GPS
গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (GPS)
ভূমিকা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (GPS) হলো একটি স্যাটেলাইট-ভিত্তিক নেভিগেশন সিস্টেম। এটি মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল এবং বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হচ্ছে। GPS রিসিভার ব্যবহার করে পৃথিবীর যেকোনো স্থানের ভৌগোলিক অবস্থান নির্ণয় করা যায়। এই প্রযুক্তি যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং ভূ-স্থানিক তথ্য ব্যবস্থাপনায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।
GPS এর ইতিহাস GPS এর যাত্রা শুরু হয় ১৯৬০-এর দশকে, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ট্রান্সিট নামক একটি স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেম তৈরি করে। এরপর NAVSTAR GPS নামে একটি প্রকল্প শুরু হয়, যার লক্ষ্য ছিল আরও উন্নত এবং নির্ভুল একটি পজিশনিং সিস্টেম তৈরি করা। প্রথম GPS স্যাটেলাইট ১৯৮৯ সালে উৎক্ষেপণ করা হয় এবং ১৯৯৫ সালে সিস্টেমটি সম্পূর্ণরূপে চালু হয়। সময়ের সাথে সাথে GPS প্রযুক্তির উন্নতি হয়েছে এবং এটি এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
GPS কিভাবে কাজ করে GPS সিস্টেমটি তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত:
- স্পেস সেগমেন্ট: এটিতে ২৪টি স্যাটেলাইট রয়েছে, যা পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিণ করছে। এই স্যাটেলাইটগুলো ক্রমাগত রেডিও সংকেত প্রেরণ করে।
- কন্ট্রোল সেগমেন্ট: এই অংশে রয়েছে মাস্টার কন্ট্রোল স্টেশন এবং মনিটরিং স্টেশন। এগুলো স্যাটেলাইটগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে এবং নিয়ন্ত্রণ করে।
- ইউজার সেগমেন্ট: এই অংশে GPS রিসিভারগুলো অন্তর্ভুক্ত, যা ব্যবহারকারীরা তাদের অবস্থান নির্ণয় করার জন্য ব্যবহার করে।
GPS রিসিভার কমপক্ষে চারটি স্যাটেলাইটের সংকেত গ্রহণ করে। প্রতিটি স্যাটেলাইট থেকে আসা সংকেতের সময় পরিমাপ করে রিসিভারটি স্যাটেলাইটগুলোর দূরত্ব নির্ণয় করে। এই দূরত্বগুলো ব্যবহার করে রিসিভারটি ত্রিকোণমিতির মাধ্যমে তার নিজের অবস্থান (অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ এবং উচ্চতা) নির্ণয় করে। এই প্রক্রিয়াটিকে ত্রিকোণমিতি বলা হয়।
GPS এর প্রকারভেদ বিভিন্ন ধরনের GPS সিস্টেম রয়েছে, যা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। এদের মধ্যে কয়েকটি প্রধান প্রকার নিচে উল্লেখ করা হলো:
- স্ট্যান্ডার্ড পজিশনিং সার্ভিস (SPS): এটি সাধারণ জনগণের জন্য উপলব্ধ এবং প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত নির্ভুলতা প্রদান করে।
- প্রেসাইজ পজিশনিং সার্ভিস (PPS): এটি শুধুমাত্র সামরিক এবং অনুমোদিত ব্যবহারকারীদের জন্য উপলব্ধ এবং কয়েক সেন্টিমিটার পর্যন্ত নির্ভুলতা প্রদান করে।
- ডাইফারেনশিয়াল GPS (DGPS): এটি SPS এর নির্ভুলতা বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। DGPS একটি বেস স্টেশন ব্যবহার করে, যা পরিচিত স্থানে অবস্থিত এবং GPS সংকেতের ত্রুটি সংশোধন করে।
- অ্যাসিস্টেড GPS (A-GPS): এটি মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়। A-GPS সেলুলার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে GPS সংকেত দ্রুত অধিগ্রহণ করতে সাহায্য করে।
GPS এর ব্যবহার GPS প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপক ও বহুমুখী। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ব্যবহার উল্লেখ করা হলো:
- নেভিগেশন: GPS এর সবচেয়ে পরিচিত ব্যবহার হলো নেভিগেশন। এটি গাড়ি, জাহাজ, বিমান এবং ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নেভিগেশন সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়। গাড়ি নেভিগেশন এখন খুব সাধারণ বিষয়।
- ভূ-স্থানিক তথ্য: GPS ভূ-স্থানিক তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি মানচিত্র তৈরি, সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং শহরায়ন পরিকল্পনায় সহায়তা করে।
- সময় সিঙ্ক্রোনাইজেশন: GPS অত্যন্ত নির্ভুল সময় প্রদান করে, যা টেলিযোগাযোগ, আর্থিক লেনদেন এবং বিদ্যুৎ বিতরণ এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়।
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা: GPS দুর্যোগ পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্তদের অবস্থান নির্ণয় করতে এবং উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে সহায়ক।
- কৃষি: GPS কৃষিতে নির্ভুল চাষাবাদ, সার প্রয়োগ এবং ফসল পর্যবেক্ষণ করতে ব্যবহৃত হয়।
- পরিবহন: GPS পরিবহন শিল্পে যানবাহন ট্র্যাকিং, রুট অপটিমাইজেশন এবং সরবরাহ চেইন ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত হয়।
GPS এবং বাইনারি অপশন GPS প্রযুক্তি সরাসরি বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর সাথে সম্পর্কিত না হলেও, কিছু ক্ষেত্রে এটি পরোক্ষভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন:
- ভূ-স্থানিক বিশ্লেষণ: GPS থেকে প্রাপ্ত ডেটা ব্যবহার করে কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বিশ্লেষণ করা যেতে পারে, যা বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হতে পারে।
- যোগাযোগের উন্নতি: GPS এর মাধ্যমে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়, যা দ্রুত এবং সঠিক ট্রেডিংয়ের জন্য অপরিহার্য।
- সময় সংবেদনশীল ট্রেডিং: GPS এর নির্ভুল সময় প্রদানকারী বৈশিষ্ট্য সময় সংবেদনশীল বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
GPS এর ভবিষ্যৎ GPS প্রযুক্তি ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে। ভবিষ্যতে GPS এর নির্ভুলতা আরও বাড়ানো হবে এবং নতুন নতুন ব্যবহার উদ্ভাবিত হবে। কিছু সম্ভাব্য উন্নয়ন নিচে উল্লেখ করা হলো:
- মাল্টি-কনস্টেলেশন GPS: একাধিক স্যাটেলাইট সিস্টেম (যেমন: GPS, GLONASS, Galileo, BeiDou) ব্যবহার করে আরও নির্ভুল এবং নির্ভরযোগ্য পজিশনিং প্রদান করা হবে।
- ইনডোর GPS: ভবনের ভিতরে বা অন্যান্য আবদ্ধ স্থানে GPS সংকেত দুর্বল হওয়ার কারণে ইনডোর পজিশনিং সিস্টেম তৈরি করা হচ্ছে।
- কোয়ান্টাম GPS: কোয়ান্টাম প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও সুরক্ষিত এবং নির্ভুল GPS সিস্টেম তৈরি করার গবেষণা চলছে।
GPS প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ GPS প্রযুক্তির কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা নিচে উল্লেখ করা হলো:
- সংকেত দুর্বলতা: ঘন জঙ্গলে, উঁচু ভবনের মধ্যে বা খারাপ আবহাওয়ায় GPS সংকেত দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
- জ্যামিং এবং স্পুফিং: GPS সংকেত জ্যামিং বা স্পুফিংয়ের মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাহত করা যেতে পারে।
- নির্ভরশীলতা: GPS প্রযুক্তির উপর अत्यधिक নির্ভরশীলতা একটি ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে সামরিক এবং নিরাপত্তা ক্ষেত্রে।
উপসংহার গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (GPS) আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি নেভিগেশন, ভূ-স্থানিক তথ্য, সময় সিঙ্ক্রোনাইজেশন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে GPS আরও নির্ভুল, নির্ভরযোগ্য এবং বহুমুখী হয়ে উঠবে।
আরও জানতে
- ভূ-স্থানিক তথ্য ব্যবস্থা
- স্যাটেলাইট যোগাযোগ
- ত্রিকোণমিতিক ফাংশন
- ভূগোল
- কম্পিউটার নেটওয়ার্ক
- ওয়্যারলেস যোগাযোগ
- সেন্সর প্রযুক্তি
- ডেটা বিশ্লেষণ
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
- রোবোটিক্স
বাইনারি অপশন সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক:
- বাইনারি অপশন ট্রেডিং
- ট্রেডিং স্ট্র্যাটেজি
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস
- ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস
- ট্রেডিং সাইকোলজি
- মানি ম্যানেজমেন্ট
- কল অপশন
- পুট অপশন
- টাচ/নো টাচ অপশন
- র্যাং্জ বাউন্ড অপশন
- বাইনারি অপশন ব্রোকার
- ট্রেডিং ভলিউম
- সূচক (Indicators)
- ট্রেন্ড লাইন
- সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স
- মুভিং এভারেজ
- আরএসআই (RSI)
- এমএসিডি (MACD)
- বলিঙ্গার ব্যান্ডস
- ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
- বাইনারি অপশন টার্মিনোলজি
- ডেমো অ্যাকাউন্ট
- লাইভ ট্রেডিং
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন জমা $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন জমা $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগদান করুন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন @strategybin এই সুবিধাগুলি পেতে: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশল বিশ্লেষণ ✓ বাজারের ট্রেন্ড সতর্কবার্তা ✓ নবাগতদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
