পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিও
পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিও
পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিও (Pixar Animation Studios) একটি আমেরিকান কম্পিউটার অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র স্টুডিও। এটি Emeryville, California-তে অবস্থিত। এই স্টুডিওটি তার উচ্চমানের এবং উদ্ভাবনী অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। পিক্সার শুধুমাত্র চলচ্চিত্র নির্মাণই করে না, এটি অ্যানিমেশন প্রযুক্তির উন্নয়নেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
প্রতিষ্ঠা ও প্রাথমিক বছর
পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিওর যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৬ সালে "The Graphics Group" নামে, যা লুকাসফিল্মের একটি অংশ ছিল। স্টিভ জবস ১৯৮৬ সালে লুকাসফিল্ম থেকে এই গ্রুপটি কিনে নেন এবং এর নাম পরিবর্তন করে পিক্সার রাখেন। প্রাথমিকভাবে পিক্সার কম্পিউটার হার্ডওয়্যার তৈরি করত, বিশেষ করে গ্রাফিক্স কম্পিউটার। কিন্তু পরবর্তীতে তারা অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র নির্মাণে মনোযোগ দেয়।
পিক্সারের প্রথম চলচ্চিত্র ছিল "টয় স্টোরি" (Toy Story), যা ১৯৯৫ সালে মুক্তি পায়। এটি ছিল প্রথম সম্পূর্ণ কম্পিউটার-অ্যানিমেটেড ফিচার ফিল্ম। চলচ্চিত্রটি বিশালSuccess পায় এবং পিক্সারকে চলচ্চিত্র জগতে একটি নতুন পরিচিতি এনে দেয়। "টয় স্টোরি" চলচ্চিত্রটি কম্পিউটার গ্রাফিক্সের ব্যবহার করে চলচ্চিত্র নির্মাণে বিপ্লব ঘটায়।
সাফল্যের পথে পিক্সার
"টয় স্টোরি"-র সাফল্যের পর পিক্সার একের পর এক সফল চলচ্চিত্র নির্মাণ করে চলেছে। তাদের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- "এ বাগ'স লাইফ" (A Bug's Life) - ১৯৯৮
- "টয় স্টোরি ২" (Toy Story 2) - ১৯৯৯
- "ম Monsters, Inc." - ২০০১
- "ফাইন্ডিং Nemo" (Finding Nemo) - ২০০৩
- "দ্য ইনক্রেডিবলস" (The Incredibles) - ২০০৪
- "কার্স" (Cars) - ২০০৬
- "রাট্যাটুই" (Ratatouille) - ২০০৭
- "ওয়াল-ই" (WALL-E) - ২০০৮
- "আপ" (Up) - ২০০৯
- "টয় স্টোরি ৩" (Toy Story 3) - ২০১০
- "কার্স ২" (Cars 2) - ২০১১
- "ব্রেভ" (Brave) - ২০১২
- "ম Monsters University" - ২০১৩
- "ইনসাইড আউট" (Inside Out) - ২০১৫
- "ফাইন্ডিং ডোরি" (Finding Dory) - ২০১৬
- "কার্স ৩" (Cars 3) - ২০১৭
- "ইনক্রেডিবলস ২" (Incredibles 2) - ২০১৮
- "টয় স্টোরি ৪" (Toy Story 4) - ২০১৯
- "অনওয়ার্ড" (Onward) - ২০২০
- "সোউল" (Soul) - ২০২১
- "টার্নিং রেড" (Turning Red) - ২০২২
- "এলিমেন্টাল" (Elemental) - ২০২৩
পিক্সারের চলচ্চিত্রগুলো শুধু বিনোদনই দেয় না, বরং গভীর মানবিক বার্তা বহন করে। তাদের চলচ্চিত্রগুলোতে প্রায়শই বন্ধুত্ব, পরিবার, সাহস এবং নিজের পরিচয় খোঁজার মতো বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
অ্যানিমেশন প্রযুক্তিতে পিক্সারের অবদান
পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিও অ্যানিমেশন প্রযুক্তির উন্নয়নে বিশাল অবদান রেখেছে। তারা বিভিন্ন নতুন কৌশল এবং সফটওয়্যার তৈরি করেছে যা অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র নির্মাণকে আরও সহজ ও উন্নত করেছে।
- RenderMan: পিক্সার RenderMan নামক একটি রেন্ডারিং সফটওয়্যার তৈরি করেছে, যা চলচ্চিত্র শিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি ত্রিমাত্রিক ছবিকে আরও বাস্তবসম্মত করে তোলে।
- PhysBAM: পিক্সার PhysBAM নামক একটি পদার্থবিদ্যা ইঞ্জিন তৈরি করেছে, যা অ্যানিমেশনে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনা, যেমন - জল, আগুন, এবং ধোঁয়ার সিমুলেশন করতে সাহায্য করে।
- Animation tools: পিক্সার তাদের অ্যানিমেটরদের জন্য বিভিন্ন বিশেষ টুল তৈরি করেছে, যা তাদের চরিত্রগুলোকে আরও জীবন্ত করে তুলতে সাহায্য করে।
পিক্সারের এই প্রযুক্তিগুলো অন্যান্য অ্যানিমেশন স্টুডিওগুলোকেও উন্নতমানের চলচ্চিত্র নির্মাণে উৎসাহিত করেছে।
ডিজনি-র সাথে পিক্সারের চুক্তি
২০০৬ সালে ডিজনি পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিওকে ৭.৪ বিলিয়ন ডলারে কিনে নেয়। এই চুক্তির ফলে ডিজনি পিক্সারের সমস্ত চলচ্চিত্র এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের অধিকার পায়। তবে পিক্সার একটি স্বতন্ত্র স্টুডিও হিসেবে তার নিজস্ব সৃজনশীলতা বজায় রেখেছে।
ডিজনি-র সাথে চুক্তির পর পিক্সার আরও নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। তারা ডিজনির বিভিন্ন চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশন শো-এর জন্য অ্যানিমেশন তৈরি করছে।
পিক্সারের চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রক্রিয়া
পিক্সারের চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। এখানে কয়েকটি প্রধান ধাপ উল্লেখ করা হলো:
১. Story development: প্রথমে একটি গল্পের ধারণা তৈরি করা হয়। তারপর সেই গল্পটিকে বিস্তারিতভাবে লেখা হয় এবং এর প্লট, চরিত্র এবং থিম নির্ধারণ করা হয়।
২. Storyboarding: গল্পের প্রতিটি দৃশ্যকে ছবি আকারে তুলে ধরা হয়। এই ছবিগুলো একটি গল্পের মতো করে সাজানো হয়, যা চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রাথমিক রূপরেখা তৈরি করে।
৩. Character design: চলচ্চিত্রের চরিত্রগুলোকে ডিজাইন করা হয়। তাদের চেহারা, পোশাক এবং বৈশিষ্ট্যগুলো নির্ধারণ করা হয়।
৪. Modeling: ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরি করা হয়। এই মডেলগুলোই অ্যানিমেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
৫. Rigging: মডেলগুলোকে এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে সেগুলোকে অ্যানিমেট করা যায়।
৬. Animation: মডেলগুলোকে প্রাণবন্ত করে তোলা হয়। অ্যানিমেটররা প্রতিটি ফ্রেমের জন্য মডেলগুলোর অবস্থান এবং অভিব্যক্তি পরিবর্তন করেন।
৭. Rendering: অ্যানিমেশন করা মডেলগুলোকে চূড়ান্ত রূপে পরিণত করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় আলো, ছায়া এবং অন্যান্য ভিজ্যুয়াল এফেক্ট যোগ করা হয়।
৮. Editing and sound design: চলচ্চিত্রটি সম্পাদনা করা হয় এবং এর সাথে শব্দ ও সঙ্গীত যোগ করা হয়।
পিক্সারের চলচ্চিত্র নির্মাণে প্রতিটি ধাপে অত্যন্ত মনোযোগ দেওয়া হয়, যার ফলে তাদের চলচ্চিত্রগুলো এত নিখুঁত হয়।
পিক্সারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিও ভবিষ্যতে আরও নতুন এবং উদ্ভাবনী চলচ্চিত্র নির্মাণ করার পরিকল্পনা করছে। তারা নতুন প্রযুক্তি এবং গল্পের ধারণা নিয়ে কাজ করছে। ডিজনি+-এর জন্য আরও বেশি অ্যানিমেটেড সিরিজ এবং বিশেষ চলচ্চিত্র তৈরি করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
পিক্সার ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি (AR) প্রযুক্তির ব্যবহার করে নতুন ধরনের বিনোদন অভিজ্ঞতা তৈরি করার চেষ্টা করছে।
পিক্সারের কাজের স্বীকৃতি
পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিও অসংখ্য পুরস্কার ও স্বীকৃতি লাভ করেছে। তাদের কিছু উল্লেখযোগ্য পুরস্কার হলো:
- অ্যাকাডেমি পুরস্কার: পিক্সার এখন পর্যন্ত ২২টি অস্কার পুরস্কার জিতেছে।
- গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার: পিক্সার অসংখ্য গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার জিতেছে।
- বাফটা পুরস্কার: পিক্সার ব্রিটিশ অ্যাকাডেমি ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন আর্টস (BAFTA) পুরস্কারও জিতেছে।
পিক্সারের চলচ্চিত্রগুলো সমালোচক এবং দর্শকদের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
| চলচ্চিত্র | মুক্তির বছর | পরিচালক |
|---|---|---|
| টয় স্টোরি | ১৯৯৫ | জন ল্যাসেটার |
| এ বাগ'স লাইফ | ১৯৯৮ | জন ল্যাসেটার, অ্যান্ড্রু স্ট্যান্টন |
| টয় স্টোরি ২ | ১৯৯৯ | জন ল্যাসেটার, আশ ব্র্যানন |
| ম Monsters, Inc. | ২০০১ | Pete Docter, David Silverman, Lee Unkrich |
| ফাইন্ডিং Nemo | ২০০৩ | অ্যান্ড্রু স্ট্যান্টন |
| দ্য ইনক্রেডিবলস | ২০০৪ | Brad Bird |
| কার্স | ২০০৬ | জন ল্যাসেটার, জো রানফ্ট |
| রাট্যাটুই | ২০০৭ | Brad Bird, Jan Pinkava |
| ওয়াল-ই | ২০০৮ | অ্যান্ড্রু স্ট্যান্টন |
| আপ | ২০০৯ | Pete Docter, Bob Peterson |
| টয় স্টোরি ৩ | ২০১০ | Lee Unkrich |
| কার্স ২ | ২০১১ | John Lasseter, Brad Lewis |
| ব্রেভ | ২০১২ | Mark Andrews, Brenda Chapman, Steve Purcell |
| ম Monsters University | ২০১৩ | Dan Scanlon |
| ইনসাইড আউট | ২০১৫ | Pete Docter, Ronnie del Carmen |
| ফাইন্ডিং ডোরি | ২০১৬ | Andrew Stanton, Angus MacLane |
| কার্স ৩ | ২০১৭ | Brian Fee |
| ইনক্রেডিবলস ২ | ২০১৮ | Brad Bird |
| টয় স্টোরি ৪ | ২০১৯ | Josh Cooley |
| অনওয়ার্ড | ২০২০ | Dan Scanlon |
| সোউল | ২০২১ | Pete Docter, Kemp Powers |
| টার্নিং রেড | ২০২২ | Domee Shi |
| এলিমেন্টাল | ২০২৩ | Peter Sohn |
উপসংহার
পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিও কম্পিউটার অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র নির্মাণে একটি অগ্রণী নাম। তাদের চলচ্চিত্রগুলো শুধু বিনোদনই দেয় না, বরং গভীর মানবিক বার্তা বহন করে। পিক্সার অ্যানিমেশন প্রযুক্তির উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে এবং ভবিষ্যতে আরও নতুন ও উদ্ভাবনী চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে দর্শকদের মুগ্ধ করতে প্রস্তুত।
অ্যানিমেশন কম্পিউটার গ্রাফিক্স ডিজনি স্টিভ জবস টয় স্টোরি RenderMan PhysBAM অ্যাকাডেমি পুরস্কার গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার বাফটা পুরস্কার জন ল্যাসেটার অ্যান্ড্রু স্ট্যান্টন Pete Docter Brad Bird Dan Scanlon Josh Cooley Domee Shi Peter Sohn Storyboarding Character design Modeling Rigging Animation Rendering Editing Sound design ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অগমেন্টেড রিয়েলিটি টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ভলিউম বিশ্লেষণ মার্কেট ট্রেন্ড ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিনিয়োগ কৌশল
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
