খুঁজে বের করার জন্য ডেটা মাইনিং কৌশল ব্যবহার করা হয়।
• কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: ডেটা বিশ্লেষণ এবং ভবিষ্যৎ জনসংখ্যা সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং machine learning অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হয়।

চ্যালেঞ্জ ও বিতর্ক

আদমশুমারি ব্যুরোকে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ ও বিতর্কের সম্মুখীন হতে হয়। এর মধ্যে কয়েকটি হলো:

• জনসংখ্যার আন্ডারকাউন্ট: কিছু জনগোষ্ঠীর (যেমন: সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং অভিবাসী) সম্পূর্ণভাবে গণনা করা কঠিন হতে পারে, যার ফলে জনসংখ্যার আন্ডারকাউন্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
• গোপনীয়তা উদ্বেগ: আদমশুমারি ডেটার গোপনীয়তা রক্ষা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এবং ডেটা লঙ্ঘনের ঝুঁকি সবসময় বিদ্যমান।
• রাজনৈতিক প্রভাব: আদমশুমারির ফলাফল রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল হতে পারে, এবং রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়।
• বাজেট সীমাবদ্ধতা: আদমশুমারি একটি ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া, এবং বাজেট সীমাবদ্ধতা ডেটার গুণমান এবং পরিধিকে প্রভাবিত করতে পারে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

আদমশুমারি ব্যুরো ভবিষ্যতে আরও উন্নত প্রযুক্তি এবং পদ্ধতি ব্যবহার করে ডেটা সংগ্রহের প্রক্রিয়াকে আরও নির্ভুল এবং কার্যকর করার পরিকল্পনা করছে। এর মধ্যে রয়েছে:

• অনলাইন আদমশুমারি: আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে অনলাইনে আদমশুমারিতে অংশ নিতে উৎসাহিত করা।
• প্রশাসনিক ডেটার ব্যবহার: অন্যান্য সরকারি সংস্থার প্রশাসনিক ডেটা ব্যবহার করে আদমশুমারির ডেটার গুণমান বৃদ্ধি করা।
• ডেটা গোপনীয়তা বৃদ্ধি: ডেটা গোপনীয়তা রক্ষার জন্য নতুন প্রযুক্তি এবং পদ্ধতি ব্যবহার করা।
• জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি: আদমশুমারি প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য প্রচারণা চালানো।

আরও দেখুন

• মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা
• মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ
• আদমশুমারি
• জনসংখ্যার ঘনত্ব
• জাতিগোষ্ঠী
• demographic analysis
• Statistical modeling
• Data visualization
• Sampling techniques
• Survey methodology
• Econometrics
• Time series analysis
• Regression analysis
• Cluster analysis
• Principal component analysis
• Bayesian statistics
• Data mining techniques
• Machine learning algorithms
• Big data analytics
• Geographic Information Systems (GIS)

[[

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ