জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ

ভূমিকা

জাতিসংঘ (United Nations) বিশ্বের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সংস্থা। ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটির মূল উদ্দেশ্য হলো আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা, বিভিন্ন জাতির মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করা। জাতিসংঘের সদস্যপদ একটি রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও বৈধতার গুরুত্বপূর্ণ সূচক। এই নিবন্ধে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ, সদস্য হওয়ার যোগ্যতা, প্রক্রিয়া এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অধিকার ও কর্তব্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

সদস্যপদের যোগ্যতা

জাতিসংঘের জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী, যে সকল রাষ্ট্র জাতিসংঘের উদ্দেশ্য ও নীতিসমূহের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সনদ মেনে চলতে সক্ষম, তারা সদস্যপদের জন্য আবেদন করতে পারে। সদস্য হওয়ার প্রধান যোগ্যতাগুলো হলো:

রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি: আবেদনকারী সত্তাটিকে অবশ্যই একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হতে হবে।
সরকারের সক্ষমতা: রাষ্ট্রের একটি কার্যকর সরকার থাকতে হবে যা আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা পালনে সক্ষম।
সনদ মেনে চলার অঙ্গীকার: জাতিসংঘের সনদের নীতি ও উদ্দেশ্য মেনে চলার লিখিত অঙ্গীকার থাকতে হবে।
সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সুপারিশ: জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক সুপারিশকৃত হতে হবে।

সদস্য হওয়ার প্রক্রিয়া

জাতিসংঘে নতুন রাষ্ট্রকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়াটি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়:

১. আবেদনপত্র জমা: আগ্রহী রাষ্ট্রকে জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে একটি আনুষ্ঠানিক আবেদনপত্র জমা দিতে হয়। ২. নিরাপত্তা পরিষদের বিবেচনা: নিরাপত্তা পরিষদ আবেদনটি বিবেচনা করে এবং সুপারিশের জন্য সাধারণ পরিষদে পাঠায়। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যভূক্ত রাষ্ট্রগুলোর (চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র) মধ্যে কোনো একটি ভেটো দিলে আবেদনটি বাতিল হতে পারে। ৩. সাধারণ পরিষদের অনুমোদন: সাধারণ পরিষদে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থন পেলে আবেদনটি অনুমোদিত হয়। ৪. সনদের অনুমোদন: এরপর আবেদনকারী রাষ্ট্র জাতিসংঘের সনদ অনুমোদন করে এবং জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।

সদস্য রাষ্ট্রসমূহের তালিকা

বর্তমানে (নভেম্বর ২০২৩) জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা ১৯৩। এদের মধ্যে প্রথম সদস্য রাষ্ট্র হলো আর্জেন্টিনা, যারা ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর জাতিসংঘের সনদে স্বাক্ষর করেছিল। এখানে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর একটি তালিকা দেওয়া হলো:

জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ
ক্রমিক নং	রাষ্ট্রের নাম	যোগদানের তারিখ
১	আর্জেন্টিনা	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
২	অস্ট্রেলিয়া	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
৩	বেলজিয়াম	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
৪	বলিভিয়া	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
৫	ব্রাজিল	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
৬	কানাডা	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
৭	চিলি	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
৮	চীন	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
৯	কলম্বিয়া	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
১০	কোস্টারিকা	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
১১	কিউবা	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
১২	চেকোস্লোভাকিয়া	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
১৩	ডেনমার্ক	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
১৪	ডোমিনিকান রিপাবলিক	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
১৫	ইকুয়েডর	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
১৬	মিশর	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
১৭	এল সালভাদর	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
১৮	ফ্রান্স	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
১৯	গ্রীস	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
২০	গুয়াতেমালা	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
২১	হাইতি	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
২২	হন্ডুরাস	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
২৩	ভারত	৩০ অক্টোবর ১৯৪৫
২৪	ইন্দোনেশিয়া	২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৫০
২৫	ইরাক	২১ ডিসেম্বর ১৯৪৫
২৬	আয়ারল্যান্ড	১৪ ডিসেম্বর ১৯৫৫
২৭	ইসরায়েল	১১ মে ১৯৪৮
২৮	ইতালি	১৪ ডিসেম্বর ১৯৫৫
২৯	জামাইকা	১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬২
৩০	জাপান	১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৫৬
৩১	জর্ডান	ডিসেম্বর ১৯৫৫
৩২	লেবানন	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
৩৩	মেক্সিকো	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
৩৪	নেদারল্যান্ডস	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
৩৫	নিউজিল্যান্ড	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
৩৬	নিকারাগুয়া	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
৩৭	নরওয়ে	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
৩৮	পানামা	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
৩৯	প্যারাগুয়ে	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
৪০	পেরু	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
৪১	ফিলিপাইন	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
৪২	পোল্যান্ড	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
৪৩	তুরস্ক	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
৪৪	যুক্তরাজ্য	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
৪৫	মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
৪৬	উরুগুয়ে	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
৪৭	ভেনেজুয়েলা	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫
৪৮	ভিয়েতনাম	২০ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭
৪৯	ইয়েমেন	৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৬৭
৫০	যুগোস্লাভিয়া	২৪ অক্টোবর ১৯৪৫ (বর্তমানে বিলুপ্ত)

(এই তালিকাটি সম্পূর্ণ নয়, জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত তালিকা পাওয়া যাবে: [1](https://www.un.org/en/member-states))

সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অধিকার ও কর্তব্য

জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কিছু সুনির্দিষ্ট অধিকার ও কর্তব্য রয়েছে।

অধিকার:

জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার।
সাধারণ পরিষদে ভোট দেওয়ার অধিকার।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তিগুলোর সুবিধা পাওয়ার অধিকার।
জাতিসংঘের সহায়তা ও সহযোগিতা পাওয়ার অধিকার।

কর্তব্য:

জাতিসংঘের সনদ মেনে চলা।
আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে সহযোগিতা করা।
জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত ও প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন করা।
জাতিসংঘের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা।
মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা সমুন্নত রাখা।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এবং ভেটো ক্ষমতা

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ (UN Security Council) আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রধান দায়িত্ব পালন করে। নিরাপত্তা পরিষদে ১৫ জন সদস্য রয়েছে, যাদের মধ্যে ৫ জন স্থায়ী সদস্য (চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র) এবং ১০ জন অস্থায়ী সদস্য। স্থায়ী সদস্যদের ভেটো ক্ষমতা রয়েছে, অর্থাৎ তারা কোনো প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিলে তা বাতিল হয়ে যায়। এই ভেটো ক্ষমতা প্রায়শই নিরাপত্তা পরিষদের কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে।

সদস্যপদ স্থগিত ও বাতিল

জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী, কোনো সদস্য রাষ্ট্র যদি গুরুতরভাবে সনদের নীতি লঙ্ঘন করে, তবে নিরাপত্তা পরিষদ তার সদস্যপদ স্থগিত বা বাতিল করতে পারে। তবে, এখন পর্যন্ত কোনো রাষ্ট্রের সদস্যপদ বাতিল করা হয়নি, শুধুমাত্র ইন্দোনেশিয়া (১৯৬৫-১৯৬৬) এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীন (১৯৪৯-১৯৭২)-এর সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছিল।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে সম্পর্ক

যদিও সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। কোনো দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা বা অর্থনৈতিক সংকট সেই দেশের মুদ্রা বা স্টক মার্কেটের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর মাধ্যমে অনুমান করা যেতে পারে।

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ (Technical Analysis): বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক সূচক এবং রাজনৈতিক ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করে বাইনারি অপশনের ট্রেডিং-এর সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
ভলিউম বিশ্লেষণ (Volume Analysis): কোনো নির্দিষ্ট সম্পদের (যেমন: মুদ্রা, স্টক) ট্রেডিং ভলিউম বিশ্লেষণ করে বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Risk Management): বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এ ঝুঁকি কমানোর জন্য যথাযথ অর্থনৈতিক সূচক (Economic Indicators) এবং রাজনৈতিক ঝুঁকি (Political Risk) সম্পর্কে ধারণা রাখা জরুরি।
ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ (Fundamental Analysis): কোনো দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, সুদের হার (Interest Rates), এবং মুদ্রাস্ফীতি (Inflation) বিশ্লেষণ করে ট্রেডিং-এর সুযোগ খুঁজে বের করা যায়।
মার্কেট সেন্টিমেন্ট (Market Sentiment): বাজারের সামগ্রিক ধারণা বা অনুভূতি (যেমন: বুলিশ বা বিয়ারিশ) বিবেচনা করে ট্রেডিং-এর সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

এই বিষয়গুলো বাইনারি অপশন ট্রেডিং-এর সাথে সম্পর্কিত, যেখানে আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহের প্রভাব রয়েছে।

উপসংহার

জাতিসংঘের সদস্যপদ একটি রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃতি, সহযোগিতা এবং উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করে। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে, মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে এবং বিশ্বব্যাপী সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জাতিসংঘের সনদ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ আন্তর্জাতিক আইন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রাজনৈতিক ভূগোল অর্থনৈতিক সহযোগিতা মানবাধিকার টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ভলিউম বিশ্লেষণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অর্থনৈতিক সূচক রাজনৈতিক ঝুঁকি ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণ মার্কেট সেন্টিমেন্ট সুদের হার মুদ্রাস্ফীতি বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্ব অর্থনীতি ভূ-রাজনীতি সফর কূটনীতি আন্তর্জাতিক সংস্থা জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ