জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR)

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড

ভূমিকা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। এটি মূলত দেশের অর্থনীতি ও রাজস্ব সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত। এনবিআর অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ-এর অধীনে কাজ করে। এই প্রতিষ্ঠানটি কর ব্যবস্থার সুষ্ঠু পরিচালনা, কর ফাঁকি রোধ এবং সরকারের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এনবিআর-এর প্রতিষ্ঠা ও ক্রমবিকাশ

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজস্ব কাঠামো পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। এই প্রেক্ষাপটে ১৯৭৬ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এনবিআর বিভিন্ন সময়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শুরুতে এনবিআর মূলত সরাসরি কর ও পরোক্ষ কর ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেয়। সময়ের সাথে সাথে এনবিআর-এর কার্যপরিধি বিস্তৃত হয়েছে এবং এটি এখন ভ্যাট, আবগারি শুল্ক, আমদানি শুল্ক ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের কর ও শুল্ক আদায়ে জড়িত।

এনবিআর-এর কার্যাবলী

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রধান কার্যাবলী নিম্নরূপ:

কর নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন: এনবিআর দেশের কর সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণ করে এবং তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়।
রাজস্ব সংগ্রহ: বিভিন্ন ধরনের কর ও শুল্ক আদায়ের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ করা এনবিআর-এর অন্যতম প্রধান কাজ।
কর আইন বাস্তবায়ন: কর সংক্রান্ত আইন ও বিধিবিধান সঠিকভাবে পালিত হচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করা।
কর ফাঁকি রোধ: কর ফাঁকি রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং এ সংক্রান্ত মামলা পরিচালনা করা।
কাস্টমস ও ভ্যাট ব্যবস্থাপনা: আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত শুল্ক এবং ভ্যাট ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব এনবিআর-এর ওপর ন্যস্ত।
রাজস্ব উন্নয়ন প্রকল্প: রাজস্ব খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: কর সংক্রান্ত বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে সহযোগিতা করা।
দuties এবং taxes এর হার নির্ধারণ করা।
করদাতাদের জন্য সহায়তা প্রদান এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

এনবিআর-এর কাঠামো

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড একটি সুসংগঠিত কাঠামোয় গঠিত। এর নেতৃত্বে থাকেন একজন চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যানের অধীনে বিভিন্ন সদস্য, কমিশনার এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা কাজ করেন। এনবিআর-এর প্রধান বিভাগগুলো হলো:

সরাসরি কর অঞ্চল
ভ্যাট অঞ্চল
কাস্টমস অঞ্চল
আইন ও বিচার বিভাগ
প্রশাসন ও মানব সম্পদ বিভাগ
অর্থ ও হিসাব বিভাগ
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ

বিভাগ	দায়িত্ব	আয়কর, কর্পোরেট কর ইত্যাদি আদায় ও ব্যবস্থাপনা।	মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায় ও ব্যবস্থাপনা।	আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক আদায় ও ব্যবস্থাপনা।	কর সংক্রান্ত আইন ও বিধিবিধান প্রয়োগ এবং মামলা পরিচালনা।	প্রশাসনিক কার্যক্রম এবং মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা।	বাজেট প্রণয়ন, হিসাবরক্ষণ এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনা।	এনবিআর-এর জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সেবা প্রদান।

সরাসরি কর ব্যবস্থা

সরাসরি কর হলো সেই কর যা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আয়ের ওপর ধার্য করা হয়। বাংলাদেশে প্রচলিত প্রধান সরাসরি করগুলো হলো:

আয়কর: ব্যক্তির আয়ের ওপর ভিত্তি করে এই কর ধার্য করা হয়। আয়কর আইন, ১৯২২ অনুযায়ী এটি পরিচালিত হয়।
কর্পোরেট কর: কোম্পানির লাভের ওপর এই কর ধার্য করা হয়।
মূলধন লাভ কর: কোনো সম্পদ বিক্রির ফলে লাভের ওপর এই কর প্রযোজ্য।
উত্তোলিত কর: কিছু নির্দিষ্ট আয়ের ওপর উৎসস্থলে কর কেটে রাখা হয়, যেমন - বেতন, সুদ, ইত্যাদি।

সরাসরি কর ব্যবস্থা সম্পর্কে আরো জানতে: আয়কর , কর্পোরেট ট্যাক্স , মূলধন লাভ

পরোক্ষ কর ব্যবস্থা

পরোক্ষ কর হলো সেই কর যা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আয়ের ওপর নয়, বরং পণ্য ও সেবার ওপর ধার্য করা হয়। বাংলাদেশে প্রচলিত প্রধান পরোক্ষ করগুলো হলো:

মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট): পণ্য ও সেবার প্রতিটি পর্যায়ে মূল্যের ওপর এই কর ধার্য করা হয়।
আবগারি শুল্ক: কিছু নির্দিষ্ট পণ্য, যেমন - বিয়ার, সিগারেট ইত্যাদির ওপর এই শুল্ক আরোপ করা হয়।
আমদানি শুল্ক: বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির ওপর এই শুল্ক ধার্য করা হয়।
রপ্তানি শুল্ক: বিদেশে পণ্য রপ্তানির ওপর এই শুল্ক ধার্য করা হয়।

পরোক্ষ কর ব্যবস্থা সম্পর্কে আরো জানতে: ভ্যাট আইন, ১৯৯১ , আবগারি শুল্ক , আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক

এনবিআর-এর আধুনিকীকরণ প্রচেষ্টা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর ব্যবস্থা আধুনিকীকরণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

ই-ফাইলিং: অনলাইনে করReturn জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ই-পেমেন্ট: অনলাইনে কর পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ভ্যাট অনলাইন: ভ্যাট সংক্রান্ত কার্যক্রম অনলাইনে করার জন্য একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
কাস্টমস অনলাইন: কাস্টমস সংক্রান্ত কার্যক্রম অনলাইনে করার জন্য একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
জাতীয় একক কোষাগার: সরকারের সকল প্রকার আয় একটি একক কোষাগারে জমা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ডাটাবেস তৈরি: করদাতাদের তথ্য সংরক্ষণের জন্য একটি আধুনিক ডাটাবেস তৈরি করা হয়েছে।
আধুনিক প্রশিক্ষণ: রাজস্ব কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

চ্যালেঞ্জসমূহ

এনবিআর বর্তমানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো:

কর ফাঁকি: কর ফাঁকি একটি বড় সমস্যা, যা রাজস্ব আদায়ে বাধা সৃষ্টি করে।
কম কর পরিপালন: অনেক করদাতা নিয়মিতভাবে কর পরিশোধ করেন না।
জটিল কর ব্যবস্থা: বাংলাদেশের কর ব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে জটিল, যা করদাতাদের জন্য বোঝা সৃষ্টি করে।
প্রশাসনের দুর্বলতা: কিছু ক্ষেত্রে এনবিআর-এর প্রশাসনিক দুর্বলতা রয়েছে, যা রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
সচেতনতার অভাব: কর বিষয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে।

সম্ভাবনা

চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও, এনবিআর-এর সামনে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

অর্থনৈতিক উন্নয়ন: বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত развиিত হচ্ছে, যা রাজস্ব আদায়ের সুযোগ বৃদ্ধি করবে।
ডিজিটালাইজেশন: ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে আরও efficient করে তুলবে।
নতুন কর ভিত্তি: নতুন নতুন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে করের ভিত্তি সম্প্রসারিত করার সুযোগ রয়েছে।
আঞ্চলিক সহযোগিতা: আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে কর ফাঁকি রোধ করা সম্ভব।
সচেতনতা বৃদ্ধি: কর বিষয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা গেলে কর পরিপালন বাড়ানো সম্ভব।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং এনবিআর

বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি জটিল আর্থিক বিনিয়োগ। এই ট্রেডিং থেকে অর্জিত মুনাফার উপর কর প্রযোজ্য হতে পারে। এনবিআর এই ধরনের বিনিয়োগ থেকে অর্জিত আয়ের উপর কর আরোপ করার জন্য নিয়মাবলী তৈরি করতে পারে। তবে, এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নিয়মাবলী এখনও চূড়ান্ত নয়। বিনিয়োগকারীদের উচিত এই বিষয়ে এনবিআর-এর সর্বশেষ নির্দেশনা অনুসরণ করা।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

উপসংহার

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সরকারের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, কর ব্যবস্থার সুষ্ঠু পরিচালনা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে এনবিআর-এর অবদান অনস্বীকার্য। আধুনিকীকরণের মাধ্যমে এনবিআর তার কার্যকারিতা আরও বৃদ্ধি করতে পারে এবং দেশের অর্থনীতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

আরও জানতে:

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ