ডিজনি
ডিজনি: সাম্রাজ্য, উদ্ভাবন এবং বিনিয়োগের সুযোগ
ভূমিকা
ডিজনি, বিশ্বজুড়ে পরিচিত একটি নাম, যা শুধু একটি বিনোদন কোম্পানি নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্য। ওয়াল্ট ডিজনি এবং রয় ও. ডিজনি ১৯২৩ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুটা ছিল একটি ছোট অ্যানিমেশন স্টুডিও দিয়ে, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ডিজনি চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, থিম পার্ক এবং পণ্যদ্রব্যের মাধ্যমে নিজেদের একটি বিশাল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। এই নিবন্ধে, ডিজনির ইতিহাস, এর বিভিন্ন বিভাগ, ব্যবসায়িক কৌশল এবং বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
ডিজনির ইতিহাস
ওয়াল্ট ডিজনি ছিলেন একজন স্বপ্নদর্শী মানুষ। তিনি কার্টুন এবং অ্যানিমেশনের প্রতি আগ্রহী ছিলেন এবং খুব অল্প বয়সেই ছবি আঁকা শুরু করেন। ১৯২৩ সালে, তিনি তার ভাই রয় ও. ডিজনির সাথে ‘ডিজনি ব্রাদার্স স্টুডিও’ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমদিকে, তারা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র তৈরি করতেন। ১৯২৮ সালে, মিকি মাউসের প্রথম চলচ্চিত্র ‘স্টিমবোট উইলি’ মুক্তি পায়, যা ডিজনিকে রাতারাতি তারকা করে তোলে।
এরপর ডিজনি একের পর এক সফল চলচ্চিত্র তৈরি করে, যেমন ‘স্নো হোয়াইট অ্যান্ড দ্য সেভেন ডোয়ার্ফস’ (১৯৩৭), ‘সিন্ডারেলা’ (১৯৫০), ‘স্লিপিং বিউটি’ (১৯৫৯) এবং ‘দ্য লায়ন কিং’ (১৯৯৪)। এই চলচ্চিত্রগুলো শুধু বক্স অফিসে সাফল্য পায়নি, বরং এগুলো পপ সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে।
১৯৫৬ সালে ডিজনি তাদের প্রথম থিম পার্ক ‘ডিজনিল্যান্ড’ খোলে, যা বিনোদন জগতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। এরপর থেকে ডিজনি আরও অনেক থিম পার্ক তৈরি করেছে, যেমন ‘ওয়াল্ট ডিজনি ওয়ার্ল্ড’, ‘টোকিও ডিজনি রিসোর্ট’, ‘ডিজনি প্যারিস’ এবং ‘হংকং ডিজনিল্যান্ড’।
ডিজনির বিভিন্ন বিভাগ
ডিজনি বিভিন্ন ধরনের বিনোদন এবং পণ্য সরবরাহ করে। এর প্রধান বিভাগগুলো হলো:
- চলচ্চিত্র: ডিজনি চলচ্চিত্র প্রযোজনা শিল্পের একটি প্রধান অংশ। পিক্সার, মার্ভেল, স্টার ওয়ার্স এবং টোয়েন্টিথ সেঞ্চুরি স্টুডিওস-এর মতো বড় প্রযোজনা সংস্থাগুলো ডিজনির অধীনে রয়েছে।
- টেলিভিশন: ডিজনির টেলিভিশন নেটওয়ার্কগুলো হলো ডিজনি চ্যানেল, এবিসি, ইএসপিএন এবং ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।
- থিম পার্ক: ডিজনির থিম পার্কগুলো সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। এগুলোতে বিভিন্ন ধরনের রাইড, শো এবং আকর্ষণ থাকে।
- পণ্যদ্রব্য: ডিজনি বিভিন্ন ধরনের পণ্যদ্রব্য বিক্রি করে, যেমন খেলনা, পোশাক, বই এবং অন্যান্য সামগ্রী।
- স্ট্রিমিং: ডিজনি+ হলো ডিজনির নিজস্ব স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ডিজনির চলচ্চিত্র, টেলিভিশন শো এবং অন্যান্য কনটেন্ট দেখা যায়।
ব্যবসায়িক কৌশল
ডিজনির সাফল্যের পেছনে বেশ কিছু ব্যবসায়িক কৌশল রয়েছে:
- ব্র্যান্ডিং: ডিজনি একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড তৈরি করেছে, যা গুণমান, পরিবার এবং বিনোদনের প্রতীক।
- উদ্ভাবন: ডিজনি সবসময় নতুন প্রযুক্তি এবং ধারণা ব্যবহার করে উদ্ভাবনী পণ্য তৈরি করে।
- অধিগ্রহণ: ডিজনি বিভিন্ন সময়ে অন্যান্য কোম্পানি অধিগ্রহণ করেছে, যেমন পিক্সার, মার্ভেল এবং স্টার ওয়ার্স। এর মাধ্যমে ডিজনি তাদের কনটেন্ট লাইব্রেরি এবং মার্কেট শেয়ার বৃদ্ধি করেছে।
- সিনার্জি: ডিজনি তাদের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ডিজনি চলচ্চিত্র থিম পার্কে আকর্ষণ হিসেবে প্রদর্শিত হতে পারে এবং এর উপর ভিত্তি করে পণ্যদ্রব্য তৈরি করা যেতে পারে।
- বিশ্বব্যাপী বিস্তার: ডিজনি তাদের ব্যবসা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছে, যা তাদের আয় এবং মুনাফা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেছে।
বিনিয়োগের সুযোগ
ডিজনি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় বিকল্প হতে পারে। এখানে কিছু বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে আলোচনা করা হলো:
- স্টক: ডিজনির স্টক নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ-এ তালিকাভুক্ত। বিনিয়োগকারীরা ডিজনির শেয়ার কিনে কোম্পানির মালিকানায় অংশ নিতে পারেন।
- বন্ড: ডিজনি বন্ড ইস্যু করে অর্থ সংগ্রহ করে। বন্ড বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট হারে সুদ প্রদান করে।
- মিউচুয়াল ফান্ড এবং ইটিএফ: ডিজনি-ভিত্তিক মিউচুয়াল ফান্ড এবং এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের ডিজনির বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ করে দেয়।
- থিম পার্ক এবং রিসোর্ট: ডিজনির থিম পার্ক এবং রিসোর্টগুলোতে বিনিয়োগ করা যেতে পারে।
ডিজনির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ডিজনি বর্তমানে বেশ কিছু নতুন প্রকল্পে কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- ডিজনি+: ডিজনি তাদের স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ডিজনি+-কে আরও উন্নত করার পরিকল্পনা করছে। তারা নতুন কনটেন্ট তৈরি এবং প্ল্যাটফর্মের ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
- থিম পার্কের সম্প্রসারণ: ডিজনি তাদের থিম পার্কগুলো সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে। তারা নতুন রাইড, শো এবং আকর্ষণ যুক্ত করার মাধ্যমে পার্কগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে।
- নতুন প্রযুক্তি: ডিজনি নতুন প্রযুক্তি, যেমন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি ব্যবহার করে নতুন বিনোদনের অভিজ্ঞতা তৈরি করার চেষ্টা করছে।
- মার্ভেল এবং স্টার ওয়ার্স: ডিজনি মার্ভেল এবং স্টার ওয়ার্স ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর উপর আরও বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। তারা এই ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর নতুন চলচ্চিত্র, টেলিভিশন শো এবং পণ্যদ্রব্য তৈরি করার পরিকল্পনা করছে।
টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
ডিজনির স্টক মার্কেট কর্মক্ষমতা বিশ্লেষণ করার জন্য কিছু টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর ব্যবহার করা যেতে পারে:
- মুভিং এভারেজ: ৫০-দিনের এবং ২০০-দিনের মুভিং এভারেজ ব্যবহার করে স্টকের ট্রেন্ড নির্ধারণ করা যেতে পারে।
- রিলেটিভ স্ট্রেন্থ ইনডেক্স (RSI): RSI ব্যবহার করে স্টকটি অতিরিক্ত কেনা বা অতিরিক্ত বিক্রি হয়েছে কিনা তা জানা যেতে পারে।
- মুভিং এভারেজ কনভারজেন্স ডাইভারজেন্স (MACD): MACD ব্যবহার করে স্টকের গতি এবং দিকনির্দেশনা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
- ভলিউম: ভলিউম বিশ্লেষণের মাধ্যমে স্টকের চাহিদা এবং যোগান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ভলিউম ওয়েটড এভারেজ প্রাইস (VWAP) একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক।
ভলিউম বিশ্লেষণ
ডিজনির স্টকের ভলিউম বিশ্লেষণ বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করতে পারে।
- আপট্রেন্ডে ভলিউম বৃদ্ধি: যদি স্টকের দাম বাড়তে থাকে এবং ভলিউমও বৃদ্ধি পায়, তবে এটি একটি শক্তিশালী আপট্রেন্ডের ইঙ্গিত দেয়।
- ডাউনট্রেন্ডে ভলিউম বৃদ্ধি: যদি স্টকের দাম কমতে থাকে এবং ভলিউমও বৃদ্ধি পায়, তবে এটি একটি শক্তিশালী ডাউনট্রেন্ডের ইঙ্গিত দেয়।
- কম ভলিউমে দামের পরিবর্তন: যদি কম ভলিউমে দামের পরিবর্তন হয়, তবে এটি একটি দুর্বল ট্রেন্ডের ইঙ্গিত দেয়।
- অন ব্যালেন্স ভলিউম (OBV): OBV ব্যবহার করে ভলিউম এবং দামের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। অ্যাকিউমুলেশন/ডিস্ট্রিবিউশন লাইন ও গুরুত্বপূর্ণ।
ঝুঁকি এবং সতর্কতা
ডিজনিতে বিনিয়োগ করার আগে কিছু ঝুঁকি এবং সতর্কতা বিবেচনা করা উচিত:
- প্রতিযোগিতামূলক বাজার: বিনোদন শিল্পে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন এবং অ্যাপলের মতো কোম্পানিগুলো ডিজনির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
- অর্থনৈতিক মন্দা: অর্থনৈতিক মন্দার সময়, মানুষ বিনোদনের উপর কম খরচ করতে পারে, যা ডিজনির আয় কমাতে পারে।
- প্রযুক্তিগত পরিবর্তন: প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে ডিজনি পিছিয়ে পড়তে পারে।
- রাজনৈতিক ঝুঁকি: আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজনির ব্যবসা রাজনৈতিক ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে।
উপসংহার
ডিজনি একটি শক্তিশালী এবং উদ্ভাবনী কোম্পানি, যা বিনোদন শিল্পের একটি প্রধান অংশ। এর শক্তিশালী ব্র্যান্ড, বিভিন্ন বিভাগ এবং বিশ্বব্যাপী বিস্তার ডিজনিকে বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় বিকল্প করে তুলেছে। তবে, বিনিয়োগ করার আগে ঝুঁকি এবং সতর্কতা বিবেচনা করা উচিত। ডিজনির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং নতুন প্রযুক্তি গ্রহণের ক্ষমতা এটিকে দীর্ঘমেয়াদে সফল হতে সাহায্য করবে। পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বিনিয়োগের পূর্বে জরুরি।
| ! মুক্তি বছর |! বক্স অফিস আয় (USD) | স্নো হোয়াইট অ্যান্ড দ্য সেভেন ডোয়ার্ফস | ১৯৩৭ | $184.3 মিলিয়ন | সিন্ডারেলা | ১৯৫০ | $93.5 মিলিয়ন | দ্য লায়ন কিং | ১৯৯৪ | $968.5 মিলিয়ন | ফ্রোজেন | ২০১৩ | $1.28 বিলিয়ন | অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম | ২০১৯ | $2.798 বিলিয়ন |
আরও জানার জন্য:
- ওয়াল্ট ডিজনি
- ডিজনি চ্যানেল
- [[ডিজনি+] ]
- মার্ভেল এন্টারটেইনমেন্ট
- স্টার ওয়ার্স
- পিক্সার
- থিম পার্ক
- বিনিয়োগ
- স্টক মার্কেট
- টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
- ভলিউম বিশ্লেষণ
- ব্র্যান্ডিং
- সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্য
- পপ সংস্কৃতি
- নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ
- মিউচুয়াল ফান্ড
- এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড (ETF)
- ভার্চুয়াল রিয়েলিটি
- অগমেন্টেড রিয়েলিটি
- পোর্টফোলিও ডাইভারসিফিকেশন
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- ভলিউম ওয়েটড এভারেজ প্রাইস (VWAP)
- অ্যাকিউমুলেশন/ডিস্ট্রিবিউশন লাইন
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
