জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ জাতিসংঘের ছয়টি প্রধান অঙ্গের মধ্যে অন্যতম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে ১৯৪৫ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই পরিষদ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে শান্তি রক্ষা এবং আন্তর্জাতিক বিরোধ নিষ্পত্তি করার প্রাথমিক দায়িত্ব পালন করে। নিরাপত্তা পরিষদের গঠন, ক্ষমতা, কার্যকারিতা এবং বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

গঠন

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মোট ১৫ জন সদস্য রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি স্থায়ী সদস্য এবং ১০টি অস্থায়ী সদস্য। স্থায়ী সদস্যরা হলো - চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই স্থায়ী সদস্যগণ ভেটো ক্ষমতা ভোগ করে, অর্থাৎ তাদের যে কোনো একটি সদস্য কোনো প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিলে তা বাতিল হয়ে যায়।

অস্থায়ী সদস্যগণকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক দুই বছরের জন্য নির্বাচিত করা হয়। প্রতি বছর সাধারণ পরিষদ কর্তৃক পাঁচজন অস্থায়ী সদস্য নির্বাচিত হন। অস্থায়ী সদস্যপদ আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে বণ্টন করা হয়, যাতে বিভিন্ন অঞ্চলের দেশগুলো এই পরিষদে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। বর্তমানে ভারত, আর্জেন্টিনা, জাপান, মালাউই, সুইজারল্যান্ড নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।

নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ (২০২৩-২০২৪)
ধরন	দেশ	মেয়াদ
স্থায়ী সদস্য	চীন	-
স্থায়ী সদস্য	ফ্রান্স	-
স্থায়ী সদস্য	রাশিয়া	-
স্থায়ী সদস্য	যুক্তরাজ্য	-
স্থায়ী সদস্য	মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র	-
অস্থায়ী সদস্য	ভারত	৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
অস্থায়ী সদস্য	আর্জেন্টিনা	৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
অস্থায়ী সদস্য	জাপান	৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
অস্থায়ী সদস্য	মালাউই	৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
অস্থায়ী সদস্য	সুইজারল্যান্ড	৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

ক্ষমতা ও কার্যাবলী

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান কাজ হলো আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা। এই লক্ষ্যে পরিষদ নিম্নলিখিত ক্ষমতা ও কার্যাবলী প্রয়োগ করে:

বিরোধ নিষ্পত্তি: নিরাপত্তা পরিষদ শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্তর্জাতিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে সহায়তা করে। এক্ষেত্রে মধ্যস্থতা, সালিসি বা আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হয়।
শান্তি রক্ষা মিশন: যখন কোনো অঞ্চলে সংঘাতের সৃষ্টি হয়, তখন নিরাপত্তা পরিষদ শান্তি রক্ষা মিশন প্রেরণ করতে পারে। এই মিশনে সামরিক ও বেসামরিক উভয় সদস্য অন্তর্ভুক্ত থাকেন। মিশনের উদ্দেশ্য হলো যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে সহায়তা করা। জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা কার্যক্রম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
নিষেধাজ্ঞা আরোপ: কোনো রাষ্ট্র বা গোষ্ঠীর আচরণ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হলে, নিরাপত্তা পরিষদ তাদের উপর অর্থনৈতিক বা সামরিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।
সামরিক হস্তক্ষেপের অনুমোদন: চরম ক্ষেত্রে, নিরাপত্তা পরিষদ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সামরিক হস্তক্ষেপের অনুমোদন দিতে পারে। তবে, এটি সাধারণত শেষ অবলম্বন হিসেবে বিবেচিত হয়।
নতুন সদস্যপদ গ্রহণ: নিরাপত্তা পরিষদ জাতিসংঘ-এর নতুন সদস্যপদ গ্রহণের সুপারিশ করে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত]-এর সাথে সহযোগিতা: নিরাপত্তা পরিষদ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত-কে সহায়তা করতে পারে।

কার্যপ্রণালী

নিরাপত্তা পরিষদের কার্যপ্রণালী বেশ জটিল। পরিষদের সভা সাধারণত মাসে একবার অনুষ্ঠিত হয়। জরুরি পরিস্থিতিতে যেকোনো সদস্য রাষ্ট্র পরিষদের জরুরি সভা আহ্বানের অনুরোধ করতে পারে।

প্রস্তাব উত্থাপন: যে কোনো সদস্য রাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদে কোনো প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারে।
আলোচনা ও ভোটদান: প্রস্তাব উত্থাপনের পর পরিষদ সদস্যরা তা নিয়ে আলোচনা করেন এবং ভোট দেন।
ভেটো ক্ষমতা: স্থায়ী সদস্যদের ভেটো ক্ষমতা রয়েছে। কোনো স্থায়ী সদস্য প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিলে তা বাতিল হয়ে যায়।
অধিকাংশ সমর্থন: কোনো প্রস্তাব অনুমোদিত হতে হলে নয়জন সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন। তবে, ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করা হলে এই সমর্থন যথেষ্ট নয়।

গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা ও রেজোলিউশন

নিরাপত্তা পরিষদ বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা ও রেজোলিউশন গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ প্রস্তাব ১৮১ (১৯৪৮): ফিলিস্তিনকে দুটি রাষ্ট্রে ভাগ করার পরিকল্পনা।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ প্রস্তাব ৮২ (১৯৫০): কোরীয় যুদ্ধ-এ উত্তর কোরিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ প্রস্তাব ৬৭৮ (১৯৯১): خليج যুদ্ধ-এ ইরাকের কুয়েত দখলের নিন্দা ও সামরিক পদক্ষেপের অনুমোদন।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ প্রস্তাব ১৫৪৪ (২০০৪): ইরাক-এ বহুজাতিক বাহিনীর অনুমোদন।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ প্রস্তাব ২৩৮২ (২০১৭): উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক পরীক্ষা ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের নিন্দা।

চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনা

নিরাপত্তা পরিষদ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও, এটি কিছু চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনার সম্মুখীন। এর মধ্যে অন্যতম হলো:

ভেটো ক্ষমতা: স্থায়ী সদস্যদের ভেটো ক্ষমতা প্রায়শই পরিষদের কার্যকারিতা সীমিত করে দেয়। কোনো স্থায়ী সদস্য তার রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব আটকে দিতে পারে।
প্রতিনিধিত্বের অভাব: নিরাপত্তা পরিষদের গঠনে বিশ্বের সকল অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যায়নি। অনেক দেশ মনে করে যে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব কম।
কার্যকারিতার অভাব: কিছু ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদ দ্রুত ও কার্যকরভাবে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে সিরিয়া, ইয়েমেন এবং ইউক্রেন-এর মতো সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে পরিষদের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
দ্বৈত মানদণ্ড: নিরাপত্তা পরিষদ বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে দ্বৈত মানদণ্ড প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে।

সংস্কারের প্রস্তাবনা

নিরাপত্তা পরিষদের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সময়ে সংস্কারের প্রস্তাবনা এসেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

স্থায়ী সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি: নিরাপত্তা পরিষদে নতুন স্থায়ী সদস্য অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ভারত, ব্রাজিল, জার্মানি, এবং জাপান-কে সম্ভাব্য নতুন স্থায়ী সদস্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ভেটো ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা: ভেটো ক্ষমতার ব্যবহার সীমিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যেমন, শুধুমাত্র বৃহৎ আকারের সংঘাতের ক্ষেত্রে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।
অস্থায়ী সদস্যপদের সম্প্রসারণ: অস্থায়ী সদস্যপদের সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে বিভিন্ন অঞ্চলের দেশগুলো আরও বেশি প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।
কার্যপ্রণালীর আধুনিকীকরণ: নিরাপত্তা পরিষদের কার্যপ্রণালীকে আরও আধুনিক ও কার্যকর করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বর্তমান প্রেক্ষাপট

বর্তমানে নিরাপত্তা পরিষদ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ইজরায়েল-হামাস সংঘাত, মায়ানমার-এর রাজনৈতিক সংকট এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যস্ত। এই পরিস্থিতিতে পরিষদের কার্যকারিতা এবং সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

নিরাপত্তা পরিষদকে আরও কার্যকর ও প্রতিনিধিত্বমূলক করে তোলার জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদের ভূমিকা অপরিহার্য, এবং এর সংস্কারের মাধ্যমে পরিষদকে আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে সম্পর্ক (তুলনামূলক আলোচনা)

যদিও সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই, তবে নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তগুলো বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং বাজারের উপর প্রভাব ফেলে, যা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি: নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনা বা সিদ্ধান্তের কারণে কোনো অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হলে, তা মুদ্রা বাজার, কমোডিটি বাজার এবং স্টক মার্কেট-কে প্রভাবিত করতে পারে। এই পরিবর্তনগুলো বাইনারি অপশন ট্রেডারদের জন্য সুযোগ বা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা: নিরাপত্তা পরিষদ কোনো দেশের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে, সেই দেশের অর্থনীতি এবং বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট বাজারের গতিবিধি পরিবর্তন হতে পারে, যা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।
যুদ্ধ ও সংঘাত: যুদ্ধ বা সংঘাতের কারণে তেল, সোনা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কমোডিটি-র দাম বাড়তে পারে। বাইনারি অপশন ট্রেডাররা এই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারে।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে, এই বিষয়গুলোর উপর নজর রাখা এবং টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস, ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস এবং ভলিউম অ্যানালাইসিস-এর মাধ্যমে বাজারের গতিবিধি বিশ্লেষণ করা জরুরি।

আরও বিস্তারিত জানার জন্য:

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ