দক্ষ জনশক্তির অভাব
দক্ষ জনশক্তির অভাব
ভূমিকা
বর্তমান বিশ্বে অর্থনীতি এবং উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অন্তরায় হলো দক্ষ জনশক্তির অভাব। এই সমস্যাটি উন্নত দেশ থেকে শুরু করে উন্নয়নশীল দেশ পর্যন্ত বিস্তৃত। দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম জনশক্তি তৈরি করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দক্ষ জনশক্তির অভাবের কারণে শিল্প খাত, সেবা খাত এবং কৃষি খাত—সবখানেই উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করছে। এই নিবন্ধে দক্ষ জনশক্তির অভাবের কারণ, প্রভাব এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
দক্ষ জনশক্তির অভাবের কারণসমূহ
দক্ষ জনশক্তির অভাব একটি জটিল সমস্যা, যার পেছনে বহুবিধ কারণ বিদ্যমান। নিচে কয়েকটি প্রধান কারণ আলোচনা করা হলো:
- শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা: অনেক দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা আধুনিক চাহিদা অনুযায়ী তৈরি হয়নি। মুখস্থবিদ্যার উপর বেশি জোর এবং ব্যবহারিক জ্ঞানের অভাবের কারণে শিক্ষার্থীরা কর্মজীবনের জন্য প্রস্তুত হতে পারে না। কারিগরি শিক্ষা এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের সুযোগ অপ্রতুল।
- প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন: প্রযুক্তি খুব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি আসার ফলে পুরনো দক্ষতাগুলো অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন, যা অনেক ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত।
- বিনিয়োগের অভাব: শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ খাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাব রয়েছে। ফলে, আধুনিক সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয় না।
- চাহিদা ও যোগানের মধ্যে অসামঞ্জস্য: শ্রমবাজারে যে ধরনের দক্ষতার চাহিদা রয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তা সরবরাহ করতে পারছে না। এর ফলে চাহিদা ও যোগানের মধ্যে একটি বড় ধরনের অসামঞ্জস্য তৈরি হয়।
- অভিবাসন: দক্ষ কর্মীরা উন্নত জীবনের আশায় অন্য দেশে অভিবাসন করছে, যার ফলে নিজ দেশে দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।
- প্রণোদনার অভাব: অনেক ক্ষেত্রে দক্ষ হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত প্রণোদনা নেই। ফলে, মানুষ দক্ষতা অর্জনে উৎসাহিত হয় না।
- কুশিক্ষা ও Drop out: কুশিক্ষা এবং বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার কারণেও দক্ষ জনশক্তির অভাব দেখা যায়।
দক্ষ জনশক্তির অভাবের প্রভাব
দক্ষ জনশক্তির অভাবের কারণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব নিচে উল্লেখ করা হলো:
- অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস: দক্ষ জনশক্তির অভাবে উৎপাদনশীলতা কমে যায়, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে।
- বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব: দক্ষ জনশক্তির অভাবের কারণে বৈদেশিক বিনিয়োগ কমে যেতে পারে। বিনিয়োগকারীরা এমন দেশে বিনিয়োগ করতে দ্বিধা বোধ করে যেখানে দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যায় না।
- উদ্ভাবনের অভাব: দক্ষ জনশক্তির অভাবে নতুন উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়ে।
- বেকারত্ব বৃদ্ধি: যদিও দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে, তবুও অনেক শিক্ষিত বেকার রয়েছে। কারণ তাদের দক্ষতা শ্রমবাজারের চাহিদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
- দারিদ্র্য বৃদ্ধি: উৎপাদনশীলতা কম होनेর কারণে দারিদ্র্য বাড়তে পারে।
- সামাজিক অস্থিরতা: বেকারত্ব এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
- গুণগত মান হ্রাস: পণ্য এবং সেবার গুণগত মান কমে যেতে পারে, যা গ্রাহকদের অসন্তুষ্ট করে।
দক্ষ জনশক্তির অভাব পূরণের উপায়
দক্ষ জনশক্তির অভাব পূরণ করার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় আলোচনা করা হলো:
- শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ: শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক প্রযুক্তির সাথে সঙ্গতি রেখে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। কারিগরি শিক্ষা এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের উপর জোর দিতে হবে। শিক্ষাক্রমকে সময়োপযোগী করা এবং ব্যবহারিক জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত করা অত্যাবশ্যক।
- বিনিয়োগ বৃদ্ধি: শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ খাতে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আধুনিক সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ করতে হবে।
- দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ: কর্মসংস্থান এবং উদ্যোক্তা উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করতে হবে। এই প্রশিক্ষণগুলো শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করতে হবে।
- শিল্প-শিক্ষা সহযোগিতা: শিল্প খাত এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে হবে। শিল্পখাতের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। ইন্টার্নশিপ এবং অ্যাপrenticeship প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ করে দিতে হবে।
- অভিবাসন নীতি: দক্ষ কর্মীদের অভিবাসন নিরুৎসাহিত করতে হবে এবং তাদের দেশে থাকার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
- প্রণোদনা প্রদান: দক্ষতা অর্জনের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা যেমন - বৃত্তি, পুরস্কার এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
- প্রযুক্তিগত শিক্ষা: কম্পিউটার শিক্ষা এবং তথ্য প্রযুক্তির উপর জোর দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রামিং, ডেটা বিশ্লেষণ এবং অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে উৎসাহিত করতে হবে।
- ভাষা শিক্ষা: ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধি করা আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতার জন্য জরুরি।
- নারী শিক্ষার প্রসার: নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে এবং নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে।
- শিক্ষক প্রশিক্ষণ: শিক্ষকদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করতে হবে, যাতে তারা আধুনিক শিক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারেন।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে দক্ষ জনশক্তির সম্পর্ক
বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি জটিল আর্থিক প্রক্রিয়া। এখানে সফল হতে হলে আর্থিক বাজার, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং ভলিউম বিশ্লেষণ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। দক্ষ জনশক্তির অভাবে এই খাতে দক্ষ ট্রেডার তৈরি করা কঠিন।
- টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ: চার্ট প্যাটার্ন, indicators এবং oscillators ব্যবহার করে বাজার বিশ্লেষণ করার দক্ষতা থাকতে হয়।
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা: ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং তা কমানোর কৌশল জানতে হয়।
- ভলিউম বিশ্লেষণ: ভলিউম এবং মূল্যের মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে পারা এবং সেই অনুযায়ী ট্রেড করা প্রয়োজন।
- ফিনান্সিয়াল মডেলিং: আর্থিক মডেল তৈরি এবং বিশ্লেষণের ক্ষমতা থাকতে হয়।
- প্রোগ্রামিং জ্ঞান: স্বয়ংক্রিয় ট্রেডিং সিস্টেম তৈরি করার জন্য প্রোগ্রামিং জ্ঞান (যেমন Python) কাজে লাগে।
উপসংহার
দক্ষ জনশক্তির অভাব একটি জাতীয় সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে সরকার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্প খাত এবং ব্যক্তি—সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং শিল্প-শিক্ষা সহযোগিতা—এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা সম্ভব। দক্ষ জনশক্তি একটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের চাবিকাঠি।
আরও জানতে:
- মানব সম্পদ উন্নয়ন
- কর্মসংস্থান নীতি
- শিক্ষা নীতি
- শিল্প নীতি
- বৈদেশিক বিনিয়োগ
- টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- ভলিউম বিশ্লেষণ
- ফিনান্সিয়াল লিটারেসি
- অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
- দারিদ্র্য বিমোচন
- জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs)
- ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (WEF)
- আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO)
- বাংলাদেশ কর্মসংস্থান ব্যাংক (BEF)
- যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর
- জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (NSDA)
- কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (TTC)
- পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট
- বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (UGC)
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
