আর্মেনীয় সংস্কৃতি

আর্মেনীয় সংস্কৃতি হল একটি প্রাচীন এবং স্বতন্ত্র সংস্কৃতি, যা কয়েক হাজার বছরের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের সাথে জড়িত। এটি ককেশাস অঞ্চলের অন্যতম প্রাচীন সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচিত হয়। এই সংস্কৃতিতে নিজস্ব ভাষা, বর্ণমালা, সাহিত্য, সঙ্গীত, নৃত্য, শিল্পকলা, স্থাপত্য এবং রন্ধনপ্রণালী বিদ্যমান। খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করার পূর্বে আর্মেনীয়রা পৌত্তলিক ধর্ম অনুসরণ করত।

ইতিহাস আর্মেনীয় সংস্কৃতির ইতিহাস খ্রিস্টপূর্বাব্দ ৬ষ্ঠ সহস্রাব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত। উরারতু সাম্রাজ্য ছিল আর্মেনীয় সংস্কৃতির প্রাথমিক ভিত্তি। পরবর্তীতে, আর্মেনিয়া বিভিন্ন সাম্রাজ্যের অধীনে থাকলেও নিজস্ব সংস্কৃতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। আর্মেনীয় সাম্রাজ্য ৯৬১ থেকে ১০৪৯ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল এবং এটি আর্মেনীয় সংস্কৃতির স্বর্ণযুগ হিসেবে বিবেচিত হয়। মধ্যযুগে আর্মেনিয়া সেলজুক তুর্কি এবং মোঙ্গলদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল। এরপর, আর্মেনিয়া পারস্য এবং রাশিয়ার মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। বিংশ শতাব্দীতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং আর্মেনীয় গণহত্যা আর্মেনীয় সংস্কৃতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

ভাষা ও বর্ণমালা আর্মেনীয় ভাষা একটি স্বতন্ত্র ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা। এই ভাষার নিজস্ব বর্ণমালা রয়েছে, যা মেসরোপ মাসতোৎস ৪0৫ খ্রিস্টাব্দে তৈরি করেন। আর্মেনীয় বর্ণমালায় ৩৪টি অক্ষর রয়েছে। এই বর্ণমালাটি আর্মেনীয় সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

সাহিত্য আর্মেনীয় সাহিত্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। প্রাচীন আর্মেনীয় সাহিত্য মূলত ধর্মীয় গ্রন্থ এবং ঐতিহাসিক বিবরণ নিয়ে গঠিত। মোবসেস খোরেনাতসি ছিলেন প্রথম আর্মেনীয় ইতিহাসবিদ। মধ্যযুগে গ্রেগোরি অফ নারেকে এবং নেরসেস শিনোরহালি-এর মতো বিখ্যাত সাহিত্যিকগণ অবদান রাখেন। আধুনিক আর্মেনীয় সাহিত্যে য়েগিষে চারেণৎস, হোভান্নেস তুম্যানিয়ান এবং পავლস সুরিকিয়ান উল্লেখযোগ্য।


ব্যক্তিত্ব	অবদান	মোবসেস খোরেনাতসি	প্রথম আর্মেনীয় ইতিহাসবিদ	গ্রেগোরি অফ নারেকে	মধ্যযুগীয় দার্শনিক ও কবি	হোভান্নেস তুম্যানিয়ান	আধুনিক আর্মেনীয় সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কবি	পავლস সুরিকিয়ান	আধুনিক আর্মেনীয় সাহিত্যের কবি ও নাট্যকার

সঙ্গীত ও নৃত্য আর্মেনীয় সঙ্গীত ঐতিহ্যবাহী এবং আধুনিক ধারায় সমৃদ্ধ। দুডুক নামক বাদ্যযন্ত্র আর্মেনীয় সঙ্গীতের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি ইউনেস্কো কর্তৃক অস্পর্শনীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত। আর্মেনীয় নৃত্যগুলি সাধারণত বৃত্তাকারে পরিবেশিত হয় এবং এতে পুরুষ ও নারীরা অংশ নেয়। কোচারি এবং যারনা উল্লেখযোগ্য আর্মেনীয় নৃত্য।

শিল্পকলা আর্মেনীয় শিল্পকলা প্রাচীনকাল থেকে বিকাশ লাভ করেছে। খাচকার হল আর্মেনীয় শিল্পকলার একটি বিশেষ রূপ। এটি পাথর খোদাই করে নির্মিত ক্রস-আকৃতির স্মৃতিস্তম্ভ। মধ্যযুগে আর্মেনীয় চিত্রশিল্প এবং হস্তলিপি শিল্প বিশেষভাবে উন্নত ছিল। আধুনিক আর্মেনীয় শিল্পকলায় ইভান আয়েভাজিয়ান এবং মার্টিন সার্কিসিয়ান উল্লেখযোগ্য।

স্থাপত্য আর্মেনীয় স্থাপত্য তার স্বতন্ত্র শৈলীর জন্য পরিচিত। এচমিয়াডজিন ক্যাথিড্রাল এবং গেগার্ড মঠ আর্মেনীয় স্থাপত্যের প্রাচীনতম এবং গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। এই স্থাপত্যগুলিতে পাথর এবং টালি ব্যবহার করা হয়। আর্মেনীয় মঠগুলি সাধারণত দুর্গম পাহাড়ের উপরে নির্মিত, যা তাদের প্রতিরক্ষামূলক বৈশিষ্ট্য প্রদান করে।

রন্ধনপ্রণালী আর্মেনীয় রন্ধনপ্রণালী মধ্যপ্রাচ্য এবং ভূমধ্যসাগরীয় রন্ধনপ্রণালীর দ্বারা প্রভাবিত। খাশ হল আর্মেনীয় রন্ধনপ্রণালীর একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার, যা গমের ভুসি এবং মাংস দিয়ে তৈরি করা হয়। ল্যাভাশ নামক পাতলা রুটি আর্মেনীয় খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এছাড়াও, হারিসা, ডোলমা এবং কুব্বা উল্লেখযোগ্য আর্মেনীয় খাবার।

thumb|200px|ল্যাভাশ

ধর্ম আর্মেনীয়রা মূলত আর্মেনীয় অ্যাপোস্টলিক চার্চ-এর অনুসারী। এটি বিশ্বের প্রাচীনতম খ্রিস্টান চার্চগুলির মধ্যে অন্যতম। আর্মেনীয় চার্চ কনস্টান্টিনোপলের প্রথম কাউন্সিল থেকে নিজেদের আলাদা করে নিয়েছে।

ঐতিহ্য ও রীতিনীতি আর্মেনীয় সংস্কৃতিতে ঐতিহ্য এবং রীতিনীতিগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ত্রয়োদশ বা ত্রয়োদশ পর্ব আর্মেনীয়দের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই দিনে, অবিবাহিত মেয়েরা ভবিষ্যতের জীবনসঙ্গীর জন্য প্রার্থনা করে। ভার্দানঙ্ক হল আর্মেনীয় নববর্ষ, যা প্রাচীন আর্মেনীয় ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পালিত হয়।

সামাজিক জীবন আর্মেনীয় সমাজে পরিবার এবং আত্মীয়তার বন্ধন অত্যন্ত দৃঢ়। বয়স্কদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়। আর্মেনীয়রা সাধারণত অতিথিপরায়ণ এবং বন্ধুভাবাপন্ন হয়ে থাকে।

বিশ্বজুড়ে আর্মেনীয় সংস্কৃতি আর্মেনীয় সংস্কৃতি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। আর্মেনীয় ডায়াস্পোরা বিভিন্ন দেশে বসবাস করে এবং তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বজায় রেখেছে। আর্মেনীয় জাদুঘর এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলি বিশ্বজুড়ে আর্মেনীয় সংস্কৃতি প্রচার করে।

আর্মেনীয় সংস্কৃতির উপর প্রভাব আর্মেনীয় সংস্কৃতি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। পারস্য, গ্রিক, রোমান, বাইজান্টাইন, আরব, তুর্কি এবং রাশিয়ান সংস্কৃতির প্রভাব আর্মেনীয় সংস্কৃতিতে দেখা যায়। তবে, আর্মেনীয়রা সর্বদা নিজেদের স্বতন্ত্র সংস্কৃতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।

বর্তমান অবস্থা বর্তমানে, আর্মেনীয় সংস্কৃতি আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে। আর্মেনীয় সঙ্গীত, আর্মেনীয় চলচ্চিত্র এবং আর্মেনীয় ফ্যাশন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি লাভ করছে। আর্মেনীয় সরকার সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।

আর্মেনীয় সংস্কৃতি একটি জীবন্ত এবং বিকাশমান সংস্কৃতি। এটি তার দীর্ঘ ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য বিশ্বে পরিচিত।

সম্পর্কিত বিষয়গুলির জন্য লিঙ্ক:

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ এবং ভলিউম বিশ্লেষণের জন্য লিঙ্ক:

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ

আর্মেনীয় সংস্কৃতি

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

Navigation menu