পারস্য

From binaryoption
Jump to navigation Jump to search
Баннер1

পারস্য: ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতি

ভূমিকা

পারস্য, যা বর্তমানে ইরান নামে পরিচিত, মানব সভ্যতার অন্যতম প্রাচীন কেন্দ্র। এর সমৃদ্ধ ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান এটিকে যুগে যুগে গুরুত্বপূর্ণ করে রেখেছে। এই নিবন্ধে পারস্যের ইতিহাস, সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং আধুনিক ইরানের উপর এর প্রভাব বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে।

প্রাচীন পারস্যের ইতিহাস

পারস্যের ইতিহাস খ্রিস্টপূর্ব ৩২০০ অব্দ থেকে শুরু হয়। প্রাচীন মিশর এবং মেসোপটেমিয়ার মতো একই সময়ে এখানেও বিভিন্ন সভ্যতা বিকাশ লাভ করে। এলামাইট এবং মেড সাম্রাজ্যগুলি পারস্যের প্রাচীনতম সাম্রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম। খ্রিস্টপূর্ব ৫৫০ অব্দে সাইরাস দ্য গ্রেট আখেমেনিদ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন, যা পারস্যের প্রথম বৃহৎ সাম্রাজ্য হিসেবে পরিচিত। এই সাম্রাজ্য সিন্ধু উপত্যকা থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। দারিয়াস দ্য গ্রেট-এর শাসনামলে সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক কাঠামো সুসংহত হয় এবং পার্সিপোলিস-এর মতো দৃষ্টিনন্দন শহর নির্মিত হয়।

আখেমেনিদ সাম্রাজ্যের পর আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট ৩৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পারস্য আক্রমণ করেন এবং সাম্রাজ্যের পতন ঘটান। এরপর সেলিউসিড সাম্রাজ্য এবং পারথিয়ান সাম্রাজ্য পারস্য শাসন করে। ২২১ খ্রিস্টাব্দে সাসানীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়, যা পারস্যের শেষ প্রাচীন সাম্রাজ্য। এই সাম্রাজ্য রোমান সাম্রাজ্য এবং বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য-এর সাথে দীর্ঘকাল ধরে যুদ্ধ করে। ৬৫০ খ্রিস্টাব্দে আরব মুসলিমদের হাতে সাসানীয় সাম্রাজ্যের পতন হয় এবং পারস্যে ইসলাম ধর্মের বিস্তার ঘটে।

মধ্যযুগীয় পারস্য

ইসলামী শাসনের অধীনে পারস্য একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে পরিণত হয়। ফার্সি ভাষা সাহিত্য, বিজ্ঞান এবং শিল্পের প্রধান ভাষা হিসেবে বিকাশ লাভ করে। গজনভিদ সাম্রাজ্য, সেলজুক সাম্রাজ্য এবং খোয়ারেজমীয় সাম্রাজ্য-এর মতো বিভিন্ন তুর্কি সাম্রাজ্য পারস্য শাসন করে। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মোঙ্গলরা পারস্য আক্রমণ করে এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। চঙ্গাইজ খান এবং তার উত্তরসূরিরা পারস্যে দীর্ঘকাল ধরে শাসন করেন।

টিমুরিদ সাম্রাজ্যের অধীনে পারস্য আবার সমৃদ্ধি লাভ করে। টিমুর ১৪০৫ সালে মারা যান এবং সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে। ষোড়শ শতাব্দীতে সাফাভিদ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পারস্যে শিয়া ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে গৃহীত হয়। সাফাভিদরা পারস্যের শিল্পকলা, স্থাপত্য এবং সংস্কৃতিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান। ইস্পাহান শহরটি সাফাভিদদের রাজধানী হিসেবে খ্যাতি লাভ করে।

আধুনিক পারস্য

সাফাভিদ সাম্রাজ্যের পতনের পর পারস্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। আফশারীয় সাম্রাজ্য এবং জন্দ সাম্রাজ্য স্বল্পস্থায়ীভাবে পারস্য শাসন করে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে নাসির শাহ কাজার সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। এই সাম্রাজ্যের অধীনে পারস্য রাশিয়ান সাম্রাজ্য এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্য-এর প্রভাবের শিকার হয়।

১৯০৬ সালে পারস্যে প্রথম সংবিধান জারি হয় এবং পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-এর সময় পারস্য নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করে, কিন্তু জার্মান সাম্রাজ্য-এর সাথে মিত্রতা স্থাপনের অভিযোগে ব্রিটিশ ও রুশ বাহিনী পারস্য আক্রমণ করে। ১৯২৫ সালে রেজা শাহ পাহলাভি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং পারস্যকে আধুনিকীকরণের পথে চালিত করেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারস্য আবার মিত্রশক্তির দ্বারা আক্রান্ত হয়। ১৯৪১ সালে রেজা শাহকে ক্ষমতাচ্যুত করে তার পুত্র মোহাম্মদ রেজা শাহ সিংহাসনে বসেন। মোহাম্মদ রেজা শাহ পশ্চিমা বিশ্বের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং পারস্যকে একটি আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। তবে তার স্বৈরাচারী শাসন এবং পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রতি ঝুঁকে যাওয়ার কারণে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।

১৯৭৯ সালে ইরান বিপ্লব-এর মাধ্যমে মোহাম্মদ রেজা শাহের পতন হয় এবং আয়াতুল্লাহ খোমেনি-র নেতৃত্বে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিপ্লব পারস্যের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।

পারস্যের সংস্কৃতি

পারস্যের সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময়। এটি বিভিন্ন জাতি, ধর্ম এবং ভাষার সংমিশ্রণে গঠিত। ফার্সি সাহিত্য বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন এবং প্রভাবশালী সাহিত্য। রুমি, হাফেজ, সাদী এবং ফার্দাউসি-র মতো কবিরা পারস্যের সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করেছেন।

পারস্যের শিল্পকলা, স্থাপত্য এবং সঙ্গীতও অত্যন্ত উন্নত। পার্সিপোলিস, ইস্পাহান এবং শিরাজ-এর মতো শহরগুলিতে সুন্দর প্রাসাদ, মসজিদ এবং বাগান দেখা যায়। পারস্যের কার্পেট বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত।

পারস্যের খাদ্য সংস্কৃতিও বেশ জনপ্রিয়। কবাব, পোলো এবং খোরেশ-এর মতো খাবারগুলি পারস্যের ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে পরিচিত।

পারস্যের অর্থনীতি

পারস্যের অর্থনীতি মূলত তেল এবং গ্যাস-এর উপর নির্ভরশীল। ইরানের তেল এবং গ্যাসের মজুদ বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম। তবে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইরানের শিল্প খাতও ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করছে। পেট্রোলিয়াম, রাসায়নিক দ্রব্য, ধাতু এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পগুলি ইরানের প্রধান শিল্প খাত।

ইরানের কৃষি খাতও গুরুত্বপূর্ণ। গম, চাল, ফল এবং সবজি ইরানের প্রধান কৃষি পণ্য।

আধুনিক ইরান

ইরান একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা হলেন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ইরানের সংসদকে মজলিস বলা হয়। ইরানের অর্থনীতি এবং রাজনীতিতে ইসলামী আইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ইরান মধ্যপ্রাচ্যের একটি প্রভাবশালী দেশ। দেশটি সিরিয়া, লেবানন এবং ইরাক-এর মতো দেশগুলির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে। ইরান যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল-এর সাথে বৈরী সম্পর্ক বজায় রেখেছে।

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ রয়েছে। জাতিসংঘ ইরানের উপর বিভিন্ন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

উপসংহার

পারস্যের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এই অঞ্চলটি মানব সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আধুনিক ইরান একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র এবং মধ্যপ্রাচ্যের একটি প্রভাবশালী দেশ। ইরানের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি, রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর নির্ভর করে।

আরও তথ্যের জন্য:

কৌশল, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণের জন্য:

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ

Баннер