ফেডারেল রিজার্ভ
ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম
ভূমিকা
=
ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম (The Federal Reserve System), যা সাধারণভাবে ‘দ্য ফেড’ নামে পরিচিত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি ১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর প্রধান কাজ হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রানীতি নিয়ন্ত্রণ করা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। এই প্রতিষ্ঠানটি মার্কিন অর্থনীতি এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রেও ফেডারেল রিজার্ভের সিদ্ধান্তগুলো তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য বোঝা জরুরি।
ফেডারেল রিজার্ভের গঠন
ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম তিনটি প্রধান অংশে গঠিত:
১. বোর্ড অফ গভর্নরস: সাতজন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত এই বোর্ডটি ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমের নীতি নির্ধারণ করে। এদের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগ করা হয় এবং সিনেট কর্তৃক অনুমোদিত হতে হয়।
২. ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক: যুক্তরাষ্ট্রের বারোটি অঞ্চলে বারোটি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক রয়েছে। এই ব্যাংকগুলো তাদের নিজ নিজ অঞ্চলের ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিষেবা প্রদান করে। তারা দেশের মুদ্রা সরবরাহ এবং ঋণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে।
৩. ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটি (FOMC): এটি ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণী সংস্থা। এই কমিটিতে বোর্ড অফ গভর্নরস এবং পাঁচটি আঞ্চলিক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সভাপতিরা অন্তর্ভুক্ত থাকেন। FOMC বছরে আটবার মিলিত হয় এবং সুদের হার ও অন্যান্য মুদ্রানীতি নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
ফেডারেল রিজার্ভের কার্যাবলী
ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমের প্রধান কার্যাবলী নিম্নরূপ:
১. মুদ্রানীতি নির্ধারণ: ফেডারেল রিজার্ভ মুদ্রানীতি নির্ধারণের মাধ্যমে অর্থনীতির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার জন্য ফেড বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়।
২. ব্যাংকগুলোর তত্ত্বাবধান: এটি ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তত্ত্বাবধান করে, যাতে তারা নিরাপদে এবং সঠিকভাবে কাজ করে। এর মাধ্যমে আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা বজায় রাখা হয়।
৩. আর্থিক পরিষেবা প্রদান: ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকগুলো ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন আর্থিক পরিষেবা প্রদান করে, যেমন - চেক ক্লিয়ারিং, ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার এবং ঋণ প্রদান।
৪. নোট ইস্যু করা: ফেডারেল রিজার্ভ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নোট ইস্যু করার একমাত্র অধিকারী।
মুদ্রানীতি এবং তার সরঞ্জাম
ফেডারেল রিজার্ভ মুদ্রানীতি বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করে:
১. ওপেন মার্কেট অপারেশনস (Open Market Operations): এটি ফেডারেল রিজার্ভের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম। এর মাধ্যমে ফেড সরকারি সিকিউরিটিজ কেনা-বেচা করে বাজারে অর্থের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে। যখন ফেড সিকিউরিটিজ কেনে, তখন বাজারে অর্থের সরবরাহ বাড়ে এবং সুদের হার কমে যায়। অন্যদিকে, যখন ফেড সিকিউরিটিজ বিক্রি করে, তখন অর্থের সরবরাহ কমে যায় এবং সুদের হার বাড়ে। ওপেন মার্কেট অপারেশনস বিনিয়োগকারীদের জন্য সুদের হারের পূর্বাভাস দিতে সহায়ক।
২. ডিসকাউন্ট রেট (Discount Rate): এটি সেই সুদের হার, যে হারে ব্যাংকগুলো ফেডারেল রিজার্ভ থেকে ঋণ নেয়। ডিসকাউন্ট রেট কমালে ব্যাংকগুলো কম সুদে ঋণ নিতে উৎসাহিত হয়, যা বাজারে ঋণের সরবরাহ বাড়ায়।
৩. রিজার্ভের প্রয়োজনীয়তা (Reserve Requirements): ব্যাংকগুলোকে তাদের আমানতের একটি নির্দিষ্ট অংশ ফেডারেল রিজার্ভের কাছে জমা রাখতে হয়। এই হার পরিবর্তন করে ফেড ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
৪. ফেডারেল ফান্ডস রেট (Federal Funds Rate): এটি ব্যাংকগুলো একে অপরের কাছে রাতারাতি ঋণ দেওয়ার সুদের হার। ফেড এই হারকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখার চেষ্টা করে।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর উপর প্রভাব
ফেডারেল রিজার্ভের নীতিগুলো বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। নিচে কয়েকটি প্রভাব আলোচনা করা হলো:
১. সুদের হারের পরিবর্তন: ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হারের পরিবর্তনগুলো মুদ্রা বাজারের গতিবিধি এবং স্টক মার্কেটের ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করে। সুদের হার বাড়লে সাধারণত ডলারের মূল্য বাড়ে এবং স্টক মার্কেটে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এর ফলে বাইনারি অপশন ট্রেডারদের জন্য সুযোগ এবং ঝুঁকি উভয়ই তৈরি হয়।
২. মুদ্রাস্ফীতি: মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ফেডের গৃহীত পদক্ষেপগুলো মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব বাইনারি অপশনের দামকে প্রভাবিত করতে পারে। মুদ্রাস্ফীতি বাড়লে সাধারণত পণ্যের দাম বাড়ে, যা নির্দিষ্ট স্টক বা কমোডিটির উপর বাইনারি অপশনের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।
৩. অর্থনৈতিক ডেটা: ফেড নিয়মিতভাবে অর্থনৈতিক ডেটা প্রকাশ করে, যেমন - জিডিপি (GDP), কর্মসংস্থান পরিসংখ্যান এবং মুদ্রাস্ফীতি হার। এই ডেটাগুলো অর্থনৈতিক সূচক বিশ্লেষণ করে বাইনারি অপশন ট্রেডাররা ভবিষ্যতের বাজার সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে।
৪. ফেডের বক্তব্য: ফেডের কর্মকর্তাদের বক্তব্য এবং নীতি সম্পর্কে ইঙ্গিতগুলোও বাজারের উপর প্রভাব ফেলে। ট্রেডাররা ফেডের বক্তব্য ফেডের নীতিগত ঘোষণা বিশ্লেষণ করে ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।
ফেডারেল রিজার্ভের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, ফেডারেল রিজার্ভ বিভিন্ন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হওয়ার পরে, ফেড সুদের হার শূন্যের কাছাকাছি নামিয়ে আনে এবং ব্যাপক পরিমাণে কোয়ান্টिटेटिव ইজিং (QE) কর্মসূচি চালু করে। এর উদ্দেশ্য ছিল অর্থনীতিকে সহায়তা করা এবং বাজারের তারল্য বজায় রাখা।
২০২২ সালে, মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফেড সুদের হার দ্রুত বাড়াতে শুরু করে। এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য ছিল মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা, কিন্তু এর ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাওয়ার ঝুঁকিও তৈরি হয়। ২০২৩ সালেও ফেড সুদের হার বাড়িয়ে চলেছে, তবে এখন তারা মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে।
ঝুঁকি এবং চ্যালেঞ্জ
ফেডারেল রিজার্ভকে বিভিন্ন ঝুঁকি এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়:
১. মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ: মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা ফেডের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। মুদ্রাস্ফীতি বাড়লে তা জনগণের জীবনযাত্রার মান কমিয়ে দেয় এবং অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
২. কর্মসংস্থান এবং প্রবৃদ্ধি: ফেডকে একই সাথে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার চেষ্টা করতে হয়। এই দুটি লক্ষ্য প্রায়শই পরস্পরবিরোধী হতে পারে।
৩. আর্থিক স্থিতিশীলতা: আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ফেডের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। আর্থিক সংকট দেখা দিলে তা পুরো অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৪. রাজনৈতিক চাপ: ফেডকে প্রায়শই রাজনৈতিক চাপের সম্মুখীন হতে হয়। রাজনৈতিক নেতারা ফেডের নীতিগুলোর উপর প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করতে পারেন, যা ফেডের স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন করতে পারে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
ভবিষ্যতে ফেডারেল রিজার্ভকে আরও অনেক নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হতে পারে। প্রযুক্তিগত পরিবর্তন, বিশ্বায়নের প্রভাব এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো অর্থনীতির উপর নতুন ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। ফেডকে এই পরিবর্তনগুলোর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে এবং নতুন নীতি নির্ধারণ করতে হবে।
উপসংহার
==
ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম মার্কিন অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর নীতিগুলো শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্ব অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করে। বাইনারি অপশন ট্রেডারদের জন্য ফেডের নীতি এবং পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানা জরুরি, যাতে তারা সঠিক ট্রেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ফেডের কার্যকলাপ বৈশ্বিক অর্থনীতির উপর প্রভাব এবং বিনিয়োগ কৌশল নির্ধারণ-এ সহায়ক হতে পারে।
| সূচক | বিবরণ | প্রভাব |
| ফেডারেল ফান্ডস রেট | ব্যাংকগুলোর মধ্যে স্বল্পমেয়াদী ঋণের সুদের হার | বাইনারি অপশনের দামের উপর তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলে |
| ডিসকাউন্ট রেট | ফেডারেল রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদের হার | ঋণের সরবরাহ এবং অর্থনৈতিক কার্যকলাপকে প্রভাবিত করে |
| রিজার্ভের প্রয়োজনীয়তা | ব্যাংকগুলোর কাছে জমা রাখা অর্থের পরিমাণ | ঋণের পরিমাণ এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে |
| জিডিপি (GDP) | দেশের মোট উৎপাদন | অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার নির্দেশ করে |
| মুদ্রাস্ফীতি হার | পণ্যের দামের বৃদ্ধির হার | বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের উপর প্রভাব ফেলে |
আরও জানতে:
- অর্থনীতি
- মুদ্রা
- ব্যাংকিং
- বিনিয়োগ
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
- ভলিউম বিশ্লেষণ
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
- চার্ট প্যাটার্ন
- সমর্থন এবং প্রতিরোধের স্তর
- ট্রেন্ড লাইন
- মুভিং এভারেজ
- আরএসআই (RSI)
- এমএসিডি (MACD)
- বলিঙ্গার ব্যান্ড
- ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট
- ঝুঁকি-পুরস্কার অনুপাত
- ট্রেডিং সাইকোলজি
- অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডার
- ফেডারেল রিজার্ভের ওয়েবсайт
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
