চলচ্চিত্রের সেন্সরশিপ

From binaryoption
Jump to navigation Jump to search
Баннер1

চলচ্চিত্রের সেন্সরশিপ

ভূমিকা

চলচ্চিত্রের সেন্সরশিপ একটি জটিল এবং বহুমাত্রিক বিষয়। এটি একইসাথে শৈল্পিক স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা এবং জননৈতিকতা-এর সাথে জড়িত। সময়ের সাথে সাথে চলচ্চিত্র সেন্সরশিপের ধারণা এবং প্রয়োগ পরিবর্তিত হয়েছে। এই নিবন্ধে, চলচ্চিত্র সেন্সরশিপের ইতিহাস, বিভিন্ন দেশে এর প্রয়োগ, যুক্তিসমূহ, সমালোচনা এবং আধুনিক প্রেক্ষাপট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

সেন্সরশিপের ইতিহাস

চলচ্চিত্রের সেন্সরশিপের শুরুটা বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে। যখন চলচ্চিত্র একটি নতুন মাধ্যম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, তখন থেকেই বিভিন্ন সরকার এবং সামাজিক গোষ্ঠী এর বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা শুরু করে।

  • প্রারম্ভিক বছর (১৯২০-১৯৫০): এই সময়ে, চলচ্চিত্র সেন্সরশিপের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা রোধ করা এবং সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষা করা। Hayes Code নামক একটি নীতিমালার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হতো। এই কোড অনুযায়ী, চলচ্চিত্রে যৌনতা, সহিংসতা, অপরাধ এবং ধর্ম নিয়ে কোনো আপত্তিকর দৃশ্য দেখানো যেত না। যুক্তরাজ্যে British Board of Film Classification (BBFC) ১৯১২ সাল থেকে চলচ্চিত্র শ্রেণীবিভাজন এবং সেন্সরশিপের দায়িত্ব পালন করে আসছে।
  • পরিবর্তনের দশক (১৯৫০-১৯৮০): দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবং ১৯৬০-এর দশকের পাল্টা সংস্কৃতি আন্দোলনের প্রভাবে চলচ্চিত্র সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে সমালোচনা বাড়তে থাকে। অনেক চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং বুদ্ধিজীবী শৈল্পিক স্বাধীনতার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। ফলস্বরূপ, অনেক দেশেই সেন্সরশিপের নিয়মকানুন শিথিল করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে Hayes Code-এর পরিবর্তে Motion Picture Association of America (MPA)-এর রেটিং সিস্টেম চালু করা হয়।
  • আধুনিক যুগ (১৯৮০-বর্তমান): এই সময়ে, চলচ্চিত্র সেন্সরশিপের ধারণা আরও পরিবর্তিত হয়েছে। এখন অনেক দেশেই চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে শ্রেণীবিভাজন করা হয়, যেখানে চলচ্চিত্রের বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়। তবে, কিছু দেশে রাজনৈতিক বা ধর্মীয় সংবেদনশীলতার কারণে সেন্সরশিপ এখনও বিদ্যমান।

বিভিন্ন দেশে চলচ্চিত্র সেন্সরশিপ

চলচ্চিত্র সেন্সরশিপ বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে প্রয়োগ করা হয়। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দেশের উদাহরণ দেওয়া হলো:

  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কঠোর সেন্সরশিপ নেই, তবে MPAA চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে রেটিং প্রদান করে (G, PG, PG-13, R, NC-17)। এই রেটিংগুলো দর্শকদের জন্য নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করে।
  • যুক্তরাজ্য: যুক্তরাজ্যে BBFC চলচ্চিত্রের শ্রেণীবিভাজন করে এবং আপত্তিকর দৃশ্য সম্পাদনের নির্দেশ দিতে পারে।
  • ভারত: ভারতে Central Board of Film Certification (CBFC) চলচ্চিত্রের সেন্সরশিপের দায়িত্ব পালন করে। এখানে রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং নৈতিক কারণে চলচ্চিত্র সেন্সর করা হতে পারে।
  • চীন: চীনে চলচ্চিত্রের সেন্সরশিপ অত্যন্ত কঠোর। সরকার রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল যেকোনো বিষয়বস্তু নিষিদ্ধ করে।
  • ইরান: ইরানে চলচ্চিত্রের সেন্সরশিপ ইসলামিক মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে করা হয়। এখানে নারী স্বাধীনতা, ধর্ম এবং রাজনীতির সমালোচনা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

সেন্সরশিপের কারণসমূহ

চলচ্চিত্র সেন্সরশিপের পেছনে বিভিন্ন কারণ বিদ্যমান। এর মধ্যে কিছু প্রধান কারণ হলো:

  • রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা: সরকার প্রায়শই রাজনৈতিক অস্থিরতা বা বিদ্রোহ উস্কে দিতে পারে এমন চলচ্চিত্র নিষিদ্ধ করে।
  • জাতীয় নিরাপত্তা: জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সরকার কিছু চলচ্চিত্রের প্রদর্শন বন্ধ করতে পারে।
  • জননৈতিকতা: সমাজের প্রচলিত নৈতিক মূল্যবোধ রক্ষার জন্য আপত্তিকর দৃশ্য বা বিষয়বস্তু সেন্সর করা হয়।
  • ধর্মীয় সংবেদনশীলতা: ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে এমন চলচ্চিত্র নিষিদ্ধ করা হয়।
  • শিশুদের সুরক্ষা: শিশুদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এমন বিষয়বস্তু (যেমন: সহিংসতা, যৌনতা) নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

সেন্সরশিপের সমালোচনা

চলচ্চিত্র সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে অনেক সমালোচনা রয়েছে। সমালোচকরা মনে করেন যে:

  • শৈল্পিক স্বাধীনতা হরণ: সেন্সরশিপ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সৃজনশীলতাকে সীমিত করে এবং শৈল্পিক স্বাধীনতাকে হরণ করে।
  • বাকস্বাধীনতার লঙ্ঘন: চলচ্চিত্র সেন্সরশিপ বাকস্বাধীনতার মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।
  • দর্শকের অধিকার খর্ব: সেন্সরশিপ দর্শকদের তথ্য জানার এবং নিজেদের বিচার করার অধিকারকে খর্ব করে।
  • রাজনৈতিক অপব্যবহার: সরকার সেন্সরশিপকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে।
  • উদ্ভাবনের অভাব: সেন্সরশিপের কারণে চলচ্চিত্রশিল্পে নতুন ধারণা এবং শৈলী উদ্ভাবনের সুযোগ কমে যায়।

আধুনিক প্রেক্ষাপট

বর্তমান যুগে, ইন্টারনেট এবং স্ট্রিমিং পরিষেবা-এর কারণে চলচ্চিত্র সেন্সরশিপের প্রয়োগ আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। মানুষ সহজেই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে যেকোনো চলচ্চিত্র দেখতে পারছে, যা সেন্সরশিপের বাধা অতিক্রম করে।

  • স্ব-নিয়ন্ত্রণ: কিছু চলচ্চিত্র সংস্থা নিজেরাই তাদের বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণ করে, যাতে তারা বিভিন্ন দেশের সেন্সরশিপের নিয়মকানুন মেনে চলতে পারে।
  • বিকল্প প্ল্যাটফর্ম: অনেক চলচ্চিত্র নির্মাতা সেন্সরশিপ এড়াতে বিকল্প প্ল্যাটফর্ম (যেমন: চলচ্চিত্র উৎসব, অনলাইন স্ট্রিমিং) ব্যবহার করছেন।

উপসংহার

চলচ্চিত্র সেন্সরশিপ একটি জটিল এবং বিতর্কিত বিষয়। একদিকে এটি সমাজের মূল্যবোধ রক্ষা এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় হতে পারে, অন্যদিকে এটি শৈল্পিক স্বাধীনতা এবং বাকস্বাধীনতার পরিপন্থী। আধুনিক যুগে, প্রযুক্তিগত অগ্রগতির কারণে সেন্সরশিপের প্রয়োগ কঠিন হয়ে পড়েছে, তবে বিভিন্ন সরকার এবং সংস্থা বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণের নতুন উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। চলচ্চিত্র সেন্সরশিপের ভবিষ্যৎ এই প্রযুক্তি এবং সামাজিক পরিবর্তনের উপর নির্ভরশীল।

আরও জানতে:

কৌশল, টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণ সম্পর্কিত লিঙ্ক:

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ

Баннер