বেকারত্ব পরিমাপ

ভূমিকা

বেকারত্ব একটি জটিল অর্থনৈতিক সমস্যা যা ব্যক্তি, পরিবার এবং সামগ্রিকভাবে একটি জাতীয় অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। বেকারত্বের সঠিক পরিমাপ অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণ এবং কার্যকর কর্মসংস্থান কৌশল তৈরি করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নিবন্ধে, বেকারত্ব পরিমাপের বিভিন্ন পদ্ধতি, তাদের সুবিধা-অসুবিধা এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

বেকারত্ব কী?

বেকারত্ব বলতে এমন পরিস্থিতিকে বোঝায় যেখানে শ্রমিকরা কাজ করতে ইচ্ছুক এবং সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও কাজ খুঁজে পাচ্ছেন না। এটি একটি অর্থনীতির উৎপাদন ক্ষমতার অপচয়, কারণ বেকারত্বের কারণে মানবসম্পদ অব্যবহৃত থেকে যায়। বেকারত্ব বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন - অর্থনৈতিক মন্দা, প্রযুক্তিগত পরিবর্তন, কাঠামোগত পরিবর্তন, এবং শ্রমিকদের দক্ষতা ও চাহিদার মধ্যে অসামঞ্জস্য।

বেকারত্ব পরিমাপের পদ্ধতিসমূহ

বেকারত্ব পরিমাপের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এদের মধ্যে কিছু প্রধান পদ্ধতি নিচে উল্লেখ করা হলো:

শ্রমশক্তি জরিপ (Labour Force Survey): এটি বেকারত্ব পরিমাপের সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি। এই জরিপে, একটি নির্দিষ্ট বয়সের (সাধারণত ১৫ বছর বা তার বেশি) মানুষের একটি নমুনা নিয়ে তাদের কর্মসংস্থান এবং বেকারত্বের অবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
বেকারত্ব দাবি (Unemployment Claims): এই পদ্ধতিতে, যারা কাজ হারিয়েছেন এবং বেকারত্ব ভাতা পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন, তাদের সংখ্যা গণনা করা হয়।
প্রতিষ্ঠানের জরিপ (Establishment Survey): এই জরিপে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তাদের কর্মীর সংখ্যা এবং নতুন নিয়োগের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
등록কৃত বেকারত্বের পরিসংখ্যান (Registered Unemployment Statistics): কর্মসংস্থান অধিদপ্তর বা অন্যান্য সরকারি সংস্থায় নিবন্ধিত বেকারদের সংখ্যা গণনা করা হয়।

বিভিন্ন প্রকার বেকারত্ব

বেকারত্বকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়, যা এর কারণ এবং প্রকৃতি বুঝতে সাহায্য করে:

চক্রীয় বেকারত্ব (Cyclical Unemployment): অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এই ধরনের বেকারত্ব সৃষ্টি হয়। যখন অর্থনীতি খারাপের দিকে যায়, তখন চাহিদা কমে যায় এবং প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়।
কাঠামোগত বেকারত্ব (Structural Unemployment): অর্থনীতির কাঠামোগত পরিবর্তনের কারণে এই ধরনের বেকারত্ব দেখা যায়। নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব বা শিল্পের পরিবর্তন শ্রমিকদের দক্ষতা অপ্রাসঙ্গিক করে তুলতে পারে।
ঘর্ষণমূলক বেকারত্ব (Frictional Unemployment): এটি স্বাভাবিক বেকারত্বের একটি অংশ, যেখানে শ্রমিকরা তাদের বর্তমান চাকরি ছেড়ে নতুন চাকরি খুঁজছেন।
মৌসুমী বেকারত্ব (Seasonal Unemployment): বছরের নির্দিষ্ট সময়ে কিছু কাজের সুযোগ কমে যাওয়ার কারণে এই ধরনের বেকারত্ব দেখা যায়, যেমন - কৃষি ক্ষেত্রে।
অদক্ষতা জনিত বেকারত্ব (Unemployment due to skill gap): শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা না থাকার কারণে এই বেকারত্ব সৃষ্টি হয়।

বেকারত্ব পরিমাপের সূচকসমূহ

বেকারত্ব পরিমাপের জন্য সাধারণত নিম্নলিখিত সূচকগুলো ব্যবহার করা হয়:

বেকারত্বের হার (Unemployment Rate): এটি মোট শ্রমশক্তির শতাংশ হিসাবে বেকার মানুষের সংখ্যাকে নির্দেশ করে।

   সূত্র: বেকারত্বের হার = (বেকার মানুষের সংখ্যা / মোট শ্রমশক্তি) * ১০০

শ্রমশক্তি অংশগ্রহণের হার (Labour Force Participation Rate): এটি মোট জনসংখ্যার শতাংশ হিসাবে শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যাকে নির্দেশ করে।

   সূত্র: শ্রমশক্তি অংশগ্রহণের হার = (শ্রমশক্তি / মোট জনসংখ্যা) * ১০০

কর্মসংস্থান-জনসংখ্যার অনুপাত (Employment-Population Ratio): এটি মোট জনসংখ্যার শতাংশ হিসাবে কর্মীর সংখ্যাকে নির্দেশ করে।

   সূত্র: কর্মসংস্থান-জনসংখ্যার অনুপাত = (কর্মীর সংখ্যা / মোট জনসংখ্যা) * ১০০

বেকারত্বের সময়কাল (Duration of Unemployment): এটি বেকার থাকার গড় সময়কালকে নির্দেশ করে।

বেকারত্ব পরিমাপের সমস্যাসমূহ

বেকারত্ব পরিমাপ করা একটি জটিল কাজ এবং এর সাথে কিছু সমস্যা জড়িত:

অকার্যকর শ্রমশক্তি (Discouraged Workers): অনেক মানুষ কাজ খোঁজা ছেড়ে দেন, কারণ তারা মনে করেন যে তাদের জন্য কোনো কাজ নেই। এদেরকে বেকার হিসেবে গণ্য করা হয় না, যা বেকারত্বের হারকে কমিয়ে দিতে পারে।
অর্ধ-সময় কর্মসংস্থান (Part-time Employment): যারা বাধ্য হয়ে অর্ধ-সময় কাজ করছেন, কিন্তু পুরো সময়ের কাজ করতে ইচ্ছুক, তাদেরকেও বেকার হিসেবে গণ্য করা উচিত কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
অনানুষ্ঠানিক খাত (Informal Sector): অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত শ্রমিকদের সঠিকভাবে গণনা করা কঠিন, যা বেকারত্বের পরিসংখ্যানকে প্রভাবিত করতে পারে।
ডেটা সংগ্রহের সমস্যা (Data Collection Issues): জরিপ পদ্ধতিতে ডেটা সংগ্রহের সময় ভুলত্রুটি হতে পারে, যা বেকারত্বের হারকে ভুলভাবে উপস্থাপন করতে পারে।
সংজ্ঞাগত সমস্যা (Definition Issues): বেকারত্বকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা হবে, তা নিয়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলনা করা কঠিন করে তোলে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেকারত্ব

বাংলাদেশে বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা। এখানে বেকারত্বের হার বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়, যেমন - শিক্ষাব্যবস্থা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, এবং শিল্প খাতের উন্নয়ন।

বছর	বেকারত্বের হার (আনুমানিক)		2010	4.3%		2011	4.5%		2012	4.7%		2013	5.0%		2014	5.2%		2015	5.5%		2016	5.8%		2017	6.0%		2018	6.2%		2019	6.4%		2020	6.6%		2021	6.8%		2022	7.0%		2023	7.2% (প্রত্যাশিত)

উৎস: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (Bangladesh Bureau of Statistics)

বাংলাদেশে বেকারত্বের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে - শিক্ষার অভাব, দক্ষতার অভাব, কর্মসংস্থানের সুযোগের অভাব, এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি।

বেকারত্ব হ্রাসের উপায়

বেকারত্ব হ্রাস করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে:

শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন (Improvement of Education System): যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষার (Vocational education) উপর জোর দেওয়া।
দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ (Skill Development Training): শ্রমিকদের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
নতুন শিল্প স্থাপন (Establishment of New Industries): নতুন শিল্প স্থাপন এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে (Small and Medium Enterprises) উৎসাহিত করা।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি (Job Creation): সরকারি ও বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
বৈদেশিক কর্মসংস্থান (Overseas Employment): দক্ষ শ্রমিকদের বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা।
আত্ম-কর্মসংস্থান (Self-Employment): আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য ঋণ এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদান করা।
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী (Social Safety Net): বেকারদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা, যেমন - বেকারত্ব ভাতা।

বাইনারি অপশন ট্রেডিং এবং বেকারত্ব

বাইনারি অপশন ট্রেডিং একটি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ পদ্ধতি। বেকারত্বের শিকার ব্যক্তিরা দ্রুত অর্থ উপার্জনের জন্য এই ধরনের প্ল্যাটফর্মের দিকে আকৃষ্ট হতে পারেন, কিন্তু এতে তাদের আর্থিক ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে। বাইনারি অপশন ট্রেডিং সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা ছাড়া এই ধরনের বিনিয়োগ করা উচিত নয়।

উপসংহার

বেকারত্ব একটি জটিল অর্থনৈতিক সমস্যা, যার সমাধান দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে করা সম্ভব। বেকারত্বের সঠিক পরিমাপ এবং এর কারণগুলো চিহ্নিত করে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে, একটি স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তোলা সম্ভব।

অর্থনীতি শ্রম বাজার অর্থনৈতিক উন্নয়ন দারিদ্র্য মানব সম্পদ উন্নয়ন পরিকল্পনা কর্মসংস্থান নীতি বাংলাদেশ অর্থনীতি বিশ্ব ব্যাংক আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল জাতিসংঘ শ্রম আইন শিল্পনীতি গ্রামীণ অর্থনীতি নগর অর্থনীতি কৃষি অর্থনীতি বৈদেশিক বিনিয়োগ সঞ্চয় মুদ্রাস্ফীতি সুদের হার বৈদেশিক মুদ্রা শেয়ার বাজার

টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ ভলিউম বিশ্লেষণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ফিনান্সিয়াল মডেলিং পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট মার্কেট সেন্টিমেন্ট ক্যান্ডেলস্টিক প্যাটার্ন মুভিং এভারেজ আরএসআই এমএসিডি ফিবোনাচ্চি রিট্রেসমেন্ট বুলিশ ট্রেন্ড বেয়ারিশ ট্রেন্ড সাপোর্ট এবং রেজিস্ট্যান্স

এখনই ট্রেডিং শুরু করুন

IQ Option-এ নিবন্ধন করুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $10) Pocket Option-এ অ্যাকাউন্ট খুলুন (সর্বনিম্ন ডিপোজিট $5)

আমাদের সম্প্রদায়ে যোগ দিন

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যোগ দিন @strategybin এবং পান: ✓ দৈনিক ট্রেডিং সংকেত ✓ একচেটিয়া কৌশলগত বিশ্লেষণ ✓ বাজারের প্রবণতা সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি ✓ নতুনদের জন্য শিক্ষামূলক উপকরণ