মায়ানমার

মায়ানমার (বার্মিজ: မြန်မာ), আনুষ্ঠানিকভাবে মায়ানমার প্রজাতন্ত্র (বার্মিজ: မြန်မာနိုင်ငံတော်), দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ। এটি ভারত, বাংলাদেশ, চীন, লাওস এবং থাইল্যান্ডের সাথে সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে এবং বঙ্গোপসাগর ও অন্দামান সাগরের উপকূলরেখা রয়েছে। দেশটির আয়তন ৬৭৬,৫৭৯ বর্গকিলোমিটার (২৬১,২২০ বর্গ মাইল) এবং জনসংখ্যা প্রায় ৫ কোটি ৪০ লক্ষ। নায়পিদাও দেশটির সরকারি রাজধানী, তবে ইয়াঙ্গুন বৃহত্তম শহর এবং প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র।

ইতিহাস

মায়ানমারের ইতিহাস কয়েক সহস্রাব্দ পুরোনো। খ্রিস্টপূর্বাব্দে এখানে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বসতি ছিল। ৯ম শতাব্দীতে বর্মী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়, যা প্রায় ৬০০ বছর ধরে টিকে ছিল। এরপর বিভিন্ন সময়ে মন এবং শান রাজ্যের প্রভাব ছিল। ব্রিটিশরা তিনটি অ্যাঙ্গলো-বার্মিজ যুদ্ধ-এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে মায়ানমার দখল করে নেয় এবং ১৮৮৬ সালে এটিকে ব্রিটিশ ভারতের অংশ করে তোলে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান মায়ানমার দখল করে নেয়, কিন্তু মিত্রশক্তির যৌথ আক্রমণে জাপানিরা পরাজিত হয়। ১৯৪৮ সালে মায়ানমার স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতার পর দেশটি রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সামরিক শাসনের মধ্য দিয়ে গেছে। আং সান সু চি দীর্ঘকাল গৃহবন্দী ছিলেন এবং গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন। ২০১২ সাল থেকে রাজনৈতিক সংস্কার শুরু হওয়ার পর দেশটি ধীরে ধীরে গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হতে থাকে, কিন্তু ২০১৬ সালের একটি সামরিক অভ্যantar সেই অগ্রগতিকে ব্যাহত করে।

রাজনীতি

মায়ানমারের রাজনীতি জটিল এবং বহুস্তরীয়। দেশটির সংবিধানে সামরিক বাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পার্লামেন্টে সামরিক বাহিনীর জন্য ২৫% আসন সংরক্ষিত আছে। জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্যে দীর্ঘদিনের সংঘাত বিদ্যমান, যা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় হুমকি।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়ে আং সান সু চিসহ অনেক রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেপ্তার করে এবং জরুরি অবস্থা জারি করে। এর পর থেকে দেশটিতে ব্যাপক প্রতিবাদ ও সহিংসতা চলছে।

প্রশাসনিক অঞ্চল

মায়ানমারকে ২১টি প্রশাসনিক অঞ্চলে (Regions) এবং ৭টি জাতিগত রাজ্যে (States) ভাগ করা হয়েছে। নিচে একটি তালিকা দেওয়া হলো:

মায়ানমারের প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ
অঞ্চল/রাজ্য	রাজধানী
কায়া রাজ্য	লোইকও
কACHিন রাজ্য	মিচিণা
কারেন রাজ্য	হ্পা-আন
চিন রাজ্য	হ্যাখা
ম্যাগওয়ে অঞ্চল	ম্যাগওয়ে
মান্দালয় অঞ্চল	মান্দালয়
পেগু অঞ্চল	পেগু
রাখাইন রাজ্য	সিটওয়ে
শান রাজ্য	তাইচি
সাগাইং অঞ্চল	সাগাইং
তানিন্থারি অঞ্চল	দাওয়েই
ইয়াঙ্গুন অঞ্চল	ইয়াঙ্গুন
আয়ায়েরওয়াধি অঞ্চল	পাইয়োনবিন
বago অঞ্চল	বago
मोन রাজ্য	মওলামিয়াং
নাখিন রাজ্য	তাউংজি
কায়াহ রাজ্য	লোইকাও
শান রাজ্য (উত্তর)	লাশিয়ো
শান রাজ্য (দক্ষিণ)	পাই
সাগাইং অঞ্চল	সাগাইং
ম্যাগওয়ে অঞ্চল	ম্যাগওয়ে

অর্থনীতি

মায়ানমারের অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। দেশটির প্রধান কৃষিজাত পণ্যগুলো হলো চাল, ডাল, তেলবীজ, তুলা এবং কফি। এছাড়া, কাঠ, রংপুর, টিন, কয়লা এবং জ্বালানি তেলও দেশটির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মায়ানমারে পর্যটন শিল্প দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। বাগান, ইনলে হ্রদ এবং শ্বেডাগন প্যাগোডা-র মতো ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক স্থানগুলো পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়।

জনসংখ্যা ও সংস্কৃতি

মায়ানমারের জনসংখ্যা প্রায় ৫ কোটি ৪০ লক্ষ। এখানে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করে, যাদের মধ্যে বর্মী (প্রায় ৬८%), শান, কারেন, রাখাইন, চিন, মন এবং কায়ান উল্লেখযোগ্য।

মায়ানমারের সংস্কৃতি বৌদ্ধধর্ম দ্বারা প্রভাবিত। এখানকার অধিকাংশ মানুষ থেরবাদ বৌদ্ধ ধর্ম অনুসরণ করে। এছাড়া, ইসলাম, খ্রিস্টান এবং হিন্দু ধর্মও প্রচলিত আছে।

মায়ানমারের ঐতিহ্যবাহী পোশাক হলো লুংগি (পুরুষদের জন্য) এবং থানাকা (মহিলাদের জন্য)। দেশটির সংগীত, নৃত্য এবং শিল্পকলাও বেশ সমৃদ্ধ।

পর্যটন

মায়ানমার পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। এখানে প্রাচীন মন্দির, ঐতিহাসিক শহর এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিদ্যমান। প্রধান পর্যটন স্থানগুলো হলো:

বাগান: হাজার হাজার প্রাচীন প্যাগোডা ও মন্দিরের জন্য বিখ্যাত।
ইনলে হ্রদ: সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং ভাসমান গ্রামের জন্য পরিচিত।
ইয়াঙ্গুন: শ্লেডাগন প্যাগোডা সহ অনেক ঐতিহাসিক স্থাপত্য বিদ্যমান।
মান্ডালয়: মায়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
সিটওয়ে: রাখাইন রাজ্যের রাজধানী এবং বীচ ও সমুদ্র তীরের জন্য বিখ্যাত।

সামরিক অভ্যantar ও বর্তমান পরিস্থিতি

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মায়ানমারের সামরিক বাহিনী একটি অভ্যantar ঘটিয়ে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এই অভ্যantারের পর থেকে দেশটিতে ব্যাপক গণ-প্রতিরোধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সামরিক জান্তা আং সান সু চি ও অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেপ্তার করেছে এবং কঠোর দমন-পীড়া চালাচ্ছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মায়ানমারের উপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা মায়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক

মায়ানমারের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভিন্ন দেশের সাথে বিভিন্ন মাত্রায় বিস্তৃত। চীন দেশটির বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং বিনিয়োগকারী দেশ। এছাড়া, ভারত, থাইল্যান্ড, জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও মায়ানমারের গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। আসিয়ান (ASEAN)-এর সদস্য হিসেবে মায়ানমার আঞ্চলিক সহযোগিতা ও উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর সাথে সম্পর্ক

মায়ানমারের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর উপর প্রভাব ফেলতে পারে। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা মুদ্রা বিনিময় হার এবং অন্যান্য আর্থিক বাজারে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বিনিয়োগকারীরা এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে ট্রেডিং সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

বিশেষ করে, মায়ানমারের রাজনৈতিক ঘটনা এবং অর্থনৈতিক নীতি-এর পরিবর্তনগুলি বাইনারি অপশন-এর মাধ্যমে ট্রেড করার সুযোগ তৈরি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা যায়, তাহলে বিনিয়োগকারীরা USD/MMK (US Dollar/Myanmar Kyat) এর উপর কল বা পুট অপশন ট্রেড করতে পারেন।

এছাড়াও, ভলিউম বিশ্লেষণ এবং টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ব্যবহার করে মায়ানমারের বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, যা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ সহায়ক হতে পারে।

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ