পরিমাণগত easing

পরিমাণগত সহজীকরণ

ভূমিকা

পরিমাণগত সহজীকরণ (Quantitative easing বা QE) হলো একটি unconventional monetary policy বা অপ্রচলিত মুদ্রানীতি। সাধারণত, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি সুদের হার কমিয়ে অর্থনীতিকে উৎসাহিত করে। কিন্তু যখন সুদের হার প্রায় শূন্যে নেমে আসে, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি অর্থনীতিকে উদ্দীপিত করার জন্য পরিমাণগত সহজীকরণের মতো unconventional policy গ্রহণ করে। এটি মূলত আর্থিক বাজারে তারল্য (liquidity) সরবরাহ করার একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বন্ড এবং অন্যান্য সম্পদ কেনে, যার ফলে বাজারে অর্থের সরবরাহ বাড়ে এবং ঋণের সুদহার কমে যায়।

পরিমাণগত সহজীকরণের প্রেক্ষাপট

ঐতিহ্যগত মুদ্রানীতি, যেখানে পলিসি সুদের হার (policy interest rates) পরিবর্তন করে অর্থনৈতিক কার্যকলাপকে প্রভাবিত করা হয়, প্রায়শই মন্দা বা অর্থনৈতিক সংকটের সময় যথেষ্ট কার্যকর হয় না। বিশেষ করে যখন সুদের হার শূন্যের কাছাকাছি থাকে, তখন এই নীতি অকার্যকর হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি পরিমাণগত সহজীকরণের মতো unconventional policy গ্রহণ করে।

২০০৮ সালের আর্থিক সংকট এবং তারপরের মন্দার সময়, অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ, ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংক এবং ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড, পরিমাণগত সহজীকরণ নীতি গ্রহণ করে। এর উদ্দেশ্য ছিল ক্রেডিট মার্কেটে তারল্য সরবরাহ করা, সুদের হার কম রাখা এবং অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা।

পরিমাণগত সহজীকরণ কিভাবে কাজ করে?

পরিমাণগত সহজীকরণের মূল প্রক্রিয়াটি হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ ক্রয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারি বন্ড এবং অন্যান্য সম্পদ কেনে। এই ক্রয়ের জন্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন অর্থ তৈরি করে, যা ব্যাংকগুলির রিজার্ভে জমা হয়। এর ফলে ব্যাংকগুলির কাছে ঋণের জন্য বেশি অর্থ থাকে, যা তারা ব্যক্তি এবং কর্পোরেটদের দিতে পারে।

প্রক্রিয়া	বিবরণ	কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ ক্রয়	কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারি বন্ড ও অন্যান্য সম্পদ কেনে।	রিজার্ভ বৃদ্ধি	ব্যাংকগুলির রিজার্ভে নতুন অর্থ জমা হয়।	সুদের হার হ্রাস	ঋণের সরবরাহ বাড়লে সুদের হার কমে যায়।	বিনিয়োগে উৎসাহ	কম সুদের হারে বিনিয়োগ বাড়ে।	অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি	বিনিয়োগ ও চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়।

পরিমাণগত সহজীকরণের প্রভাব

পরিমাণগত সহজীকরণের বিভিন্ন ধরনের প্রভাব রয়েছে। এর মধ্যে কিছু ইতিবাচক, আবার কিছু নেতিবাচক।

ইতিবাচক প্রভাব:

  * সুদের হার হ্রাস: QE সুদের হার কমিয়ে ঋণ গ্রহণকে উৎসাহিত করে, যা বিনিয়োগ এবং খরচ বাড়াতে সাহায্য করে। সুদের হার
  * ক্রেডিট মার্কেটে তারল্য বৃদ্ধি: এটি ব্যাংকগুলিকে আরও বেশি ঋণ দিতে উৎসাহিত করে। ঋণ
  * সম্পদ মূল্য বৃদ্ধি: বন্ড এবং স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ বাড়ার কারণে সম্পদ মূল্য বৃদ্ধি পায়। শেয়ার বাজার
  * অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: বিনিয়োগ এবং খরচের কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
  * কর্মসংস্থান সৃষ্টি: অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। কর্মসংস্থান

নেতিবাচক প্রভাব:

  * মুদ্রাস্ফীতি: অর্থের সরবরাহ বাড়ার কারণে মুদ্রাস্ফীতি হতে পারে। মুদ্রাস্ফীতি
  * সম্পদের বুদ্বুদ (Asset bubble): সম্পদ মূল্যের দ্রুত বৃদ্ধি সম্পদের বুদ্বুদ তৈরি করতে পারে, যা পরবর্তীতে ফেটে গেলে আর্থিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে। আর্থিক সংকট
  * আয় বৈষম্য: QE সাধারণত ধনী ব্যক্তিদের সম্পদ মূল্য বৃদ্ধি করে, যা আয় বৈষম্য বাড়াতে পারে। আয় বৈষম্য
  * বৈদেশিক মুদ্রার অবমূল্যায়ন: QE domestic currency-র মান কমিয়ে দিতে পারে, যা আমদানিকে ব্যয়বহুল করে তোলে। বৈদেশিক মুদ্রা

বিভিন্ন দেশের পরিমাণগত সহজীকরণ নীতি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: ফেডারেল রিজার্ভ ২০০৮-২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনটি QE প্রোগ্রাম চালায়। এর মাধ্যমে তারা ১.৮৫ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদ কিনেছিল। ফেডারেল রিজার্ভ
ইউরোপীয় ইউনিয়ন: ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংক (ECB) ২০১১-২০১৮ সাল পর্যন্ত QE প্রোগ্রাম চালায়। তারা ২.৬ ট্রিলিয়ন ইউরোর বেশি সম্পদ কিনেছিল। ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংক
জাপান: ব্যাংক অফ জাপান (BOJ) ২০১৩ সাল থেকে QE প্রোগ্রাম চালাচ্ছে। তারা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সরকারি বন্ড এবং অন্যান্য সম্পদ কিনেছে। জাপান ব্যাংক
যুক্তরাজ্য: ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড ২০০৯-২০২১ সাল পর্যন্ত QE প্রোগ্রাম চালায়। তারা ৮৯৫ বিলিয়ন পাউন্ডের বেশি সম্পদ কিনেছিল। ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর উপর পরিমাণগত সহজীকরণের প্রভাব

পরিমাণগত সহজীকরণ বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর উপর বেশ কিছু প্রভাব ফেলে। নিচে কয়েকটি প্রধান প্রভাব আলোচনা করা হলো:

১. মুদ্রার ওঠানামা: QE মুদ্রার মানে পরিবর্তন আনতে পারে। যখন একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক QE চালায়, তখন সেই দেশের মুদ্রার মান কমতে শুরু করে। এর ফলে বাইনারি অপশন ট্রেডারদের জন্য মুদ্রা জোড়ার (currency pairs) ট্রেডিং-এ সুযোগ সৃষ্টি হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ QE ঘোষণা করে, তবে ডলারের মান কমতে পারে, যা EUR/USD-এর মতো জোড়ার ক্ষেত্রে ট্রেডিং সুযোগ তৈরি করবে। মুদ্রা জোড়া

২. সুদের হারের প্রভাব: QE সুদের হার কমিয়ে দেয়। কম সুদের হার স্টক মার্কেটে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে, যা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে স্টক ইন্ডেক্স (stock indices) এবং কমোডিটি (commodities)-র উপর প্রভাব ফেলে।

৩. ঝুঁকি গ্রহণের প্রবণতা বৃদ্ধি: QE বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ঝুঁকি গ্রহণের প্রবণতা বাড়িয়ে তোলে। কারণ, কম সুদের হারে বিনিয়োগকারীরা বেশি রিটার্ন পেতে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হয়। এর ফলে বাইনারি অপশন মার্কেটে ট্রেডিং ভলিউম বাড়তে পারে। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

৪. মুদ্রাস্ফীতির প্রত্যাশা: QE মুদ্রাস্ফীতি বাড়াতে পারে। মুদ্রাস্ফীতির প্রত্যাশা বাড়লে, বাইনারি অপশন ট্রেডাররা স্বর্ণ (gold) এবং অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর (precious metals) উপর ট্রেড করতে পারে। স্বর্ণ

৫. অর্থনৈতিক সূচকগুলির প্রভাব: QE অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে। ইতিবাচক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা বাইনারি অপশন মার্কেটে বুলিশ (bullish) প্রবণতা তৈরি করতে পারে। অর্থনৈতিক সূচক

QE থেকে বের হওয়ার কৌশল (Tapering)

যখন অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হতে শুরু করে, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি QE থেকে বের হওয়ার জন্য tapering নামক একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। Tapering মানে হলো ধীরে ধীরে সম্পদ ক্রয় কমানো। এই প্রক্রিয়াটি বাজারের উপর একটি সংকেত পাঠায় যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি স্বাভাবিক করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। Tapering-এর সময়, সুদের হার বাড়তে শুরু করে এবং আর্থিক বাজারে অস্থিরতা দেখা যেতে পারে। Tapering

সমালোচনা এবং বিতর্ক

পরিমাণগত সহজীকরণ একটি বিতর্কিত বিষয়। কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করেন যে এটি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য অত্যন্ত কার্যকর একটি হাতিয়ার, আবার অনেকে মনে করেন যে এটি দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে।

মুদ্রাস্ফীতি: সমালোচকদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন যে QE মুদ্রাস্ফীতি বাড়িয়ে দিতে পারে।
সম্পদের বুদ্বুদ: QE সম্পদ মূল্যের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটাতে পারে, যা বুদ্বুদ তৈরি করতে পারে।
আয় বৈষম্য: QE ধনী ব্যক্তিদের সম্পদ বৃদ্ধি করে আয় বৈষম্য বাড়াতে পারে।
কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ: কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করেন যে QE অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করতে তেমন কার্যকর নয়।

উপসংহার

পরিমাণগত সহজীকরণ একটি জটিল এবং unconventional monetary policy। এটি অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় এবং অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হতে পারে। তবে, এর কিছু নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে, যা বিবেচনা করা উচিত। বাইনারি অপশন ট্রেডারদের জন্য, QE বাজারের গতিবিধি বোঝার এবং ট্রেডিং কৌশল তৈরি করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

আরও জানতে

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ