আইজ্যাক নিউটন

স্যার আইজ্যাক নিউটন ছিলেন একজন ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, আলকেমিস্ট, এবং ধর্মতত্ত্ববিদ। তাঁকে সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানী ও গণিতবিদদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নিউটনের কাজের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী হলো তাঁর মহাকর্ষের সূত্র এবং গতিসূত্র। এই সূত্রগুলি পদার্থবিজ্ঞান এবং গণিত-এর ভিত্তি স্থাপন করেছে।

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা

আইজ্যাক নিউটন ১৬৪৩ সালের ৪ জানুয়ারি (গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে) লিনকনশায়ারের উলসথর্প-বাই-কোলস্টের্থর্প নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা, উইলিয়াম নিউটন, ছিলেন একজন কৃষক। নিউটনের জন্ম কয়েক মাস পর তাঁর বাবার মৃত্যুর পর, তাঁর মা, হান্না অ্যাসকফ, দ্বিতীয় বিয়ে করেন। নিউটন তাঁর নানীর কাছে বড় হন।

নিউটন প্রথমে গ্র্যানথাম গ্রামার স্কুলে পড়াশোনা করেন। সেখানে তিনি ল্যাটিন, গ্রিক এবং গণিত-এর প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। ১৬৬১ সালে, নিউটন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়-এর ট্রিনিটি কলেজে ভর্তি হন। প্রথমে তিনি অ্যারিস্টটল-এর দর্শন এবং ইউক্লিড-এর জ্যামিতির প্রতি আকৃষ্ট হন। পরবর্তীতে, তিনি রেনে দেকার্ত-এর কাজের প্রতি আগ্রহী হন এবং নিজের মতো করে ক্যালকুলাস তৈরি করেন। ১৬৬৯ সালে, তিনি লুকাসিয়ান অধ্যাপক হিসেবে গণিত-এর চেয়ার লাভ করেন।

বৈজ্ঞানিক অবদান

নিউটনের বৈজ্ঞানিক অবদানগুলি বহু বিস্তৃত। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অবদান নিচে উল্লেখ করা হলো:

মহাকর্ষের সূত্র: নিউটন ১৬৮৭ সালে তাঁর বিখ্যাত বই ফিলোসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা-তে মহাকর্ষের সূত্র প্রকাশ করেন। এই সূত্র অনুযায়ী, মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু একে অপরকে আকর্ষণ করে এবং এই আকর্ষণের মান বস্তুদ্বয়ের ভরের গুণফলের সমানুপাতিক এবং তাদের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক। এই সূত্র গ্রহ এবং নক্ষত্র-এর গতি ব্যাখ্যা করতে সহায়ক। মহাকর্ষ একটি মৌলিক শক্তি যা বস্তুকে একত্রিত করে।

গতিসূত্র: নিউটন তিনটি গতিসূত্র প্রদান করেন, যা গতিবিদ্যা-র ভিত্তি স্থাপন করে। প্রথম সূত্র অনুসারে, কোনো বস্তুর উপর যদি কোনো বাহ্যিক বল প্রয়োগ করা না হয়, তবে বস্তুটি স্থির থাকলে স্থির থাকবে এবং গতিশীল থাকলে একই বেগে সরলরেখায় চলতে থাকবে। দ্বিতীয় সূত্র অনুসারে, কোনো বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক। তৃতীয় সূত্র অনুসারে, প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে।

আলোর তত্ত্ব: নিউটন আলোর কণা তত্ত্ব প্রস্তাব করেন। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, আলো ক্ষুদ্র কণা দ্বারা গঠিত, যা সরলরেখায় ভ্রমণ করে। যদিও পরবর্তীতে আলোর তরঙ্গ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, নিউটনের কণা তত্ত্ব আলোর অপবর্তন এবং ব্যতিচার ব্যাখ্যা করতে পারতো না।

ক্যালকুলাস: নিউটন স্বাধীনভাবে গটফ্রিড উইলহেম লাইবনিজ-এর সাথে প্রায় একই সময়ে ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেন। ক্যালকুলাস পরিবর্তন এবং গতি পরিমাপ করার জন্য একটি শক্তিশালী গাণিতিক হাতিয়ার। এটি পদার্থবিজ্ঞান, প্রকৌশল, অর্থনীতি এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

দ্বিপদী উপপাদ্য: নিউটন দ্বিপদী উপপাদ্যকে সাধারণীকরণ করেন, যা বীজগণিত এবং সম্ভাব্যতা তত্ত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আলকেমি এবং ধর্মতত্ত্ব

বিজ্ঞান ছাড়াও, নিউটন আলকেমি এবং ধর্মতত্ত্বের প্রতিও আগ্রহী ছিলেন। তিনি প্রচুর সময় আলকেমি নিয়ে গবেষণা করেছেন, বিশেষ করে স্বর্ণ তৈরির চেষ্টা করেছেন। যদিও তাঁর আলকেমিক কাজগুলি সফল হয়নি, তবে এগুলি তাঁর রাসায়নিক জ্ঞান এবং পরীক্ষামূলক পদ্ধতির বিকাশে সহায়ক ছিল।

নিউটন ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টান। তিনি বাইবেল-এর ব্যাখ্যা নিয়ে অনেক লেখালেখি করেছেন এবং ত্রিত্ববাদ-এর ধারণার প্রতি বিশ্বাসী ছিলেন।

সাফল্য এবং স্বীকৃতি

আইজ্যাক নিউটন তাঁর জীবদ্দশায় অনেক সম্মান ও স্বীকৃতি লাভ করেন। ১৬৮৭ সালে ফিলোসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা প্রকাশের পর তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। রয়্যাল সোসাইটি-র সভাপতি হিসেবে তিনি দীর্ঘকাল দায়িত্ব পালন করেন। [[স্যার]-এর উপাধি লাভ করেন এবং ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে-তে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে নিউটনের সূত্রের সম্পর্ক

যদিও আইজ্যাক নিউটন সরাসরি বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে জড়িত ছিলেন না, তবে তাঁর সূত্রগুলি এবং চিন্তাধারা এই ক্ষেত্রে ব্যবহৃত কৌশল এবং মডেলগুলির ভিত্তি স্থাপন করেছে।

সম্ভাব্যতা তত্ত্ব: বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর মূল ভিত্তি হলো সম্ভাব্যতা তত্ত্ব। নিউটনের ক্যালকুলাস এবং দ্বিপদী উপপাদ্য সম্ভাব্যতা তত্ত্বের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ঝুঁকি এবং রিটার্ন বিশ্লেষণের জন্য এই ধারণাগুলি অপরিহার্য।

গতিশীল মডেল: নিউটনের গতিসূত্রগুলি সময়ের সাথে সাথে কোনো বস্তুর পরিবর্তন ব্যাখ্যা করে। একইভাবে, বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ব্যবহৃত ব্ল্যাক-স্কোলস মডেল এবং অন্যান্য মূল্যায়ন মডেল সময়ের সাথে সাথে অপশনের মূল্য কিভাবে পরিবর্তিত হয় তা নির্ধারণ করে।

বল এবং প্রতিক্রিয়া: নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুসারে, প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ, বাজারের প্রতিটি মুভমেন্টের একটি প্রতিক্রিয়া থাকে। টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস এবং ভলিউম অ্যানালাইসিস ব্যবহার করে এই প্রতিক্রিয়াগুলি বোঝা যায়।

জটিল সিস্টেম: নিউটন মহাবিশ্বের জটিল সিস্টেমগুলি বোঝার জন্য একটি কাঠামো তৈরি করেছিলেন। বাইনারি অপশন ট্রেডিং-ও একটি জটিল সিস্টেম, যেখানে বিভিন্ন অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক কারণগুলি বাজারের গতিবিধিকে প্রভাবিত করে।

আইজ্যাক নিউটনের প্রধান কাজ
কাজ	প্রকাশনার বছর	বিষয়বস্তু
ফিলোসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা	১৬৮৭	মহাকর্ষের সূত্র, গতিসূত্র, মহাবিশ্বের গঠন
অপটিক্স	১৭১৭	আলোর তত্ত্ব, রঙের দর্শন
অ্যারিথমেটিক ইউনিভার্সালিস	১৭১১	ক্যালকুলাস এবং গাণিতিক বিশ্লেষণ
দ্য ক্রনিকল হিস্টোরিক্যাল	১৭২৮	বাইবেলের ব্যাখ্যা এবং ধর্মতত্ত্ব

উত্তরাধিকার

আইজ্যাক নিউটনের কাজ বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি-র অগ্রগতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তাঁর সূত্রগুলি আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান-এর ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং মহাকাশ বিজ্ঞান, প্রকৌশল, এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান-এর মতো ক্ষেত্রগুলিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। নিউটন শুধুমাত্র একজন বিজ্ঞানী ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন প্রভাবশালী চিন্তাবিদ এবং মানব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব।

পদার্থবিজ্ঞান || গণিত || জ্যোতির্বিজ্ঞান || ক্যালকুলাস || মহাকর্ষ || গতিবিদ্যা || আলো || আলকেমি || ধর্মতত্ত্ব || ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় || রয়্যাল সোসাইটি || ব্ল্যাক-স্কোলস মডেল || টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস || ভলিউম অ্যানালাইসিস || সম্ভাব্যতা || ঝুঁকি || রিটার্ন || বাইনারি অপশন ট্রেডিং || অর্থনীতি || বীজগণিত

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ