জাতিসংঘের সনদ
জাতিসংঘের সনদ
ভূমিকা জাতিসংঘের সনদ (United Nations Charter) হলো জাতিসংঘের ভিত্তি দলিল। এটি ১৯৪৫ সালের ২৬ জুন সান ফ্রান্সিসকোতে গৃহীত হয়েছিল এবং ২৪ অক্টোবর ১৯৪৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়। এই সনদ জাতিসংঘের উদ্দেশ্য, নীতি, কাঠামো এবং কার্যাবলী সংজ্ঞায়িত করে। এটি আন্তর্জাতিক আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস এবং বিশ্ব শান্তিরক্ষার ক্ষেত্রে একটি মৌলিক দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞের পর বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতিসংঘের জন্ম হয়। এর পূর্বসূরি ছিল লিগ অফ নেশনস (League of Nations), যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর গঠিত হলেও দুর্বলতা এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে মতভেদের কারণে ব্যর্থ হয়েছিল। লিগের দুর্বলতা থেকে শিক্ষা নিয়ে জাতিসংঘকে আরও শক্তিশালী এবং কার্যকরী করার জন্য একটি নতুন আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। আটলান্টিক চার্টার (Atlantic Charter), ডাম্বার্টন ওকস কনফারেন্স (Dumbarton Oaks Conference) এবং ইয়াল্টা কনফারেন্স (Yalta Conference)-এর মাধ্যমে জাতিসংঘের রূপরেখা তৈরি করা হয়। সান ফ্রান্সিসকো সম্মেলনে ৫০টি দেশের প্রতিনিধিরা একত্রিত হয়ে এই সনদের চূড়ান্ত রূপ দেন।
সনদের মূল উদ্দেশ্য ও নীতি জাতিসংঘের সনদের মূল উদ্দেশ্য হলো আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা, জাতিসমূহের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়ন করা, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা এবং জাতিসমূহের মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার প্রতি সম্মান জানানো।
সনদের আর্টিকেল ১-এ জাতিসংঘের উদ্দেশ্যগুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে:
- আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা।
- জাতিসমূহের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়ন করা।
- অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
- জাতিসমূহের মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার প্রতি সম্মান জানানো।
- এসব উদ্দেশ্য পূরণে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রচেষ্টায় কেন্দ্র হিসেবে কাজ করা।
সনদের আর্টিকেল ২-এ জাতিসংঘের নীতিগুলো বর্ণিত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- সার্বভৌম সমতা নীতি: সকল সদস্য রাষ্ট্রের সার্বভৌম সমতা বজায় রাখা।
- শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি নীতি: আন্তর্জাতিক বিরোধ শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান করা।
- বলপ্রয়োগ পরিহার নীতি: অন্য কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা এবং আন্তর্জাতিক বিরোধে বলপ্রয়োগ পরিহার করা।
- সহায়তার বাধ্যবাধকতা নীতি: জাতিসংঘের কর্মসূচি বাস্তবায়নে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা করা।
সনদের কাঠামো জাতিসংঘের সনদ ১৯টি অধ্যায় এবং ১১১টি আর্টিকেলে বিভক্ত। এর কাঠামোকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায়:
- প্রথম অধ্যায়: জাতিসংঘের উদ্দেশ্য ও নীতি (Articles 1-2)
- দ্বিতীয় অধ্যায়: সদস্যপদ (Articles 3-4)
- তৃতীয় অধ্যায়: জাতিসংঘের অঙ্গসমূহ (Articles 5-7) - সাধারণ পরিষদ, নিরাপত্তা পরিষদ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ, অছি পরিষদ, আন্তর্জাতিক আদালত এবং সচিবালয়।
- চতুর্থ অধ্যায়: সাধারণ পরিষদ (Articles 8-17)
- পঞ্চম অধ্যায়: নিরাপত্তা পরিষদ (Articles 23-32)
- ষষ্ঠ অধ্যায়: শান্তিপূর্ণভাবে বিরোধ নিষ্পত্তি (Articles 33-38)
- সপ্তম অধ্যায়: শান্তি ও নিরাপত্তার হুমকি (Articles 39-51)
- অষ্টম অধ্যায়: আঞ্চলিক সংস্থা (Articles 52-54)
- নবম অধ্যায়: আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক সহযোগিতা (Articles 55-60)
- দশম অধ্যায়: অছি পরিষদ (Articles 86-91)
- একাদশ অধ্যায়: আন্তর্জাতিক আদালত (Articles 92-96)
- দ্বাদশ অধ্যায়: সচিবালয় (Articles 97-101)
- ত্রয়োদশ অধ্যায়: নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতা (Articles 108-109)
- চতুর্দশ অধ্যায়: সনদের সংশোধন (Articles 108-109)
- পঞ্চদশ অধ্যায়: চূড়ান্ত বিধান (Articles 109-111)
জাতিসংঘের প্রধান অঙ্গসমূহ জাতিসংঘের ছয়টি প্রধান অঙ্গ রয়েছে:
১. সাধারণ পরিষদ (General Assembly): এটি জাতিসংঘের কেন্দ্রীয় অঙ্গ, যেখানে সকল সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা অন্তর্ভুক্ত থাকেন। সাধারণ পরিষদ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে এবং সুপারিশ প্রস্তাব গ্রহণ করে। ২. নিরাপত্তা পরিষদ (Security Council): আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রধান দায়িত্ব নিরাপত্তা পরিষদের উপর ন্যস্ত। এর ১৫ জন সদস্যের মধ্যে ৫ জন স্থায়ী সদস্য (চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র) এবং ১০ জন অস্থায়ী সদস্য রয়েছে। স্থায়ী সদস্যদের ভেটো ক্ষমতা রয়েছে। ৩. অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ (Economic and Social Council): এই পরিষদ অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে। ৪. অছি পরিষদ (Trusteeship Council): এটি অছিভুক্ত অঞ্চলগুলোর তত্ত্বাবধান করে, যদিও বর্তমানে এর কার্যক্রম সীমিত। ৫. আন্তর্জাতিক আদালত (International Court of Justice): এটি জাতিসংঘের প্রধান বিচারিক অঙ্গ, যা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আইনি বিরোধ নিষ্পত্তি করে। ৬. সচিবালয় (Secretariat): জাতিসংঘের প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনা করে সচিবালয়, যার প্রধান হলেন জাতিসংঘের মহাসচিব (United Nations Secretary-General)।
সনদের গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলসমূহ
- আর্টিকেল ১: জাতিসংঘের উদ্দেশ্য।
- আর্টিকেল ২: জাতিসংঘের নীতি।
- আর্টিকেল ৩৪: নিরাপত্তা পরিষদ শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য তদন্ত করতে পারে।
- আর্টিকেল ৩৭: নিরাপত্তা পরিষদ বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সুপারিশ করতে পারে।
- আর্টিকেল ৪০: নিরাপত্তা পরিষদ যুদ্ধরত পক্ষকে যুদ্ধবিরতি করার জন্য আহ্বান জানাতে পারে।
- আর্টিকেল ৪১: নিরাপত্তা পরিষদ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।
- আর্টিকেল ৪২: নিরাপত্তা পরিষদ প্রয়োজনে সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে।
- আর্টিকেল ৫১: কোনো সদস্য রাষ্ট্রের উপর সশস্ত্র আক্রমণ হলে তারা আত্মরক্ষার অধিকার রাখে।
সনদের সংশোধন জাতিসংঘের সনদ সংশোধন করার প্রক্রিয়া বেশ জটিল। আর্টিকেল ১০৮ অনুযায়ী, সনদের সংশোধন সাধারণ পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন এবং নিরাপত্তা পরিষদের সকল স্থায়ী সদস্যের সম্মতি প্রয়োজন।
সনদের দুর্বলতা ও সমালোচনা জাতিসংঘের সনদ একটি যুগান্তকারী দলিল হলেও এর কিছু দুর্বলতা রয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতা প্রায়শই কার্যকারিতা হ্রাস করে এবং শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর স্বার্থ দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, সনদে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকারের তুলনায় রাজনৈতিক অধিকারের উপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে।
বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে সম্পর্ক (রূপক অর্থে) যদিও জাতিসংঘের সনদ এবং বাইনারি অপশন ট্রেডিং সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি বিষয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এদের মধ্যে একটি রূপক সম্পর্ক স্থাপন করা যেতে পারে।
১. ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk Management): জাতিসংঘের সনদ আন্তর্জাতিক ঝুঁকি (যেমন যুদ্ধ, সংঘাত) মোকাবেলার একটি কাঠামো প্রদান করে। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়েও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অপরিহার্য। ২. পূর্বাভাস (Prediction): জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সম্ভাব্য সংঘাতের পূর্বাভাস দেওয়ার চেষ্টা করে, তেমনি বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়েও বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে পূর্বাভাস দিতে হয়। ৩. সিদ্ধান্ত গ্রহণ (Decision Making): সনদ সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে কী পদক্ষেপ নিতে হবে, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়। বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়েও দ্রুত এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। ৪. সুযোগ (Opportunity): সনদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও শান্তির সুযোগ তৈরি হয়, অন্যদিকে বাইনারি অপশন ট্রেডিংয়ে আর্থিক লাভের সুযোগ থাকে।
এই সম্পর্কটি সম্পূর্ণরূপে রূপক এবং এর মাধ্যমে দুটি ভিন্ন বিষয়ের মধ্যে একটি তুলনামূলক আলোচনা করা হলো।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা জাতিসংঘের সনদ সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে এবং এর কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাব করা হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি, ভেটো ক্ষমতার ব্যবহার সীমিত করা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে।
উপসংহার জাতিসংঘের সনদ আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপন করেছে। এটি একটি গতিশীল দলিল, যা সময়ের প্রয়োজনে পরিবর্তিত হতে পারে। এই সনদ মানবজাতির ভবিষ্যৎ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
আরও জানতে:
- জাতিসংঘের ইতিহাস
- আন্তর্জাতিক আইন
- আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
- জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ
- জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ
- জাতিসংঘের মহাসচিব
- আটলান্টিক চার্টার
- ডাম্বার্টন ওকস কনফারেন্স
- ইয়াল্টা কনফারেন্স
- লিগ অফ নেশনস
বাইনারি অপশন ট্রেডিং সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক:
- বাইনারি অপশন বেসিক
- টেকনিক্যাল এনালাইসিস
- ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস
- ভলিউম এনালাইসিস
- ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন
- মুভিং এভারেজ
- আরএসআই (RSI)
- এমএসিডি (MACD)
- ফিবোনাচি রিট্রেসমেন্ট
- ট্রেডিং সাইকোলজি
- ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
- মানি ম্যানেজমেন্ট
- বাইনারি অপশন স্ট্র্যাটেজি
- অল্টারনেটিভ অপশন
- ফোরেক্স ট্রেডিং
এখনই ট্রেডিং শুরু করুন
IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)
আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন
আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ
