চার্লস ম্যাককিনলে

চার্লস ম্যাককিনলে ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২৫তম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি। তিনি ১৮৯৭ থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। ম্যাককিনলে ১৮৪৩ সালে ওহাইওতে জন্মগ্রহণ করেন এবং একজন আইনজীবী ও প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধের সময় তাঁর নেতৃত্ব এবং উইলিয়াম ম্যাককিনলের অর্থনৈতিক নীতিগুলোর জন্য পরিচিত।

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা

চার্লস ম্যাককিনলে ১৮৪৩ সালের ২৯ জানুয়ারি ওহাইওর নাইলস শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবার স্কটিশ-আইরিশ বংশোদ্ভূত। ম্যাককিনলে স্থানীয় বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং অ্যালlegheny কলেজ থেকে ১৮৬৪ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। কলেজের পর তিনি আইন পড়াশোনা করেন এবং ১৮৬৭ সালে ওহাইও বার থেকে লাইসেন্স পান।

রাজনৈতিক জীবন

ম্যাককিনলের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৮৬৯ সালে, যখন তিনি কান্টনে একজন আইনজীবী হিসেবে যোগদান করেন। তিনি স্থানীয় রিপাবলিকান দলের সাথে যুক্ত হন এবং ১৮৭৬ সালে প্রতিনিধি পরিষদে নির্বাচিত হন। তিনি ১৮৮১ সাল পর্যন্ত প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য ছিলেন। প্রতিনিধি পরিষদে থাকাকালীন, তিনি সুরক্ষাTARIFF (Protective tariff) এবং স্বর্ণের মান (Gold standard) সমর্থন করেন।

ওহাইও গভর্নর

১৮৮৮ সালে ম্যাককিনলে ওহাইও-র গভর্নর নির্বাচিত হন। গভর্নর হিসেবে তিনি শিল্পায়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর জোর দেন। তিনি শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেন, কিন্তু একই সাথে শিল্পমালিকদের স্বার্থের প্রতিও যত্নশীল ছিলেন।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন

১৮৯৬ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ম্যাককিনলে ডেমোক্রেট উইলিয়াম জেনিংস ব্রায়ানের কাছে জয়লাভ করেন। এই নির্বাচনটি মূলত অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে আবর্তিত হয়েছিল। ম্যাককিনলে স্বর্ণের মান সমর্থন করেছিলেন, যেখানে ব্রায়ান রূপার মান (Silver standard) প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিলেন। ম্যাককিনলের বিজয় রিপাবলিকান দলের জন্য একটি বড় সাফল্য ছিল।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে ম্যাককিনলে

ম্যাককিনলে ১৮৯৭ সালের ৪ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তাঁর রাষ্ট্রপতিত্বের সময়কালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সম্মুখীন হয়।

স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধ (Spanish-American War): ১৮৯৮ সালে কিউবার স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে স্পেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। ম্যাককিনলে এই যুদ্ধের পক্ষে ছিলেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী ও সেনাবাহিনী স্প্যানিশদের পরাজিত করে। এই যুদ্ধের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিলিপাইন এবং পুয়ের্তো রিকো সহ বেশ কয়েকটি নতুন অঞ্চল লাভ করে।
অর্থনৈতিক নীতি: ম্যাককিনলে সুরক্ষাTARIFF (Protective tariff) নীতি অনুসরণ করেন, যার মাধ্যমে মার্কিন শিল্পগুলোকে বিদেশি প্রতিযোগিতার হাত থেকে রক্ষা করা হয়। তিনি স্বর্ণের মান বজায় রাখার পক্ষে ছিলেন এবং মার্কিন অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা করেন।
সাম্রাজ্যবাদ: ম্যাককিনলের সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ফিলিপাইন, পুয়ের্তো রিকো এবং গুয়ামের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়।
উইলিয়াম ম্যাককিনলের হত্যাকাণ্ড: ১৯০১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের বাফেলো শহরে লিওন Czolgosz নামক একজন অ্যানার্কিস্ট ম্যাককিনলেকে গুলি করে হত্যা করেন।

ম্যাককিনলের অর্থনৈতিক নীতি

ম্যাককিনলের অর্থনৈতিক নীতি ছিল মূলত ডিমোনবিজম (Demonetism) এবং গোল্ড স্ট্যান্ডার্ডের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। তিনি বিশ্বাস করতেন যে স্বর্ণের মান মার্কিন অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে সহায়ক হবে। তিনি ডিলিংটন-ক্যাম্পবেল অ্যাক্ট (Dingley Tariff Act) পাস করেন, যা আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করে মার্কিন শিল্পকে সুরক্ষা প্রদান করে। এই নীতির ফলে মার্কিন অর্থনীতিতে শিল্পায়ন (Industrialization) দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

ম্যাককিনলের অর্থনৈতিক নীতি
নীতি	বিবরণ
স্বর্ণের মান (Gold Standard)	মার্কিন মুদ্রাকে স্বর্ণের সাথে যুক্ত করা
সুরক্ষাTARIFF (Protective Tariff)	আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি
ডিলিংটন-ক্যাম্পবেল অ্যাক্ট (Dingley Tariff Act)	১৮৯৭ সালের শুল্ক আইন

স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধ

স্প্যানিশ-আমেরিকান যুদ্ধ ছিল ম্যাককিনলের রাষ্ট্রপতিত্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম। কিউবার স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মার্কিন জনমত স্পেনের বিরুদ্ধে ছিল। ম্যাককিনলে প্রথমে নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস মেইন (USS Maine) হাভানা বন্দরে বিস্ফোরিত হওয়ার পর যুদ্ধের চাপ বাড়তে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্পেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং খুব দ্রুত জয়লাভ করে। এই যুদ্ধের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বিশ্বশক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

ম্যাককিনলের পররাষ্ট্র নীতি

ম্যাককিনলের পররাষ্ট্র নীতি ছিল সাম্রাজ্যবাদী। তিনি বিশ্বাস করতেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের ওপর প্রভাব বিস্তার করা। তাঁর সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিলিপাইন, পুয়ের্তো রিকো এবং গুয়াম দখল করে নেয়। তিনি ওপেন ডোর পলিসি (Open Door Policy) সমর্থন করেন, যার মাধ্যমে চীন-এর সাথে সমান বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনের কথা বলা হয়।

উইলিয়াম ম্যাককিনলের হত্যাকাণ্ড

১৯০১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের বাফেলো শহরে প্যান-আমেরিকান এক্সপোজিশনে (Pan-American Exposition) যোগদানের সময় লিওন Czolgosz নামক একজন অ্যানার্কিস্ট ম্যাককিনলেকে গুলি করে। Czolgosz ছিলেন একজন পোলিশ-আমেরিকান এবং তিনি বিশ্বাস করতেন যে সরকার জনগণের ওপর অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে। ম্যাককিনলে গুলিবিদ্ধ হওয়ার আট দিন পর মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর থিওডোর রুজভেল্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হন।

ঐতিহ্য

চার্লস ম্যাককিনলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একজন গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রপতি হিসেবে বিবেচিত হন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটি বিশ্বশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর অর্থনৈতিক নীতিগুলো মার্কিন শিল্পকে সুরক্ষা প্রদান করে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (Economic growth) ত্বরান্বিত করে। তবে, তাঁর সাম্রাজ্যবাদী নীতিগুলো সমালোচিত হয়েছে।

আরও জানতে

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ