ভাইকিং
ভাইকিং ইতিহাস এবং সংস্কৃতি
ভাইকিংরা ছিল নর্স সমুদ্রগামী যোদ্ধা এবং বণিক জাতি। তারা ৮ম থেকে ১১শ শতাব্দীর মধ্যে স্ক্যান্ডিনেভিয়া (বর্তমান ডেনমার্ক, নরওয়ে এবং সুইডেন) থেকে ইউরোপের বিভিন্ন অংশে অভিযান চালিয়েছিল, বসতি স্থাপন করেছিল এবং বাণিজ্য করত। ভাইকিংদের খ্যাতি ছিল ভয়ঙ্কর যোদ্ধা হিসেবে, তবে তারা দক্ষ জাহাজ নির্মাতা, শিল্পী এবং বণিকও ছিল।
উৎপত্তি ও প্রেক্ষাপট
ভাইকিংদের উৎপত্তিস্থল ছিল স্ক্যান্ডিনেভিয়া। ৮ম শতাব্দীতে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষিজমির অভাব এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তারা সমুদ্রপথে অভিযান শুরু করে। এই সময়কালে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার জলবায়ু পরিবর্তনও একটি কারণ ছিল বলে মনে করা হয়। ভাইকিংরা মূলত তিনটি প্রধান জাতিগোষ্ঠীতে বিভক্ত ছিল: ডেন, নরওয়েজিয়ান এবং সুইডিশ। এদের মধ্যে ডেনরা ছিল সবচেয়ে বেশি পরিচিত এবং তারা ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের দিকে বেশি মনোযোগ দিত। নরওয়েজিয়ানরা আইসল্যান্ড, গ্রিনল্যান্ড এবং উত্তর আমেরিকার কিছু অংশে বসতি স্থাপন করে। সুইডিশরা পূর্ব ইউরোপে, বিশেষ করে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের দিকে বাণিজ্য এবং অভিযান চালায়।
ভাইকিংদের জাহাজ
ভাইকিংদের সাফল্যের মূল কারণ ছিল তাদের উন্নত জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তি। তাদের জাহাজগুলো ছিল লম্বা, সরু এবং অগভীর ড্রাফটের, যা তাদের নদী এবং সমুদ্র উভয় স্থানেই সহজে চলাচল করতে সাহায্য করত। এই জাহাজগুলো ড লংশিপ নামে পরিচিত ছিল। ড লংশিপগুলো দ্রুতগামী ছিল এবং খুব সহজেই যেকোনো প্রতিকূল আবহাওয়ায় পাল তুলতে পারত। জাহাজগুলোর নকশা এমন ছিল যে এগুলো সমুদ্রপথে দীর্ঘ যাত্রা করতে সক্ষম ছিল। ভাইকিংরা তাদের জাহাজে পাল ব্যবহার করত, যা তাদের দ্রুতগতিতে চলতে সাহায্য করত।
ভাইকিংদের অভিযান
ভাইকিংরা ৮ম থেকে ১১শ শতাব্দীর মধ্যে বিভিন্ন দেশে অভিযান চালায়। তাদের অভিযানের প্রধান ক্ষেত্রগুলো ছিল:
- ইংল্যান্ড: ভাইকিংরা ৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে লিন্ডিসফার্ন অ্যাবেতে প্রথম আক্রমণ করে এবং এরপর প্রায় ৩০০ বছর ধরে ইংল্যান্ডে অভিযান চালায়। তারা ইংল্যান্ডের কিছু অংশ দখল করে নেয় এবং সেখানে বসতি স্থাপন করে।
- ফ্রান্স: ভাইকিংরা ফ্রান্সের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায়ই আক্রমণ করত। তারা সেন নদীর মোহনায় বসতি স্থাপন করে এবং প্যারিস শহরটিও কয়েকবার আক্রমণ করে।
- আয়ারল্যান্ড: ভাইকিংরা আয়ারল্যান্ডের উপকূলীয় শহরগুলোতে আক্রমণ করে এবং সেখানে বাণিজ্য কেন্দ্র স্থাপন করে।
- স্পেন: ভাইকিংরা স্পেনের উত্তর উপকূলীয় অঞ্চলে অভিযান চালায় এবং সেখানে কিছু সময়ের জন্য বসতি স্থাপন করে।
- ভূমধ্যসাগর: ভাইকিংরা ভূমধ্যসাগরের বিভিন্ন দ্বীপে এবং উপকূলীয় অঞ্চলে অভিযান চালায়। তারা ইতালি এবং সিসিলিতেও আক্রমণ করে।
- পূর্ব ইউরোপ: সুইডিশ ভাইকিংরা পূর্ব ইউরোপে ডিনিপার এবং ভোলগা নদীর মাধ্যমে বাণিজ্য করত এবং অভিযান চালাত। তারা কিয়েভ শহরটি দখল করে এবং কিয়েভান রুস প্রতিষ্ঠা করে।
ভাইকিংদের সংস্কৃতি
ভাইকিংদের সংস্কৃতি ছিল বেশ জটিল এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ। তারা পৌত্তলিক ধর্ম অনুসরণ করত এবং তাদের দেবতাদের কাহিনীগুলো নর্স পুরাণে লিপিবদ্ধ আছে। ভাইকিংরা যুদ্ধ, বীরত্ব এবং সম্মানের উপর জোর দিত। তারা বিশ্বাস করত যে মৃত্যুর পরে ভালhalla নামক একটি স্থানে তাদের বীর যোদ্ধারা দেবতাদের সাথে আনন্দ করে।
ভাইকিংদের সমাজে পুরুষ এবং নারী উভয়েরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। পুরুষরা যোদ্ধা এবং বণিক হিসেবে কাজ করত, অন্যদিকে নারীরা ঘরোয়া কাজ এবং কৃষিকাজ দেখাশোনা করত। ভাইকিং নারীরা সম্পত্তির অধিকারিণী হতে পারত এবং তারা সমাজে যথেষ্ট সম্মান পেত।
ভাইকিংরা দক্ষ শিল্পী এবং কারিগর ছিল। তারা কাঠ, ধাতু এবং হাড় দিয়ে সুন্দর শিল্পকর্ম তৈরি করত। ভাইকিংদের তৈরি অলঙ্কার, বর্ম এবং অস্ত্রশস্ত্র তাদের শিল্প দক্ষতার প্রমাণ।
ভাইকিংদের ভাষা ছিল পুরোনো নর্স ভাষা, যা জার্মানিক ভাষা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। ভাইকিংরা রুন নামক লিপি ব্যবহার করত, যা তাদের শিল্পকর্মে এবং শিলালিপিগুলোতে দেখা যায়।
ভাইকিংদের বাণিজ্য
ভাইকিংরা শুধু যোদ্ধা ছিল না, তারা দক্ষ বণিকও ছিল। তারা বাল্টিক সাগর, উত্তর সাগর এবং ভূমধ্যসাগরের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে বাণিজ্য করত। ভাইকিংরা পশম, ফুর, মধু, মৌমাছি এবং দাসীর মতো পণ্য বাণিজ্য করত। তারা রূপা, সোনা এবং রেশমের মতো মূল্যবান জিনিসও আমদানি করত।
ভাইকিংদের পতন
১১শ শতাব্দীর মধ্যে ভাইকিংদের অভিযান ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। এর কারণগুলো ছিল:
- খ্রিস্টধর্মের বিস্তার: ভাইকিংদের অঞ্চলে খ্রিস্টধর্মের বিস্তার তাদের পুরনো ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে দুর্বল করে দেয়।
- রাজনৈতিক একত্রীকরণ: স্ক্যান্ডিনেভিয়ার রাজ্যগুলো শক্তিশালী হতে শুরু করে এবং তারা ভাইকিংদের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।
- প্রতিরোধের বৃদ্ধি: ইউরোপের বিভিন্ন রাজ্য ভাইকিংদের প্রতিরোধের জন্য শক্তিশালী নৌবাহিনী তৈরি করে।
ভাইকিংদের legado
ভাইকিংরা ইউরোপের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। তাদের অভিযান এবং বাণিজ্য ইউরোপের সংস্কৃতি এবং অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। ভাইকিংরা নতুন ভূমি আবিষ্কার করে এবং নতুন বাণিজ্যিক পথ তৈরি করে। তাদের জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তি এবং সামরিক কৌশল ইউরোপের ইতিহাসে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
ভাইকিংদের legado আজও স্ক্যান্ডিনেভিয়ার সংস্কৃতিতে বিদ্যমান। তাদের কাহিনীগুলো লোককথায় এবং সাহিত্যে বেঁচে আছে। ভাইকিংদের বীরত্ব এবং সাহস আজও মানুষকে অনুপ্রাণিত করে।
আরও কিছু তথ্য:
- ভাইকিংরা দাস ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। তারা বিভিন্ন দেশ থেকে দাসদের ধরে নিয়ে যেত এবং তাদের বিক্রি করত।
- ভাইকিংরা আইন ও বিচার ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে জীবনযাপন করত। তাদের সমাজে টিং নামক একটি পরিষদ ছিল, যা আইন প্রণয়ন এবং বিচারকার্য পরিচালনা করত।
- ভাইকিংরা খেলাধুলা এবং বিনোদনের প্রতি আগ্রহী ছিল। তারা কুস্তি, তীরন্দাজী এবং নৌকা বাইচের মতো খেলাধুলা করত।
- ভাইকিংরা জ্যোতির্বিদ্যা এবং ভূগোল সম্পর্কে জ্ঞান রাখত। তারা নক্ষত্র দেখে দিক নির্ণয় করত এবং নতুন দ্বীপ ও উপকূল আবিষ্কার করত।
- ভাইকিংরা চিকিৎসা সম্পর্কেও জ্ঞান রাখত। তারা জড়িবুটি ব্যবহার করে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করত।
এই নিবন্ধটি ভাইকিংদের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দেয়। আরও বিস্তারিত জানার জন্য, আপনি নিম্নলিখিত উৎসগুলো দেখতে পারেন:
| শহর/স্থান | দেশ | বিবরণ |
| বার্গেন | নরওয়ে | ভাইকিংদের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র |
| রোস্কিল্ডে | ডেনমার্ক | ভাইকিং জাহাজ নির্মাণ ও নৌযান কেন্দ্র |
| হেইথো | ইংল্যান্ড | ভাইকিংদের বসতি ও বাণিজ্য কেন্দ্র |
| ডাবলিন | আয়ারল্যান্ড | ভাইকিংদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত শহর |
| কিয়েভ | ইউক্রেন | কিয়েভান রুসের রাজধানী, ভাইকিংদের দ্বারা প্রভাবিত |
| ভিসবি | সুইডেন | গথল্যান্ড দ্বীপের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য শহর |
এই নিবন্ধে ব্যবহৃত কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক:
১. নর্স ২. ইউরোপ ৩. জাহাজ ৪. বণিক ৫. নর্স পুরাণ ৬. ভালhalla ৭. শিল্পকলা ৮. কারিগর ৯. পুরোনো নর্স ভাষা ১০. রুন ১১. বাল্টিক সাগর ১২. উত্তর সাগর ১৩. ভূমধ্যসাগর ১৪. খ্রিস্টধর্ম ১৫. ভাইকিং বয়স ১৬. ভাইকিংদের অভিযান ১৭. ভাইকিংদের সংস্কৃতি ১৮. দাস ১৯. আইন ২০. টিং ২১. জ্যোতির্বিদ্যা ২২. ভূগোল ২৩. চিকিৎসা ২৪. কুস্তি ২৫. তীরন্দাজী
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণের জন্য: (যদিও ভাইকিংদের সময়কালে এগুলো ছিল না, আধুনিক ট্রেডিংয়ের সাথে সম্পর্কিত করার জন্য যোগ করা হলো)
১. ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন ২. মুভিং এভারেজ ৩. আরএসআই (রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইন্ডেক্স) ৪. এমএসিডি (মুভিং এভারেজ কনভারজেন্স ডাইভারজেন্স) ৫. ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট ৬. ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস (ভিডব্লিউএপি) ৭. অন ব্যালেন্স ভলিউম (ওবিভি) ৮. চাইকিন মানি ফ্লো ৯. একিউমুলেশন/ডিস্ট্রিবিউশন লাইন ১০. বলিঙ্গার ব্যান্ডস ১১. প্যারাবলিক এসএআর ১২. ইচি মোকু ক্লাউড ১৩. ডঞ্জি চ্যানেল ১৪. এলিয়ট ওয়েভ থিওরি ১৫. গ্যাপ অ্যানালাইসিস
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
