ব্রিটিশ বিজ্ঞানী
ব্রিটিশ বিজ্ঞানী
ভূমিকা
গ্রেট ব্রিটেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। বহু শতাব্দী ধরে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছেন, যা বিশ্বকে নতুন পথে চালিত করেছে। এই নিবন্ধে, কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ব্রিটিশ বিজ্ঞানীর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করা হলো। এখানে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, গণিত, এবং অন্যান্য বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের অবদান তুলে ধরা হবে।
পদার্থবিজ্ঞান
স্যার আইজ্যাক নিউটন (১৬৪৩-১৭১৭) আইজ্যাক নিউটন সম্ভবত সর্বকালের সবচেয়ে প্রভাবশালী বিজ্ঞানী। তিনি মহাকর্ষ সূত্র আবিষ্কার করেন এবং ক্যালকুলাস-এর উদ্ভাবন করেন। তাঁর লেখা ‘ফিলোসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা’ (Philosophiæ Naturalis Principia Mathematica) পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। নিউটনের তিনটি গতির সূত্র বলবিদ্যাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করে।
জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল (১৮৩১-১৮৭৯) জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল তড়িৎচুম্বকীয় তত্ত্বের জনক হিসেবে পরিচিত। তিনি আলোকে একটি তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ হিসেবে প্রমাণ করেন এবং ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণগুলি বিদ্যুৎ ও চুম্বকত্ব-এর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে। তাঁর কাজ ওয়্যারলেস যোগাযোগ এবং আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করে।
পল ডির্যাক (১৯০২-১৯৮৪) পল ডির্যাক ছিলেন একজন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ। তিনি কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং আপেক্ষিকতা তত্ত্ব-এর সমন্বয়ে ডির্যাক সমীকরণ আবিষ্কার করেন, যা স্পিন এবং অ্যান্টিম্যাটার-এর ধারণা দেয়। ডির্যাক ১৯৩৩ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
রসায়ন
জন ডালটন (১৭৬৬-১৮৪১) জন ডালটন আধুনিক পরমাণু তত্ত্ব-এর প্রবক্তা। তিনি প্রমাণ করেন যে প্রতিটি মৌলিক পদার্থ পরমাণু দ্বারা গঠিত এবং পরমাণুগুলি অবিভাজ্য। ডালটনের তত্ত্ব রাসায়নিক বিক্রিয়া এবং রাসায়নিক সূত্র বুঝতে সহায়ক ছিল।
মাইকেল ফ্যারাডে (১৭৯১-১৮৬৭) মাইকেল ফ্যারাডে তড়িৎচুম্বকীয় আবেশের (electromagnetic induction) আবিষ্কারক। তিনি বিদ্যুৎ এবং রাসায়নিক বিক্রিয়া-এর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং তড়িৎ বিশ্লেষণের (electrolysis) সূত্র আবিষ্কার করেন। ফ্যারাডের কাজ বৈদ্যুতিক মোটর এবং জেনারেটর তৈরিতে সহায়ক হয়।
ডোরোথি হজকিন (১৯১০-১৯৯৪) ডোরোথি হজকিন ছিলেন একজন বায়োকেমিস্ট। তিনি এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফি ব্যবহার করে পেনিসিলিন এবং ভিটামিন বি১২-এর গঠন নির্ণয় করেন। হজকিন ১৯৭৬ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
জীববিজ্ঞান
চার্লস ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২) চার্লস ডারউইন বিবর্তন তত্ত্ব-এর প্রবক্তা। তাঁর ‘অন দ্য অরিজিন অফ স্পিসিস’ (On the Origin of Species) গ্রন্থে তিনি প্রাকৃতিক নির্বাচনের (natural selection) মাধ্যমে প্রজাতির উৎপত্তির ধারণা দেন। ডারউইনের তত্ত্ব জীববিজ্ঞান এবং পরিবেশ বিজ্ঞান-এর ভিত্তি স্থাপন করে।
গ্রেগর মেন্ডেল (১৮২২-১৮৮৪) গ্রেগর মেন্ডেল বংশগতিবিদ্যার (genetics) জনক হিসেবে পরিচিত। তিনি মটরশুঁটি গাছের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বংশগতির সূত্র আবিষ্কার করেন, যা মেন্ডেলের সূত্র নামে পরিচিত।
অ্যালান টুরিং (১৯১২-১৯৫৪) অ্যালান টুরিং ছিলেন একজন গণিতবিদ এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানী। তিনি কম্পিউটার বিজ্ঞান-এর ভিত্তি স্থাপন করেন এবং টুরিং মেশিন-এর ধারণা দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তিনি জার্মান Enigma কোড ভাঙতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
গণিত
অ্যালান টুরিং (১৯১২-১৯৫৪) গণিত এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানের বাইরেও টুরিং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করেছেন এবং ‘টুরিং টেস্ট’ এর প্রস্তাবনা দেন, যা একটি মেশিনের বুদ্ধিমত্তা পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয়।
গডফ্রে হারল্ড হার্ডি (১৮৭৭-১৯৪৬) গডফ্রে হারল্ড হার্ডি ছিলেন একজন গণিতবিদ। তিনি সংখ্যাতত্ত্ব (number theory) এবং অসীম ধারা নিয়ে কাজ করেছেন। ভারতীয় গণিতবিদ শ্রিনিবাস রামানুজনের সাথে তাঁর সহযোগিতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
অন্যান্য ক্ষেত্র
স্টিফেন হকিং (১৯৪২-২০১৮) স্টিফেন হকিং ছিলেন একজন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ এবং কসমোলজিস্ট। তিনি ব্ল্যাক হোল এবং মহাবিশ্বের উৎপত্তি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁর লেখা ‘আ ব্রিফ হিস্টরি অফ টাইম’ (A Brief History of Time) জনপ্রিয় বিজ্ঞান সাহিত্য হিসেবে পরিচিত।
টিম বার্নার্স-লি (জন্ম ১৯৫৫) টিম বার্নার্স-লি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের (World Wide Web) উদ্ভাবক। তিনি এইচটিএমএল (HTML), ইউআরএল (URL) এবং এইচটিটিপি (HTTP) তৈরি করেন, যা ইন্টারনেট ব্যবহারের পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে দিয়েছে।
ডেভিড অ্যাটেনবরো (জন্ম ১৯২৬) ডেভিড অ্যাটেনবরো একজন বিখ্যাত প্রাকৃতিক ইতিহাসবিদ এবং টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব। তিনি প্রকৃতি এবং বন্যপ্রাণী নিয়ে অসংখ্য তথ্যচিত্র তৈরি করেছেন, যা পরিবেশ সংরক্ষণে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করেছে।
নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা
ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অবদানের জন্য অসংখ্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের নাম নিচে উল্লেখ করা হলো:
- স্যার রোনাল্ড রস (১৯০২) - ম্যালেরিয়া নিয়ে গবেষণা
- স্যার আর্নেস্ট রাদারফোর্ড (১৯০৮) - তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণা
- স্যার ফ্রেডরিক সোডি (১৯০৮) - তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণা
- স্যার উইলিয়াম র্যামসে (১৯০৪) - নিষ্ক্রিয় গ্যাস আবিষ্কার
- স্যার জন স্যান্ডার্সন (১৯৫৮) - ইনসুলিনের গঠন আবিষ্কার
- ভিক্টর হ্যান্স (১৯৮০) - ইমিউন সিস্টেম নিয়ে গবেষণা
- রিচার্ড রবার্টস (১৯৯৮) - নাইট্রিক অক্সাইড নিয়ে গবেষণা
বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর সাথে সম্পর্ক
যদিও বিজ্ঞানীরা সরাসরি বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর সাথে জড়িত নন, তাদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি এবং ধারণাগুলো এই ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ:
১. গাণিতিক মডেলিং: বিজ্ঞানীরা যে গাণিতিক মডেল তৈরি করেন, তা টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবহার করা হয়।
২. ডেটা বিশ্লেষণ: ভলিউম বিশ্লেষণ এবং চার্ট প্যাটার্ন সনাক্ত করতে বিজ্ঞানীরা ব্যবহৃত ডেটা বিশ্লেষণের পদ্ধতিগুলি কাজে লাগে।
৩. অ্যালগরিদমিক ট্রেডিং: অ্যালগরিদম তৈরি করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেড করার ধারণা বিজ্ঞানীদের কাজ থেকে এসেছে।
৪.probabilistic মডেলিং: বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর ফলাফল মূলত সম্ভাবনার উপর নির্ভরশীল। বিজ্ঞানীরা সম্ভাব্যতা তত্ত্ব ব্যবহার করে এই সম্ভাবনাগুলি বিশ্লেষণ করেন।
ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের অবদান আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং এটি বাইনারি অপশন ট্রেডিং সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
আরও কিছু উল্লেখযোগ্য বিজ্ঞানী
- জোসেফ লিস্টর (১৮২৭-১৯১২): জীবাণু তত্ত্ব এবং অ্যান্টিসেপটিক সার্জারির প্রবক্তা।
- আলেকজান্ডার ফ্লেমিং (১৮৮১-১৯৫৫): পেনিসিলিন আবিষ্কারক।
- ফ্রান্সিস ক্রিক (১৯১৬-২০০৪): ডিএনএ-এর গঠন আবিষ্কারক।
- জেমস ওয়াটসন (জন্ম ১৯২৮): ডিএনএ-এর গঠন আবিষ্কারক।
- রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন (১৯২০-১৯৫৮): ডিএনএ-এর গঠন বুঝতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
উপসংহার
ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা তাঁদের উদ্ভাবনী চিন্তা ও গবেষণার মাধ্যমে মানবজাতির কল্যাণে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তাঁদের কাজ শুধু বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে যায়নি, বরং প্রযুক্তি, অর্থনীতি এবং সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর মতো আধুনিক আর্থিক বাজারেও তাঁদের অবদান অনস্বীকার্য।
| বিজ্ঞানী | জন্ম-মৃত্যু | অবদান | |
|---|---|---|---|
| আইজ্যাক নিউটন | ১৬৪৩-১৭১৭ | মহাকর্ষ সূত্র, ক্যালকুলাস | |
| জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল | ১৮৩১-১৮৭৯ | তড়িৎচুম্বকীয় তত্ত্ব | |
| চার্লস ডারউইন | ১৮০৯-১৮৮২ | বিবর্তন তত্ত্ব | |
| অ্যালান টুরিং | ১৯১২-১৯৫৪ | কম্পিউটার বিজ্ঞান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা | |
| স্টিফেন হকিং | ১৯৪২-২০১৮ | ব্ল্যাক হোল, মহাবিশ্বের উৎপত্তি | |
| টিম বার্নার্স-লি | জন্ম ১৯৫৫ | ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব |
আরও জানার জন্য:
- বৈজ্ঞানিক বিপ্লব
- মহাবিশ্বের ইতিহাস
- ডিএনএ
- কোয়ান্টাম মেকানিক্স
- আপেক্ষিকতা তত্ত্ব
- বংশগতিবিদ্যা
- ট্রেডিং কৌশল
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর
- ফিনান্সিয়াল মার্কেট
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
- মুভিং এভারেজ
- আরএসআই
- MACD
- বলিঙ্গার ব্যান্ড
- ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট
- ভলিউম ওয়েটেড এভারেজ প্রাইস
- অলিংগার ব্যান্ড
- স্টোকাস্টিক অসিলেটর
- চার্ট প্যাটার্ন
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
